ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ মহররম ১৪৪৭

সহিংসতা কাম্য নয়

  • হঠাৎ উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ
শেয়ার
সহিংসতা কাম্য নয়

দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে এসেছে। এখনো তারা একই ভূমিকায় রয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আগামী নির্বাচন হোক সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিটি পদক্ষেপে যেন জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই বৈঠকে গণতন্ত্রের বৈশ্বিক প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখেই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সরকারের কোনো পরিকল্পনাই নেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার। তবে যেসব নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিচার চলবে এবং তাঁরা আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে মেনে নিতে পারেনি অনেক রাজনৈতিক দল।
আবার অনেকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে সমর্থনও করেছে। এরই মধ্যে এই বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। ফলে হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
দেশ আবার সংঘাতময় হয়ে ওঠে কি না, সে আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষও।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

একদিকে সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করছে, অন্যদিকে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কারো মতে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরকারের কার্যক্রম ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলে দেবে এই সিদ্ধান্ত দেশে স্থিতিশীলতা আনবে, নাকি নতুন করে সংঘাতের জন্ম দেবে। এর আগে বিভিন্ন সময়ই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা হবে। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নেই। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। এদিকে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অনেকেই উদ্বেগ অনুভব করছে। এদিকে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে ছিল যৌথ বাহিনী। প্রস্তুত ছিল পুলিশের রায়টকারসহ বিশেষ সরঞ্জাম।

মানুষ চায় গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশ এগিয়ে যাক। সহিংসতা কারোই কাম্য নয়। এই অবস্থায় সবারই উচিত সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। যেকোনো মূল্যে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চিকিৎসা মনিটর করতে হবে

    আগুনে পোড়া শিশুদের অসহনীয় আর্তনাদ
শেয়ার
চিকিৎসা মনিটর করতে হবে

শোক আর দুঃখে স্তব্ধ পুরো দেশ। বিমান দুর্ঘটায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের অকালমৃত্যুর যন্ত্রণা মা-বাবা আর স্বজনদের ছাড়িয়ে পুরো দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। হাসপাতাল, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ সর্বত্র অভিভাবক, আত্মীয়-স্বজনের কান্না, ক্ষোভ আর হাহাকার। কেন এতগুলো শিশুর মৃত্যু হলোএই প্রশ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের।

কেউই ধরনের মর্মান্তিক, অমানবিক ও করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না।

হাসপাতালগুলো এখন যেন মৃত্যুপুরী। অনেকের সন্তান হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তারা আগুনে পোড়ার অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছে।

আহতদের যন্ত্রণায় অভিভাবকরা হতবিহ্বল। অনেক অভিভাবক গতকালও তাঁদের প্রিয় সন্তানের হদিস পাননি। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনটি এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসের স্তূপ জমে আছে।
পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী। ভবনের সামনের খোলা জায়গায় পড়ে আছে আংশিক পোড়া বই, আইডি কার্ড ব্যাগের টুকরা। পরিবেশটা আরো দুঃসহ করে তুলেছে সন্তানের খোঁজে আসা অভিভাবক-স্বজনদের হাহাকার। এমন পরিবেশে শুধু নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ পাথরের মতো স্থির।
কেউ ভেঙে পড়ছেন ছেলের বা মেয়ের নাম লেখা একটি ছেঁড়া খাতার পাতা দেখে। এসবের ভেতর নিখোঁজ সন্তানদের চিহ্ন খুঁজে ফিরছেন অভিভাবকরা। কেউ পেয়েছেন সন্তানের ব্যবহৃত বই, কেউ নোটখাতা আবার কেউ আইডি কার্ডের টুকরা। তা দেখে বুক ঠেলে আসা হাহাকারে মুষড়ে পড়ছেন মা-বাবা। কী সান্ত্বনা তাঁদের জন্য, জানা নেই।

আহত এসব শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলছে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিক্যাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, সিএমএইচ, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, শহীদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসা করছেন দেশের চিকিৎসকরাই। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে এসেছে চিকিৎসকদল। এটি ভালো খবর, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসায় সহায়তা করলে উন্নত চিকিৎসা হবে এই শিক্ষার্থীদের।

