<p>শুরু হচ্ছে মুসলমানদের সংযম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত সিয়াম বা রোজা। কুপ্রবৃত্তি দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাস এই রমজান। পুণ্যময় এই মাস রহমত, বরকত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। সংযত-সুন্দর জীবন যাপনের শিক্ষা দেয়। মুসলিম নর-নারীর কাছে রোজার মাস বহু কাঙ্ক্ষিত। মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের আশায় মুসলিম জনগোষ্ঠী শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে এই মাসকে। পবিত্র এই মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ কল্যাণ। মহান আল্লাহ এই মাসের প্রতিটি দিন ও মুহূর্তকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন সংযম সাধনার জন্য। আল্লাহ তাআলা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের জন্য সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ফরজ করেছেন। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের। নির্দেশনা রয়েছে সব ধরনের পাপ ও অন্যায়-অপকর্ম থেকে দূরে থাকার। রোজার মাসে কথায় ও কাজে মিতাচারী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এটাই পবিত্র রমজান মাসের শিক্ষা।</p> <p>রমজান আমাদের সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নয়, পুরো মাসের সবটুকু সময় সঠিক আচার-আচরণের মাধ্যমেই সিয়াম সাধনার প্রকৃত আত্মতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে। সেই সঙ্গে ইবাদতের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়।</p> <p>প্রতিবছর দেখা যায়, পবিত্র রমজান মাস আসার আগে আগে বাজার অস্থির হতে শুরু করে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই মাসে বেশি মুনাফার আশায় আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে বসে থাকেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি পবিত্র রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। রোজার মাসে সুবিধা বুঝে ভোগ্য পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা ঘোরতর অন্যায়। এবারও রমজান ঘিরে দেড়-দুই মাস আগে থেকেই অস্থির হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ, মুরগি ও গরুর মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে অনেক নিত্যপণ্যের দাম। দাম স্থিতিশীল রাখতে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার, কিন্তু তার কোনো প্রভাব নেই বাজারে। প্রায় প্রতিটি পণ্যই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। রমজানে বাড়তি চাহিদাযুক্ত পণ্যগুলোর মজুদে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছরই রমজান ঘিরে বাড়তি মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইফতারি পণ্যকে টার্গেট করে দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও তা-ই হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে ইফতারি পণ্য তথা ছোলা, চিনি, খেজুর, বেগুন, শসা ও লেবুর দাম ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা রোধে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। পণ্য যেন ভোক্তাসাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।</p> <p>অন্যদিকে সিয়াম সাধনার এই মাসে সামর্থ্যবান ও বিত্তশালী অনেকেই অপচয় করেন। খাওয়াদাওয়ায় বেশি বেশি খরচ না করে পবিত্র এই মাসে মানবতার সেবায় ব্যয় করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয়। এটাই রমজানের শিক্ষা। রমজানের তাত্পর্য আমাদের প্রত্যেকেরই গভীরভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের দান করুন সেই তাওফিক, যাতে আমরা পবিত্র রমজানের শিক্ষা সঠিকভাবে উপলব্ধি ও অনুশীলন করতে পারি।</p> <p>এক মাসের সংযম সাধনার ভেতর দিয়ে সবার জীবন পরিশুদ্ধ হোক, এটাই আমাদের প্রার্থনা।</p> <p> </p> <p> </p>