ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

বি চৌধুরী ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বি চৌধুরী ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন, পাশে মির্জা ফখরুল (বাঁয়ে) ও আ স ম রব। ছবি : কালের কণ্ঠ

সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তাঁর দল বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে অবশেষে যাত্রা শুরু করল ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এই ফ্রন্টের নেতৃত্বে রয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা ড. কামাল হোসেন। বছরখানেক ধরে চেষ্টা চালানোর পর গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে সরকারবিরোধী এই বৃহত্তর জোট।

বিএনপি ছাড়াও এ জোটে আছে আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া।

নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তিসহ ঘোষিত সাত দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে জোট থেকে।

বস্তুত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিকল্পধারার সঙ্গে একই মোর্চায় থাকা অন্য দুটি দল জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের দূরত্ব তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা থেকে দূরে সরে গেলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বি. চৌধুরী এবং তাঁর দল বিকল্পধারা।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে সাত দফা দাবি ও ঘোষণা পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বৈধ সরকার গঠন করতে হলে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কাজ করব।

...জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আশা করছে, আপনারা অবশ্যই আমাদের সমর্থন করবেন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য।’

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতের ঘটনা তুলে ধরে কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছিলেন, বঙ্গবন্ধু তখন হেসে হেসে উত্তর দিচ্ছিলেন।...আমরাও এখন হেসে হেসে উত্তর দিচ্ছি। আমরা ভয় পাই না।

আমরা ভয়ে ভীত না। কত ট্যাংক, বন্দুক নিয়ে আমাদের ভয় দেখাবে দেখাক। আমরা ভয় পাই না। আমরা হুমকি দিয়ে কথা বলতে চাই না।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নব সূচনার দিন।...আমরা এখন একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আজকে লড়াই শুরু হলো নতুন আঙ্গিকে। আমরা আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি—দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। এখনো অনেকে ঐক্যপ্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে। তাদের আহ্বান করব, আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হই।’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘সরকার ঐক্যের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে। চক্রান্ত করতে পারে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ধৈর্য ও সতর্কতার সঙ্গে এসব মোকাবেলা করতে হবে। জনগণকে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে। এ ছাড়া কোনো একক দলের পক্ষে এই স্বৈরাচারী দানবকে উত্খাত সম্ভব নয়।’

ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি প্রসঙ্গে রব বলেন, ‘আমরা আগামী দিনে হজরত শাহজালালের পুণ্যভূমি সিলেট, হজরত শাহ মখদুমের পুণ্যভূমি রাজশাহীসহ সারা দেশে কর্মসূচি পালন করব। আমাদের নেতা (কামাল হোসেন) এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন। আমরা কূটনীতিক, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করব।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আশার আলো হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হলে আমাদের পক্ষ থেকে যে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে তা মানতে হবে। দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন এ দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য আমরা সাত দফা প্রণয়ন করেছি। আজকে যে ঐক্যের যাত্রা শুরু হলো, এই স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায়ের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক একটি দিন। গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আজ যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলো তা একটি মাইলফলক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণের একটিই পথ আছে, তা হলো জাতীয় ঐক্য।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমরা কয়েকটি সংগঠন যে চেষ্টা করছিলাম আজ তা সফল পরিণতির দিকে পৌঁছেছে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া স্বৈরতন্ত্রের দৈত্য সরানো সম্ভব নয়। আজ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই শুরু হলো।’

ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার আগে নাটকীয়তা : বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে চলা বৈঠকেই বস্তুত বিকল্পধারার সঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল অন্য দলগুলোর। এর সূত্র ধরে গতকাল হঠাৎ করেই বি চৌধুরী ও ড. কামালের মধ্যে দূরত্ব দৃশ্যমান হয়। আর শেষ পর্যন্ত বি চৌধুরীকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

জানা যায়, আগের দিন শুক্রবার আ স ম রবের বাসায় বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল, বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে বি চৌধুরী বেইলি রোডে ড. কামালের বাসায় যাবেন এবং তাঁরা দুজনে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের চূড়ান্ত খসড়া শেষবারের মতো পড়ে সম্মতি দেবেন। কারণ ওই খসড়ায় ‘মুক্তিসংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে’ এমন কথা বলা আছে। কিন্তু বিকল্পধারার দাবি ছিল, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী দলের সঙ্গে ঐক্য হবে না—এমন কথা উল্লেখ থাকতে হবে। শনিবার দলগুলোর বৈঠকেও এ ব্যাপারে বিকল্পধারা কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে। বস্তুত ওই বক্তব্য উল্লেখ থাকলে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে ইস্যুটি শনিবার শীর্ষ দুই নেতার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আর দুই নেতার মধ্যে দেখা বা বৈঠকের বিষয়টি শনিবারের বৈঠক থেকেই সমন্বয় করেন গণফোরামের পক্ষে মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং বিকল্পধারার পক্ষে মাহী বি চৌধুরী। তাঁরা দুজনেই স্ব স্ব দলের প্রধান বি চৌধুরী ও ড. কামালের সঙ্গে টেলিফোনে একাধিকবার কথা বলে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই সাক্ষাতের আগেই মতিঝিলে ড. কামালের চেম্বারে বৈঠক বসে। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম রব এবং পরে যোগদান করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। একটি সূত্রের দাবি, বি চৌধুরীকে বাদ দিয়ে মান্না বৈঠকে যেতে চাননি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তিনি যেতে বাধ্য হয়েছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

