রূপতত্ত্ব
প্রকৃতি ও প্রত্যয়
প্রশ্ন : প্রকৃতি ও প্রত্যয় কাকে বলে? উদাহরণসহ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।
উত্তর : প্রকৃতি : ক্রিয়ামূল ও শব্দমূলের সাধারণ নাম প্রকৃতি । অর্থাৎ ক্রিয়া ও নাম শব্দের মূলকে প্রকৃতি বলা হয়।
যেমন : পড়্, লিখ্, ঢাকা, জল ইত্যাদি।
প্রকৃতির প্রকারভেদ : প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা—
১) ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু ও
২) নাম প্রকৃতি বা শব্দ প্রকৃতি
১। ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু : ক্রিয়ার মূলকে ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু বলা হয়। যেমন—চল্ + অন্ত = চলন্ত
বচ্ + তব্য = বক্তব্য
ওপরের উদাহরণে ‘চল্’ এবং ‘বচ্’ হলো ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু।
ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু বোঝানোর জন্য প্রকৃতির আগে ধাতু চিহ্ন (✔) ব্যবহৃত হয়। যেমন : ✔ চল্ + অন্ত = চলন্ত,
✔ বচ্ + তব্য = বক্তব্য।
২। নাম প্রকৃতি বা শব্দ প্রকৃতি : শব্দের মূলকে নাম প্রকৃতি বা শব্দ প্রকৃতি বলা হয়।
যেমন—
ঢাকা + আই = ঢাকাই
নীল + ইমা = নীলিমা
ওপরের উদাহরণে ‘ঢাকা’ এবং ‘নীল’ শব্দের মূল হওয়ায় এগুলোকে নাম প্রকৃতি বা শব্দ প্রকৃতি বলা হয়। শব্দের মূল হওয়ায় এগুলোর আগে কোনো ✔ চিহ্ন বসে না।
প্রত্যয় : প্রকৃতির শেষে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাদের প্রত্যয় বলে। যেমন—
✔ চল্ + অন্ত = চলন্ত
ঢাকা + আই = ঢাকাই
উদাহরণে ‘অন্ত’ এবং ‘আই’ বর্ণসমষ্টি প্রকৃতির শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং এগুলো প্রত্যয়।
প্রত্যয়ের প্রকারভেদ : প্রকৃতির মতো প্রত্যয়ও দুই প্রকার। যথা—
১) কৃৎ প্রত্যয় ও
২) তদ্ধিত প্রত্যয়
১। কৃৎ প্রত্যয় : ধাতু বা ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ সৃষ্টি করে, তাদের কৃৎ প্রত্যয় বলা হয়। যেমন— ✔ নাচ্ + অন = নাচন, ✔ চল্ + অন্ত = চলন্ত ইত্যাদি।
এখানে ‘অন’ এবং ‘অন্ত’ হলো কৃৎ প্রত্যয়।
কৃৎ প্রত্যয় আবার দুই প্রকার। যথা—
ক) বাংলা কৃৎ প্রত্যয় ও
খ) সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়।
২। তদ্ধিত প্রত্যয় : শব্দ বা নাম প্রকৃতির সঙ্গে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ সৃষ্টি করে, তাদের তদ্ধিত প্রত্যয় বলা হয়। যেমন : ঢাকা + আই = ঢাকাই, নীল + ইমা = নীলিমা ইত্যাদি।
এখানে ‘আই’ এবং ‘ইমা’ হলো তদ্ধিত প্রত্যয়।
তদ্ধিত প্রত্যয় আবার তিন প্রকার। যথা—
ক) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়
খ) সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় ও
গ) বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়।
প্রকৃতি বা মূল অংশের অর্থ থাকলে সাধারণত তদ্ধিত প্রত্যয় এবং অর্থ না থাকলে সাধারণত কৃৎ প্রত্যয় হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : ‘ইনী’ এবং ‘ইত’ প্রত্যয়যোগে পাঁচটি করে শব্দ গঠন করে বাক্যে প্রয়োগ দেখাও।
উত্তর :
‘ইনী’—প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ ও বাক্য :
১. বন্দী + ইনী = বন্দিনী : একসময় বাঙালি মুসলিম নারীদের ঘরে বন্দিনী হয়ে থাকতে হতো।
২. অধিকারী + ইনী = অধিকারিণী : এই ঘরের অধিকারিণী রীতা গতকাল পটল তুলেছে।
৩. প্রণয়ী + ইনী = প্রণয়িনী : নিপা বলল, ‘আজীবন তোমার প্রণয়িনী হয়ে থাকব।’
৪. গৃহী + ইনী = গৃহিণী : বাংলাদেশের বেশির ভাগ মহিলাই পেশায় গৃহিণী।
৫. অনুরাগী + ইনী = অনুরাগিনী : মেয়েটি তার স্বামীর প্রতি অত্যন্ত অনুরাগিনী।
‘ইত’ —প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ ও বাক্য :
১. বিকার + ইত = বিকৃত : বিকৃত রুচির মানুষ সমাজে অনাকাঙ্ক্ষিত।
২. পরিবর্তন + ইত = পরিবর্তিত : সময়ের পরিবর্তনে মানুষের চিন্তাধারাও পরিবর্তিত হচ্ছে।
৩. শিক্ষা + ইত = শিক্ষিত : শিক্ষিত ব্যক্তি সবার কাছে সম্মানিত।
৪. প্রচলন + ইত = প্রচলিত : প্রচলিত রীতি-নীতির বাইরে কিছু করা খুবই কঠিন।
৫. লজ্জা + ইত = লজ্জিত: দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আমজাদ সাহেব খুবই লজ্জিত হলেন।