ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

চার জেলা নিয়ে নতুন বিভাগ ময়মনসিংহ

  • এলাকায় আনন্দ-উল্লাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চার জেলা নিয়ে নতুন বিভাগ ময়মনসিংহ

ঢাকা বিভাগের চার জেলা ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। ময়মনসিংহ হচ্ছে দেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এই প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার খবর জানাজানি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

কোথাও কোথাও আনন্দ মিছিল করা হয়। বিতরণ করা হয় মিষ্টিও।

ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে জেলা ছিল ১৭টি। নতুন বিভাগ হওয়ায় ১৩ জেলা নিয়ে ঢাকা বিভাগ পুনর্গঠন করা হবে।

তবে আগামী দিনে ফরিদপুরকে বিভাগ করা হলে ঢাকা বিভাগের জেলার সংখ্যা আরো কমে যাবে। সরকার কুমিল্লা ও নোয়াখালী মিলিয়ে আরো একটি প্রশাসনিক বিভাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গতকাল সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, নতুন এই বিভাগে সবার প্রথমে হবে বিভাগীয় কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজি পুলিশের অফিস। পর্যায়ক্রমে অন্য সব কার্যালয়ও পাবে ময়মনসিংহ।

ময়মনসিংহ বিভাগের আয়তন ১০ হাজার ৫৮৪ বর্গকিলোমিটার। এই বিভাগের জনসংখ্যা এক কোটি ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৬ জন।

ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনার সঙ্গে টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা রেখে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এ নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনাও হয়। কিন্তু আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ময়মনসিংহ বিভাগে কিশোরগঞ্জকে না রাখার অনুরোধ করেন।

কারণ হিসেবে তাঁরা বৈঠকে জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব কম। আর সব কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করলে কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষ এটাকে ভালোভাবে নেবে না। এই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জকে ঢাকার সঙ্গে রাখার দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে কিশোরগঞ্জবাসী। এ ছাড়া টাঙ্গাইলেও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।

পৌরসভা হলো ভাণ্ডারিয়া : নিকার সভায় পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলাকে পৌরসভায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার মুরাদনগর থানা বিভক্ত করে বাঙ্গরা নামে আরেকটি নতুন থানা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে মুরাদনগর উপজেলায় দুটি থানা হবে।

ময়মনসিংহে আনন্দ-উল্লাস : ময়মনসিংহ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ময়মনসিংহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী সরকার ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। বিকেলে ময়মনসিংহ শহরে আনন্দ মিছিল বের করা হয় পৌরসভার উদ্যোগে। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতেও এ মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় শহরের বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ। আনন্দ মিছিলটি বিকেল সাড়ে ৫টায় রেলস্টেশন চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক হয়ে টাউন হল ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, কাউন্সিলর শরাফ উদ্দিন, কাউন্সিলর জামাল হোসেন রোজ, কাউন্সিলর লিয়াকত আলী, চেম্বার পরিচালক শংকর সাহা প্রমুখ। শহরের বাইরে থাকায় মিছিলে অংশ নিতে পারেননি পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটু। টিটু কালের কণ্ঠকে বলেন, এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ময়মনসিংহের ইতিহাসে। এ অঞ্চলের মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

আবেগাপ্লুত নাগরিক আন্দোলনের নেতারা : ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার দাবি নিয়ে রাজপথে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার থাকা সংগঠনটির নাম জেলা নাগরিক আন্দোলন। প্রায় ২০ বছর ধরে এ সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার দাবিতে। গতকাল বিভাগ ঘোষণার পর এ সংগঠনের নেতারা নিজেদের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান বলেন, 'আমরা দীর্ঘসময় ধরে আন্দোলন করছি। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার ব্যাপারে আন্তরিক। তাই এবার আমাদের আশা ছিল অনেক। সেই আশা পূরণ হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।' জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, 'এটি এক ঐতিহাসিক সময়। এত দিন যা ছিল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তব।' সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক শহীদুর রহমান বলেন, 'অনেকেই বলতেন ময়মনসিংহ কোনো দিন বিভাগ হবে না। কিন্তু সরকারের আন্তরিকতা সেসব কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিল।' আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, 'আমরা সবচেয়ে খুশি হতাম যদি আজ টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ যুক্ত থাকত।' জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, উন্নয়নবঞ্চিত ময়মনসিংহ এখন আশার আলো দেখছে। টিইউসির জেলা সভাপতি মাহবুব বিন ছাইফ বলেন, 'জীবদ্দশায় ময়মনসিংহে বিভাগ দেখতে পারলাম, এটা অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার।'

প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ধর্মমন্ত্রীর : ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হওয়ার কারণেই আজকে ময়মনসিংহ বিভাগ হলো। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা যুক্ত হতে না চাইলে এ দুই জেলাকে বাদ দিয়েই ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। ধর্মমন্ত্রী বিভাগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, 'আমরা উভয়ে মিলে ময়মনসিংহের উন্নয়নে কাজ করে যাব।'

প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার ময়মনসিংহ জেলা হয়েছিল ১৭৮৭ সালের ১ মে। সময়ের বিবর্তনে ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে সেই জেলা ধাপে ধাপে বিভক্ত হয়। এর পরও দেশের অন্যতম বৃহত্তম জেলা হিসেবে ছিল ময়মনসিংহ।

জামালপুরে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ : জামালপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণায় জামালপুর শহরে গতকাল বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। শহরের তমালতলা থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। পরে শহরের স্টেশন রোডে পূরবী পেট্রল পাম্পের সামনে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়। ওই পথসভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। আনন্দ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মধু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম রহমান, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহরিয়ার উজ্জল, ছানোয়ার হোসেন ছানু, নিহাদুল আলম নিহাদ প্রমুখ।

এ ছাড়া জামালপুর প্রেসক্লাব ভবনে ক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন জেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেলু আকন্দ, মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম, অ্যাডভোকেট জাহিদ আনোয়ার প্রমুখ।

শেরপুরের বিভিন্ন সংগঠনের সন্তোষ : শেরপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করায় শেরপুরের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিনন্দন জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। গতকাল সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর উল্লসিত হয়ে ওঠে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিভাগ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নবদিগন্তের সূচনা হলো।'

হুইপ আতিউর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ দীর্ঘদিনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল বলেন, 'আমরা অভিভূত। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করলেন আমাদের সকলের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।'

জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা একটি ভালো উদ্যোগ।

শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূরণ হলো। এ বিভাগের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।'

শেরপুর পৌরসভার মেয়র হুমায়ুন কবির রোমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সদস্য ও জেলা জাসদের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

শেরপুর চেম্বারের সভাপতি মো. মাসুদ বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী।'

এ ছাড়া সন্তোষ প্রকাশ করেছে শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, পাতাবাহার খেলাঘর আসর, বিপ্লবী রবি নিয়োগী সভাকক্ষ, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মন্তব্য

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