ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

বীমায়ও সুরক্ষা অনিশ্চিত

  • গ্রাহকের ৪৬৭ কোটি টাকা দিচ্ছে না ছয় প্রতিষ্ঠান
এ এস এম সাদ
এ এস এম সাদ
শেয়ার
বীমায়ও সুরক্ষা অনিশ্চিত

গোল্ডেন লাইফ ইনস্যুরেন্সের ১৫ বছর মেয়াদি একটি জীবন বীমা পলিসি কিনেছিলেন সিলেটের জাহানারা বেগম আলী। ২০০৭ সালে কেনা এই পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর জাহানারা বেগম মারা যান। মারা যাওয়ার সময় তিনি ইংল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন। এর আগ পর্যন্ত বছরে এক লাখ দুই হাজার ৩৫০ টাকা করে প্রায় ১৩ বছরে জাহানারা বেগম ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দেন।

তাঁর দুই ছেলে সেই পলিসির নমিনি। কিন্তু তাঁরা এখনো বীমা দাবির অর্থ পাননি।

এমন বহু মানুষ বীমা পলিসি কিনে মেয়াদ শেষ করেও বছরের পর বছর ধরে টাকার জন্য সংশ্লিষ্ট বীমা কম্পানির দপ্তরে ঘুরছেন। উপায় না পেয়ে এসব গ্রাহক বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে অভিযোগ করছেন।

আইডিআর সূত্রে সাতটি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রাপ্ত বীমা দাবির অর্থের জন্য গত এক বছরে কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭৯৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের বিপরীতে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দায় প্রায় ৪৬৭ কোটি টাকা। একটি প্রতিষ্ঠানের দায় জানা যায়নি। যেসব কম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ সেগুলো হচ্ছে ফারইস্ট ইসলামী ইনস্যুরেন্স, বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স, সানলাইফ ইনস্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার ইনস্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইনস্যুরেন্স ও হোমল্যান্ড ইনস্যুরেন্স।
এর মধ্যে হোমল্যান্ডের দায় কত সেটা জানা যায়নি।

ইংল্যান্ডে মারা যাওয়া গোল্ডেন লাইফের বীমা গ্রাহক জাহানারা বেগম আলীর ছেলে আব্দুল মুহিত ও তাঁর এক আত্মীয় দেলোয়ার হোসেন বীমা দাবির অর্থ পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। তাঁরা প্রথমে সিলেটে প্রতিষ্ঠানটির শাখা কার্যালয়ে যান। কিন্তু যতবারই গেছেন ততবারই বন্ধ পেয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে বীমা কম্পানিকে এই গ্রাহকের মৃত্যু দাবি পরিশোধ করার কথা।

চলতি বছরের ১ জুন দেলোয়ার হোসেন ঢাকার মহাখালীতে গোল্ডেন লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। তখন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন খান চৌধুরী তাঁকে জানান, শিগগিরই জাহানারা বেগমের মৃত্যু দাবি পরিশোধ করা হবে। মৃত্যু দাবির নিয়ম অনুসারে, ১৫ বছরের পলিসির পুরো অর্থ পাবেন। অথচ গোল্ডেন লাইফ তাঁদের জানায় যে জাহানারা বেগমের মৃত্যু দাবি হিসেবে ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩০০ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু এক বছরেও কোনো টাকা পাননি।

আব্দুল মুহিত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গোল্ডেন লাইফের সিলেটের অফিসে দীর্ঘদিন ধরে টাকা দিলাম। সেই অফিস বন্ধ। ঢাকার অফিস থেকে জানানো হয়েছে, কম্পানির লোকজন সঠিকভাবে রসিদ সংগ্রহ করেনি।’

জানতে চাইলে গোল্ডেন লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন খান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সিলেট শাখার কর্মকর্তারাই রসিদ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন। এটার জন্য দাবি পরিশোধে দেরি হচ্ছে। পুরো দাবি পরিশোধের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলতে অস্বীকৃতি জানান।

নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় ৫০০ গ্রাহক গত বছর অক্টোবরে লিখিত চিঠির মাধ্যমে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের নামে আইডিআরএর কাছে অভিযোগ করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন যে পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হলেও বীমা দাবি পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানটি। তাঁদের মধ্যে একজন সাপাহার উপজেলার মাদরাসা শিক্ষক রিনা পারভিন (৫৫) ২০০৮ সালে ১০ বছর মেয়াদি একটি জীবন বীমা পলিসি কিনেছিলেন। তাঁর বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। কিন্তু তিনি এখনো টাকা পাননি।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা নরপাটি সাহেবপাড়ার মিজানুর রহমান প্রবাসে থাকতে ভবিষ্যৎ জীবনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য ২০০৮ সালে বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কম্পানি থেকে একটি পলিসি কিনেছিলেন। ১৩ বছর পর এসে মিজানের মনে হচ্ছে তাঁর পলিসি কেনার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। ১২ বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকার প্রিমিয়াম জমা দিয়েছেন তিনি। পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে চার বছর আগে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তাঁর বীমা দাবি পরিশোধ করছে না। গত সাত মাস ধরে লাকসামে বায়রা ইনস্যুরেন্সের শাখা কার্যালয়টিও বন্ধ।

বীমা খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইডিআরএর কাছে যে পরিমাণ অভিযোগ আসে সেটা দিয়ে বাস্তবে বীমা খাতের বাজে চিত্র ধারণা করা ভুল হবে। কারণ বীমা দাবির অপরিশোধিত টাকার অঙ্কের হিসাব ও দাবির সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আরো অনেক বেশি। বীমার টাকা ফেরত পাননি এমন অনেক গ্রাহক আইডিআরএর কাছে অভিযোগ করেননি। এসব গ্রাহকের মধ্যে অনেকে জানেই না কোথায় অভিযোগ করতে হয়। তাই আইডিআরএর কাছে তাদের হিসাব নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কম্পানিগুলো তাদের প্রকৃত অপরিশোধিত বীমা দাবির পরিমাণ ও সংখ্যা আইডিআরএকে দেয় না। এমনকি প্রকৃত আর্থিক প্রতিবেদনও দেওয়া হয় না।

