ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি দিল বাংলাদেশ

মেহেদী হাসান, নয়াদিল্লি থেকে
মেহেদী হাসান, নয়াদিল্লি থেকে
শেয়ার
ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি দিল বাংলাদেশ

শুকনো মৌসুমে নিজের পানির সংকট থাকলেও নিকটতম বন্ধু ও প্রতিবেশী ভারতের জনগণের খাবারের পানি সংকট দূর করতে ফেনী নদী থেকে পানি দিচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং বৈঠকের পর এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

ওই এমওইউর আওতায় দুই দেশের অভিন্ন ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তুলে নেবে ভারত। তিস্তার মতো ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হলেও তা ২০১১ সাল থেকে ঝুলে আছে।

ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহরে খাবারের পানি সংকট মোকাবেলায় নেওয়া প্রকল্পের জন্য ভারত ফেনী নদী থেকে পানি তোলার ব্যাপারে বাংলাদেশের সম্মতির অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। ইস্যুটি বেশ কয়েক বছর ধরে ঝুলে থাকার পর বাংলাদেশ গতকাল শনিবার এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। তবে গত আগস্ট মাসে ঢাকায় দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) সচিব পর্যায়ের বৈঠকেই ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল বলে জানা গেছে।

গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রায় ৯ বছর ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গ তুলেছে।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সব পক্ষের মত নিয়ে তিস্তা চুক্তি সই করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বৈঠকের পর রাখা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি—কেউই তিস্তা বা কোনো নদীর পানিবণ্টন নিয়ে কথা বলেননি। তবে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে ভারতের চেষ্টার কথা উল্লেখ রয়েছে।

জানা গেছে, এর আগে চূড়ান্ত হওয়া ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তির খসড়া অনুযায়ীই আগামী দিনে চুক্তি করার ব্যাপারে গতকালের বৈঠকে উভয় পক্ষ মত দিয়েছে।

এর বাইরে মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার—এই ছয়টি নদীর পানিবণ্টনে অন্তর্বর্তী চুক্তি সইয়ের জন্য জেআরসির কারিগরি কমিটিকে দ্রুত তথ্য-উপাত্ত বিনিময় ও চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি তাগিদ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় যত দ্রুত সম্ভব ফেনীসহ মোট সাতটি নদীর পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সই করার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে। আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের সফরে, বিশেষ করে আগামী বছরের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরে এ বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে।

গতকালের বৈঠকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ভারতের ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। জানা গেছে, এ বিষয়ে একটি চুক্তি দুই দেশের মধ্যে আগেই হয়েছিল।

গতকাল সেই চুক্তি বাস্তবায়নে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)’ সই হয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে ভারত এই বন্দর দুটি ব্যবহার করে নির্ধারিত মাসুল দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা নেওয়া করতে পারবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসামে নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া যত দিন না শেষ হচ্ছে তত দিন বাংলাদেশের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের কথা তুলে ধরে ভারতের সহযোগিতা চান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর দেশও চায় রোহিঙ্গারা দ্রুত, নিরাপদ ও টেকসইভাবে ফিরে যাক। ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভারত মিয়ানমারের রাখাইনে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ভারত পঞ্চমবারের মতো মানবিক সহযোগিতা পাঠাবে।

শীর্ষ বৈঠকে উভয় নেতাই পরস্পরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, সমতা, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দুই দেশের সম্পর্ক ‘স্ট্র্যাটেজিক’ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে তাঁরা মনে করেন। নরেন্দ  মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টা এবং সন্ত্রাসের ব্যাপারে তাঁর কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার নীতির প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ করার ওপর জোর দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের ভারতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যেকোনো বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। উভয় পক্ষই একমত হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের ভিসা নিয়ে দুই দেশের যেকোনো বন্দর দিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট যে বিধিনিষেধ আছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে উঠে যাবে। আখাউড়া ও গজলডোবা (পশ্চিমবঙ্গ) দিয়েই এটি শুরু হবে। উল্লেখ্য বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসায় কোন বন্দর ব্যবহার করে আসা-যাওয়া করা যাবে তা নির্দিষ্ট থাকে।

