<p>জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে স্মার্ট কার্ড বিতরণের শুরুতেই কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও যান্ত্রিক জটিলতায় ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ করেছেন সাধারণ নাগরিকরা। সঠিক নির্দেশনা না পেয়ে নির্ধারিত এলাকার বাইরের ভোটাররা যেমন বিতরণকেন্দ্রে ভিড় করেছেন, তেমনি আঙুলের ছাপ নিয়ে সফটওয়্যারের জটিলতায় অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে স্মার্ট কার্ড না নিয়েই। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট কয়েকজনের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়ার পর গতকাল সোমবার থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের একটি করে ওয়ার্ডে এবং বিলুপ্ত হওয়া ছিটমহল  দাশিয়ারছড়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উন্নতমানের এই জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।</p> <p>গতকাল সকাল ৯টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উত্তরায় এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রমনা এলাকায় দুটি স্কুলে শুরু হয় স্মার্ট কার্ড বিতরণ। উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্র ঘুরে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যায় ভোটারদের কাছ থেকে।</p> <p>উত্তরা মডেল টাউনের ১ ও ২ নম্বর সেক্টরের অনেক নাগরিককে গতকাল সকাল ৬টায় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও স্মার্ট কার্ড হাতে না পেয়ে দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। ১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মনে করেছিলাম সকাল সকাল লাইনে দাঁড়ালে স্মার্ট কার্ড তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব। কিন্তু দুপুর পেরিয়ে গেলেও সার্ভারে আমার আইডির কোনো হদিস বের করতে পারেনি, যার কারণে কার্ড না নিয়েই বাড়ি চলে যাচ্ছি। আগামীকাল যদি এ অবস্থা বজায় থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’ তিনি জানান, সঠিক নির্দেশনা না থাকায় এবং পর্যাপ্ত প্রচারিত না হওয়ায় নির্ধারিত এলাকার বাইরের ভোটাররাও সেখানে ভিড় করেছেন।</p> <p>উত্তরা হাই স্কুলে শামসুল হক বলেন, “স্বামী-স্ত্রী মিলে স্মার্ট কার্ড নিতে এসেছি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর আমাদের বলা হয়, ‘আপনার কার্ড হলেও আপনার স্ত্রীর কার্ড হবে না। কারণ সার্ভারে তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের অবস্থান জানা সম্ভব হচ্ছে না।’ ফলে দুজনই বাসায় চলে যাচ্ছি।”</p> <p>কেউ কেউ অভিযোগ করেন, সকালে প্রক্রিয়া শেষ করা হলেও তাঁদের বিকেলে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। নুসরত নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বলেন, ‘এর পরও আমি খুশি। জীবনে প্রথমবার একটি স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়েছি।’ ডা. সালাহউদ্দিন বলেন, যে প্রক্রিয়ায় স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে সেটা বেশ ধীরগতির। একেকটি কার্ডের সব প্রক্রিয়া শেষ করতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে। এর ফলে একজনকে তাঁর কার্ড সংগ্রহের জন্য একাধিক দিন লাগছে।</p> <p>বিকেলের দিকে অনেকেই স্বস্তির সঙ্গে স্মার্ট কার্ড নিতে পেরেছেন। কেউ কেউ ১০-১৫ মিনেটের মধ্যে কার্ড হাতে নিয়ে হাসিমুখে বাসায় ফিরেছেন। ইয়াসিন নামের এক যুবক বলেন, ‘আমি বিকেল ৪টায় এসে সোয়া ৪টার মধ্যে স্মার্ট কার্ড পেয়ে যাই। তবে আমার সঙ্গে এসে অনেকেই সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণে কার্ড না নিয়েই ফিরে গেছেন।’</p> <p>উত্তরা মডেল টাউন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ জালাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার জন্য প্রথম দিন কিছু সমস্যা হচ্ছে। সফটওয়্যারের কিছু ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আশা করি, আগামীকাল থেকে আর সেটা থাকবে না। তবে যাঁরা আজকে কার্ড পাননি, তাঁদের আঙুলের ছাপ, চোখের মণির প্রতিচ্ছবি এবং মোবাইল ফোন নম্বর ও বাসার ঠিকানা রেখে দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে কার্ড পাওয়া গেলে তাঁদের ফোন করে ডেকে এনে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’</p> <p>স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪টি সেক্টর উত্তরা মডেল টাউনে। এর মধ্যে ১ নম্বর সেক্টর হলো সবচেয়ে ছোট। এখানে ১৫টি সড়কে মাত্র ২৩৬টি প্লট রয়েছে। সে হিসাবে স্মার্ট কার্ডের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি হবে না। ২ নম্বর সেক্টরে র‌্যাব ও এপিপিএন অফিস থাকায় সেখানেও জাতীয় পরিচয়পত্রের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। এ জন্য ৭ নম্বর সেক্টরে উত্তরা হাই স্কুলে ক্যাম্প বসানো হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হলেও ভোটাররা ভোর থেকেই সেখানে ভিড় করতে থাকেন।</p> <p>উত্তরা কেন্দ্রে পাঁচটি গ্রুপে ২৫ জন অপারেটরকে কম্পিউটারে কাজ করতে দেখা গেছে। থানা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, অপারেটরদের তাঁরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন। এ কেন্দ্রে প্রায় চার হাজার কার্ড রয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৫ জন অপারেটর মিলে ৭০০ কার্ড বিতরণ করতে পেরেছেন। থানা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, প্রথম দিন চার হাজার কার্ড বিতরণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা ত্রুটির কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।</p> <p>ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকার কারণ সম্পর্কে থানা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরে বেশির ভাগই পুলিশ সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া এখানে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাবের কার্যালয়। এসব কারণে এখানে ভাসমান ভোটার বেশি। তাঁরা বেশির ভাগই বিভিন্ন জায়গা চলে গেছেন। তবে ২ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় লোক থাকায় তাঁদের কাছে স্মার্ট কার্ড হস্তান্তর করা হয়েছে।’ আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এ এলাকায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।</p> <p>এদিকে ডিএসসিসির রমনার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ক্যাম্পে কাকরাইলের রমনা ও মতিঝিল থানার অংশ, ডিআইটি কলোনি, নিউ বেইলি রোডের ভোটারদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্ড বিতরণ চলবে।</p> <p>সিদ্ধেশ্বরীতে কার্ড সংগ্রহ করতে আসা এক নারী বলেন, ‘অনেক কষ্টে প্রায় এক ঘণ্টা পর কার্ড হাতে পেলাম। কাজে অনেক অব্যবস্থাপনা।’</p> <p>রমনা থানার নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবা মমতা হেনা কালের কণ্ঠকে বলেন, সকাল ৯টায় নির্ধারিত সময়ে বিতরণ শুরু করা হয়। প্রথমেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিন্নাতুন নাহার শাহানা তাঁর স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেন। এ এলাকার চার হাজার ভোটারের মধ্যে এক হাজার ৫৪ জনকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার ভোটারদের মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি। মাহবুবা হেনা বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড নিতে ভোটারদের বিতরণকেন্দ্রে হাজির হয়ে পুরনো লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে। যাঁরা নিবন্ধিত হয়েছেন কিন্তু এনআইডি হাতে পাননি, তাঁদের মূল নিবন্ধন স্লিপ দেখাতে হবে। আর যাঁদের এনআইডি বা স্লিপ হারিয়ে গেছে, তাঁদের থানায় জিডি করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।’</p> <p> </p>