<p>বাসক ছোট আকৃতির চিরহরিৎ গুল্মজাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। Acanthaceae পরিবারের এই উদ্ভিদের আদি নিবাস আফ্রিকা ও এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Justicia adhatoda। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্র এটি জন্মে। হিন্দিতে একে বলা হয় আডুসা, বানসা বা ভাসিকা।</p> <p>অধিক শাখা-প্রশাখাযুক্ত এই উদ্ভিদের উচ্চতা গড়ে এক থেকে দুই মিটার। কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা খুব বেশি শক্ত নয়। পাতা আকারে বড় ও ঘন, রং সবুজ, গন্ধযুক্ত, দেখতে ভল্লাকার, অগ্রভাগ সুচালো, শিরা-উপশিরা স্পষ্ট। বাসকের ফুল ফোটে বসন্তকালে গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে থোকায় থোকায়। ছোট এই ফুলগুলোর নমনীয় কোমল পাপড়ির রং সাদার সঙ্গে বেগুনি মেশানো। এই ফুলের মাঝে লম্বা পুংদণ্ড থাকে। ফুল গন্ধহীন হলেও সবুজ পাতার মাঝে থোকায় থোকায় থাকা ফুলগুলো দেখতে বেশ মনোরম।</p> <p>ফুল শেষে ফলে পরিণত হয়। ফল সুপারির আকৃতির এবং এর ভেতরে থাকে বীজ। বীজ ও ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার করা যায়।</p> <p>প্রায় সব ধরনের মাটি এবং উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ও সমতল ভূমি বাসক রোপণের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া আর্দ্র ও ভেজা মাটি এবং হালকা ছায়া থেকে ছায়াযুক্ত স্থানেও বাসক জন্মে। বাসক বেশ কষ্টসহিষ্ণু উদ্ভিদ। পরিবেশের প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম।</p> <p>ভেষজ গুণে গুণান্বিত বাসকের মূল, পাতা, ফুল ও ছালে রয়েছে নানা রকম ঔষধি গুণ। তাজা ও শুকনো উভয় পাতাই ভেষজ গুণসম্পন্ন। বাসক পাতার রস মাথায় লাগালে উকুন থাকলে চলে যায়। গায়ের ঘামের গন্ধও দূর করতে এই রস সহায়ক। সর্দি-কাশি, কফ, হাঁপানি, কৃমি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, খিঁচুনি, প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রণা এবং চুলকানি ও চামড়ার দাদ সারাতে বাসক পাতা কাজে লাগে। এ ছাড়া বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে, যার ফলে ছত্রাক জন্মায় না। ফল প্যাকিং ও সংরক্ষণের কাজে বাসক পাতা ব্যবহার করা হয়।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</strong></p>