<p><strong>[নবম শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে সমর দাসের উল্লেখ আছে]</strong></p> <p>সমর দাস একজন বিখ্যাত বাংলাদেশি সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তিনি ১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নবদ্বীপ বসাক লেনে এক সংগীতশিল্পী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জিতেন্দ্রনাথ দাস ও মাতা কমলিনী দাস। পরিবারের গণ্ডিতেই তাঁর সংগীত শিক্ষা শুরু হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তদানীন্তন অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রে বংশীবাদক হিসেবে সমর দাসের সংগীত জীবনের সূচনা। তরুণ বয়সেই গিটার ও পিয়ানো বাজানোর জন্য তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরে তিনি একজন খ্যাতিমান গিটারবাদক হিসেবে পরিচিতি পান।</p> <p>সমর দাস ১৯৬১ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর থেকে পরিচালিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও প্রধান পরিচালক ছিলেন। এ সময় বহু গানে তিনি সুর দেন। তাঁর সুর করা গান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও দেশবাসীকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সুর করা ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’ প্রভৃতি গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। কলকাতার এইচএমভি কম্পানি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের ‘হৃদয় হতে’ নামে একটি লংপ্লে রেকর্ড প্রকাশ করে। এতে ছিল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ২৬টি গান। সমর দাস ছিলেন এই রেকর্ডের সংগীত পরিচালক। নবগঠিত বাংলাদেশ বেতারের সিগনেচার টিউন বা সূচনা সংগীত সমর দাসের কম্পোজ করা।</p> <p>বাংলা ছায়াছবির সংগীত পরিচালক হিসেবেও সমর দাস খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি ‘মুখ ও মুখোশ’, ‘লটারি’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘আসিয়া’, ‘গৌরী’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘রাজা এলো শহরে’ প্রভৃতি ছবির সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ‘নদীর সন্তান’, ‘নবারুণ’, ‘বীরাঙ্গনা সখিনা’, ‘সোনার সবুজ গাঁয়ে’ নৃত্যনাট্যেরও সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের দুই হাজারের বেশি গানের সুরকার। ১৯৮৫ ও ১৯৯৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমস সূচনা সংগীতের তিনিই সুরারোপ করেছিলেন। শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৭৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসেবে পরিচিত স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। তিনি একুশে পদকসহ আরো অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। ঢাকার ওয়ারীর খ্রিস্টান কবরস্থানে তাঁর সমাধি রয়েছে।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>