ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

সঠিক নীতি গ্রহণ করা জরুরি

  • কাগজশিল্পের সংকট
শেয়ার
সঠিক নীতি গ্রহণ করা জরুরি

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে এক গভীর সংকট বিদ্যমান, যার মূল কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু বিতর্কিত নীতি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের প্রতি তাদের উদাসীনতা। বিশেষভাবে এক লাখ কোটি টাকার কাগজশিল্পের চরম দুরবস্থা এই পরিস্থিতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। দেশের ১০৬টি কাগজ কারখানার মধ্যে ৭০টিই এখন বন্ধ এবং সচল থাকা কারখানাগুলোতেও উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গ্যাসস্বল্পতা, কাঁচামালের অভাব, ডলার সংকট এবং উচ্চ সুদের হার এই শিল্পকে রুগ্ণ করে তুলেছে।

অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব ভূমিকা পালন করছে। তাদের দায়সারাভাবে গঠিত একটি কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

এই সংকট কেবল কাগজশিল্পেই সীমাবদ্ধ নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল নীতিগুলো সামগ্রিক অর্থনীতিকে ভুগিয়েছে। ডলারের বিনিময় হার নিয়ে একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা মুদ্রাবাজারকে অস্থিতিশীল করেছে।

আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে নীতি সুদ হার বৃদ্ধি এবং বাজারভিত্তিক বিনিময় হার কার্যকর করায় ডলারের দাম বাড়ছে, যা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর ঘুরে দাঁড়াতে না পারাটাও আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতাই নির্দেশ করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।

শুধু বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ঘোষণা করাই যথেষ্ট নয়, বরং পর্যাপ্ত ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কাগজের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্পের সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো সক্রিয় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশগুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কেবল কাগজশিল্প নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই এক বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। লাখো কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং লাখো মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষায় এখনই সঠিক নীতি গ্রহণ করা জরুরি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এই ব্যর্থতা দূর করতে হবে

    ইতিহাসের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন
শেয়ার
এই ব্যর্থতা দূর করতে হবে

জনকল্যাণে সরকার নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা করে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় শত শত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বছর শেষে দেখা যায় এডিপি বাস্তবায়নের হার থাকে খুবই কম। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বাড়ে।

গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এডিপি বাস্তবায়নের গতি ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। এর কিছু কারণও ছিল। অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়েই শুরু হয় ব্যাপক জনবিক্ষোভ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগস্টে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। তা ছাড়া বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক ঠিকাদার প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই পালিয়ে যান। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্প যাচাই-বাছাই ও অপ্রয়োজনীয় খাতগুলোতে অর্থছাড় বন্ধ বা সীমিত করে দেয়। এতেও উন্নয়ন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে শ্লথ হয়ে পড়ে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এক হাজার ৪৬৮টি প্রকল্প ছিল এডিপির আওতায়। এসব প্রকল্পের জন্য সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ পুরো বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশের মতো অর্থ খরচই হয়নি। অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও দেখা গেছে ব্যয় কমে যাওয়ার প্রবণতা।

এ মাসে খরচ হয়েছে ৪২ হাজার ৪৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা সংশোধিত বরাদ্দের মাত্র ১৮.৭৭ শতাংশ। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে জুন মাসে খরচ হয়েছিল ৫৮ হাজার ৭৪২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা ছিল বরাদ্দের ২৩.০৯ শতাংশ। অর্থাৎ মাসিক হিসাবেও ব্যয় কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এই অর্থবছরে সবচেয়ে বড় ধস হয়েছে বিদেশি সহায়তানির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে। সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণ ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু বছর শেষে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫৩ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ৬৫.৫৩ শতাংশ। এই হারও ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

বিশ্লেষকদের মতে, শুধু বাজেট বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। পরিকল্পনা, দক্ষতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতাএই তিনের সমন্বয় না হলে এডিপি বার্ষিক টার্গেটের নিচেই থেকে যাবে। আমরা মনে করি, প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ানো, দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর জবাবদিহির আওতায় আনাই হতে পারে ভবিষ্যতের বাস্তবায়ন সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

