<p>একপ্রকার লতানো বা সোজা বেয়ে ওঠা উদ্ভিদ বেত। সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় এদের দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনাঞ্চলে প্রচুর বেত জন্মে। আসবাবপত্র ও কুটিরশিল্পের দ্রব্য তৈরিতে বেতের ব্যবহার হয়। শুকনো বেত দিয়ে বানানো হয়—সুদৃশ্য চেয়ার-টেবিল, সোফা, খাট, মোড়া, দোলনা, সেলফসহ আরো নানা উপকরণ। বেত গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে রেস্তরাঁ, ঘর বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন তৈরিতে। এ ছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। দেশের হাজার হাজার মানুষ বেতের আসবাবপত্র ও কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে ৫-৬ জাতের বেতগাছ পাওয়া যায়, যেমন— গোল্লা বেত, জালি বেত, ভূতুম বেত, বরা বেত ও লতা বেত। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় বেত ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট লম্বা হয়। কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। এদের কাণ্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাযুক্ত ও খুবই শক্ত। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫-১৫ মিলিমিটার হয়। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত বা শক্ত হয়ে যায়। এদের এক ধরনের কাঁটাযুক্ত লতা বের হয়। এই লতা দিয়ে এরা ধারককে ধরে রাখে। বেতে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি এই রস খেতে বেতগাছে ভিড় জমায়। বেতগাছে মজাদার ফল হয়। এই ফলকে বেত্তুন, বেথুন, বেতগুলা, বেত্তুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। আঙুরের মতো থোকায় ধরে এ ফল। একটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। পাকা ফল খেতে কিছুটা মিষ্টি, টক আর কষযুক্ত। বেত দুভাবে উৎপাদন করা যায়। মোথার সাহায্যে এবং বীজ দ্বারা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোথা দিয়ে বেত চাষ করা হয়। বর্ষাকালে বেতের মূল থেকে প্রচুর সাকার বা শোষক চারা বের হয়। এগুলো কেটে বৃষ্টির সময় জমিতে রোপণ করলেই হয়। বেত ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে স্থানে ভালো জন্মে।             </p>