<p>যতিচিহ্ন হলো লেখার মাঝে ব্যবহৃত সেসব সাংকেতিক চিহ্ন, যেগুলো বাক্যের বিভিন্ন ভাব, যেমন—জিজ্ঞাসা, বিস্ময়, সমাপ্তি ইত্যাদি সার্থকভাবে প্রকাশের মাধ্যমে বাক্যের অর্থ সুস্পষ্ট করে তোলে। অন্যভাবে বলা যায়, রচনা পাঠকালে শ্বাসগ্রহণের জন্য যে বিরতি নেওয়া হয় সেই বিরতিকেই যতি বলে। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণে যতিচিহ্ন সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানুষ কথা বলার সময় মাঝেমধ্যে থামে। এই থামার মাধ্যমে কথার অর্থ স্পষ্ট হয়। অনেক সময় কথার স্বর ওঠানামা করে। সেই ওঠানামা অর্থের পরিবর্তন ঘটায়। কথাকে লিখিতরূপ দেওয়ার সময় এই থামা এবং স্বরের ওঠানামা নির্দেশের জন্য সাধারণত যতিচিহ্নের ব্যবহার হয়। এগুলো বিরামচিহ্ন বা বিরতিচিহ্ন নামেও পরিচিত। বাংলা ভাষার যতিচিহ্নগুলো হচ্ছে দাঁড়ি (।), কমা (,), প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?), বিস্ময় চিহ্ন (!), সেমিকোলন (;), কোলন (:) প্রভৃতি। যতিচিহ্নের প্রয়োগ যথাযথ না হলে বাক্য অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য হতে পারে, এমনকি প্রত্যাশিত অর্থ প্রকাশ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে।</p> <p>বাংলা সাহিত্যে বিরাম বা যতিচিহ্নের প্রবর্তক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ১৮৪৭ সালে তাঁর ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম সফলভাবে যতিচিহ্নের প্রয়োগ করেন। যতিচিহ্ন ব্যবহার করে এ গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের সূচনা হয়। এর আগে প্রাচীন বাংলায় গদ্য বা কবিতায় এক দাঁড়ি (।) ও দুই দাঁড়ি (।।) এই দুটি বিরাম চিহ্নই শুধু ব্যবহার করা হতো।</p> <p>বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ অনুযায়ী বাংলা ভাষায় যতিচিহ্ন ১৬টি। এদের মধ্যে পূর্ণ বাক্যের শেষে বসে এমন বিরাম চিহ্নের সংখ্যা চারটি। যতিচিহ্নকে ইংরেজিতে বলে Punctuation. দাঁড়ি (ইংরেজিতে ফুলস্টপ) বাদে বর্তমানে ব্যবহৃত সব যতিচিহ্নই ইংরেজি থেকে নেওয়া। গ্রিক Punctus (বিন্দু) শব্দ থেকে ইংরেজি Punctuation এসেছে। এই বিন্দু বা Point থেকে Priod of fullstop ব্যবহৃত হয়। যতিচিহ্নের ওপর পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৪ সাল থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরকে আমেরিকায় জাতীয়ভাবে যতিচিহ্ন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ</strong> <strong>মণ্ডল</strong></p>