ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

নবম-দশম শ্রেণি : বাংলা প্রথম পত্র

  • লুৎফা বেগম, সিনিয়র শিক্ষক, বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা, ঢাকা
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
নবম-দশম শ্রেণি : বাংলা প্রথম পত্র
অঙ্কন : প্রসূন

ব হু  নি র্বা চ নী  প্র শ্ন

গদ্য

মমতাদি

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

১।   মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম কী?

     ক) প্রভাত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়      

     খ) প্রদোষ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

     গ) প্রসন্ন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়      

     ঘ) প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

২।   কাজের জন্য মমতাদির আবেদন কিরূপ ছিল?

     ক) সসংকোচ 

     খ) নিঃসংকোচ

     গ) লজ্জা জড়িত           ঘ) বিনীত

৩।   মমতাদির বয়স কত ছিল বলে কথক মনে করেন?

     ক) বাইশ-তেইশ           খ) তেইশের মতো    গ) তেইশ                

     ঘ) তেইশ-চব্বিশ হতে পারে

৪।

   মমতাদি কেন রান্নার কাজ করতে এসেছিল?

     ক) ভালো রান্না করতে পারে বলে               খ) লেখকদের একজন রাঁধুনীর দরকার ছিল    গ) সংসারে আয়-রোজগারের কেউ ছিল না বলে        

     ঘ) সংসারের অভাব-অনটনের কারণে

৫।   মমতাদির দুচোখ সজল হয়ে উঠেছিল—

            i. আশাতীত মাইনে হওয়াতে    ii. পনেরো টাকা মাইনে হওয়াতে      iii. কৃতজ্ঞতায়

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i ও ii                              খ) i ও iii গ) ii ও iii        ঘ) i, ii ও iii

৬।   মমতাদির ওপর সবাই খুশি ছিল কেন?

     ক) শান্ত স্বভাবের জন্য খ) কাজের শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতার জন্য       

     গ) বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করার জন্য               ঘ) অতিরিক্ত কাজের জন্য

৭।   মমতাদি লেখকদের বাসায় কতক্ষণ কাজ করত?

     ক) সকাল থেকে দুপুর খ) ভোর ৬টা থেকে ১০টা   

     গ) ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১০টা                ঘ) দুবেলা, সকাল-বিকাল

৮।

   লেখক মমতাদির পেছনে ছোটাছুটি করছিল—

            i. মমতাদির কাজের তদারকি করতে   

            ii. ভাব করতে

            iii. নিজেকে বাড়ির ছোট কর্তা হিসেবে তুলে ধরতে

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i      খ) ii   গ) i ও ii                      ঘ) ii ও iii

৯।   মিসেস রহমানকে নতুন গৃহকর্মী নিয়ে রান্নাঘরে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। তাঁর নির্দেশ না পেলে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। কাজের চেয়ে কথা বলতেই সে বেশি পছন্দ করে।

তা ছাড়া তার কাজকর্মও অগোছালো, গতি ধীর। তাই নতুন গৃহকর্মীর ওপর মিসেস রহমান কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন।

     উদ্দীপকের গৃহকর্মীর আচরণের যে দিকটি ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ তাহলো মমতাদি—

            i. বুদ্ধি খাঁটিয়ে কাজ করে     ii. নির্দেশের অভাবে কোনো কাজ ফেলে রাখে না

            iii. কাজে শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতা আছে

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i ও ii                                     খ) i ও iii        গ) ii ও iii        ঘ) i, ii ও iii

১০। বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটিতে প্রকাশ পেয়েছে মমতাদির—

     ক) চাতুর্য    খ) অলসতা   গ) বাচালতা  

     ঘ) আন্তরিকতা

১১।  মমতাদির মুখ চমকে লাল হলো কেন?

     ক) রাঁধুনী কি না জানতে চাওয়ায়              

     খ) বামুনদি বলে ডাকাতে    

     গ) মমতাদির গালের চড়ের দাগ ছোট ছেলেটির কাছে ধরা পড়াতে              

     ঘ) রাঁধুনী হয়েও বাড়ির ছোট ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরেছিল বলে

১২।

  খোকার কাছে মমতাদির আবেদন কী ছিল?

