<p><strong>প্রথম অধ্যায়</strong></p> <p><strong>সমাজকর্ম : প্রকৃতি ও পরিধি</strong></p> <p><strong>অনুধাবনমূলক প্রশ্ন</strong></p> <p>১। সমাজকর্মের ‘ত্রিবিধি ভূমিকা’ বলতে কী বোঝায়?</p> <p>উত্তর : একই সঙ্গে সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে সমাজকর্মের বিবিধ ভূমিকা বলে অভিহিত করা হয়। সমাজের অগ্রগতি সাধন ও সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার জন্য একই সঙ্গে সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সমাজের মানুষের সন্তোষজনক জীবনমান রক্ষায় এই ত্রিবিধ কার্যক্রম কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।</p> <p>২। সমাজকর্ম শিক্ষা বলতে কী বোঝ?</p> <p>উত্তর : সমাজকর্ম শিক্ষা বলতে সাধারণত সমাজকর্মের ওপর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণকে বোঝায়। একজন পেশাদার সমাজকর্মী হওয়ার জন্য যেসব ব্যাবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন হয়, তাকে সমাজকর্ম শিক্ষা বলে। সমাজকর্ম অভিধান মতে, ‘সমাজকর্ম শিক্ষা হলো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ও পরবর্তী অভিজ্ঞতা, যা সমাজকর্মীদের তাদের পেশাগত ভূমিকা পালনে প্রস্তুত করে তোলে।’</p> <p>৩। ‘সমাজকর্ম একটি সংগঠিত সাহায্যদান প্রক্রিয়া’—বুঝিয়ে লেখ।</p> <p>উত্তর : সমাজকর্ম হলো একটি পদ্ধতিনির্ভর সুসংগঠিত সাহায্যদান প্রক্রিয়া। এটি পরিকল্পিত উপায়ে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও কৌশল এমনভাবে প্রয়োগ করে যাতে তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে সক্ষম হয়। এমন সুসংগঠিত উপায়ে সাহায্যদানের কারণে সমাজকর্ম সুসংগঠিত সাহায্যদান প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়।</p> <p>৪। সমাজকর্ম কিভাবে মানুষকে সাহায্য করে?</p> <p>উত্তর : সমাজকর্ম হলো একটি সাহায্যকারী পেশা। তবে এটি বস্তুগত সাহায্য প্রদানে বিশ্বাসী নয়, বরং ব্যক্তি ও দল বা সমষ্টিকে তাদের হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে এমনভাবে সাহায্যদানে বিশ্বাসী, যাতে তারা নিজেদের সম্পদ ও সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে সামাজিক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করতে সক্ষম হয়।</p> <p>৫। ডাব্লিউ এ ফ্রিডল্যান্ডার প্রদত্ত সংজ্ঞাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : ডাব্লিউ এ ফ্রিডল্যান্ডার প্রদত্ত সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন—প্রথমত, সমাজকর্ম হলো মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ক বিজ্ঞান। অর্থাৎ সমাজকর্ম মানবীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে। দ্বিতীয়ত, সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক এক পেশাদার সেবাকর্ম। অর্থাৎ সমাজকর্ম পেশার জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন আবশ্যক। তৃতীয়ত, সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এককভাবে বা দলীয়ভাবে সামাজিক সন্তুষ্টি এবং স্বনির্ভরতা অর্জনে সর্বদা তৎপর।</p> <p>৬। ক্ষমতার পুনরুদ্ধারকরণ বলতে কী বোঝায়?</p> <p>উত্তর : সমাজে প্রতিটি মানুষের তার অবস্থান অনুযায়ী রয়েছে আলাদা ভূমিকা। যখন কোনো মানুষ তার অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়, তখনই দেখা দেয় নানা সমস্যা। এসব মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ দেখানো বা যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলাই হলো ক্ষমতার পুনরুদ্ধার। ক্ষমতার পুনরুদ্ধার ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ দেয়। ফলে সে সমাজে তার যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়ে ওঠে।</p> <p>৭। সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে কী বোঝায়?</p> <p>উত্তর : একটি সমাজে বহু শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। মানুষের সমস্যাগুলোও বহুমাত্রিক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক, নৈতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি দিকের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তাদের সার্বিক কল্যাণে ব্রতী হওয়াকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে সব দিকের সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন ছাড়া মানুষের তথা সমাজের সার্বিক কল্যাণ সম্ভব নয়। তাই সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের কল্যাণসাধনের চিন্তা মাথায় রেখে সমাজকর্ম সেবা প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই ধরনের চেতনাই হচ্ছে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।</p>