<p><strong>[পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের দ্বাদশ অধ্যায়ে নদীভাঙনের কথা উল্লেখ আছে]</strong></p> <p>নদী খাতে পানিপ্রবাহের কারণে পার্শ্ব ক্ষয়কে বলে নদীভাঙন। এটি একধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছর নদীভাঙনে প্রচুর ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় অনেক জমি। ফলে জমির পরিমাণ কমে যায় এবং সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামতে বাধ্য হয় নদীতীরবর্তী মানুষ।</p> <p>নদীভাঙনের কয়েকটি কারণ হলো—জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর প্রবাহপথ ও তীব্র গতিবেগ, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীগর্ভে শিলার উপাদান, রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি, বাহিত শিলার কঠিনতা, নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি, বৃক্ষনিধন ইত্যাদি। অনেক সময় নদীতীরে খরাজনিত কারণে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে তার প্রভাবেও নদীতে ভাঙন ধরে এবং ভূমির অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়।</p> <p>নদীভাঙন বেশি হয় বর্ষাকালে। পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, তিস্তাসহ প্রায় ৪১০টি নদী-উপনদীতে বন্যা এবং সন্নিহিত নদীতে ভাঙনের ঘটনা ঘটে প্রতিবছর। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীভাঙনের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর নদীভাঙনে নিঃশেষ হয়ে যায় প্রায় ৮,৭০০ হেক্টর জমি।</p> <p>ক্ষতিগ্রস্ত হয়—খামার, চাষযোগ্য জমি, দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র, বৈদ্যুতিক টাওয়ার, পারিবারিক অন্যান্য সম্পদ, বসতবাড়ি, ফসল, গবাদি পশু, গাছপালা, সেচ প্রকল্প, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।</p> <p>এ দেশের প্রধান নদী ও শাখা নদী সবগুলোতেই কমবেশি নদীভাঙন হয়। নদীভাঙন সংঘটিত হয় দেশের প্রায় ১০০টি উপজেলায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে নদীভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জমির মালিকরা। কারণ তারা কখনোই আর সে জমি পুনরুদ্ধার করতে পারে না। এ কারণে ভূমিহীন মানুষের স্থানান্তর ঘটে। এদের নির্দিষ্ট কোনো কাজের সুযোগ থাকে না। ফলে তারা শহরে-নগরের ভাসমান মানুষে পরিণত হয়।</p> <p>নদীভাঙনের ক্ষতি কমাতে কোথাও নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিলে প্রথমেই জীবন ও সম্পদ রক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। কোথায় ভাঙনকবলিত মানুষজনকে আশ্রয় দেওয়া যায় তা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে। নদীভাঙন প্রতিরোধে নদীর পারে এমন গাছ লাগাতে হবে যেগুলোর শিকড় মাটির খুব গভীরে চলে যায়। নদীতে চলাচলকারী বিভিন্ন জলযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে এসব যান নদীতে প্রবল ঢেউ সৃষ্টি না করে।</p> <p style="text-align: right;"><strong>আব্দুর রাজ্জাক</strong></p>