ঢাকা, মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫
২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫
২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ সফর ১৪৪৭

শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিন

  • সংকটে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি
শেয়ার
শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিন

 

যেকোনো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে বিনিয়োগ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ নিয়ে গভীর সংকটে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সন্ত্রাস, প্রশাসনিক দুর্বলতা, মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ সুদহারের কারণে দেশে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ কমছে, তেমনি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দেশি উদ্যোক্তারাও। বিদ্যমান শিল্পগুলোও ধুঁকছে।

উৎপাদন কমছে, লোকসান বাড়ছে। ফলে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা বন্ধ হওয়ার পথে। এর ফলে কর্মসংস্থান কমছে এবং বাড়ছে বেকারত্ব।

গত রবিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের অর্থনীতির এই সংকটময় দিক তুলে ধরেছে।

একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মব সন্ত্রাসের কারণে বিনিয়োগ তলানিতে পৌঁছানো, অন্যদিকে বস্ত্রশিল্পের ওপর নতুন করের বোঝা চাপিয়ে খাতটিকে সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই দুটি বিষয়ই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে।

গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বিদেশি ও দেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যোবিদায়ি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ ৯১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে দেশি বিনিয়োগও স্থবির হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে না পারলে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ক্রমে আরো খারাপ হবে।

বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)মন্তব্য, তুলা আমদানিতে নতুন করে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা দেশের বস্ত্রশিল্পের জন্য কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে কাজ করবে। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এবং অন্য নেতারা এটিকে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের নীলনকশা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যার উদ্দেশ্য দেশটির শিল্পকে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পকে রুগ্ণ করে দেওয়া। তাঁদের মতে, ১৮ শতাংশ সুদের ব্যাংকঋণ এবং ৫০ শতাংশ কার্যকর করের বোঝা নিয়ে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষে কারখানা চালু রাখা অসম্ভব।

এটি কেবল দেশের বস্ত্রশিল্পের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং এই খাতে জড়িত লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানকেও হুমকির মুখে ফেলছে। যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের বস্ত্রশিল্পকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ক্রমাগত কমানো হচ্ছে, যা দেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে খর্ব করছে।

বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের উচিত অতি দ্রুত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো। একই সঙ্গে বস্ত্রশিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর সমস্যাগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। অযৌক্তিক কর আরোপ প্রত্যাহার এবং শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়ন না করা হলে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে

    প্রকট রূপ নিয়েছে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য
শেয়ার
উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে

বাংলাদেশে প্রথমবার প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আমাদের। আয়ভিত্তিক পরিসংখ্যানের আড়ালে থাকা দারিদ্র্যের জটিল ও বহুমুখী চিত্র এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে চার কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের বৃত্তে আটকে আছে। আয়ভিত্তিক দারিদ্র্য যতটা না দেখায়, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য তার চেয়েও গভীর ও জটিল : শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না, নিরাপদ পানি ও শৌচাগার নেই, বাসস্থানের যোগ্যতা অনুপস্থিত।

এই সব সম্মিলিতভাবে মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (Multidimensional Poverty Index) অনুযায়ী, দেশের অন্তত চার কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার, যারা আসলে আয়ভিত্তিক দারিদ্র্যের প্রচলিত ধারণার বাইরে অবস্থান করছেন। এটি শুধু অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবনমানের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার এক বিস্তৃত চিত্র। শুধু অর্থনৈতিক মানদণ্ডে দারিদ্র্য পরিমাপ করা হলে প্রকৃত চিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

একজন মানুষের সামান্য আয় থাকতে পারে, কিন্তু তার সন্তান স্কুলে না গেলে, রোগ হলে চিকিৎসার সুযোগ না পেলে কিংবা বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগার না থাকলে তাকে দারিদ্র্যমুক্ত বলা যায় না।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশ, যা প্রাপ্তবয়স্কদের (২১ শতাংশ) চেয়ে অনেক বেশি। যদিও বিগত বছরগুলোতে শিশুদের দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, তবু এই উচ্চ হার শিশুদের ভবিষ্যৎ বিকাশের জন্য একটি বড় হুমকি। এ ছাড়া গ্রাম ও শহরের মধ্যে দারিদ্র্যের বৈষম্য চোখে পড়ার মতো।

গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার ২৭ শতাংশ, যা শহরের ১৩ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশি। আঞ্চলিক বৈষম্যও প্রকট; সিলেটে ৩৮ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৬৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার, যেখানে ঝিনাইদহে এই হার মাত্র ৯ শতাংশ। এই তথ্যগুলো সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

আমরা মনে করি, দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচলিত কৌশলগুলো থেকে বেরিয়ে এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এবং অন্যান্য মৌলিক সেবার অপ্রতুলতা দূর করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই সূচক প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এই সূচক শুধু অসাম্যই তুলে ধরছে না, বরং উদ্দেশ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপের পথ প্রদর্শন করছে। এটি সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টাগুলোকে আরো লক্ষ্যভিত্তিক ও ফলপ্রসূ করতে সাহায্য করবে।

বহুমাত্রিক দারিদ্র্য শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি সামাজিক বৈষম্য ও মানবিক বঞ্চনার এক জটিল রূপ। চার কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে একটি সমন্বিত এবং সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তবেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব হবে।

মন্তব্য

মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য জরুরি

    জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন আজ
শেয়ার
মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য জরুরি

জুলাই ঘোষণাপত্র এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গত ডিসেম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে। রাজনীতিতে কিছুটা উত্তাপও তৈরি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হয় এবং আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হচ্ছে বলে জানা যায়। জানা যায়, এতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সূচনা, বিকাশ, জন-আকাঙ্ক্ষা ও গণতান্ত্রিক শাসনের অন্তরায়, আন্দোলন অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ গত বছরের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, এর ফলে স্বৈরাচারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল ও প্রচেষ্টার স্বীকৃতি থাকবে।

শনিবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে বলেন, সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

আগামী ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় গণ-অভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে। আগের দিন শুক্রবার তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিভিন্ন দলের খসড়া প্রস্তুত হলেও ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ মীমাংসায় পৌঁছেনি।

জানা যায়, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু অভিযোগও রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিএনপি, জামায়াত ও নবগঠিত দল এনসিপির মতামত নেওয়া হলেও অনেক দল এ বিষয়ে কিছুই জানে না বা তাদের জানানো হয়নি। এ ছাড়া এই ঘোষণার আইনগত ভিত্তি কী হবে, সেটি এখনো অস্পষ্ট। অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে খসড়া ঘোষণাপত্র পাঠানো হয়েছিল তাতে বলা আছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।

নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের প্রস্তাবে এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়। সে বৈঠকে ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিমত প্রকাশ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংবিধান সংশোধন করতে হলে অবশ্যই তা সংসদে করতে হবে।

ঘোষণাপত্র সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদ দুটিরই আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়মুক্তি ও স্বীকৃতির দলিল হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি, এতে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হবে।...জুলাই ঘোষণায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও এই সরকারের কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশ থেকে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছিল। সেই অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও আইনগত স্বীকৃতি থাকতে হবে। আমরা আশা করি, ছোটখাটো বিষয়ে দ্বিমত থাকলে মৌলিক বিষয়ে সবার ঐকমত্য থাকবে।

মন্তব্য

দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা নিন

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সংকট
শেয়ার
দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকসংকট একটি গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। কালের কণ্ঠে শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ হাজার ১০৬টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এই বিশালসংখ্যক শূন্যপদ প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

ফলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে।

এই সংকটের মূল একটি কারণ হলো মামলা জটিলতা। ২০১৩ সালে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পর শিক্ষকদের গ্রেডেশনসংক্রান্ত মামলা দীর্ঘদিন ধরে আদালতে ঝুলে আছে। ফলে ৩১ হাজার ৪৪৯টি পদে পদোন্নতি আটকে রয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি উভয় পক্ষই আইনি সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রধান শিক্ষকের শূন্যতা কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নয়, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করছে। একজন প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি কাজেও যুক্ত থাকতে হয়। প্রধান শিক্ষক না থাকা স্কুলগুলোতে একজন সহকারী শিক্ষক যখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, তখন তাঁর পক্ষে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এবং প্রশাসনিক কাজ উভয়ই সামলানো কঠিন।