দেশে বেসরকারি জীবন বীমা কম্পানির সংখ্যা ৩৫টি। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আইডিআরএর একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক সময়ে গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। অথচ বীমা আইন ৭২(১)-এ বলা হয়েছে, বীমার মেয়াদ শেষ হলে গ্রাহককে ৯০ দিনের মধ্যে তাঁর অর্থ ফেরত দিতে হবে। কিন্তু বীমা কম্পানিগুলোর অনিয়ম, দুর্নীতি, এজেন্টের মাধ্যমে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।

যে ছয়-সাতটি বীমা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইডিআরএর কাছে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো প্রায় রুগ্ণ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সূত্র বলছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জীবন বীমা কম্পানি মৃত। দুর্নীতির কারণে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতটি ভেঙে পড়েছে।

এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ বিনিয়োগ শেয়ারবাজার ও জমি কেনা খাতে। কিছু আছে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত।

আইডিআরএ বলছে, যেসব কম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তারা অলাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে। অন্যদিকে তাদের পরিচালন ব্যয় অনেক। সে কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ করতে পারে না এবং এ কারণে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না।

কম্পানিগুলোর মধ্যে আইডিআরএর অভিযোগ সেলে ফারইস্ট ইসলামী ইনস্যুরেন্স কম্পানির নামে অভিযোগ পড়েছে ৫৫০টি। কম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের অপরিশোধিত বীমা দাবির পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো। চলতি মাসে কম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে ঢাকা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ড. মুহাম্মদ রহমত উল্লাহকে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, সব সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের কোনো রকমের কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট নেই। অপরিশোধিত বীমা দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র ও অডিট রিপোর্ট ছাড়া বলতে চাচ্ছি না, তবে বীমা দাবির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা থেকেও অনেক বেশি।’ কম্পানিটির একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, প্রায় ৫০০ কোটির মতো বীমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে তাদের।

পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা চার হাজার ৩৬৭টি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদ আলম সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁদের বীমা দাবি অপরিশোধিত ৩৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকের অর্থ দ্রুত ফেরত দেওয়ার।’

সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের অভিযোগ সংখ্যা এক হাজার ৬৫৭। বীমা দাবি অপরিশোধিত প্রায় ২১ কোটি। কম্পানিটি শেয়ারবাজারে জেড ক্যাটাগরিতে চলে যাওয়ার মতো। বিভিন্ন কায়দায় তারা টিকে আছে।

সানফ্লাওয়ার ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইউসুফ আলী মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা নিয়মিত বীমা দাবি পরিশোধ করছেন। বীমা দাবি পরিশোধ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি টাকার মতো বীমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে।

তবে আইডিআরএর অভিযোগ সেলে প্রায় পাঁচ হাজার ৩৪টি অভিযোগ পড়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

গোল্ডেন লাইফের নামে অভিযোগের সংখ্যা দুই হাজার ৭৩ এবং অপরিশোধিত বীমা দাবির পরিমাণ প্রায় ৬৯ কোটি টাকা।

বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্সের অভিযোগের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৬৬ এবং অপরিশোধিত বীমা দাবির পরিমাণ ২৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে অনেক আগেই প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, প্রশাসককে জমি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা দিতে বললেও এখন পর্যন্ত সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

আইডিআরএর একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বীমার দাবি পরিশোধ করতে হবে। দেরি করলে ব্যাংকের ঋণের সুদের চলতি হারের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি সুদ দিয়ে দাবি পরিশোধ করতে হবে।

বীমা গ্রাহকদের অর্থ ফেরতে প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন গড়িমসির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকটি বীমা প্রতিষ্ঠান যে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না, এই বিষয়ে আইডিআরএকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। বীমা কম্পানিগুলোর মধ্যে আরও স্বচ্ছতা তৈরি করা জরুরি। নিয়মিত অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতা তৈরি করা সম্ভব।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কম্পানিগুলো এফডিআর ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করে অনেক লম্বা সময়ের জন্য। অন্যদিকে মাসের দাবিগুলো পরিশোধ করতে পারে না।’ তিনি বলছেন, ‘ভারতে ১৩৫ কোটি জনগণের জন্য মাত্র ২৫টি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান আছে। আমাদের ১৭ কোটি জনগণের জন্য আছে ৩৫টি। অথচ এখানে দক্ষ জনবল তৈরি করা যাচ্ছে না এবং বীমার বিষয়ে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম। তাই দেশে এত বীমা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।

এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।

তবে আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে দুপুর ২টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।

 

যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট  http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

মন্তব্য
ভারতীয় জেনারেলের দাবি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

ঋণ-কূটনীতির সাহায্যে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে তারা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে তাদের আদর্শচ্যুতি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।

তিনটি দেশই নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের কাছাকাছি আসছে। এই নৈকট্য ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের কাছাকাছি আসা জেনারেল চৌহানকে সন্দিহান করে তুলেছে। তিনি মনে করছেন, এই তিন দেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের চিন্তা বাড়াতে পারে। স্থিতিশীলতার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।

ওই সংঘাতের সময় উত্তর সীমান্তে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।

অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।

ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

 

 

মন্তব্য
গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।

গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ গুরুতর ও স্থায়ীভাবে আহত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

 

 

মন্তব্য

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

    দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

তবে এবারের উদ্যোগকে বিএনপি বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত আছে।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।

সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।

সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ। 

সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে। 

এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়। 

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।

খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