ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে

  • বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যা
শেয়ার
চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে

বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বাড়ছে বাংলাদেশেও। প্রাপ্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। একই হারে বেড়েছে ডায়ালিসিস গ্রহীতার সংখ্যাও।

আর এই ক্রমবর্ধমান রোগীর সংখ্যার ৮০ শতাংশই থেকে যাচ্ছে চিকিৎসার বাইরে। যার একটি বড় কারণ ব্যয়বহুল চিকিৎসার বোঝা বহন করতে না পারা। আর যারা চিকিৎসার জন্য আসছে তারাও আসছে রোগের শেষ ধাপে, যখন ডায়ালিসিস করানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সারা দেশে দ্রুত কিডনি রোগীদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তিত ধরনসহ নানা কারণে দ্রুত বাড়ছে কিডনি রোগ। ১৯৯০ সালে বিশ্বে মোট মৃত্যুর ২৭তম কারণ ছিল দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি)। ২০১০ সালে এটি মৃত্যুর ১৮তম কারণ এবং ২০২০ সালে ১১তম কারণে পরিণত হয়। অর্থাৎ অন্য অনেক রোগকে পেছনে ফেলে মৃত্যুর বড় কারণ হয়ে উঠছে এই কিডনি রোগ।

বাংলাদেশেও এই রোগের প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৯৭৫। আর ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৭১। সঙ্গে বেড়েছে ডায়ালিসিস করা রোগীর সংখ্যা। ২০১২ সালে ডায়ালিসিস করায় ২২ হাজার রোগী।
২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭ হাজার ৬২০। উভয় ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রায় তিন গুণ। অন্যদিকে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্য বলছে, গত বছর এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে এক লাখ ৬৩ হাজার ৯৫ জন রোগী। এর মধ্যে নতুন রোগী ৯৭ হাজার ৮৫৭ জন আর ৬৫ হাজার ২৩৮ জন পুরনো রোগী। এই হিসাবে নতুন রোগী ৬০ শতাংশ। সব তথ্যই বলছে দ্রুত বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি ফেইলিওরের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে ক্রনিক নেফ্রাইটিস (৪০ শতাংশ), ডায়াবেটিস (৩৪ শতাংশ) এবং উচ্চ রক্তচাপ (১৫ শতাংশ)। এ ছাড়া আছে প্রস্রাবের সংক্রমণ, পাথরজনিত রোগ, জন্মগত কিডনির রোগ, ওষুধজনিত কিডনির রোগ, ভেজাল খাদ্য, পলিসিস্টিক কিডনির রোগ ইত্যাদি। অথচ ক্রমবর্ধমান এই স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় দেশে দক্ষ চিকিৎসকের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি আছে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাব। তাই দ্রুত চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আলোচনা জোরদার করুন

    মার্কিন শুল্কারোপে রপ্তানি বিপর্যয়ের শঙ্কা
শেয়ার
আলোচনা জোরদার করুন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চশুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চশুল্কই আরোপ করা হবে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

শুল্ক কার্যকর হতে এখনো প্রায় তিন সপ্তাহ সময় আছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, উভয় দেশের জন্য লাভজনক একটি শুল্কচুক্তি সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক।

আর তার প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি ছিল তৈরি পোশাক।  নতুন করে শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির কী হবে, সেটি নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
অন্যদিকে এ খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামে প্রথমে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হলেও সমঝোতার মাধ্যমে তাদের শুল্ক করা হয়েছে ২০ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটি বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন করে ৩৫ শতাংশ যুক্ত হলে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
এটি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও। তাই এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমঝোতায় আসা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে বাড়তি শুল্কের প্রভাব হবে ভয়াবহ। পণ্য রপ্তানি কমে যাবে। যেসব কারখানার মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রে যায়, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিকল্প বাজার খোঁজার দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে কেবল তৈরি পোশাকে নির্ভরশীল না থেকে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। পণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ওপরও জোর দিতে হবে। প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা দ্রুততর করতে হবে এবং বেশি করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা আরো জোরদার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান রপ্তানি খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর সহযোগী শিল্পগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে রপ্তানি কমার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