আগের দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকেল ৩টার দিকে বি চৌধুরী তাঁর দলের দুই নেতা মাহী বি চৌধুরী ও ব্যারিস্টার ফারুককে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বাসায় রওনা হন। পথেই তিনি ফোন করেন ড. কামাল হোসেনকে। কিন্তু ওপাশ থেকে প্রথমে তাঁর অফিসের একজন এবং পরে মোস্তফা মহসিন মন্টু ফোন ধরে বি চৌধুরীকে মতিঝিলের অফিসে যাওয়ার অনুরোধ করেন। জবাবে বি চৌধুরী প্রচণ্ড অপমানিত ও রুষ্ট হয়ে বলেন, তাঁকে দাওয়াত করা হয়েছে বাসায়, তিনি অফিসে কেন যাবেন। বি চৌধুরী ড. কামালের মতো ব্যক্তির আচরণ ও শিষ্টাচার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একজন মানুষকে দাওয়াত করে এভাবে অভদ্রতা করা তার উচিত হয়নি।’ তিনি জানান, বেশ কয়েক মিনিট বেইলি রোডের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি বাসায় ফেরেন। ওই বাসার দরজা বন্ধ ছিল এবং কেউ সৌজন্যবশত এক কাপ চাও তাঁকে অফার করেননি।

তবে দায়িত্বশীল অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার আ স ম রবের সঙ্গে অধ্যাপক বি চৌধুরীর দেখা হয়েছে, যেখানে মাহী বি চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় রবকে মাহী বলেন যে বিএনপির সঙ্গে কিছুতেই তিনি ঐক্য করতে দেবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁদের জবাই করবে—এমন কথাও মাহী রবকে বলেন বলে ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক নেতা কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন। ওই নেতার মতে, মাহীর ওই বক্তব্য বিশ্লেষণ করেই ড. কামালের বাসায় বৈঠক করে আর সময় নষ্ট না করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মাহী বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, ওই ধরনের কথা তিনি বলেনি। মাহীর মতে, ঐক্য ভাঙার জন্য একেকজন এখন একেক কথা বের করছেন।

এর আগে গত ৮ অক্টোবরের বৈঠকে দুই ইস্যুতে বিকল্পধারার মেজর (অব.) মান্নানের সঙ্গে রবের তর্কবিতর্ক হয়। ইস্যু দুটির একটি হলো, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দলের সঙ্গে ঐক্য করা যাবে না। অন্যটি হলো ক্ষমতার ভারসাম্য, বিশেষ করে সংসদের আসন বণ্টন এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাতে বিএনপি কিছুতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়।

বি. চৌধুরীকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন যাঁরা : এদিকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার জন্য গতকাল ফোন করে অনেকে অনুরোধ জানান বি চৌধুরীকে। সূত্র মতে, বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরী উভয়কে ফোন করে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অথবা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যা হওয়ার হয়েছে, এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ এ ছাড়া আ স ম রবও বি চৌধুরীর কাছে ফোন করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে অনুরোধ করেন। তিনিও ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে বি চৌধুরী বলেন, যে ঘটনা ড. কামাল হোসেন ঘটিয়েছেন তা শিষ্টাচারবহির্ভূত। পাশাপাশি যুক্তফ্রন্টের নেতা হওয়া সত্ত্বেও রব কী করে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে ওই বৈঠকে গেলেন, সে প্রশ্ন তোলেন বি চৌধুরী। এ ছাড়া মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিএনপির দু-একজন নেতাও ফোন করে বি চৌধুরীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন বলে জানা যায়।

বিকল্পধারা থেকে দুই নেতাকে বহিষ্কার : এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের সহসভাপতি শাহ আলম বাদল ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদারকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গতকাল বিকেলে বারিধারায় বি চৌধুরীর বাসায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের এক বৈঠকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে দলের মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান, মাহী বি চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওই দুই নেতার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৫-এর ২ (গ) ধারায় শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা অনুযায়ী তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়। এখন দুজনকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হলো। 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মোড়াপাড়া মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ বলেন, আমার বাবা রাতে মসজিদে এশার নামাজের পর বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে।

খবর পেয়ে আমরা ছুটে গিয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কারো সঙ্গে বাবার শত্রুতা ছিল না।
আমার বাবার মাছের ঘেরসহ আরো অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে রাখা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে আগামীকাল (শনিবার) থানায় মামলা হতে পারে। হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য

চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত
নূরুর রহমান

চাঁদপুর শহরে মসজিদের ভেতর দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রফেসরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে (৬৫) চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে মুসল্লিরা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মুসল্লি জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর মসজিদের ভেতরই মাঝবয়সী এক ব্যক্তি ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। উপস্থিত মুসল্লিরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে মসজিদের ভেতর বেঁধে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুসল্লিরা জানান, হামলাকারী নিজেও মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া জানান, আটক ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন (৫০)। কী কারণে তিনি ইমাম সাহেবের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। আটক ব্যক্তি একেক সময় একেক কথা বলছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ কাজল জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান তিনি।

মসজিদের ইমামের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব রাত সাড়ে ১১টায় এই প্রতিবেদককে জানান, আহত ইমামকে দেখতে রাত ১১টার দিকে তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যান এবং তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের কানের পাশে যেখানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে, সেখানে বেশ কিছু সেলাই দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, ইমাম সাহেবের মাথার সিটি স্ক্যান করা হবে। আঘাত গুরুতর হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

মন্তব্য

ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংসভাবে পুরান ঢাকার এক সাধারণ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। গত বুধবার সংঘটিত এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, এনসিপি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

তাঁরা রাত ১১টার পর পর্যন্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তিন সদস্যের একটি কমিটি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে নিহতের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যায়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা এ ঘটনাকে বর্বরোচিত, নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক অভিহিত করেছেন।
একই সঙ্গে এর পেছনে তৃতীয় কোনো শক্তি কাজ করছে কি না সেই প্রশ্নও তোলেন। ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য আসামিদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এরপর মরদেহের ওপর চলে এই বর্বরতা। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। এ সময় উত্সুক লোকজন এই নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের ক্যাম্প পাশে থাকলেও তারাও এগিয়ে আসেনি।
ভিডিওতে হত্যা ও বীভৎসতায় জড়িতদের হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কিছু বলতে শোনা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার পর এই বর্বরতার বিষয়টি সামনে আসে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/07.july/12-07-2025/kalerkantho-lt-9a.jpgছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছে তাদের দ্রুত বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এর পরই সংগঠনের পক্ষ থেকে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ভিডিও ফুটেজে কোনো একজন সোহাগকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেলেও তার বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে যে এ ঘটনার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষও জড়িত থাকতে পারে।

আজীবন বহিষ্কৃত পাঁচ নেতা : এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে। তাঁরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস, মাহমুদুল হাসান মহিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।

জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যস্থা নেওয়ার আহবান জানান।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সোহাগকে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশ করে এবং রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।

বুয়েটে বিক্ষোভ : এদিকে রাত ১১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় তাঁরা লিখিত বক্তব্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো : সোহাগ হত্যার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অভিযুক্ত মহিন, রবিনসহ সব খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক বিবৃতি : বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় সিরিয়াস ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কোনো অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনো দিন দেবেও না। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান জিরো টলারেন্স

জামায়াতের গভীর উদ্বেগ ও শোক : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক এবং নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।

তিনি বলেন, নিহত সোহাগের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি এনসিপির : সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।

জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চকবাজারের (মিটফোর্ডের সামনে) নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে শোকাহত। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জাতীয় যুবশক্তি।

অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শুক্রবার রাতে টিএসসি চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং সম্প্রতি ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় আসামি তারেক রহমান রবিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। গতকাল আদালতের কোতোয়ালি থানার প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন। আর অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন একই থানার উপপরিদর্শক মো. মনির। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তায় একদল লোক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম।  আর পুলিশ অস্ত্র মামলা করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার সব আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার কয়েক যুবক সোহাগকে বুধবার দুপুরে ডেকে নেন। সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরনো তামার তার, অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙ্গারি জিনিসের ব্যবসা করতেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোহাগকে হত্যা করে তাঁর পূর্বপরিচিতরা। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।

নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙ্গারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামের একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙ্গারি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তাঁর গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সোহানা মেটাল।

আসামিদের মধ্যে মহিন ও রবিন ছাড়াও রয়েছে সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

মন্তব্য

খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা
মাহবুবুর রহমান

খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী খুন হন। গতকাল আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

খুলনা অফিস জানায়, খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মাহবুবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে পায়ের রগ কেটে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক মাহবুবুরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর লাশ খুমেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। আজ শনিবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। নিহত মাহবুবুর রহমান মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার মো. আব্দুল করিম মোল্লার ছেলে।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, দুপুরে বাসার সামনে নিজের প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুবুর। ওই সময় হেলমেট পরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পরে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।

তিনি আরো জানান, মাদক বিক্রি নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মাহাবুবুুরের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।

ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত মাহবুবুরের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

এদিকে মাহবুবুরের হত্যার খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাসহ বিএনপি, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়। উপজেলার মোড়াপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, আমার বাবা রাতে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় একটি করে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর শহরের দাপুনিয়ার ধানক্ষেতে কচুরিপানার ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গতকাল রোজা মনি (৬) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির পেছনে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রোজা মনি সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের মোহাম্মদ সুমন মিয়ার মেয়ে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান,  গত বৃহস্পতিবার রাতে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের ইজি বাইকচালকের ঝুলন্ত লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়ার একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার  মোল্লাতেঘরিয়ার আদর্শপাড়ার মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