সীমান্তে মৃত্যুর বিষয়টিও বৈঠকে উঠেছে। বৈঠক শেষে ৫৩ দফা যৌথ বিবৃতির একটি অংশে বলা হয়েছে, সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে উভয় নেতাই সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতেও উভয় পক্ষ সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করে দ্রুত এ বিষয়ে একটি এমওইউ সইয়ের তাগিদ দিয়েছেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি করতে দ্রুত একটি যৌথ সমীক্ষা চালাতেও রাজি হয়েছে। আখাউড়া-আগরতলা বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ তুলে নিতে ভারত অনুরোধ জানালে বাংলাদেশ বলেছে, অদূর ভবিষ্যতে বেশির ভাগ গতানুগতিক পণ্য বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওই বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ভারতকে বাংলাদেশি পাটসহ অন্যান্য পণ্যের ওপর থেকে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’/‘অ্যান্টি সারকামভেনশন’ শুল্ক তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। জবাবে ভারত বলেছে, বিষয়টি সুরাহা করতে কাজ চলছে। দুই দেশের শীর্ষ নেতারা দ্রুত ১২টি সীমান্ত হাট চালুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা পাট ও বস্ত্র খাতে সমন্বয় জোরদারে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে দ্রুত এমওইউ সইয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।

বৈঠকে উভয় নেতা দুই দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে কার্গো ও উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের বিশাল সম্ভাবনা বাস্তবায়নে জোর দিয়েছেন। ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড টেডের (পিআইডাব্লিউটিটি)’ আওতায় তাঁরা দাউদকান্দি-সোনামুরা রুটসহ ধুলিয়ান-গদাগারি-রাজশাহী-দৌলতদিয়া-আরিচা রুটে (আসা-যাওয়া) পণ্য আনা-নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। তাঁরা ঢাকা-শিলিগুড়ির মধ্যে সরাসরি বাস চালুর পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

উভয় নেতাই প্রস্তাবিত গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ প্রকল্প নিয়ে সমীক্ষা চালানোর ব্যাপারে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন ও কারিগরি কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা রেল যোগাযোগ খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন এবং ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের কার্যক্রম সপ্তাহে চার দিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ দিন এবং খুলনা ও কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস সপ্তাহে এক দিন থেকে বাড়িয়ে দুই দিন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। দুই দেশের মধ্যে চলাচলকারী ফ্লাইট সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে ৬১টি থেকে এবারের গ্রীষ্মে ৯১টি এবং আগামী বছরের শীতে ১২০টিতে উন্নীত হওয়ার সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানান।

বৈঠকে উভয় নেতাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যৌথ ভূমিকার আলোকে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সমুদ্র নিরাপত্তা খাতে নিবিড় অংশীদারিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তাঁরা বাংলাদেশের উপকূলীয় নজরদারি রাডার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানান। জানা গেছে, এই ব্যবস্থা চালু হলে সাগরে কত সংখ্যক জাহাজ আছে এবং কোনদিকে সেগুলো যাচ্ছে সে বিষয়ে আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। উভয় নেতাই ভারতের দেওয়া ৫০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা ঋণ দ্রুত কাজে লাগাতেও সম্মত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ভারতের দেওয়া ঋণ দ্রুত কাজে লাগাতে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধির অফিস খোলার ব্যাপারে কাঠামো চুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে বিদ্যুৎখাতে সহযোগিতা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক খাতে বিনিময় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। উভয় নেতাই দুই দেশের সার্টিফিকেটকে পারস্পরিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে দ্রুত এমওইউ সই করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

উভয় দেশ এ বছর মহাত্মা গান্ধীর দেড়শতম জন্মবার্ষিকী, আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকীতে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও বিনিময় কর্মসূচি গ্রহণ এবং আগামী বছর বাংলাদেশে-ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনে রাজি হয়েছে। দুই শীর্ষ নেতা দুই দেশের জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সহযোগিতার জন্য এমওইউ চূড়ান্ত করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ভারতের চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের উপহাইকমিশন খোলার অনুমতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিমসটেকসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে উভয় নেতা তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