ভাবসম্প্রসারণ
‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’
মূলভাব : লোভ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি নষ্ট করে তাকে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
সম্প্রসারিত ভাব : নিজের ভোগের জন্য কোনো কিছু লাভ করার দুর্দমনীয় বাসনাকে লোভ বলে। লোভ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে অসৎ উপায় অবলম্বন করতে প্ররোচিত করে। তখন যা নিজের নয়, যা পাওয়ার অধিকার তার নেই, তা পাওয়ার জন্য মানুষ লোভী হয়ে ওঠে।
তখন সে তার অন্যায় ইচ্ছাকে সার্থক করে তুলতে চায়। লোভের মোহে পড়ে সে সত্য-মিথ্যা ভালোমন্দ সব বিসর্জন দেয়। তার ন্যায়-অন্যায় বোধ লোপ পায়। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার অন্যায় ইচ্ছায় সে পাপের পথে ধাবিত হয়ে অন্যের সর্বনাশ ডেকে আনে। মানুষ তখন ভুলে যায়, লোভ বর্জন না করলে জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করা যায় না। এ পৃথিবীতে প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিরা কোনো প্রকার লোভকে জীবনে প্রশ্রয় দেননি। অন্যের কল্যাণ কামনায় তাঁদের জীবন ছিল পরিতৃপ্ত। লোভী মানুষ এ সত্য অনুধাবন করতে পারে না বলে সহজেই পাপের পথে ধাবিত হয়ে পরিণামে মৃত্যুর মতো ভয়াবহতা ডেকে আনে।
মন্তব্য : মানব জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলার জন্য সব ধরনের লোভকে বর্জন করতে হবে।
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণ কর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
মূলভাব : পৃথিবীতে মানব সভ্যতা বিনির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান।
সম্প্রসারিত ভাব : সৃষ্টির প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত মানব সভ্যতার যে বিকাশ সাধিত হয়েছে, তা নারী-পুরুষ উভয়েরই যৌথ প্রচেষ্টার ফল। সৃষ্টিকর্তা নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে।
তাই নারী ও পুরুষ চিরকালের সার্থক সঙ্গী। একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সৃষ্টির আদিমকাল থেকে নারী পুরুষকে জুগিয়েছে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস। আর পুরুষ বীরের মতো সব কাজে অর্জন করেছে সাফল্য। জগতে যত বড় বড় বিজয় অভিযান সংঘটিত হয়েছে তা মা, বোন ও বধূদের মতো নারীর ত্যাগে মহীয়ান হয়ে উঠেছে। অথচ ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা লেখা হয়েছে, নারীর অবদান ততটাই উপেক্ষিত হয়েছে। সারা বিশ্বে আজও পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও কঠিন কর্তব্য সম্পাদন ও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ঘরে-বাইরে তারা কর্মমুখর জীবনের স্বাদ লাভ করছে। পারিবারিক জীবনে তারা সুখ ও শান্তির মাধ্যমে পুরুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলছে। নারী ও পুরুষের কার্যক্ষেত্রে
ভিন্নতা থাকলেও সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মতোই কাজ করে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে
পৃথিবীর উন্নতির মূলে নারীর অবদানও সমান, সে জন্য পৃথিবীতে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার।
মন্তব্য : মানব সভ্যতায় নারীর অবদান যে পুরুষের চেয়ে কম নয়, তা জেনে নারীর অধিকারের প্রতি সচেতন হতে হবে।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মূলভাব : বিত্তবানরা সম্পদের প্রবল তৃষ্ণায় গরিবের সামান্য সম্পদ কুক্ষিগত করতেও দ্বিধা করে না।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ যত চায় তত পায়। এটাই মানুষের স্বভাব। আকাঙ্ক্ষিত জিনিস পাওয়ার পর মানুষ আরো বেশি জিনিস পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। আকাঙ্ক্ষিত জিনিস লাভ করতে যদি সহজ উপায় না থাকে বা কোনো প্রতিকূলতা দেখা দেয়, তবে তার লোভকে চরিতার্থ করতে গিয়ে কোনো অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হতে সে একটুও ইতস্তত করে না। তাদের এসব অন্যায়-অত্যাচারের শিকার দরিদ্ররাই হয়ে থাকে। কারণ এ জগতে ঐশ্বর্যশালী ও বিত্তবানদেরই সম্পদের প্রতি লোভ বেশি। কিছুতেই তাদের সম্পদের তৃষ্ণা মেটে না। তারা যত পায়, ততই চায়। দরিদ্রকে বঞ্চিত করে রাশি রাশি সম্পদ আহরণের নেশা ক্রমেই তাদের পেয়ে বসে। ছলে-বলে কৌশলে তারা চায় তাদের ঐশ্বর্যের ভাণ্ডারকে দিন দিন স্ফীত করতে। এদিকে তাদের ঐশ্বর্য যত বৃদ্ধি পায়, দরিদ্রের অভাব-অভিযোগ ও দুঃখ-কষ্টও হয় তত প্রকট। এই আরো পাওয়ার ইচ্ছা মানুষকে অমানুষ করে তোলে। ধনীদের এই দুর্নিবার সম্পদের লোভ-নেশায় সমাজের দীনহীন দরিদ্র মানুষগুলো প্রতিনিয়ত হচ্ছে প্রতারিত; সহায়-সম্বলহীন পথের ফকির।
মন্তব্য : অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করার চেষ্টা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।