<p>কাক (Crow) কর্ভিডি গোত্রের অন্তর্গত একজাতীয় কালো পাখি। কাকের উদ্ভব ঘটেছে মধ্য এশিয়ায়। সেখান থেকে এটি উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকা ব্যতীত উষ্ণমণ্ডলীয় সব মহাদেশ এবং বেশ কিছু দ্বীপ অঞ্চলে কাকের বিস্তার রয়েছে। পৃথিবীতে ৪০টিরও বেশি প্রজাতির কাক দেখা যায়। তবে আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত দাঁড়কাক ও পাতিকাক—এই দুই প্রকারের কাক বেশি দেখা যায়।</p> <p>দাঁড়কাক (Jungle Crow) ঘোর কৃষ্ণ বর্ণে আচ্ছাদিত কাক। এরা আকারে বেশ বড় হয়। এদের ঠোঁট মোটা। এই কাকের বৈজ্ঞানিক নাম <u>Corvus macrorhynchos</u>। এই বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বড় ঠোঁটের কাক।</p> <p>পাতিকাকের (ঐড়ঁংব ঈত্ড়)ি মাথার পেছন থেকে গলা ও বুক এবং পেটের সামনের দিকটা ধূসর বা ফ্যাকাসে ধূসর; বাকি সারা দেহ, ঠোঁট, চোখ ও পা কালো। মাথার তালু, কপাল ও গলার নিচের দিকটাও কালো। ঠোঁট দাঁড়কাকের মতো, তবে একটু কম বাঁকা। ঠোঁটে গোঁফ দেখা যায়। পাতিকাকের বৈজ্ঞানিক নাম <u>Corvus splendens</u>। এরা আকারে দাঁড়কাকের তুলনায় বেশ ছোট হয়।</p> <p>আমরা আশপাশে যে কাক দেখি তার প্রায় সবই পাতিকাক। পাতিকাক সর্বভুক অর্থাৎ সব খায়। এদের খাদ্যতালিকা বেশ বড়। প্রাণীর মল থেকে শুরু করে ফেলে দেওয়া খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ, হাঁস-মুরগির ছানা, পোকামাকড়, ফলমূল, বড় বড় ফুলের মধু, ফসলের বীজ, পাখির ডিম, ছোট সরীসৃপ, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি খায়।</p> <p>স্ত্রী কাক মূলত বাসা তৈরি করে। এরা প্লাস্টিক, ফিতা, রশি, কাপড়ের টুকরা, উল, তুলা, লোহার তার, পলিথিন অর্থাৎ রাস্তায় পড়ে থাকা পরিত্যক্ত প্রায় সব কিছু দিয়েই অগোছালোভাবে বাসা করে। কাকের বাসার অগোছালো বৈশিষ্ট্যের জন্য ‘কাকের বাসা’ বাগধারাটির উদ্ভব হয়েছে।</p> <p>কাকের প্রজনন ঋতু মূলত মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত, তবে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুর বিভিন্নতা দেখা যায়। কাক একবারে ৩-৬টি ডিম দেয়। ডিমের রং আকাশি, তার ওপর থাকে কালচে-বাদামি ফোঁটা। ডিমের মোটা অংশে বাদামি ফোঁটার ঘনত্ব বেশি। স্ত্রী কাকই মূলত ডিমে তা দেয়। পুরুষ কাকও দেয়, খুব কম সময়ের জন্য। তবে বৃষ্টি নামলে, শিলাবৃষ্টি হলে বা প্রচণ্ড রোদ পড়লে পুরুষ কাক স্ত্রী কাকের সঙ্গে ডিম আগলে রাখে। ১৬ থেকে ১৭ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।</p> <p>বেশির ভাগ প্রজাতির কাকের আয়ুষ্কাল ১০-১৫ বছর।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</strong></p>