     ক) তাকে যেন বামুনদি বলে না ডাকে            খ) খোকা যেন আর রসগোল্লা সন্দেশ না খায় গ) তার গালের চড়ের দাগের কথাটি যেন প্রকাশ না করে     

     ঘ) খোকা যেন লেবু দুটোই খায়

১৩।  ‘নাহি পাই কাজ, তাই ত্যাজি লাজ বেড়াই ভিক্ষা করি

     হে দয়াল নবি, দাও কিছু মোরে নহিলে পরানে মরি’

     উদ্দীপকের ভাব ‘মমতাদি’ গল্পের যে বাক্যের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য পূর্ণ তাহলো—

            i. আপনারা রান্নার লোক রাখবেন

            ii. আমি রান্না ছাড়া ছোট ছোট কাজও করব    iii. হ্যাঁ, আমি রাঁধুনী

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i ও ii                       খ) i ও iii                     গ) ii ও iii        ঘ) i, ii ও iii

১৪।  বৈসাদৃশ্যগত দিকটিতে প্রকাশ পেয়েছে মমতাদির চরিত্রের—

     ক) নমনীয়তা  খ) কঠোরতা  গ) আবেদন   ঘ) কর্মদক্ষতা

১৫।  মমতাদি কেন বাড়ির ছোট ছেলেটিকে আদর করেছিল?

     ক) স্নেহে     খ) মমতায়   গ) আন্তরিকতা প্রদর্শনের জন্য 

     ঘ) নিজের গর্ব প্রতিষ্ঠার লোভে

১৬।  ‘বেশি আশকারা দিও না, জ্বালিয়ে মারবে’—মমতাদির প্রতি লেখকের মায়ের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে—

            i. সম্মান     ii. করুণা     ii. দয়া

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i ও ii                     খ) i ও iii         গ) ii ও iii       ঘ) i, ii ও iii

১৭।  অভাব-অনটনে পড়ে দশ বছরের সুমিকে ওর বাবা মালিকের বাসায় কাজ করতে পাঠায়। কিন্তু মালিকের মেয়ে মিলা একই বয়সী হওয়া সত্ত্বেও সুমির সঙ্গে অকারণে দুর্ব্যবহার করে। নিরুপায় সুমি নীরবে সবই সহ্য করে।

     উদ্দীপকের সুমি ও ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি চরিত্রটি কোন বিচারে সাদৃশ্যপূর্ণ?   

     ক) দারিদ্র্য    খ) নিরাশ্রয়   গ) অল্পবয়স ঘ) অলসতা

১৮।  সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মমতাদি ব্যতিক্রম কেন?   

     ক) স্বল্পভাষী  খ) সময়নিষ্ঠ   গ) সাদরে গৃহীত     ঘ) পরিশ্রমী

১৯।  ‘তোমার ওপর মায়া বসেছে, তুমি চলে গেলে আমাদেরও কি ভালো লাগবে?’    

     ‘মমতাদি’ গল্পের এ উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে মমতাদির প্রতি মায়ের—   

            i. দায়িত্বশীলতা

            ii. সম্মান    

            iii. সহমর্মিতা

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i    খ) ii   গ) iii    ঘ) ii ও iii

২০।  রাসেলদের বাসার দারোয়ান একদিন রাসেলকে তার বাড়ির গাছের পেয়ারা এনে দিলে সে তার ঘৃণা ভরে ছুড়ে ফেলে।

     উদ্দীপকের রাসেল ‘মমতাদি’ গল্পের স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির সঙ্গে কিভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ?  

     ক) সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের দিক থেকে     খ) বন্ধুত্ব স্থাপনের দিক থেকে 

     গ) আপ্যায়ন করার দিক থেকে            ঘ) সম্মান প্রত্যাশার দিক থেকে

২১।  বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি    ‘মমতাদি’ গল্পের কোন বাক্যে প্রতিফলিত হয়েছে?   

     ক) তুমি মিথ্যে বলছো দিদি। তোমায় কেউ মেরেছে    খ) আর একটা লেবু খাব দিদি            গ) তোমার বরের চাকরি হলে তুমি কী করবে?    ঘ) এখুনি যাচ্ছ কেন? রান্নাঘর দেখবে না?

