<p>আমরুল শাক Oxalidaceae পরিবারভুক্ত গুল্মজাতীয় এক ধরনের লতানো উদ্ভিদ। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। চুকা শাক, টক পাতা, চ্যাংদোলা, চুকত্রিপাতিসহ নানা নামে পরিচিত আমরুল শাক। এর ইংরেজি নাম Creeping woodsorrel এবং বৈজ্ঞানিক নাম Oxalis corniculata।</p> <p>গবেষকদের ধারণা, আমরুল নামটি আমরুক থেকে এসেছে। এই শাক আম অর্থাৎ আমাশয় রোগকে রুকে (সংস্কৃতিতে রুকে শব্দের অর্থ প্রতিহত করা) বলে এর নাম হয়েছিল আমরুক। পৃথিবীতে প্রায় ২০০ প্রজাতির আমরুল শাক জন্মে। এর মধ্যে বাংলাদেশে হলুদ ও গোলাপি ফুলের আমরুল বেশি জন্মে।</p> <p>আমরুলের আদিনিবাস দক্ষিণ-আমেরিকা। তবে ভারত উপমহাদেশে  এ-উদ্ভিদ হাজার বছর আগেও ছিল। এর প্রমাণ বেদ ও চরক সংহিতায় পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলের বাড়ির আনাচকানাচ, বিশেষ করে ঠাণ্ডা মাটিতে জন্মাতে দেখা যায়।</p> <p>আমরুল শাকের পাতা তিনটি অংশে বিভক্ত। এর কাণ্ড ও পাতা সবুজ। পাতার প্রতিটি অংশ লাভ আকৃতির। এর কাণ্ড এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হয়। এর পাতা ও কাণ্ড নরম ও রসালো প্রকৃতির হয়ে থাকে। আমরুল শাকের ফুল দেখতে হলুদ বা গোলাপি রঙের। এর ফুল আকারে অনেক ছোট। ফুলের ভেতর পাঁচটি পাপড়ি থাকে। এ ছাড়া একটি পুংকেশর নিয়ে ফুলের মধ্যভাগ গঠিত। ফুলের ভেতর অসংখ্য পুষ্পরেণু থাকে, যা এদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে।</p> <p>আমরুলের পাতার স্পর্শ লাগলে দেহে সুড়সুড়ির অনুভূত হয় বলে সাতক্ষীরা জেলার অনেকে এই পাতাকে সুড়সুড়ি পাতা বলে।</p> <p>আমরুল শাক অনেকটা টক স্বাদের হয়। এর টক বেশ মজাদার। এ ছাড়া এতে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। আয়ুর্বেদসহ সব ভেষজ চিকিৎসাশাস্ত্রে এ শাকের ব্যবহার আছে। এই গাছের নির্যাস রক্ত শোধনে সহায়তা করে। সর্দি বসে গেলে, অম্লপিত্ত রোগে, কটিতে ব্যথায় এই শাক বিশেষভাবে উপকারী।</p> <p>আমরুল টক স্বাদের শাক বলে ভিটামিন ‘সি’-এর অভাব দূর করে। এ ছাড়া পেট পরিষ্কার করতে, ত্বক ভালো রাখতে, মুখের রুচি বাড়াতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, প্রস্রাবের সমস্যায় আমরুল শাক ওষুধের মতো কাজ করে। অনেকে এটি টক হিসেবেও রান্না করে খায়।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</strong></p>