হতাহতের সংখ্যা নিয়ে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হাসপাতালে ভর্তি ৬৮, মৃত্যু ২৮। আর আইএসপিআর বলছে, ভর্তি রোগী ১৬৫, মৃত্যু ৩১। এই বিভ্রান্তি কেন? সরকারের উচিত দ্রুত এই বিভ্রান্তি কাটানো, যাতে অভিভাবকসহ জনমনে কোনো ধরনের প্রশ্ন তৈরি না হয়।

বিস্ফোরণের শব্দে শিক্ষার্থীদের কোমল মনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ শিক্ষার্থীরা। ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে যাওয়া এই শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা লাগবে। প্রয়োজনে একটি সেল গঠন করে এই শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে। মনিটর করতে হবে চিকিৎসার শেষ পর্যন্ত।

 

মন্তব্য

নির্বাচিত সরকার আসা জরুরি

    গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ
শেয়ার
নির্বাচিত সরকার আসা জরুরি

দেশের অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা। শিল্প-কারখানা ধুঁকছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। শ্রমিক বেকার হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। জননিরাপত্তা হুমকিতে।
মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ দিশাহারা। দেশ ক্রমেই গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে দ্রুত নির্বাচিত সরকার আসা প্রয়োজন, যারা শক্ত হাতে রাষ্ট্রের হাল ধরতে পারবে, চরম বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারবে।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটিতে নিউজ২৪ টিভি আয়োজিতসংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত দেশের রাজনীতিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশিষ্টজনরা বলেন, সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও নির্ভরযোগ্য নির্বাচন হতে হবে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেড় দশক ধরে চেপে বসে থাকা স্বৈরাচারকে বিদায় করা হয়েছিল। সে সময় দেশে যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, নানা কারণে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দলই মনে করে, দু-একটি দলের প্রতি বিশেষ নমনীয়তা দেখিয়ে এই সরকার তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

ফলে দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশ ক্রমে বড় ধরনের সংকটে পড়ে যাবে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ বক্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র কী অবস্থায় আছে, সেটি বোঝার জন্য গতকালকের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ঘটনা যথেষ্ট। তিনি বলেন, ভেতর থেকে দুর্বল ও ভঙ্গুর এই রাষ্ট্র আরো অনেক কিছুকে ভঙ্গুর করে দিচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্লাসরুমে ছেলেদের ফিরে না যাওয়া, নানা দিক থেকে সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। একটি ক্রেডিবল নির্বাচন দেশকে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকারই করবে।

এদিকে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিযোগ করা হয়েছে, সংস্কারের নামে নতুন নতুন প্রস্তাব সামনে এনে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। দলটি বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন সব সংস্কার প্রস্তাব আনছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, যার কারণে বিব্রত হতে হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের অভিমত, দেশে দেশে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্র্যাকটিসগুলোও কমিশন উপেক্ষা করতে চাচ্ছে। যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক দেশে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও দলের প্রধানই প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। তাই দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী না হতে পারার প্রস্তাব বিএনপি মানবে না। তা সত্ত্বেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বর্তমান শোকাবহ পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত সংহত থাকার আহবান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।

আমরা আশা করি, পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক বিভক্তি আরো বৃদ্ধি পায় এমন সংস্কার থেকে বিরত থাকাই ভালো হবে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।

মন্তব্য

দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে

    যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা
শেয়ার
দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে

২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশি সব পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক চিঠিতে এমনটা জানানো হয়েছে।

শুল্ক কার্যকর হতে মাত্র এক সপ্তাহের মতো বাকি রয়েছে। কিন্তু এখনো শুল্ক কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির বিপরীতে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অবস্থানপত্র যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরে পাঠানো হবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত বৈঠকের জন্য সময় চেয়ে আজ বুধবার তাদের ই-মেইল করা হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে গত ৪০ বছরে এমন সংকট দেখা যায়নি। বাণিজ্যসচিব জানান, ১৯৪৯ সালের পর সারা বিশ্বে এ ধরনের পাল্টা শুল্ক কখনো আসেনি। এত দিন উন্নত দেশগুলো শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে গরিব দেশগুলোকে সহায়তা করত, এবার যুক্তরাষ্ট্র সেখানে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। উদ্যোক্তাদের মতে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ও দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।

তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের না রাখাই এই ব্যর্থতার প্রধান কারণ।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি ছিল তৈরি পোশাক। পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।

এই খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর একটি ভিয়েতনাম। দেশটির আমদানিপণ্যের ওপর প্রথমে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সফলভাবে আলোচনার মাধ্যমে তারা সেই শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সমঝোতা না হলে বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটি বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারত ও পাকিস্তানও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের শুল্কও কমতে পারে বলে নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধান রপ্তানি খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৪০ লাখ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই খাতের সহযোগী শিল্পগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনায় আরো দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

মন্তব্য

পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

    মর্মান্তিক এক বিমান দুর্ঘটনা
শেয়ার
পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক, নির্মম। যে শিশুরা কিছুক্ষণ আগেও ছিল প্রাণোচ্ছল, প্রিয় প্রাঙ্গণে ছিল আনন্দমুখর, সেই হাসিখুশি কোমল মুখগুলোই মুহূর্তে পুড়ে নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। পড়ে থাকল দগ্ধ মৃতদেহ। আশপাশের বাতাস ভারী হলো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের আর্তচিৎকারে।

একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স ছুটতে থাকল দগ্ধ শিশুদের নিয়ে। হাসপাতালগুলো ব্যস্ত হলো দগ্ধ ও আহত শিশুদের সেবায়। সেই হাসপাতালগুলোতেও শুধু আহাজারি আর আর্তচিৎকার। তাই আজ আমাদের শুধুই কান্নার দিন, শুধুই শোকে, বেদনায়, হৃদয়-যন্ত্রণায় মলিন হওয়ার দিন।
গত সোমবার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে একটি প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান এসে আছড়ে পড়ে। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে পুরো ভবনটি। গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। দগ্ধ ও আহত হয়েছে প্রায় ২০০।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর থেকে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলটি দেশের মধ্যে নামকরা একটি স্কুল। প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি, কচি-কাঁচা মুখগুলোর কলকাকলিতে মুখর থাকত এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। আজ সেখানে শুধুই সহপাঠী, পিতা-মাতা, শিক্ষক ও স্বজনদের বুকফাটা কান্না। সরকার মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে।

কল্পনাতীত শোকাবহ এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা। অন্যদের মধ্যে শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ আরো অনেকে। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য বিমানবাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ সেনাপ্রধান ও বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আমরা আশা করব, কেন দুর্ঘটনা ঘটল তার তদন্ত যেন সঠিকভাবে হয়।

দুর্ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এবং অন্যান্য হাসপাতালে পুড়ে যাওয়া সন্তানের পাশে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন পিতা-মাতা, ভাই-বোন, সহপাঠীরা। সেখানে মেয়েকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তাঁর ১১ বছরের মেয়ে নুরে জান্নাত ইউশার শরীর পুড়ে গেছে। ইউশা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার কপাল পুড়ে গেছে, ঝলসে গেছে মুখমণ্ডল, মাথা ফেটেছে, পুড়ে গেছে পিঠও। এমন অবস্থা প্রায় সবারই।

গণমাধ্যমে উত্তরার এই দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনেক দাবিও উত্থাপিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যে মডেলের বিমান উৎপাদক দেশ চীনসহ অনেক দেশেই আর ব্যবহার করা হয় না, তেমন একটি যুদ্ধবিমান কেন ঢাকার আকাশে উড়ানো হলো? মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে। তার মধ্যে আছে, নিহতদের নামসহ সঠিক তথ্য প্রকাশ, আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো বিমান প্রশিক্ষণে ব্যবহার না করা। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে দাবিগুলোর যৌক্তিকতা স্বীকার করেন।

আমরা চাই, ভবিষ্যতে যেন এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হোক। হতাহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