ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

বেসামাল প্রশাসনে এক পদে ১৩ জনও

আশরাফুল হক রাজীব
আশরাফুল হক রাজীব
শেয়ার
বেসামাল প্রশাসনে এক পদে ১৩ জনও

সচিবকে সহায়তা করার জন্য বড় অঙ্কের বাজেট বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ে একটি করে অতিরিক্ত সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পদ আর একটিতে সীমাবদ্ধ নেই; প্রায় সব মন্ত্রণালয়েই একাধিক অতিরিক্ত সচিব কাজ করছেন। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে এই সংখ্যা এক ডজন পার হয়েছে। শুধু অতিরিক্ত সচিবই নন, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে একাধিক সচিবও নিয়োগ পাচ্ছেন।

সাংগঠনিক কাঠামোর চেয়ে বেশি যুগ্ম সচিব ও উপসচিব কাজ করছেন অনেক আগে থেকেই। পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি দিয়ে প্রশাসনের বেসামাল অবস্থা ফুটে ওঠে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বর্তমানে ১৩ জন অতিরিক্ত সচিব কাজ করছেন। সরদার আবুল কালাম আজাদ সবচেয়ে সিনিয়র অতিরিক্ত সচিব।

তাঁর পরই আছেন রোকসানা কাদের। তিনি জনস্বাস্থ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুবিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। অডিট ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখছেন মো. নজরুল ইসলাম। হারুন উর রশিদ খান দেখেন উন্নয়নসংক্রান্ত সেল।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন দেখেন ফয়েজ আহমদ। হাসপাতালের বিষয়গুলো দেখভাল করেন হাবিবুর রহমান খান। শৃঙ্খলা ও নার্সিং অনুবিভাগ দেখছেন সুভাষ চন্দ্র সরকার। পরিবারকল্যাণ দেখেন কাজী এ কে এম মহিউল ইসলাম। বদরুন নেসা দেখছেন চিকিৎসা-শিক্ষা।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট দেখছেন মো. আসাদুল ইসলাম। এর বাইরেও তিনজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে। তাঁরা হলেন রওনক জাহান, শেখ মো. শামীম ইকবাল ও শহীদুল হক।

স্থানীয় সরকার বিভাগে কাজ করছেন আটজন অতিরিক্ত সচিব। তাঁদের মধ্যে ইকরামুল হক সার্বিক বিষয় দেখেন। এ এস এম মাহবুবুল আলম দেখেন পরিবীক্ষণ, পরিদর্শন ও মূল্যায়ন ইউনিটের কাজ। সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী দেখেন প্রশাসন অনুবিভাগ। পানি সরবরাহ অনুবিভাগ দেখেন নাসরিন আখতার। উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মো. রইছ উদ্দিন। নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্ব পালন করেন মো. মাহবুব হোসেন। এ বি এম আরশাদ হোসেন পরিচালক-২-এর দায়িত্বে রয়েছেন। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগ দিয়েছেন আখতারুজ্জামান খান কবীর। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কম বাজেট বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর অন্যতম হচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। কয়েক বছর আগেও এই মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের কোনো পদই ছিল না। সচিব কোনো কারণে দেশের বাইরে থাকলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ

বৈঠকগুলোতে যোগ দিতেন যুগ্ম সচিব। সেই মন্ত্রণালয়ে আজ চারজন অতিরিক্ত সচিব দায়িত্ব পালন করেন। আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বিমান ও সিভিল এভিয়েশন সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখেন। প্রশাসন ও পর্যটনের দায়িত্বে রয়েছেন মো. ইমরান। হোটেল-রেস্তোরাঁ সেলের দায়িত্ব পালন করছেন মো. শাহাদৎ হোসেন। আর জ্যোতির্ময় বর্মণের দায়িত্বে রয়েছে প্রশাসন।

জনপ্রশাসনসচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, কয়েকটি বড় ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে রয়েছেন। এসব ব্যাচের কর্মকর্তারা অবসরে গেলে প্রশাসন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

