প্রয়োজন হয় না ক্লাব। লাগে না সাজসজ্জা। আয়োজন নেই নিরাপত্তার। নেই খেলার সরঞ্জামও।
অনলাইন ক্যাসিনোর ফাঁদেও নিঃস্ব অনেকে
কাজী হাফিজ ও এস এম আজাদ

সেলিম ধরা পড়ার পর সরকারের ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্প থেকে গতকাল বুধবার ৬৭টি গ্যাম্বলিং সাইট বন্ধ করা হয়েছে। এর আগে এ প্রকল্প থেকে প্রায় আড়াই হাজার গ্যাম্বলিং সাইট বন্ধ করে দেওয়ার পরও অনলাইনে জুয়া খেলা যে বন্ধ হয়নি তা সেলিম প্রধানের কারবার থেকেই প্রমাণ মিলছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইন গ্যাম্বলিং সাইটগুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ থেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেলিম প্রধানকে শনাক্ত করে। তাঁর অবস্থানও নিশ্চিত করা হয় মোবাইল ট্র্যাকিং থেকে।
র্যাবের তদন্তকারী সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাঁচটি দেশের নিবন্ধিত বেটিং সাইটগুলোতে দেশ থেকে অনলাইন জুয়া খেলা হচ্ছে। ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এবং ডিলারদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চিপস বা কয়েন কিনে স্মার্ট মোবাইল ফোন দিয়েই এই জুয়া খেলা চলছে। বাস্তবে ফুটবল-ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলার সময় বাজি এবং ওই সব খেলার আদলেই হচ্ছে অনলাইন জুয়ার কারবার। জুয়ায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগই শিক্ষার্থী বা বয়সে তরুণ। নেশায় পড়ে অনেক হচ্ছে নিঃস্ব। সেলিমের মতো আরো ১৫টি চক্র অনলাইন ক্যাসিনোর দেশীয় ডিলারের কাজ করছে। তারা ১৫০টি ওয়েবসাইট ব্যবহার করছে বলেও তথ্য মিলেছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে বেটিং বা জুয়ার কারবারে বিদেশে অর্থপাচারের পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আমাদের একটি সাইবার মনিটরিং সেল রয়েছে। সেই সেলে আমরা দেখতে পাই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনলাইনে ক্যাসিনো গেমিংয়ে নিয়োজিত রয়েছে। এর সূত্র ধরে আমরা কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করেই অনলাইন ক্যাসিনো বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, স্থানীয়ভাবে যে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সংস্থাগুলো আছে তাদের সাহায্যে খুব স্বল্পমূল্যে চক্রগুলো জুয়ার চিপস সরবরাহ করছে। সহজ ও খেলা নিয়ে হওয়ায় তরুণরা বেটিং গেমের নামে জুয়ায় ঝুঁকে পড়ছে। এর মূল ডেভেলপার হচ্ছে চীন, হংকং, কোরিয়া, ফিলিপাইন ও ইউক্রেনের মতো কিছু দেশ। এসবের প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। সামাজিক সচেতনতাও প্রয়োজন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, পাঁচটি দেশের সাইটগুলোতে ক্রিকেট, ফুটবল, রাগবি ম্যাচ চলার সময় লাইভ (তাত্ক্ষণিক) বাজি ধরার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব ক্লাবের ম্যাচ কোনো চ্যানেলে সম্প্রচার হয় না সেই ক্লাবের খেলা নিয়েও হয় বাজি। সেলিম প্রধানের টি-২১ এবং পি২৪ সাইটের জন্য তিনটি ইন্টারনেট গেটওয়ে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এসব গেটওয়েতে লেনদেনের টাকা সেলিম, তাঁর সহযেগী আখতারুজ্জামান ও রোকন সংগ্রহ করতেন। এরপর হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন। মাসে ৯ কোটি টাকা এবং দুই বছরে ৩৫০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। দুই বছর ধরেই লন্ডনে টাকা পাচার করছিলেন সেলিম।
সূত্র জানায়, জুয়া খেলার জন্য জুয়াড়িদের প্রথমে অনলাইন সাইটগুলোতে নিবন্ধন করতে হয়। জুয়ায় অংশ নিতে অর্থ পরিশোধ করতে হয় ক্রেডিট কার্ডে। দেশে এসব জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এজেন্ট। অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় জুয়ার টাকা। সেলিমের টি-২১ ও পি-২৪ চালাতে মোবাইল ফোনে আগে অ্যাপস ডাউনলোড করতে হতো। অনেক খেলার জন্য চিপস বা জুয়ার কয়েন কিনতে হয় ডিলারদের কাছ থেকে। ফেসবুকে পেজ খুলে অনেক জুয়াড়ি চিপস বিক্রি করে। খেলায় হারলে আগে দেওয়া টাকা বা চিপস খোয়া যায়। জিতলে লাভসহ ফেরত আসে। এমন চিপস বিক্রি করার ১৫টি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। সব মিলে ১৫০টি সাইটের গেটওয়ের তথ্য মিলেছে। তদন্তকারীরা জানান, উত্তর কোরিয়ার ‘দো’ ছাড়াও কয়েকজন বিদেশির ব্যাপারে তথ্য মিলেছে, যারা দেশে অনলাইন ক্যাসিনো কারবারের মার্কেটিং করে।
