<p>ঘাস পরিবারের বৃহত্তম সদস্য কাষ্ঠল চিরহরিৎ উদ্ভিদ বাঁশ সাধারণত একত্রে গুচ্ছ হিসেবে জন্মায়। এক একটি গুচ্ছে ১০ থেকে ৭০-৮০টি বাঁশগাছ একত্রে অবস্থান করে। বাঁশের এই গুচ্ছকে বাঁশঝাড় বলে।</p> <p>পৃথিবীতে তিন শর ওপরে বাঁশের প্রজাতি থাকলেও বাংলাদেশে মাত্র ২৬ প্রজাতির বাঁশ দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ, ওরাবাঁশ, বরাকবাঁশ, ফারুয়াবাঁশ, কালোবাঁশ, ভুদুম বাঁশ প্রভৃতি।</p> <p>‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,</p> <p>মাগো আমার শ্লোক বলা কাজলা দিদি কই?’</p> <p>একসময়ের অপরিহার্য উপকরণ বাঁশ নিয়ে কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর লেখা ‘কাজলা দিদি’ কবিতায় প্রমাণ মেলে বাঁশের ব্যবহার ও বাঁশঝাড়ের জনপ্রিয়তার। বাঁশ আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে একটি অপরিহার্য উপকরণ। বাঁশ নামের এই উদ্ভিদটি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। আদিকালে জন্মকালীন ধাত্রীরা শিশুর নাড়ি কাটত বাঁশের পাতলা ধারালো ছিটা দিয়ে। মৃত ব্যক্তিকে সৎকার ও কবর দেওয়ার সময় এখনো ব্যবহার করা হয় বাঁশ।</p> <p>বাঁশঝাড় ছাড়া গ্রাম কল্পনা করা যায় না। প্রতিটি বাড়ির সামনে-পেছনে বাঁশঝাড়ে সন্ধ্যাকালীন কাকপক্ষীর কূজনে প্রকাশ পায় স্বর্গীয় অনুভূতি। গায়ের মানুষের কাছে বাঁশঝাড়ের গুরুত্ব অপরিসীম। গৃহের অবকাঠামো নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশ ব্যবহৃত হয়। বাঁশের বাঁশি বাংলা ঐতিহ্যে একটি জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বাঁশের পাতা চালাঘরের ছাউনিতে এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার দেশগুলোতে কাগজ তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে বাঁশ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।</p> <p>এ ছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের এখনো খাদ্যের বড় একটা অংশ আসে বাঁশঝাড় থেকে। তাই বাঁশঝাড়ের অর্থনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অধিক বাঁশ ও কোঁড়ল আহরণ, জ্বালানির চাহিদা পূরণসহ বাঁশের বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণে বাঁশঝাড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।           </p> <p> ►  ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p>