ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

পরামর্শ বিবেচনায় নিন

  • গতানুগতিক বাজেট
শেয়ার
পরামর্শ বিবেচনায় নিন

দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসব ক্ষেত্রেই এক মারাত্মক আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে। অথচ দেশে বেকার তরুণের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। পুরনো অনেক শিল্প-কারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

অনেকগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের চাপে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এর মধ্যে সোমবার ঘোষিত হয়েছে গতানুগতিক বাজেট।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজেটে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার দিকনির্দেশনা নেই। বিনিয়োগ উৎসাহিত করার কিংবা ঝুঁকিতে থাকা শিল্পগুলোকে পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নেই। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনমান উন্নয়নের পদক্ষেপ নেই। বরং জরুরি কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহার ও অতিরিক্ত করারোপের ফলে চূড়ান্তভাবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার উত্খাতের পর মানুষ পুরনো অনেক ব্যবস্থার পরিবর্তন আশা করেছিল। কিন্তু গতানুতিক এই বাজেটে পুরনো প্রায় সব ব্যবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। বরং কিছু ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক-কর আরোপের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের ব্যবসা করার সুযোগ আরো কঠিন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর ফলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ব্যয়বহুল হবে। এতে শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়বে। তখন শিল্পের টিকে থাকা আরো কঠিন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বাড়লে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়বে এবং তা ভোক্তার ওপর আরো চাপ বাড়াবে। অটোমোবাইল খাতে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করা হয়েছে, তাতে এ খাতের স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। কটন সুতার উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কর প্রতি কেজিতে তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হয়েছে। কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের মিশ্রণে তৈরি সুতার সুনির্দিষ্ট কর একই হারে বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া  টার্নওভার কর ০.৬% থেকে বাড়িয়ে ১% করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন ডিসিসিআই সভাপতি। ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ কমলেও স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোয় এ শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গুণগত দিক থেকে এই বাজেটে আমরা কোনো কিছু পরিবর্তন দেখিনি। শুধু বাজেটের সংখ্যা সামান্য কিছু কমেছে। কিন্তু বাজেট কাঠামো একই রয়ে গেছে। সুতরাং এটা আগামী দিনে সরকারের জন্য খুব একটা সহজ কিছু হবে না। অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, এই বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কার্যকর কিছুই নেই। তারা যে সংকটে আছে, সেই সংকটকে চিহ্নিত করেই বাজেট পরিকল্পনা হওয়া উচিত ছিল। মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, কিন্তু বাজেটে সেই চাপ লাঘবে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেই।

আমরা আশা করি, বাজেট নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যেসব সমালোচনা হবে, যেসব পরামর্শ আসবে, সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। বাজেটকে জনপ্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে হবে।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে

    যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা
শেয়ার
দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে

২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশি সব পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক চিঠিতে এমনটা জানানো হয়েছে।

শুল্ক কার্যকর হতে মাত্র এক সপ্তাহের মতো বাকি রয়েছে। কিন্তু এখনো শুল্ক কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির বিপরীতে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অবস্থানপত্র যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরে পাঠানো হবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত বৈঠকের জন্য সময় চেয়ে আজ বুধবার তাদের ই-মেইল করা হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে গত ৪০ বছরে এমন সংকট দেখা যায়নি। বাণিজ্যসচিব জানান, ১৯৪৯ সালের পর সারা বিশ্বে এ ধরনের পাল্টা শুল্ক কখনো আসেনি। এত দিন উন্নত দেশগুলো শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে গরিব দেশগুলোকে সহায়তা করত, এবার যুক্তরাষ্ট্র সেখানে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। উদ্যোক্তাদের মতে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ও দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।

তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের না রাখাই এই ব্যর্থতার প্রধান কারণ।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি ছিল তৈরি পোশাক। পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।

এই খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর একটি ভিয়েতনাম। দেশটির আমদানিপণ্যের ওপর প্রথমে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সফলভাবে আলোচনার মাধ্যমে তারা সেই শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সমঝোতা না হলে বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটি বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারত ও পাকিস্তানও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের শুল্কও কমতে পারে বলে নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধান রপ্তানি খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৪০ লাখ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই খাতের সহযোগী শিল্পগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনায় আরো দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

মন্তব্য

পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

    মর্মান্তিক এক বিমান দুর্ঘটনা
শেয়ার
পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক, নির্মম। যে শিশুরা কিছুক্ষণ আগেও ছিল প্রাণোচ্ছল, প্রিয় প্রাঙ্গণে ছিল আনন্দমুখর, সেই হাসিখুশি কোমল মুখগুলোই মুহূর্তে পুড়ে নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। পড়ে থাকল দগ্ধ মৃতদেহ। আশপাশের বাতাস ভারী হলো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের আর্তচিৎকারে।

একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স ছুটতে থাকল দগ্ধ শিশুদের নিয়ে। হাসপাতালগুলো ব্যস্ত হলো দগ্ধ ও আহত শিশুদের সেবায়। সেই হাসপাতালগুলোতেও শুধু আহাজারি আর আর্তচিৎকার। তাই আজ আমাদের শুধুই কান্নার দিন, শুধুই শোকে, বেদনায়, হৃদয়-যন্ত্রণায় মলিন হওয়ার দিন।
গত সোমবার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে একটি প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান এসে আছড়ে পড়ে। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে পুরো ভবনটি। গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। দগ্ধ ও আহত হয়েছে প্রায় ২০০।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর থেকে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলটি দেশের মধ্যে নামকরা একটি স্কুল। প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি, কচি-কাঁচা মুখগুলোর কলকাকলিতে মুখর থাকত এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। আজ সেখানে শুধুই সহপাঠী, পিতা-মাতা, শিক্ষক ও স্বজনদের বুকফাটা কান্না। সরকার মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে।

