<p>বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার প্রধান কেন্দ্র ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট। এর বর্তমান নাম চারুকলা অনুষদ। এই চারুকলার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃৃত্বে কয়েকজন বিশিষ্ট শিল্পীর প্রচেষ্টায় ১৯৪৮ সালে ঢাকায় আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে এর অবস্থান ছিল পুরান ঢাকার জংশন রোডে ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলের একটি বাড়িতে। সে সময় প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট’। অধ্যক্ষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের অধীনে তিনটি ডিপার্টমেন্ট, ছয়জন শিক্ষক ও ১৮ জন ছাত্রকে নিয়ে এর যাত্রা শুরু। ১৯৫২ সালে সেগুনবাগিচায় এটি স্থানান্তর করা হয়। ১৯৫৬ সালে এটি চলে আসে শাহবাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯২-৯৩ সেশনে এতে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। পরে ২০০৮ সালে চারুকলা অনুষদ হিসেবে এর পথচলা শুরু হয়।</p> <p>এই আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকে খ্যাতনামা যেসব শিক্ষক ও ছাত্র যুক্ত ছিলেন তাঁদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক, সফিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, নভেরা আহমেদ, শফিকুল আমিন, হামিদুর রহমান, মুর্তজা বশীর, রশীদ চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক অন্যতম।</p> <p>বর্তমানে চারুকলা অনুষদে গ্রাফিক ডিজাইন, ওরিয়েন্টাল আর্ট, সিরামিকস, ড্রয়িং ও পেইন্টিং, ভাস্কর্য, কারুশিল্প, হিস্টোরি অব আর্টস ও প্রিন্ট মেকিং—এই আটটি বিভাগ চালু আছে। অনুষদে আছে ৪৩ জন শিক্ষক, আছে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের জন্য আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। চারুকলা ভবনের নকশা করেন খ্যাতিমান স্থপতি মাজহারুল ইসলাম। অনুষদের সবুজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা সারি বেঁধে ছবি আঁকার চর্চা করে। কেউবা কাঠ কেটে ফুটিয়ে তোলে বিভিন্ন অবয়ব। আবার পাথর খুঁদে কেউবা দিচ্ছে বিভিন্ন আকৃতি। চারুকলা চত্বরটি বিভিন্ন ভাস্কর্য, রঙিন চিত্রকলা আর সবুজ গাছপালায় সাজানো।</p> <p>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে ঢাকা শহরের শাহবাগ-রমনা এলাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ জাতিসংঘের ইউনেসকোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ</strong> <strong>মণ্ডল</strong></p>