একজন সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রশাসন যে কতটা বেসামাল, তা বোঝা যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১৩ জন অতিরিক্ত সচিবকে দেখে। অথচ অতিরিক্ত সচিবের পদ সৃষ্টি হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো বড় বাজেট বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোতে সচিবকে সহায়তা করার জন্য। সচিবের নেতৃত্বে যুগ্ম সচিবরাই মূলত মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। অতিরিক্ত সচিবের কাজ ছিল সচিবকে বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করা। এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে। পদের চেয়ে বেশি পদোন্নতি দিতে গিয়ে প্রশাসনে বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের সময় এ ঘটনার সূত্রপাত হয়নি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন একসঙ্গে ২৪ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। অথচ তখন পদ খালি ছিল মাত্র আটটি। অন্যদের কেন পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশাসন বেশ উত্তপ্ত ছিল। পরে এক সভায় তিনি বলেছিলেন, চাপের কারণে একসঙ্গে পদোন্নতি দিতে হয়েছিল। ওই সাবেক সচিব আরো বলেন, তখনো যদি চাপ থাকে, এখন সেই চাপ অনেক বেশি। এ কারণেই মন্ত্রণালয়গুলোতেও ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক সচিবকে দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব থাকার পরও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ‘সচিব, সমন্বয় ও সংস্কার’ নামে সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একাধিক সচিব কাজ করছেন। অনেকে আবার সচিব পদমর্যাদা ভোগ করছেন।

বর্তমান মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সচিব সমন্বয় ও সংস্কার পদে রয়েছেন এন এম  জিয়াউল আলম। পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ছাড়াও দুজন সচিব রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তাঁরা হচ্ছেন মো. খোরশেদ আলম ও মো. কামরুল আহসান।

সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের একজন সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেক্রেটারিয়েট ক্যাডার অ্যাডমিন ক্যাডারের (প্রশাসন ক্যাডার) সঙ্গে মিলে যাওয়ার পর প্রশাসনের ব্যালান্স নষ্ট হয়ে গেছে। আগে অ্যাডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়ম ভেঙে একটা কিছু করতে গেলে সেক্রেটারিয়েট ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাধা দিতেন। এতে প্রশাসন নিজস্ব পদ্ধতিতেই চলত। সরকার পদ না থাকার পরও অ্যাডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিচ্ছে। কিন্তু আরো যে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে, সেখানে দিচ্ছে না। নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতিও আটকে যায় পদ না থাকার কারণে। এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে দেওয়ার পর তাঁরা যে প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটা উল্লেখ করার মতো। তাঁরা প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অ্যাডমিন ক্যাডারের বেলায় পদোন্নতি দিতে পদ লাগে না, কিন্তু নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে শূন্য পদ ছাড়া হয় না! আসলে এক জায়গায় অনিয়ম করতে গেলে তার প্রভাব নানা জায়গায় পড়ে।

এমন অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা উপসচিব হিসেবে যে রুমে বসে যে দায়িত্ব পালন করেছেন, পদোন্নতির পর যুগ্ম সচিব হয়েও একই রুমে বসে একই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পরের দফায় পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিবও হয়েছেন; কিন্তু রুম বদল হয় না, কাজও একই থাকে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যে রুমে বসে অতিরিক্ত সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন, একসময় সেসব রুমে বসেছেন সিনিয়র সহকারী সচিবরা।

প্রশাসনের চার স্তরে মঞ্জুরীকৃত এক হাজার ৬১৬ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন প্রায় দ্বিগুণ কর্মকর্তা। অন্যদিকে সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব স্তরে এক হাজারের বেশি পদ খালি রয়েছে। এতে ভেঙে পড়েছে প্রশাসনের পিরামিড কাঠামো। মঞ্জুরীকৃত পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন সিনিয়রদের ডিঙিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আগের পদেই পদায়ন অথবা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি এবং অন্যত্র প্রেষণ অথবা ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। কারণ তাঁদের পদায়ন করার জন্য নির্ধারিত পদ নেই। এই মুহূর্তে এ রকম কর্মকর্তা আছেন এক হাজার ২৫০ জনের বেশি। প্রেষণ ও চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ায় বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরে যাঁরা নিজস্ব কর্মকর্তা, তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