২২।  ‘কারো কাছে যা পাই না, তুমি তা দেবে কেন?’ ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির কাছে পেয়েছে—

            i. আন্তরিকতা  

            ii. সহমর্মিতা  

            iii. মর্যাদা

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i ও ii                     খ) ii ও iii       গ) i ও iii     ঘ) i, ii ও iii

২৩।  মমতাদির গালের দাগ যে চড়েরই, তা স্কুলপড়ুয়া বুঝতে পারল যেভাবে তাহলো—  

            i. মাস্টারের চড় খেয়ে অবনীর গালে ও রকম দাগ হয়েছিল

            ii. গালে আঙুলের তিনটি দাগ দেখেই সে নিঃসন্দেহ হয়েছিল

            iii. মশা মারলে গালে আঙুলের ছাপ পড়ে না

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক)  ও ii                      খ) i ও iii          গ) ii ও iii      

     ঘ) i, ii ও iii

২৪।  বাড়িতে কুটুম যেসব মিষ্টি এনেছিল তা হলো—  

            i. চমচম     ii. সন্দেশ     iii. রসগোল্লা

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i ও ii                                খ) i ও iii           গ) ii ও iii                     ঘ) i, ii ও iii

২৫।  নুজহাতের শোবার ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র দামি আর সুন্দর। কিন্তু ঘরের কাপড়চোপড়, বিছানা, ড্রেসিং টেবিলের জিনিসপত্র সবই অগোছালো বলে কোনো সৌন্দর্যই ফুটে ওঠে না।

     উদ্দীপকের নুজহাতের শোবার ঘর ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির শোবার ঘরের সঙ্গে যেভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ তা হলো—

            i. সযত্নে গুছিয়ে রাখা   ii. কম দামি শ্রীহীন    iii. বিশৃঙ্খলার অন্ত নেই

     নিচের কোনটি সঠিক?    

     ক) i ও ii                     খ) i ও iii         গ) ii ও iii        ঘ) i, ii ও iii

২৬।  বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটিতে প্রকাশ পেয়েছে—     

     ক) দারিদ্র্য    খ) কর্মদক্ষতা  গ) অবহেলা       

     ঘ) প্রতিকূল পরিবেশ

২৭।  মমতাদি স্কুলপড়ুয়া ছেলেটিকে কেন বলেছে ‘কৃতার্থ হলাম’?   

     ক) তাকে দিদি বলে ডাকবে তাই    

     খ) তার বিবর্ণ গালে হাত বুলিয়ে দিয়েছে বলে       গ) তার মতো গৃহকর্মীর বাসায় নিজের ইচ্ছায় গিয়েছে বলে     

     ঘ) একটা লেবু খেয়ে আরেকটা খাবার আবদার করেছে বলে

২৮।  মমতাদি ছেলেটিকে স্কুলপড়ুয়া জিনিসের সঙ্গে তুলনা করেছে কেন?   

     ক) অনেক জিনিসপত্রের মধ্যে ছেলেটিকে তার একটি জিনিস বলেই মনে হয়েছিল 

     খ) কম দামি জিনিসপত্রের মধ্যে ছেলেটিও চৌকিতে মাদুরের বলে উপুড় হয়ে ঘুমিয়েছিল বলে   গ) ছেলেটির প্রতি মমতাদির অবহেলা প্রকাশ পেয়েছে বলে           

     ঘ) ছেলেটির অসুখে কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি বলে

২৯।  চড় খাওয়ার বিষয়টি মমতাদি কেন গোপন রেখেছিলেন?    

     ক) লজ্জা পেয়ে      খ) আত্ম সম্মানের জন্য      গ) বিপদের আশঙ্কায়         ঘ) লোক জানাজানির ভয়ে

৩০।  ‘মমতাদি’ গল্পটি লেখার উদ্দেশ্য হলো—

            i. গৃহকর্মীদের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন        ii. গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ করা

            iii. সম্মান ও সহমর্মিতা নিয়ে গৃহকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো

     নিচের কোনটি সঠিক?

     ক) i ও ii                     খ) i ও iii        গ) ii ও iii        ঘ) i, ii ও iii

বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর : ১. ঘ ২. খ ৩. গ ৪. ঘ ৫. ঘ ৬. খ ৭. গ ৮. খ ৯. ঘ ১০. ঘ ১১. ক ১২. খ ১৩. ক ১৪. গ ১৫. ঘ ১৬. গ ১৭. ক ১৮. গ ১৯. গ ২০. ক. ২১. খ ২২. ঘ ২৩. ক ২৪. গ ২৫. ক ২৬. ক ২৭. ঘ ২৮. খ ২৯. খ ৩০. ঘ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছোট পাখি, ছোট পাখি... সর্বনাশ হয়ে গেছে