কল্পনাতীত শোকাবহ এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা। অন্যদের মধ্যে শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ আরো অনেকে। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য বিমানবাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ সেনাপ্রধান ও বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আমরা আশা করব, কেন দুর্ঘটনা ঘটল তার তদন্ত যেন সঠিকভাবে হয়।

দুর্ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এবং অন্যান্য হাসপাতালে পুড়ে যাওয়া সন্তানের পাশে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন পিতা-মাতা, ভাই-বোন, সহপাঠীরা। সেখানে মেয়েকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তাঁর ১১ বছরের মেয়ে নুরে জান্নাত ইউশার শরীর পুড়ে গেছে। ইউশা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার কপাল পুড়ে গেছে, ঝলসে গেছে মুখমণ্ডল, মাথা ফেটেছে, পুড়ে গেছে পিঠও। এমন অবস্থা প্রায় সবারই।

গণমাধ্যমে উত্তরার এই দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনেক দাবিও উত্থাপিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যে মডেলের বিমান উৎপাদক দেশ চীনসহ অনেক দেশেই আর ব্যবহার করা হয় না, তেমন একটি যুদ্ধবিমান কেন ঢাকার আকাশে উড়ানো হলো? মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে। তার মধ্যে আছে, নিহতদের নামসহ সঠিক তথ্য প্রকাশ, আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো বিমান প্রশিক্ষণে ব্যবহার না করা। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে দাবিগুলোর যৌক্তিকতা স্বীকার করেন।

আমরা চাই, ভবিষ্যতে যেন এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হোক। হতাহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নিন

    ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামার আশঙ্কা
শেয়ার
পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নিন

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত। আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি কার্যকর হবে। কিন্তু শুল্ক কমানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক : কোন পথে বাংলাদেশ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেন, ৪০ বছরের ব্যাবসায়িক জীবনে তিনি রপ্তানি খাতে এমন সংকট কখনো দেখেননি।

আলোচনায় অনেক বক্তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দর-কষাকষির ব্যর্থতাকে অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। আর তার প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি ছিল তৈরি পোশাক। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে আসবে। উদ্যোক্তারা অভিযোগ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনাকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলটি আমলানির্ভর। সেখানে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা না থাকায় আলোচনায় ইতিবাচক ফল আসেনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামে প্রথমে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হলেও সমঝোতার মাধ্যমে তাদের শুল্ক করা হয়েছে ২০ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটি বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে আরোপিত শুল্কের আংশিক বহনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু আমাদের লভ্যাংশ এত কম যে শুল্ক শেয়ার করার মতো সক্ষমতাই নেই।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, তাঁদের সংগঠনের এক হাজার ৩২২টি কারখানার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। মার্জিন মাত্র ১.২ থেকে ১.৫ শতাংশ। শুধু পোশাকই নয়, অন্যান্য রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এক নম্বর বাজার। জুতা রপ্তানিতে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার আসে। এটি কিভাবে এক দিনে নতুন বাজার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে?

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত একটি সমাধানে আসতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

গণতান্ত্রিক উত্তরণে ঐক্য জরুরি

    রাজনীতি অঙ্গনে বিভক্তি বাড়ছে
শেয়ার
গণতান্ত্রিক উত্তরণে ঐক্য জরুরি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সেই সরকারের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু যে গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল, সেই স্বপ্ন এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যেও বিভেদ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। সংঘাত-সংঘর্ষের পথে এগোচ্ছে। তাই জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জন বা প্রাপ্তি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা এবং রাজনীতিকে শুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করে নানামুখী সংস্কার, কিন্তু সেখানেও রয়েছে বিস্তর মতপার্থক্য।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, কিন্তু সেখানেও রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। বাড়ছে বিভাজন। স্পষ্ট হচ্ছে নতুন নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণও। জামায়াতে ইসলামীসহ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী ডান ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের ইস্যুতে এক হলেও ভিন্নমত পোষণ করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।
গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী ডান ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমন্ত্রণ পায়নি বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। জামায়াতের পক্ষ থেকে কারণ হিসেবে বলা হয়, বিএনপি পিআর পদ্ধতির পক্ষে না থাকায় তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গত ২৮ জুন একই স্থানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশেও জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিসের শীর্ষ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আমন্ত্রণ পায়নি।

সার্বিক এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবাই একমত হবেএই ভ্রান্ত ধারণা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই সংস্কারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট করে তুলেছে।

নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবেএই বিভাজন আরো বাড়বে। রাজনীতিতে ভিন্নমত স্বাভাবিক, কিন্তু কোনো পক্ষের পূরণযোগ্য নয় এমন দাবি পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে। গত শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ মিলনায়তনে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী আয়োজিত আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রশ্ন তোলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় দেশে কেউ উদ্দেশ্যমূলক বা বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, একটি ভ্রান্ত ধারণা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই সংস্কারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট করে তুলেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এনসিপি, জামায়াতকে নানাভাবে এই সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে অনেকে মনে করেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অর্জনকে ধরে রাখতে হবে। লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা মনে করি, জনপ্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