আবার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় সব মন্ত্রণালয়েই সিনিয়র কর্মকর্তা জুনিয়রদের অধীনে কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই তাঁদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সচিবালয়ে কর্মরত একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমি যুগ্ম সচিব। আমার মন্ত্রণালয়ের যিনি সচিব, তিনি আমার জুনিয়র। এমনকি যিনি অতিরিক্ত সচিব, তিনিও আমার জুনিয়র। অন্য অতিরিক্ত সচিব আমার ব্যাচের হলেও মেধাতালিকায় তিনি আমার অনেক পেছনে। অর্থাৎ সচিব বা অতিরিক্ত সচিব সবাই আমার জুনিয়র। চাকরিজীবনের পুরো সময়টাতেই তাঁকে আমি ‘তুমি’ করেই সম্বোধন করেছি। আর স্বাভাবিক কারণেই সিনিয়র হওয়ায় তাঁরা আমাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেছেন। কিন্তু এখন আমাকে ‘স্যার’ বলতে হয়। এতে আমরা দুজনই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছি। কেউ কাউকে ‘স্যার’ বলি না। এমনকি ওই সচিবের সঙ্গে বৈঠক থাকলে আমি কৌশলে অনুপস্থিত থাকি। সেখানে আমার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কোনো কর্মকর্তাকে পাঠাই। আমি ইচ্ছা করলেই অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হতে পারি; কিন্তু সেখানেও ঝামেলা আছে। অন্য একটা মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে সেখানে কাজ শুরু করতে হলে ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কৃপা লাগবে। অনেক কর্মকর্তা বদলি হন ঠিকই, কিন্তু মন্ত্রী বা সচিবের কৃপা না থাকায় কোনো ডেস্ক বা দায়িত্ব পান না। এ কারণে বদলি হতে চাই না এই ভেবে যে অন্তত বসার একটা জায়গা তো আছে।”

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিবিসি বাংলার দাবি

শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ গঠনযত যাই হোক, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ভারতের অবস্থানে এখনো কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের অনুরোধ মেনে তাঁকে বিচারের জন্য প্রত্যর্পণ করার যে কোনো সম্ভাবনা নেই, দিল্লিতে ওয়াকিবহাল মহল সেটাও এখনো জোর দিয়েই বলছে। শেখ হাসিনা নিজেও এই দুটি বিষয়ের কোনোটি নিয়েই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

গত এগারো মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের আশ্রয়ে থাকাকালে তিনি নিয়মিতই দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষণ দিচ্ছেন বা নানাভাবে ইন্টার‌্যাক্ট করছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ও ইউটিউব চ্যানেলে তিনি শেষ লাইভ ইন্টারঅ্যাকশন করেছেন গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায়। কিন্তু সেখানে এই প্রসঙ্গগুলোর কোনোটিই আসেনি।

তবে বিবিসির যে তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের অডিও ফাঁস করা হয়েছে, তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক পোস্টে সেটিকে অপসাংবাদিকতার নির্লজ্জ নজির বলে দাবি করেছেন।

এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যে শত শত নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁদেরও অনেকেই তাঁদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খণ্ডন করার চেষ্টায় সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এরই মধ্যে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, সেটা বিবিসির তদন্তে প্রমাণিত। এই পরিস্থিতিতে ভারতের যে আর টালবাহানা না করে এবং শেখ হাসিনাকে আড়াল না করে তাঁকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিতশফিকুল আলম সেই দাবিও জানিয়েছেন।

তবে ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় পরিষ্কার বলছেন, এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ শেখ হাসিনাকে যে পরিস্থিতিতে ও ভারতের যে নীতির ভিত্তিতে এ দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি।

তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর যদি কোনো অডিও কেউ গোপনে রেকর্ড করে সেটা ফাঁসও করে দেয়; ভারতের সেটা দেখার বিষয় নয়, আর তাঁকে এ দেশে আতিথেয়তা বা রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সেই অডিওর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।  