ভয়ংকর জুয়া ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ অনলাইনে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ নামের এক ভয়ংকর জুয়া চলছে। কয়েকজন ভারতীয় বিদেশে বসেই এ খেলা পরিচালনা করে। বাংলাদেশে রয়েছে তাদের কয়েক শ ডিলার। তিন পাত্তি গোল্ড একটি অ্যানড্রয়েড অ্যাপ। এর মাধ্যমে চলছে ভার্চুয়াল জুয়া। প্রতিদিন ভার্চুয়াল বোর্ডে লেনদেন হয় কোটি কোটি চিপস (জুয়ার কয়েন)। ডিলারদের ফেসবুক পেজের কমেন্ট বক্স থেকে নম্বর পায় জুয়াড়িরা। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক জুয়াড়ি বলেন, তিন পাত্তি গোল্ড হচ্ছে ‘তিন তাসের খেলা’। খেলার সবচেয়ে বড় কার্ড হলো তিন টেক্কা আর সর্বনিম্ন কার্ড ২-৩-৫। এ গেমের মূল বস্তুটি হচ্ছে চিপস বা কয়েন। এক কোটি চিপসের মূল্য ছয় মাস আগেও ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এখন ৭০-৮০ টাকায় পাওয়া যায়। গেমের ভেতর থেকেই ডলারের বিনিময়ে কম্পানি তাদের চিপস বিক্রি করে। কিন্তু গেম কম্পানির কাছ থেকে ডলারের মাধ্যমে চিপস কেনা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে, কারণ তারা চিপসের মূল্য অনেক বেশি নেয়। অনেক খেলোয়াড়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তাই তারা চিপস বা জুয়ার কয়েন কেনে ডিলারদের কাছ থেকে ৬৭টি গ্যাম্বলিং সাইট বন্ধ করল সরকার সেলিম ধরা পড়ার পর ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্প থেকে গতকাল ৬৭টি গ্যাম্বলিং সাইট বন্ধ করা হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব বা গুগলের মতো ওয়েবসাইট থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক মূলবোধ পরিপন্থী নির্দিষ্ট কোনো কনটেন্ট অপসারণে বিদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে যাতে ধরনা দিতে না হয়, তার জন্যই ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে ফেসবুক বা ইউটিউবে কোনো আপত্তিকর মন্তব্য, পোস্ট বা ভিডিও দেশের বাইরে দেখা গেলেও বাংলাদেশে দেখতে না পারার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে গ্রহণের আগে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর এটি বিটিআরসির কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিটিআরসিই এটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসিও এটি ব্যবহার করতে পারবে। ১৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প থেকে গত মে মাস পর্যন্ত ২২ হাজার পর্নো এবং আড়াই হাজারের মতো গ্যাম্বলিং সাইট বন্ধ করা হয়। এটি বাস্তবায়ন করছে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর। সেখানেই স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে দেশের ২৯টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং তিনটি ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (নিক্স)।
এ প্রকল্প ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পর্নো ও জুয়া সম্পর্কে আমাদের অবস্থান হচ্ছে জিরো টলারেন্স। কিন্তু এ অপরাধের বিশালত্ব হচ্ছে রাক্ষসের মতো। রাক্ষস বধ করলেও তার রক্তের ছিটা থেকে যেমন অনেক রাক্ষস জন্ম নেয়, তেমনি পর্নো ও জুয়া সাইটগুলো বন্ধ করলে হাজারটা বিকল্প সাইট তৈরি হয়ে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় সেলিম ধরা পড়ার নতুন যে ৬৭টি গ্যাম্বলিং সাইট বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলো সবই ক্যাসিনোসংক্রান্ত। সাইটগুলোর ওয়েব অ্যাড্রেসে ক্যাসিনো শব্দটি যুক্ত ছিল। ক্যাশ সার্ভারের মাধ্যমেও এই অনলাইন জুয়া চলছে।
এদিকে গতকাল সেলিম প্রধান ও তাঁর সহযোগীদের আসামি করে রাজধানীর গুলশান থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছে র্যাব। একটি মামলা করা হয়েছে মানি লন্ডারিং আইনে, অন্যটি মাদক আইনে। মানি লন্ডারিং মামলায় সেলিমসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার তিন নাগরিকও রয়েছেন। মাদক আইনে করা মামলায় সেলিমকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। মানি লন্ডারিং আইনের মামলার অন্য আসামিরা হলেন সেলিমের ব্যক্তিগত সহকারী রোমান, সীমান্ত রনি, শান্ত, আক্তারুজ্জামান, উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. তু, লি ও লিম। মাদক মামলায় সেলিমের সঙ্গে রোমান ও আক্তারুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে নামিয়ে আনা হয় সেলিম প্রধানকে। ওই রাতে গুলশানের ২ নম্বর এভিনিউর ৯৯ নম্বর সড়কের ১১/এ নম্বর বাড়ি এবং মঙ্গলবার দুপুরে বনানীর ২ নম্বর সড়কের ২২ নম্বর বাড়িতে সেলিমের বাসা-কাম-অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। এসব অভিযানে ২৯ লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের আট কোটি টাকার ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে সেলিমকে কারাগারে পাঠান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সম্পর্কিত খবর

