<p>ভেড়া বা মেষ একটি নিরীহ স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এদের কৃষিকাজে ব্যবহার করে আসছে। ইংরেজিতে এটি Sheep নামে পরিচিত। ভেড়ার বৈজ্ঞানিক Ovis aries।</p> <p>ভেড়া পশম (Wool) ও মাংসের জন্য পালন করা হয়। ভেড়া  দলবদ্ধ অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। ফলে বিশেষ করে চারণভূমিতে ভেড়া পালন খুবই সুবিধাজনক। কারণ দলবদ্ধ থাকে বলে ভেড়ার পাল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশি লোকের প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া ভেড়া নিজেদের খাদ্য নিজেরাই জোগাড় করতে পারে। ভেড়া পালনে প্রাথমিক খরচ তুলনামূলক অনেক কম। ভেড়া ছয় মাস পর পর গর্ভবতী হয়, একসঙ্গে একাধিক বাচ্চা দেয়। ফলে ভেড়ার সংখ্যা দ্রুত বাড়ে, ভেড়ার মলমূত্র জমির সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, জমির আগাছা খেয়ে উপকার করে। ভেড়ার রোগব্যাধি খুবই কম হয়।</p> <p>বাংলাদেশের ভেড়া মোটা পশম উৎপাদন করে। প্রতিবছর একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়া থেকে ৩.৫-৫.৫ কেজি পশম পাওয়া যায়। বছরে তিন-চারবার ভেড়ার পশম কাটা যায়। প্রতিবারে ০.৫-০.৭৫ কেজি পশম পাওয়া যায়।</p> <p>পৃথিবীর শীতপ্রধান দেশগুলোতে ভেড়ার পশম খুব মূল্যবান ও জনপ্রিয়। ভেড়ার পশম দিয়ে কম্বল, শাল, সোয়েটার, জ্যাকেট তৈরি করা হয়। মোটা পশম কার্পেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। যেসব জাতের ভেড়া পালন করা লাভজনক তাদের মধ্যে লিসেস্টার লং-উল শিপ, মেরিনো, টার্কানা, লিংকন, ডরসেট, সিগাই, ডার্পার, ইস্ট ফ্রিজিয়ান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।</p> <p>ভেড়া গরু, মহিষ ও ছাগলের মতোই জাবরকাটা প্রাণী এবং এদের খাদ্যের শ্রেণিবিন্যাস গরু-ছাগলের মতোই। এদের আঁশযুক্ত খাদ্যের পরিমাণ দানাদার খাদ্যের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। বাচ্চা প্রসবের এক মাস পূর্ব থেকে ভেড়ির খাদ্যতালিকায় দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম হারে দানাদার খাদ্য যোগ করতে হয়। নবজাত ভেড়া শাবককে জন্মের পর তিন-চার দিন পর্যন্ত ওজন অনুপাতে শালদুধ পান করাতে হয়। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।</p> <p>ভেড়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। সব বয়সের ভেড়াকে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে ও সময়মতো টিকা প্রদান করতে হবে। ভেড়া বাদলা, তড়কা, ম্যাস্টাইটিস, খুরারোগ, চর্মরোগ, কৃমি, বহিঃপরজীবী ইত্যাদিতে বেশি আক্রান্ত হয়। রোগাক্রান্ত ভেড়াকে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসাসেবা দিতে হয়।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে পত্রপত্রিকায় ভেড়া সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>