শেয়ার
ছোট পাখি, ছোট পাখি... সর্বনাশ হয়ে গেছে

শেখ হাসান, চিফ ফটো জার্নালিস্ট, কালের কণ্ঠ

দুপুর একটা দশ কিংবা পনেরো মিনিট হবে, হঠাৎ খবর এলো একটা জেট বিমান ক্র্যাশ করেছে। হ্যাঁ, ততক্ষণে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। আমাদের ছোট ছোট পাখিগুলো আগুনে ঝলসে ছটফট করছে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি বিল্ডিংয়ে আগুন ধরেছে।

খবর পেয়েই ছুটে গেলাম স্পটে। সেখানে পৌঁছাই দুপুর দুইটার পর। যখন হাউজ বিল্ডিং এলাকায় পৌঁছাই, তখন অনেকে বলছিল, ও দিক দিয়ে যাওয়া যাবে না। কথা না শুনেই এগিয়ে গেলাম।
একটু সামনে যেতেই দেখলাম, ছাত্র, সাধারণ মানুষ সবাই মিলে রাস্তার দু’পাশ সরিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। আরও প্রায় ৫০০ গজ যেতেই আর মোটরসাইকেল চালানো যাচ্ছিল না। বাইকটা রাস্তার পাশে রেখে হাঁটা শুরু করলাম। প্রথমে বোঝা গেল না বিমানটা কোথায় পড়েছে! একটা আন্ডারকনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ে উঠে গেলাম টপ শট নেব বলে, কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম বিমানটা কোথায় পড়েছে? তারা দূরের দোতলা বিল্ডিংয়ের দিকে ইশারা করলো। ওখান থেকে নেমে পাশের বিল্ডিংটির পেছন দিকে গিয়ে দেখি উদ্ধারকর্মীরা দেওয়াল ভেঙে হতাহতদের বের করার চেষ্টা করছে। দ্রুত সেসব ছবি তুলে নিলাম। বিমানটা সরাসরি ক্লাসরুমে ঢুকে পড়েছে। সামান্য অংশই কেবল বাইরে ছিল।
আমি পৌঁছানোর আগেই আগুন নেভানো হয়েছে। চারদিকে মানুষে ঠাসা। সবার মুখে আতঙ্ক আর কান্না।  বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত স্পটে ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে আহতদের সরাসরি চোখে দেখিনি, যাদের দেখেছি তারা উদ্ধারকর্মী, বা অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা কেউ ঠিকভাবে কথা বলার অবস্থায়ও ছিলেন না। বারবার অ্যাম্বুলেন্স আসা-যাওয়া করছিল, বোঝা যাচ্ছিল না, প্রতিটিতে কতজন করে নেওয়া হচ্ছে। কয়েকজনকে দেখেছি সন্তানকে খুঁজছে আর কাঁদছে, চারপাশ ভারী হয়ে উঠছিল। কয়েকজনের ছবি নিয়েছি, কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে তো আর তাদের সঙ্গে কথা বলা যায় না।

ফেরার পথে এক ছাত্র অনুরোধ করলো “ভাইয়া, আমাদের বাংলাদেশ মেডিকেলে নামিয়ে দিতে পারবেন?” রাজি হয়ে গেলাম। তখন আরেকটি ছেলেও সঙ্গে এলো। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিই।

 

অনুলিখন: অলকানন্দা রায়

 

 

 

মন্তব্য

কখন কী ঘটল

শেয়ার
কখন কী ঘটল

জুলাই ২১, ২০২৫

দুপুর ১টা ৬ মিনিট : বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার থেকে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজিআই নিয়ে উড্ডয়ন করেন।

 

দুপুর ১টা ১২ মিনিট : মধ্যাকাশে বিমানটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। পাইলটের সর্বাত্মক চেষ্টার পরও বিমানটি উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বিমানটির সামনের অংশ সরাসরি দোতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আঘাত করে।

 

দুপুর ১টা ৪০ (আনুমানিক) : উত্তরা, টঙ্গী, পল্লবী, কুর্মিটোলা, মিরপুর, পূর্বাচল ফায়ার স্টেশনের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে।

 

দুপুর ২টা ১৫ (আনুমানিক) : ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ।

 

বিকেল ৩টা ১০ (আনুমানিক) : পাইলটসহ মোট ৫ জনকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

