পঞ্চম অধ্যায়
পদার্থের অবস্থা ও চাপ
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১। মৃত সাগরে মানুষ না ডুবার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : মৃত সাগরের পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণের পরিমাণ এত বেশি যে এর গড় ঘনত্ব মানবদেহের গড় ঘনত্ব অপেক্ষা বেশি। এ ক্ষেত্রে মানবদেহের ওজন অপসারিত সম-আয়তন পানির ওজন অপেক্ষা অনেক কম হওয়ায় অতিরিক্ত প্লবতার কারণে মানুষ ওই সাগরের পানিতে ডোবে না।
২। মানুষ বায়ুমণ্ডলের প্রচণ্ড চাপ অনুভব না করার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পৃথিবী বায়ুমণ্ডল দ্বারা পরিবেষ্টিত। ওজন থাকার কারণে বায়ুমণ্ডলের চাপ আছে।
পৃথিবী পৃষ্ঠে এই চাপ প্রতি বর্গমিটারে প্রায় 105 N। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহের ক্ষেত্রফল 1.5 m2 ধরলে বায়ুমণ্ডল তার দেহের ওপর 1.5x105 N বল প্রয়োগ করে। তবে মানুষের শরীরের ভেতরে রক্তের চাপ বাইরের এই চাপ অপেক্ষা সামান্য বেশি বলে মানুষ সাধারণত বায়ুর এই চাপ অনুভব করে না।
৩।
ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভের উচ্চতা হঠাৎ খুব কমে গেলে আবহাওয়া সম্পর্কে কী পূর্বাভাস দেওয়া যায়—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : হঠাৎ যদি পারদস্তম্ভের উচ্চতা খুব কমে যায় তবে বুঝতে হবে চারদিকে বায়ুমণ্ডলের চাপ সহসা কমে গেছে এবং ওই স্থানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপের স্থান থেকে প্রবল বেগে বায়ু ওই নিম্নচাপের অঞ্চলে ছুটে আসবে। সুতরাং ঝড়ের সম্ভাবনা আছে।
৪।
কোনো বস্তু যখন স্বাভাবিক অবস্থা হতে বিকৃত হয় তখন কী হয়—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কোনো স্থিতিস্থাপক বস্তুর ওপর বাহ্যিক বল প্রয়োগের ফলে বস্তুটি যখন স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বিকৃত হয় তখন বস্তুর অণুগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়। তার ফলে বস্তুর দৈর্ঘ্য, আয়তন বা আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। এই প্রতিরোধ বল বাহ্যিক বলকে বাধাদানের চেষ্টা করে।
৫। হুকের সূত্র গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : হুকের সূত্রটি হলো, ‘স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পীড়ন বিকৃতির সমানুপাতিক।’
গাণিতিকভাবে, পীড়ন ∝ বিকৃতি
বা, পীড়ন = ধ্রুবক x বিকৃতি
বা, পীড়ন ÷ বিকৃতি = ধ্রুবক।
এই ধ্রুবককে বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক বলে এবং এর একক Nm-2।
৬। স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক পীড়নের এককের সমান—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত যে ধ্রুব সংখ্যা তাকে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক বলে। অর্থাৎ স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক = পীড়ন ÷ বিকৃতি।
যেহেতু বিকৃতির কোনো একক নেই এবং পীড়নের একক Nm-2।
সুতরাং, স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক = পীড়নের একক ÷ বিকৃতির একক ঘস-২ ÷ 1 = Nm-2
তাই বলা হয়, স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক পীড়নের এককের সমান।
৭। পদার্থের আণবিক গতিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পদার্থের অণুগুলোর গতিশীল অবস্থা আছে, এই ধারণা ধরে নেওয়াই পদার্থের আণবিক গতিতত্ত্বের মূল বিষয়। এই তত্ত্ব বেশ কয়েকটি স্বীকার্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত,
যেমন : যেকোনো পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত। এই কণাগুলোকে পদার্থের অণু বলে। অণুগুলো এত ক্ষুদ্র যে তাদেরকে বিন্দুবৎ বিবেচনা করা হয়। পদার্থের কণাগুলো সর্বদা গতিশীল।
৮। কোনো কঠিন বস্তু পানিতে ডুববে নাকি ভাসবে তা এর উপাদানের ঘনত্ব দ্বারা কিভাবে অনুধাবন করা যায়—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : শুধু ঘনত্ব জেনে কোনো বস্তু পানিতে ডুববে না ভাসবে তা বলে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বস্তুর ঘনত্ব পানির ঘনত্ব (1000 kgm-3) অপেক্ষা বেশি হলে বস্তুটি পানিতে ডুবে যাবে এবং বস্তুর ঘনত্ব পানির ঘনত্ব অপেক্ষা কম হলে বস্তুটি পানিতে ভেসে থাকবে। কোনো বস্তুর ঘনত্ব পানির ঘনত্বের সমান হলে এটি তখন পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসবে। যেমন: অ্যালুমিনিয়ামের ঘনত্ব 2700 kgm-3 এবং মোমের ঘনত্ব 800 kgm-3। সুতরাং একটি টুকরা অ্যালুমিনিয়াম পানিতে ডুবে যাবে এবং মোমের একটি টুকরা পানিতে ভেসে থাকবে।