স্থায়ীভাবে বহিষ্কারে কারণ দর্শানোর নোটিশ
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতার দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না, ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে নিজাম উদ্দিনকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামে চাঁদা না পেয়ে ‘মব’ তৈরি করে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মচারী ও জামায়াত নেতা নওশেদ জামালকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন নিজাম উদ্দিন।
গতকাল শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক শোকজ নোটিশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনামের নির্দেশনায় ওই শোকজ নোটিশ দেওয়া হলো।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ—সংগঠনের নীতিমালা ও শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কিছু কার্যকলাপে জড়িত হয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল পদধারী সদস্যসচিব হিসেবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠনের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজাম উদ্দিনের সংগঠনের সদস্যসচিব পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার কথা উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে একই সঙ্গে নিজাম উদ্দিনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না—সে বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে সংগঠন নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম পুলিশের কাছে আবেদন করেন এক নারী।
গতকাল সকালে ওই আবেদন করেন রিয়াজুল জান্নাত নামের ওই নারী। তিনি নগরীর বাগমনিরাম দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দা নওশেদ জামালের স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
আবেদনে রিয়াজুল জান্নাত উল্লেখ করেন—কিছুদিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্বামীর কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন।
আবেদনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী এই নেতাকে নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এদিকে সংগঠনের কারণ দর্শানোর নোটিশটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী নেতা নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে আমার জবাব কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।’

দেশে ফেরত তিনজন কারাগারে
জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

উগ্র জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উগ্র জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি জানার পর কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিচয় ও তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মালয়েশিয়ার আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান পুনরাবৃত্তি করছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার তিনজন কারাগারে : মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক হওয়ার পর দেশে ফেরা তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমানের আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গতকাল শনিবার ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের (নন জিআর) উপপরিদর্শক মোস্তফা হোসেন কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আসামিরা হলেন জাহিদ, নজরুল ও রেদোয়ান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাঁদের কারাগারে আটক আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনজনকে দেশে পাঠানো হয়। তাঁরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটস বা আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোকে অর্থ পাঠাতেন।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং বাকি ১৬ জন এখনো পুলিশি হেফাজতে বলেও জানান দেশটির আইজিপি। তাঁর সন্দেহ, পুরো নেটওয়ার্কে ১০০ থেকে ১৫০ জনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