মন্তব্য

রাজনৈতিক সরকার জরুরি

    আস্থার সংকট ক্রমেই বাড়ছে
শেয়ার
রাজনৈতিক সরকার জরুরি

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার উত্খাতের পর গঠিত হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোসহ সর্বস্তরের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিল এই সরকার। কিন্তু এক বছরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।

ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনিশ্চয়তা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অর্থনীতির দুরবস্থা, কলকারখানা বন্ধ হয়ে লাখো শ্রমিকের বেকার হওয়া, মার্কিন শুল্কনীতির চাপ, মব ভীতি, অনাকাঙ্ক্ষিত নিত্যনতুন সংকটএসব কারণে সরকারের প্রতি আস্থার সংকট ক্রমেই বাড়ছে।

এরই মধ্যে সরকারের দুজন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। সংস্কার যদি দৃষ্টান্তমূলক না হয়, নির্বাচনও যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে প্রধান উপদেষ্টাকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

বিশিষ্টজনরাও মনে করছেন, সরকারের কার্যক্রম নিয়ে শক্ত কথা বলারই সময় এসেছে। বলা হচ্ছে, এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তার পরও অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে অটুট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বলেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য আরো সুদৃঢ় ও দৃশ্যমান করা প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক বছরে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য চোখে পড়ছে না, বরং সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। বুধবার রাজধানীতে একটি গোলটেবিল বৈঠকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মিষ্টি কথা, ভালো কথা, ভালো উদ্যোগ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু হয়েছে।...আজ পাওনার হিসাবটা খুবই জরুরি। বিচার, সংস্কার, নির্বাচনএই বিষয়গুলোতে এক বছরে কী কী হলো, সেই পাওনার হিসাবটা আজ মূলকথা হতে হবে। একই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন কোনো ভয়ভীতি নেই, এমনটা কেউই বলতে পারবে না।

ভয় বিচারব্যবস্থার ভেতরেও আছে, বাইরেও আছে। বৈঠকে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী চেতনায় আমরা নতুন সরকার আনলাম। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে তারা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ও সংস্কারপ্রক্রিয়ায় প্রতিফলন করতে পারল না। সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করা নেই।

অতি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলেই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার না এলে সমস্যা আরো বাড়বে।

দেশ এখন গভীর খাদের কিনারে। সেই খাদে একবার পতিত হলে সেখান থেকে দেশকে টেনে তোলা প্রায় অসম্ভব। তাই আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আর সে জন্য প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেই হবে।

মন্তব্য

চিকিৎসা মনিটর করতে হবে

    আগুনে পোড়া শিশুদের অসহনীয় আর্তনাদ
শেয়ার
চিকিৎসা মনিটর করতে হবে

শোক আর দুঃখে স্তব্ধ পুরো দেশ। বিমান দুর্ঘটায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অকালমৃত্যুর যন্ত্রণা মা-বাবা আর স্বজনদের ছাড়িয়ে পুরো দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। হাসপাতাল, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ সর্বত্র অভিভাবক, আত্মীয়-স্বজনের কান্না, ক্ষোভ আর হাহাকার। কেন এতগুলো শিশুর মৃত্যু হলোএই প্রশ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের।

কেউই ধরনের মর্মান্তিক, অমানবিক ও করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না।

হাসপাতালগুলো এখন যেন মৃত্যুপুরী। অনেকের সন্তান হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তারা আগুনে পোড়ার অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছে।

আহতদের যন্ত্রণায় অভিভাবকরা হতবিহ্বল। অনেক অভিভাবক গতকালও তাঁদের প্রিয় সন্তানের হদিস পাননি। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনটি এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসের স্তূপ জমে আছে।
পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী। ভবনের সামনের খোলা জায়গায় পড়ে আছে আংশিক পোড়া বই, আইডি কার্ড ব্যাগের টুকরা। পরিবেশটা আরো দুঃসহ করে তুলেছে সন্তানের খোঁজে আসা অভিভাবক-স্বজনদের হাহাকার। এমন পরিবেশে শুধু নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ পাথরের মতো স্থির।
কেউ ভেঙে পড়ছেন ছেলের বা মেয়ের নাম লেখা একটি ছেঁড়া খাতার পাতা দেখে। এসবের ভেতর নিখোঁজ সন্তানদের চিহ্ন খুঁজে ফিরছেন অভিভাবকরা। কেউ পেয়েছেন সন্তানের ব্যবহৃত বই, কেউ নোটখাতা আবার কেউ আইডি কার্ডের টুকরা। তা দেখে বুক ঠেলে আসা হাহাকারে মুষড়ে পড়ছেন মা-বাবা। কী সান্ত্বনা তাঁদের জন্য, জানা নেই।