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্য অভিযুক্তদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা আদৌ কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে, তা নিয়েও ভারত সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হলেও ভারত যে সেটাকে গুরুত্ব দেবে না, সে ইঙ্গিতও পরিষ্কার।

অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, বা মন্তব্যও করেনি।

প্রত্যর্পণের অনুরোধে যে কারণে সাড়া নেই : বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাতে বিচারের জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসেই।

ভারত সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, কিন্তু তার পর প্রায় সাত মাস হতে চললেও সে ব্যাপারে আর কোনো সাড়াশব্দ করেনি। বাংলাদেশের ওই প্রত্যর্পণের অনুরোধকে ভারত যে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটাও আকারে ইঙ্গিতে একাধিকবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছিলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে ঠিকই, কিন্তু কোনো দেশ যদি মনে করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার অধিকারও তাদের আছে।

তাঁর যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে যেভাবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা আনা হচ্ছে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা পর্যন্ত আদালতে হাজির হতে পারছেন না কিংবা সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক বা দীপু মনির মতো সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের আদালত প্রাঙ্গণেই শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তাতে এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন সম্পন্ন হলেও তাতে বিচারপ্রক্রিয়ার গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন হয়েছেএমনটা ভারত মনে করছে না। আর সে কারণেই চার্জ গঠন হলেও শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ভারত বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবেএই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে এগুলো সবই মূলত ঘোষিত যুক্তি। ভারতের একাধিক সাবেক কূটনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার আসল কারণটা হলো রাজনৈতিক। তাঁদের বক্তব্য হলো, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যিনি ভারতের আস্থাভাজন ও পরীক্ষিত বন্ধুর ভূমিকায় ছিলেন, তিনি শেখ হাসিনা। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এক সাবেক হাইকমিশনার বিবিসিকে বলেছেন, আজ সংকটের মুহূর্তে ভারত যদি তাঁর পাশে না দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের কোনো নেতা-নেত্রীই ভারতকে আর কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না। আর এটাই সেই প্রকৃত কারণচার্জশিট পেশ হোক বা না হোক, অডিও লিক হোক বা না হোকভারত যে জন্য কখনোই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না।

শেখ হাসিনা নিজেই যা বলার বলবেন : গত বাহাত্তর ঘণ্টায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার যেসব অভিযোগ উঠেছে বা আদালতে যে চার্জশিট পেশ হয়েছে, তা নিয়ে ভারত অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, আমরা শেখ হাসিনার মুখপাত্র নই। তিনি যেসব বক্তব্য দেন তার সঙ্গে ভারত সরকারের যে কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা অনেক আগেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি।

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনা ভারতের একজন অতিথি, কোনো রাজনৈতিক বন্দি নন। কাজেই ভারত তাঁর মুখে লাগাম পরানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি কখনোই! সূত্র : বিবিসি বাংলা

মন্তব্য

শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

    এক বছরে পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি। এমনকি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা।

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার আসামি পাঁচজনকে এরই মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন বলেছে, গত এক বছরে অপকর্মের অভিযোগে এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গত শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত সব ইউনিটকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের জেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে একটি শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কী প্রক্রিয়ায় এই অভিযান চালানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো দাগি অপরাধী কোনোভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত কি না, দলে নতুন করে কেউ অনুপ্রবেশ করেছে কি না, বিএনপির নতুন সদস্য যাঁরা হয়েছেন তাঁদের আগের ইতিহাস কী তা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দল থেকে ইউনিট কমিটিগুলোকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সম্প্রতি বলেছেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রিজভী গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপি বা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নামে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের রাতেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার।

কোনো ছিদ্রপথে দু-একজন দুষ্কৃতকারী ঢুকে পড়লে সেটা সব সময় হয়তো খোঁজ রাখা যায় না। এত বড় একটি পরিবার। কিন্তু কোনোভাবে যদি দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করা যায়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল কখনো কার্পণ্য করেনি।

মূল আসামিদের এজাহার থেকে বাদ দেওয়া রহস্যজনক : পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার না করা এবং মামলার এজাহার থেকে তাদের বাদ দেওয়া রহস্যজনক বলে দাবি করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে।