এর ফলে যে স্কুলটিতে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা, সেটিতে কার্যত চারজন বা তারও কম শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে এই সংকট আরো প্রকট।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সংকট সমাধানে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি একটি সুষ্ঠু নিয়োগপ্রক্রিয়ার ওপর জোর দিয়েছেন, যেখানে অভিজ্ঞ তরুণ উভয় ধরনের শিক্ষককেই সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, কিন্তু আইনি জটিলতা নিরসন না হলে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন অপরিহার্য। প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ না হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন কেবল একটি স্বপ্নই থেকে যাবে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন আইনি জটিলতার দ্রুত সমাধান, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করা। সরকারের উচিত, শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড্তএই কথাটি শুধু মুখে বললেই চলবে না, এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হবে কার্যকর নীতিমালায় এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে। প্রধান শিক্ষক সংকট নিরসনে যথাসময়ে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তিই হয়ে পড়বে দুর্বল ও ভঙ্গুর।

 

মন্তব্য

বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে

    শুল্কে আপাতত স্বস্তি
শেয়ার
বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে ৩৭ শতাংশ, পরে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। আর তা নিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক আশঙ্কা অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘ আলোচনা ও দর-কষাকষির পর এই শুল্ক আরো ১৫ শতাংশ কমিয়ে করা হয়েছে ২০ শতাংশ। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দেশের রপ্তানি খাত।

অবশ্য এর জন্য প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে যে মূল্য দিতে হয়েছে এবং দিতে হবে বাংলাদেশকে, তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো অর্থনীতি বিশ্লেষক।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে। শুল্ক বেশি হলে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্কে সামঞ্জস্য রয়েছে।

অনেকেরই শুল্ক কাছাকাছি কিংবা কারো কারো শুল্কের পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। পাকিস্তানের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপিত হয়েছে ১৯ শতাংশ। আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মায়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপিন্সের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। সর্বশেষ ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের ওপর নতুন বা বাড়তি শুল্ক আরোপের তালিকা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।

নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মার্কিন শুল্ক হ্রাস দেশের রপ্তানি খাতের জন্য একটি বড় ধরনের সুসংবাদ। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে এখন আমরা একটি তুলনামূলক সমান প্রতিযোগিতার অবস্থানে রয়েছি। তবে বাড়তি বর্তমান শুল্ক নিয়েও মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের ওপর পোশাকের দাম কমানোর চাপ তৈরি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সম্মিলিতভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

বাণিজ্য অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক শুল্ক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে এত অধিকসংখ্যক ও গভীর শর্ত মানতে হয়েছে যে, দেশটির নিজস্ব বাণিজ্য করকাঠামো কার্যত যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর হয়ে পড়েছে।

তাঁরা বলেন, এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক সরঞ্জামে অগ্রাধিকার দিতে হবে, বিমানের মাধ্যমে মার্কিন উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ কিনতে হবে, এলএনজি, সয়াবিন তেল, গম, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি, কৃষিপণ্যসহ একাধিক খাতে দীর্ঘমেয়াদি আমদানি চুক্তি করতে হবে এবং চীনা সামরিক ও প্রযুক্তিপণ্য থেকে সরে আসতে হবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএসহ কয়েকটি সংস্থার অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আরো কিছু সংবেদনশীল প্রতিশ্রুতি হয়তো গোপনীয়তা চুক্তির আওতায় দেওয়া হয়েছে, যা শিগগিরই জনসমক্ষে আসবে না। তাঁদের মতে, এসব শর্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী সক্ষমতা সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং দেশি শিল্প-ব্যবসা মার্কিন নিয়ন্ত্রণের ছায়ায় চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

আমরা চাই, দেশের রপ্তানি বাণিজ্য দ্রুত এগিয়ে যাক। জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নানা চুক্তি করতে হবে। পাশাপাশি সেইসব চুক্তিতে দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই সঙ্গে বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