আহত এসব শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলছে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিক্যাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, সিএমএইচ, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, শহীদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসা করছেন দেশের চিকিৎসকরাই। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে এসেছে চিকিৎসকদল। এটি ভালো খবর, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসায় সহায়তা করলে উন্নত চিকিৎসা হবে এই শিক্ষার্থীদের।

হতাহতের সংখ্যা নিয়ে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হাসপাতালে ভর্তি ৬৮, মৃত্যু ২৮। আর আইএসপিআর বলছে, ভর্তি রোগী ১৬৫, মৃত্যু ৩১। এই বিভ্রান্তি কেন? সরকারের উচিত দ্রুত এই বিভ্রান্তি কাটানো, যাতে অভিভাবকসহ জনমনে কোনো ধরনের প্রশ্ন তৈরি না হয়।

বিস্ফোরণের শব্দে শিক্ষার্থীদের কোমল মনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ শিক্ষার্থীরা। ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে যাওয়া এই শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা লাগবে। প্রয়োজনে একটি সেল গঠন করে এই শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে। মনিটর করতে হবে চিকিৎসার শেষ পর্যন্ত।

 

মন্তব্য

নির্বাচিত সরকার আসা জরুরি

    গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ
শেয়ার
নির্বাচিত সরকার আসা জরুরি

দেশের অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা। শিল্প-কারখানা ধুঁকছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। শ্রমিক বেকার হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। জননিরাপত্তা হুমকিতে।
মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ দিশাহারা। দেশ ক্রমেই গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে দ্রুত নির্বাচিত সরকার আসা প্রয়োজন, যারা শক্ত হাতে রাষ্ট্রের হাল ধরতে পারবে, চরম বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারবে।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটিতে নিউজ২৪ টিভি আয়োজিতসংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত দেশের রাজনীতিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশিষ্টজনরা বলেন, সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও নির্ভরযোগ্য নির্বাচন হতে হবে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেড় দশক ধরে চেপে বসে থাকা স্বৈরাচারকে বিদায় করা হয়েছিল। সে সময় দেশে যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, নানা কারণে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দলই মনে করে, দু-একটি দলের প্রতি বিশেষ নমনীয়তা দেখিয়ে এই সরকার তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

ফলে দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশ ক্রমে বড় ধরনের সংকটে পড়ে যাবে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ বক্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র কী অবস্থায় আছে, সেটি বোঝার জন্য গতকালকের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ঘটনা যথেষ্ট। তিনি বলেন, ভেতর থেকে দুর্বল ও ভঙ্গুর এই রাষ্ট্র আরো অনেক কিছুকে ভঙ্গুর করে দিচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্লাসরুমে ছেলেদের ফিরে না যাওয়া, নানা দিক থেকে সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। একটি ক্রেডিবল নির্বাচন দেশকে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকারই করবে।

এদিকে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিযোগ করা হয়েছে, সংস্কারের নামে নতুন নতুন প্রস্তাব সামনে এনে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। দলটি বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন সব সংস্কার প্রস্তাব আনছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, যার কারণে বিব্রত হতে হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের অভিমত, দেশে দেশে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্র্যাকটিসগুলোও কমিশন উপেক্ষা করতে চাচ্ছে। যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক দেশে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও দলের প্রধানই প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। তাই দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী না হতে পারার প্রস্তাব বিএনপি মানবে না। তা সত্ত্বেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বর্তমান শোকাবহ পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত সংহত থাকার আহবান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।

আমরা আশা করি, পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক বিভক্তি আরো বৃদ্ধি পায় এমন সংস্কার থেকে বিরত থাকাই ভালো হবে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