ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭
করোনাকালে মাঠ প্রশাসন

অনন্য ভূমিকায় তাঁরা

বাহরাম খান
বাহরাম খান
শেয়ার
অনন্য ভূমিকায় তাঁরা

করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ১১ এপ্রিল বিকেলে ফরিদপুর মেডিক্যালে মারা যান ঝিনাইদহ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড খাজুরার এক ব্যক্তি। সংক্রমণের ভয়ে স্বজনদের কেউ না আসায় আঞ্জুমান মুফিদুলের লোকজন গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেয় মরদেহ। করোনা আতঙ্কে স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কেউই মরদেহের কাছে আসেনি। এমনকি জানাজা পড়াতেও রাজি হয়নি।

তখন ওই ব্যক্তির জানাজা পড়ান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বদরুদ্দোজা শুভ। সঙ্গে ছিলেন এক দল পুলিশ সদস্য। জানাজা শেষে তাঁরাই মরদেহের খাটিয়া বহন করে কবরস্থানে নিয়ে দাফনের কাজ সম্পন্ন করেন।

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে যখন পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছিল, তখন ইউএনও বদরুদ্দোজা শুভর ওই মানবিকতা নিয়ে এগিয়ে আসাটা ভয়ের চিত্র অনেকটাই বদলে দেয়।

যেন নতুন দৃষ্টি পান মাঠ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এমন দৃষ্টান্তে সাহস নিয়ে মানবিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে শুরু করে সাধারণ মানুষও। ইউএনও বদরুদ্দোজা শুভ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কর্তব্যের খাতিরেই জানাজা পড়িয়েছিলাম। মানুষের এত ভালোবাসা পাব ভাবিনি।

শুধু্ শুভই নন, মহামারি করোনার মধ্যে দেশ ও মানুষের কল্যাণে জীবন বাজি রেখে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, র‌্যাব-পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও সাংবাদিকের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও এসি ল্যান্ডের মানবিক কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

ঘরে দেড় বছরের সন্তান আর বাইরে হাজারটা চ্যালেঞ্জ। এ নিয়ে প্রতিদিনের কাজে নামতে হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাকন্যা মমতাজ বেগমকে। করোনা মোকাবেলায় শুধু নিজের চাকরির দায়িত্বই পালন করছেন না, অবদান রাখছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগেও।

করোনা আক্রান্তদের জন্য নিজের এক মাসের বেতন তুলে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ডিসির তহবিলে। এলাকার নানা উদ্যোগেও তাঁর সুনাম আছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘সুবর্ণ নাগরিক সেবাকেন্দ্র’ মমতাজ বেগমের বিশেষ উদ্যোগ। এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৫০ প্রতিবন্ধী শিশুকে চিকিৎসা, খাবারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। মমতাজ বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন থেকে সেবা দিলে মানুষের দোয়া পাওয়া যায়। সেবাপ্রত্যাশীদের প্রত্যাশিত কাজ করে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।’

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের বর্তমান ইউএনও জাকির হোসেন করোনাকালের শুরুতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ইউএনওর দায়িত্বে ছিলেন। করোনাকালে পৃথক টিম তৈরি করে মানুষকে সেবা দেওয়া, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ চালানোসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও পোস্টিং পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতা নিয়ে দিন-রাত কাজ করি। কাজ করলে মানুষ ভালোবাসে, এটাই বড় পাওয়া।’

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় করোনা উপসর্গে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধার জানাজা পড়ান উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম। আত্মীয়-স্বজন এগিয়ে না থাকায় গত ৮ জুন মধ্যরাতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেউ না থাকলে আমাদেরই দায়িত্ব নিতে হয়।’

গত ৩০ মার্চ হোম কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অভিযান চালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে গুরুতর আহত হন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এসি ল্যান্ড কাজী নাজিব হাসান। পরে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে নিজ বাড়ি ফরিদপুরে বিশ্রামে থাকা নাজিব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০ দিনের মতো হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তার বলেছেন আরো প্রায় দেড় মাসের মতো লাগবে মোটামুটি সুস্থ হতে। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে অনেক সময় লাগতে পারে।’

ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. মামুনুর রশীদও প্রশংসিত একটি নাম। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ত্রাণ বিতরণে তাঁর তৎপরতা অনেকের নজর কাড়ে। নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। 

মাঠ প্রশাসনে সর্বশেষ ব্যাচ হিসেবে যোগ দেওয়া তরুণ কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনে গিয়ে প্রথমেই করোনা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। চাকরির প্রথম দিকে নতুনদের ওপর কম চাপ থাকে। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অন্যদের সঙ্গে সমানতালে মাঠে থাকতে হচ্ছে নতুনদেরও। মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মানুষের সেবার যে স্বপ্ন নিয়ে প্রশাসনে যোগ দিয়েছি, তা পালন করার চেষ্টা করছি। কর্তব্য পালনে পিছপা হচ্ছি না।’

ঢাকার বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর  উদ্যোগে প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার করে একটি মাত্র স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দিতে টাঙ্গাইল, বরগুনা, নরসিংদী, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় নিযুক্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের পাঁচজন দক্ষ ও পেশাদার প্রগ্রামারের সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করা হয়। ওই টিমের মাধ্যমে তৈরি হয় সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা ক্যামস। এই সিস্টেমের মাধ্যমে উপকারভোগীদের জন্য একটি ইউনিক কিউআরকোডসংবলিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে পরে সব মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের মানবিক সহায়তা গ্রহণ করা যাবে। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ক্যামস মোবাইল অ্যাপসে লগইন করে কিউআরকোড স্ক্যানের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে সঠিক উপকারভোগীর পরিচয় নিশ্চিত করে মানবিক সহায়তা দিতে পারবে। সব মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব ড্যাশবোর্ড থেকে সংশ্লিষ্ট মানবিক সহায়তার সব তথ্য দেখতে পাবে। গত ২৩ এপ্রিল ২০২০ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে এই টাঙ্গাইল মডেল বা সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উপস্থাপন করা হয়। এরপর টাঙ্গাইল জেলার সব উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলায় এর সফল পাইলটিং সম্পন্ন হয়। এরপর এ মডেল কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য গৃহীত হয় এবং গত ২ মে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে সারা দেশে সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সফটওয়্যারটি সারা দেশে একযোগে ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন টাঙ্গাইলের এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) বজলুর রশীদও।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন দেশব্যাপী এলাকাভিত্তিক লকডাউনের এসওপির (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিউর) প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন। এই এসওপি জেলা পর্যায়ে গাইডলাইন হিসেবে পাঠানো হয়েছে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসওপিটি সব জেলার জন্য সাধারণভাবে প্রণীত। কিন্তু সব জেলায় ঠিক একইভাবে এটা প্রযোজ্য হবে তা নয়। স্থানভেদে কিছু বিষয় যোগ-বিয়োগ করতে হবে।’ সৈয়দা ফারহানার মতে, মাঠে কাজ করলে শুধু কেন্দ্রের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে থাকলে হয় না। মাঠের অভিজ্ঞতাগুলোও কেন্দ্রে জানাতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্যাররা খুবই ইতিবাচক, মাঠ থেকে যাওয়া অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করেন, আমাদের উৎসাহিত করেন।’ তাঁর ব্যতিক্রমী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সৈয়দা ফারাহানা কাউনাইন এবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশন অফিসের ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার-২০২০’-এ ভূষিত হয়েছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের কার্যক্রমের প্রশংসা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগজুড়ে। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রথম দিকে যে কয়েকটি জেলা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তার মধ্যে অন্যতম কক্সবাজার। সেই সঙ্গে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এই জেলাটি নিয়ে সরকারও চিন্তায় ছিল। সেখানে কামাল হোসেনের ইতিবাচক মনোভাব ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে সামগ্রিক কার্যক্রমে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজার জেলার দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে করোনার মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সামলানো খুব কঠিন। কামাল হোসেন এই দিকটা দারুণভাবে সামলাচ্ছেন। আমি নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলার খবর রাখছি।’

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