<p>মিয়ানমার থেকে যে রুটে দেশে মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকছে, সেই একই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে এখন ক্রিস্টাল মেথ বা আইস নামের নতুন ধরনের মাদকদ্রব্য আসছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় প্রথম এই মাদকদ্রব্য ধরা পড়ে। এরপর দিন দিন এর কারবার বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে আরেকটি বড় চালান আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে মাদকের পুরনো সেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুট। এই রুট দিয়ে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছে, যা এরই মধ্যে দেশে উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। ইয়াবার মতো আইসও আবার ঢাকাসহ সারা দেশে পাচারও হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট দিয়ে। তবে ইয়াবা আসছে মিয়ানমারের কারখানা থেকে। আর ক্রিস্টাল মেথ আসছে থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার হয়ে।</p> <p>মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিশেষ অভিযান শুরু হলেও দেশে মাদক কারবার কমেনি। বিশেষ অভিযানে শত শত মাদক কারবারি গ্রেপ্তার এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছয় শতাধিক ব্যক্তি নিহত হলেও দেশে নতুন নতুন মাদকদ্রব্য চোরাচালান হয়ে আসছে। সম্প্রতি এলএসডি নামের মাদক সেবনের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা এবং এই মাদকদ্রব্যসহ আরো কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রের ধরা পড়ার ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।</p> <p>২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা থেকে আধাকেজির বেশি পরিমাণ আইস উদ্ধার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপর ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ১৩৯ দিনে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরীতে পাঁচটি অভিযানে উদ্ধার হয়েছে তিন কেজি ৩২০ গ্রাম। সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা নতুন ফিশারি ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে র‌্যাব-৭। এ সময় তাঁদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়। এই তিন ব্যক্তির কাছ থেকেই উদ্ধার হয় ৯৭৫ গ্রাম আইস।</p> <p>গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাতুয়া গ্রামের মো. মুছার ছেলে শহিদুল ইসলাম টিপু (২৮), একই গ্রামের কাজী মাহমুদুল হকের ছেলে কাজী আমিনুর রশিদ (৪৮) ও রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গুজরা গ্রামের নুর আলমের ছেলে মো. সাইমন তারেক (৪৯)।</p> <p>এ বিষয়ে গতকাল সকালে র‌্যাব-৭ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল। তিনি বলেন, ‘উচ্চমূল্যের ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সহজেই সেবন করা যায়। ইয়াবার চেয়ে সহজে সেবন এবং ইয়াবার চেয়ে বেশি ও দীর্ঘস্থায়ী নেশা হওয়ার কারণে মাদকসেবীদের কাছে এর কদর বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা পটিয়ার মাছ ব্যবসায়ী রুবেলের কাছ থেকে এই ক্রিস্টাল মেথ সংগ্রহ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে দেশে পাচার হয়ে এসেছে ক্রিস্টাল মেথ। তবে যে রুবেলের কাছ থেকে তাঁরা ক্রিস্টাল মেথ সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি করছেন, সে প্রায় সাত মাস আগে সৌদি আরব চলে গেছে। আর এখন আসামিরা বিভিন্নভাবে এই মাদক বিক্রির চেষ্টা করছেন।’</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রথমবারের মতো আইস ধরা পড়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন খুলশী থানা এলাকা থেকে ১৪০ গ্রাম আইসসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর ৪ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই কেজি আইসসহ এক মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে বড় চালান। এরপর গত ১ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আবার এই মাদক আটক করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশে। ওই দিন ২০০ গ্রাম আইসসহ গ্রেপ্তার করা হয় একজনকে। ১৭ জুন নগরীর কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক এলাকা থেকে পাঁচ গ্রাম আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।</p> <p>ইয়াবার চেয়ে ভয়ংকর মাদক আইস : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইয়াবায় এমফিটামিন থাকে ৫ শতাংশ আর আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। তাই আইস ইয়াবার চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মানবদেহে। এই মাদকদ্রব্য সেবনকারীদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সমস্যা হতে পারে। মানসিক অবসাদ বা বিষণ্নতার কারণে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে সেবনকারী। এই মাদকে আসক্তদের ঘুম হয় না এটা সেবন না করলে।</p>