বিকেল ৪টা : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ২২ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।

 

বিকেল ৫টা : আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, পাইলট লে. মো. তৌকির ইসলাম মারা গেছেন। তখন পর্যন্ত ১৯জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়, ১৭১জন আহত ব্যক্তি ৮টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

রাত ৯টা ১০ মিনিট : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধারকার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে।

 

জুলাই ২২, ২০২৫

রাত ২টা : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করে।

 

সকাল ১০টা ৩০ মিনিট : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে যান শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টা । শিক্ষার্থীরা গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ করে।

 

দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট : জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। চিকিৎসাগ্রহনকারী আহতদের সংখ্যা কমে ৭৮জনে নেমে এসেছে বলে জানান।  ৬জনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি, ২০জনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

 

বিকেল ৩টা : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিকটস্থ উত্তরা সেক্টর ১২তে অবস্থিত সিটি কর্পোরেশন কবরস্থানে দূর্ঘটনায় নিহতের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

বিকেল ৪টা : দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে বাবা-মা বা অভিভাবকের ফোন নম্বর সংযুক্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ব্লাড গ্রুপও সংযুক্ত করতে বলা হয়।

 

এস এম তাহমিদ

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

‘থাকব না আর এই দেশে’

শেয়ার
‘থাকব না আর এই দেশে’
এ এফ এম ইউসুফ, সায়ানের বাবা ও শিক্ষক

সহকারী অধ্যাপক এ এফ এম ইউসুফ ও শিক্ষক শামীমা শাম্মী—মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক দুজনই। বাবা-মায়ের স্কুলেরই ছাত্র তাঁদের দুই সন্তান। সপ্তম শ্রেণিতে পুত্র সায়ান ইউসুফ আর তৃতীয় শ্রেণিতে ছোট্ট ফারিসা। সোমবারের ট্রাজেডিতে নিজেদের ১৪ বছর বয়সী পুত্র সন্তানকে হারালো এই শিক্ষক দম্পতি।

ফারিসা হারালো তার বড় ভাইকে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের পাল বাড়ির বাসিন্দা তাঁরা। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় থাকতেন শিক্ষক দম্পতি। সন্তান হারানোর শোকে হতবিহ্বল বাবা ইউসুফ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বারবার তিনি একটা কথাই বলছিলেন, ‘আমরা এই দেশে থাকব না।

’ বলেন, ‘পলিটিশিয়ানরা এ দেশটা পলিউটেড (দূষিত) করে ফেলেছে। আমরা এই দেশে আর থাকব না। আমি সহকারী প্রফেসর, আমার ওয়াইফও কেমিস্ট্রির লেকচারার। থাকব না আর এই দেশে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাঁদের গ্রামের বাড়ি বশিকপুর পাল বাড়িতে গেলে সায়ানের দাদি কামরুন নাহারের আর্তনাদ শোনা যায়। তিনি আর্তনাদ করে বলতে থাকেন, ‘ও বাবু, আমার সোনামনি কই, ওরে মাগো, আমার সোনামনি কই?’ এর একটু পরেই [দুপুর পৌনে ১টার দিকে] গাড়িতে করে সায়ানের মরদেহ আসে বাড়ির সামনে। গাড়ির শব্দ শুনেই কামরুন কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসেন। এ সময় কয়েকজন প্রতিবেশি তাঁকে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে যেতে যান গাড়ির কাছে।

কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ্য প্রতিবেশি তাকে বুঝিয়ে নিয়ে গেলেন ঘরের ভেতর, তবু থামেনি কামরুন নাহারের আর্তনাদ।

১০ মিনিট পর আরেকটি গাড়ি এসে থামে এই বাড়ির সামনে। সেই গাড়ি থেকে নেমে আসেন সায়ানের বাবা ইউসুফও। বন্ধু ও স্বজনদের জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন কিছুক্ষণ। তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি তো কারো ক্ষতি করি নাই। আমার ছেলে মেধাবী ছিল। ক্লাসে সে প্রথম হতো। এত সুন্দর, এত স্মার্ট ছিল। আমার ছেলেরে আমি সবসময় আইনস্টাইন বলে ডাকতাম। কখনো দুষ্টামি করেও মিথ্যা কথা বলি নাই। আমার সঙ্গে কেন এমন হলো!’

