<p>ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বোমাং সার্কেল, চাকমা সার্কেল ও মং সার্কেল নামে তিনটি সার্কেলে প্রশাসনিকভাবে বিভাজিত। এই সার্কেলপ্রধানদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকেরা রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করে। সেরূপ বোমাং সার্কেলপ্রধানকে বলা হয় বোমাং রাজা।</p> <p>বোমাং রাজাদের শাসনব্যবস্থা যতটা না বাস্তবিক অর্থে, তার চেয়ে বেশি প্রতীকী। প্রতীকী অর্থে এই কারণে যে রাজা হলেও ইতিহাস কিংবা রূপকথার রাজাদের মতো তাঁদের রাজত্ব এবং সৈন্যসামন্ত নেই। প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই, নেই তেমন আয়-রোজগারও। স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে সরকারের পক্ষে ট্যাক্স আদায় করাই তাঁদের মূল দায়িত্ব। একই সঙ্গে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর সামাজিক বিচার-সালিস করার দায়িত্বও তাঁদের। উচ্চ শিক্ষিত এবং আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এর প্রয়োজনীয়তা ফিকে হয়ে এলেও পার্বত্য তিন জেলায় টিকে আছে এই প্রতীকী রাজপ্রথা। প্রতীকী হলেও পার্বত্য দুর্গম অঞ্চলের কোনো কোনো মানুষের কাছে এখনো রাজাই সব কিছু। বিশেষ করে বান্দরবান জেলার দুর্গম অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া রাজকীয় অনুষ্ঠান রাজপুণ্যাহ (প্রজাদের কাছ থেকে বার্ষিক ট্যাক্স আদায় অনুষ্ঠান) নিয়মিত আয়োজন করায় বান্দরবানের বোমাং রাজার সঙ্গে প্রজাদের তাৎপর্যপূর্ণ যোগাযোগ এখনো বিদ্যমান রয়েছে।</p> <p>অন্যান্য রাজবংশে রাজপুত্রের রাজপদে অভিষিক্ত হওয়ার নীতি রয়েছে। কিন্তু বোমাং বংশে রাজপুত্র নন, রাজবংশের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য বোমাং রাজবংশের রাজপদের উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন। ১৬১৪ সালে প্রথম বোমাং রাজা হয়েছিলেন মং চ প্যাই বোমাং। তিনি ১৬৩০ সাল পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আরাকানরাজ মং চ প্যাই বোমাংকে প্রথম ‘বোমাং’ (সেনাপতি বা সেনানায়ক) উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন।</p> <p>বর্তমানে ১৬তম বোমাং রাজা ক্য সাইন প্রু চৌধুরী বোমাংগ্রী মারা গেলে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে উ চ প্রু বোমাংগ্রীকে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল নিয়োগ দেয় সরকার। সে থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি পেশায় কৃষি প্রকৌশলী ছিলেন।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে পত্রপত্রিকায় বোমাং রাজা সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো]</p> <p> </p>