দেশটির আইজিপি বলেন, ‘তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গি মতবাদও প্রচার করতেন এবং আরো বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই চক্রে যুক্ত করার চেষ্টা করতেন।’
মালয়েশিয়া পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আটক বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেটে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন। এই নেটওয়ার্কটি সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএসের সেলগুলোকে নিয়মিতভাবে সহায়তা করত।
এর আগে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আইএস সংশ্লিষ্ট এক বিস্ফোরণের পর দেশটির সরকার জঙ্গি তৎপরতা দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। এর পর থেকে শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

ছুটির ঘোষণা

আজ ৬ জুলাই রবিবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই আগামীকাল সোমবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে কালের কণ্ঠ অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। —সম্পাদক
।
এআইটি প্রত্যাহার দাবি বিটিএমএর
নীলনকশায় ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের বস্ত্রশিল্প
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিবেশী দেশের শিল্প ও কর্মসংস্থান শক্তিশালী করতে দেশের শিল্পকে রুগ্ণ করা হচ্ছে। এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র খাতের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। সরকার সম্প্রতি তুলা আমদানিতে নতুন ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এ সময় বক্তারা এটা ভারতের নীলনকশা—এমন অভিযোগ তুলে বলেন, আগাম কর বাস্তবায়ন করা হলে দেশের সুতা ও বস্ত্রকল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে এই বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিটিএমএর পরিচালক মো. খোরশেদ আলম, রাজিব হায়দার, শহীদ আলম, আবুদুল্লাহ আল মামুন, মো. সালেহউজ্জামান, বাদশা গ্রুপের বাদশা মিয়া, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) উপদেষ্টা আইয়ুব ভূইয়া, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হোসেন মেহমুদ, নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমল পোদ্দার।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ২ শতাংশ কর নির্ধারণ প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে ৫০ শতাংশ কর দিতে হয়। একদিকে ১৮ শতাংশ ব্যাংকঋণের সুদ, আবার অন্যদিকে ইনকাম ট্যাক্সের নামে ব্যবসার পুঁজি থেকে ৫০ শতাংশ কেটে নিলে কিভাবে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তা কারখানা চালু রাখবে।
তিনি বলেন, ‘এত দিন শুনেছি সরকার বড় বড় প্রকল্পে হাত দেবে না; এখন শুনছি ভোলায় ব্রিজসহ বিভিন্ন খাতে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেবে। সার্বিকভাবে ভালো নেই দেশের বস্ত্র খাত।’ এ সময় একতরফা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আশা করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস সরকার বিষয়টা আমলে নেবে এবং এই আগাম কর প্রত্যাহার করবে।
রাজিব হায়দার বলেন, ২ শতাংশ আগাম কর আরোপ করে সরকার বস্ত্রশিল্পকে ধ্বংসের জন্য কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। এর ফলে দেশীয় গণমাধ্যমের চেয়ে প্রতিবেশী দেশের মিডিয়াগুলোতে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। তারা বেশ খুশি। কারণ তারা জানে, এর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
মো. সালেহউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের সুতাকলগুলো বন্ধের পাঁয়তারা ছলছে। প্রতিবেশী দেশ এই খাতে ৪০ শতাংশ প্রণোদনা দিলেও বাংলাদেশ ২৫ শতাংশ থেকে ১.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, এই সংকট থেকে বের হওয়া না গেলে সংকটে পড়বে দেশের অর্থনীতি।
বিটিএমএর আরেক পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দেশের বস্ত্রকল ধ্বংসের পরিকল্পনা নতুন নয়। এটি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান তিনি।
বিটিএমএ পরিচালক হোসেন মেহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হলো। ফলে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর পথে যেতে পারবেন না।