সায়ানের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঝলসানো শরীর ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিজেই বের হয়ে আসে সায়ান। পরে তার বাবা-মা তাকে শনাক্ত করে। সেই প্রথম বের হয়ে এসেছে ভিডিওতে দেখেছি।’

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সায়ান। মাইলস্টোনে ইউসুফের সহকর্মী রায়হানা আক্তার। তিনি রসায়নের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘ইউসুফ স্যারের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে আমেরিকায় পাঠাবে পড়াশোনার জন্য। আমেরিকায় সায়ানের এক মামা থাকেন। সেখানেই ছেলেকে পাঠানোর কথা। কিন্তু সব শেষ! সহকর্মী হিসেবে আমরা তাঁর শোকে মর্মাহত।’

জানা গেছে, ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছিল সায়ান। আবারও কোনো এক ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে আসার কথা ছিল। তার আগেই সায়ান এসেছে লাশ হয়ে।

সোমবারের ট্রাজেডিতে প্রাণ হারায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আরেক শিক্ষার্থী—পার্বতীনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রহিমবক্স হাজী বাড়ির আব্দুস সামাদের ছেলে আফনান ফায়াজ। মাইলস্টোনে সায়ানেরই ক্লাসমেট ছিল ফায়াজ। গতকাল সকালে ঢাকায় দাফন করা হয় ফায়াজের মরদেহ।

ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল

মন্তব্য

‘আম্মু, রাত্রে তুমি থাকবা না আমার কাছে?’

শেয়ার
‘আম্মু, রাত্রে তুমি থাকবা না আমার কাছে?’
আব্দুল্লাহ ছামীম

জুলেখা বেগম, নিহত আব্দুল্লাহ ছামীমের মা

দুপুরে কেউ একজন ফোন করছিল, ‘আপনার ছেলে বিমান দুর্ঘটনায় আহত হইছে। তাড়াতাড়ি আসেন।’ আমি গেছি। দৌড়াইয়া গেছি।

ওরে দেইখ্যা... পরে দেখি অ্যাম্বুলেন্স নাই। অনেক কষ্টে কোনোরকমে একটা অ্যাম্বুলেন্স ঠিক কইরছি। অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে এসি নাই। এ কেমন বাংলাদেশ।
আমার বাবায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। ঢাকা মেডিকেলে নিলাম। হেই ঢাকা মেডিকেল নিতে নিতে আমার বাবায় চিল্লাইছে আর কইছে, ‘আম্মু কতক্ষণ লাগব, ভাইয়া (অ্যাম্বুলেন্স চালককে) কতক্ষণ লাগব আর? ভাইয়া, এতদূরে হাসপাতাল কেন, ভাইয়া? এতদূরে হাসপাতাল অইলে তো মানুষ মারা যাইব নিতে নিতে। এতদূরে কেন হাসপাতাল।
কাছাকাছি বানাইতে পারল না? এতদূরে কেন? আমারে বিদেশে নিয়া যাও চিকিৎসা করতে।’

পরে হাসপাতালে নিলাম। ভর্তি করাইল। বাবায় কইছে ‘আমারে একটু পানি দাও আম্মু। আমারে পানি দিলে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি।

’ আর ডাক্তার দেয় না দিতে। ডাক্তারে বলে কী, পানি খাইলে সমস্যা অইবো। আমার বাবায় নাস্তা চাইছে। দিতে পারি নাই। আমার বাবায় কয়, ‘আম্মু, আম্মু গো, রাত্রে তুমি থাকবা না আমার কাছে? হাসপাতালে আমি থাকব না।’ আমি বলছি, হ, বাবা আমি থাকব। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হোক, আমি তোমার কাছে থাকব। আমারে বলে কী, ‘আমার আপু আর তুমি থাকবা।’ আমি কইছি তুমি টেনশন কইরো না। কিন্তু এখন আমি আছি, বাবাটা নাই।

[মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত আব্দুল্লাহ ছামীম। বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএম খালি মাঝিকান্দি গ্রামে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুলাই রাত ১১টার দিকে মারা যায় সে।  দুই ভাই এক বোনের মধ্যে ছামীম ছোট। বাবাহারা তিন সন্তানকে নিয়ে রাজধানী উত্তরা দিয়াবাড়ি খালপাড় এলাকায় থাকেন মা জুলেখা বেগম।]

পিন্টু রঞ্জন অর্ক

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