তিন সংগঠনের পক্ষে যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট, ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরায় যাদের দেখা গেছে, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে, তারা অদ্যাবধি গ্রেপ্তারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। বাদীর মেয়ে বলেছেন, মামলার এজাহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজন খুনিকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না! এটি একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।

মোনায়েম মুন্না বলেন, কারা কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্যজনকে আসামি করল, এটি আমরা জানতে চাই। আর ঘটনাটি বুধবারের। শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা কেন দুই দিন পর প্রচার করা হলো? এর পেছনে কারা জড়িত, সেটিও খুঁজে দেখা উচিত। আপনাদের মাধ্যমে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এই প্রশ্নটি রেখে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা এক তীব্র মানসিক যাতনা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করছি। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে পুরো জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সভ্যতার এই সময়ে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তার মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচজনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি। অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।

তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর হতেই হবে। আপনারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। এখানে আমাদের যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করীম পল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।

মন্তব্য

খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শনাক্ত

    ১১ মাসে ২৭ হত্যা
খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে  জড়িতরা শনাক্ত

খুলনা মহানগরে ১১ মাসে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি, ছিনতাই, হামলার মতো ঘটনা। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনার বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং পরে রগ কেটে নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করে যুবদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে।

তাঁর হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। তবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

খুলনার পুলিশ দাবি করছে, ১১ মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশির ভাগের কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জড়িতদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

পুলিশ চেষ্টা করছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে। খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত খুলনা মহানগরীতে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই সময়ে মামলা করা হয় ২০টি।

খুলনা মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপির নেতারা।

মহানগর বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুসহ পদস্থ নেতারা গত শুক্রবার রাতে যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, খুন, অস্ত্রের মহড়া, চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘটনা খুলনায় নিত্যদিন ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি, খুনসহ সন্ত্রাসী ঘটনা। তাঁরা বলেন, মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ভার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তাই দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

খুলনার নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সন্ধ্যা নামলেই খুলনাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।

এখন আবার শুরু হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের ঘটনা। খুলনার পুলিশ প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। যার ফলে অপরাধগুলো ঘটছে। খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

নিহত মাহবুবুরের বাবা মো. আ. করিম মোল্লা বাদী হয়ে গতকাল দুপুরে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের সবাই অজ্ঞাতপরিচয়। মামলা তদন্ত করছেন দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত হত্যার কারণ বলা যাচ্ছে না। পুলিশের দুটি এবং ডিবির একটি মিলে মোট তিনটি দল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট-পরবর্তী দুটি মামলার জের, দলীয় কোন্দল, স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি, মাদক ও চরমপন্থী সংযোগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলাসহ সাতটি বিষয় সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত করছে।

গত শুক্রবার দুপুর দেড়টায় দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলযোগে আসা তিন অস্ত্রধারী মাহবুবুরকে (৪০) প্রথমে গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। ওই দিন বিকেলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

গতকাল সকালে নিহতের বাড়িতে গেলে মাহবুবুরের স্ত্রী এ্যারিন সুলতানা বলেন, আমার স্বামী সবাইকে বিশ্বাস করতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে থেকেই তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি বাড়ি এসেও একটা গ্রুপ হুমকি দিয়ে গেছে। নিহত মাহবুবুরের দুটি মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে জান্নাতুল (১১) চতুর্থ শ্রেণির এবং ছোট মেয়ে মাওয়া (৯) দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

নিহত মাহবুবুরের এক আত্মীয় বলেন, মূলত দুটি মামলাকে কেন্দ্র করেই তার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধ হয়। একটি মামলার বাদী মাহবুব নিজে এবং অন্যটির বাদী মো. জাকির হোসেন। ওই দুটি মামলার আসামিরা মাহবুবকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল।

মন্তব্য
আইন উপদেষ্টা

সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে করা হবে।

গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

স্ট্যাটাসে ড. আসিফ নজরুল লেখেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

তিনি জানান, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ধারা ১০ অনুযায়ী এই মামলাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