মন্তব্য

মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রয়োজন

    গণমাধ্যমকে হুমকি কেন
শেয়ার
মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রয়োজন

আজকের দিনে রাষ্ট্র গঠন ও গণতন্ত্রচর্চায় গণমাধ্যম এবং বাকস্বাধীনতার অপরিসীম গুরুত্ব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। ক্লাসিক ধারণা অনুসারে এককথায় বলা যায়, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, আর গণতন্ত্রের প্রধান ভিত্তিগুলোর একটি হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আর এই মত প্রকাশের স্বাধীনতাই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গণমাধ্যম প্রকাশ্য হুমকির মধ্যে পড়ছে, যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চেতনাগতভাবে আহত করছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এক জটিল ও উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই আন্দোলনেরই কিছু নেতা, বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন বলে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো ভিন্নমত।

তাঁর মতে, কেউ কারো সঙ্গে একমত না হলেও মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত থাকতে হবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী প্রশাসনিক স্থবিরতা ও মব কালচার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, গণমাধ্যমও এর শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও গণমাধ্যমের প্রতি হুমকিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য আইনসম্মত পথ খোলা আছে, কিন্তু হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।

এ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ কামনা করে দেওয়া স্মারকলিপি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি, যা থেকে মিডিয়াও রক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি মার্কিন সিনেটর শেখ রহমানের অভিজ্ঞতাও প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যেখানে স্বাধীনভাবে খবর প্রকাশ করা কঠিন।

আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ধরে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করেছে, যার পরিণতি সবাই জানে। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে যে মিডিয়াগুলো পতিত সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছিল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও তারা লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।

এনসিপি একটি নতুন এবং তারুণ্যে ভরা দল। তাদের মধ্যে ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। সেসবের সমালোচনা তাদের নিজেদের সংশোধন ও বিকাশের জন্যই অপরিহার্য। এই ইতিবাচক দিকটিকে আরো শক্তিশালী করতে হলে তাদের সমালোচনার প্রতি সহনশীল হতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না গেলে সত্যের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের বীর যোদ্ধাদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা একটি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য লড়াই করেছিলেন, যেখানে গণমাধ্যম নির্ভয়ে সত্য কথা বলতে পারবে।

 

মন্তব্য

ব্যাংক খাতে গতিশীলতা প্রয়োজন

    সংকটে ব্যবসা-শিল্প-বিনিয়োগ
শেয়ার
ব্যাংক খাতে গতিশীলতা প্রয়োজন

দেশের অর্থনীতিতে এক সংকটময় পরিস্থিতি বিদ্যমান। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ডলার সংকট, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা কারণে উদ্যোক্তারা এক ধরনের আস্থাহীনতায় রয়েছেন।

তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির দুর্বলতা, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতার ঘাটতিসহ নানা কারণে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরছে না। ফলে ধুঁকছে শিল্প আর মন্দা কাটছে না অর্থনীতির।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনতে প্রচেষ্টা চালালেও বাস্তবায়ন দুর্বলতায় এর সুফল মিলছে না।

এর ফলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের লুটপাট আর ভুল নীতির বলি হওয়া ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসমাজ আজও পরিত্রাণ পায়নি। আশা করা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, শৃঙ্খলা ফিরবে আর্থিক খাতে। কিন্তু গত ১১ মাসেও ওই আশার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো পুরনো বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বেসরকারি কিছু ব্যাংকের পর্ষদ বদল, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মন্দার কবলে পড়া অর্থনীতির জন্য যে রকমের নীতি সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা, সেগুলোরও বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হতে পারছে না। বিনিয়োগ বাড়ছে না। কর্মসংস্থান বাড়ছে না।
উল্টো অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। মোটা লোকসানে পড়ে ব্যাংকে খেলাপিও হয়ে পড়ছেন অনেকে।

ব্যাংকিং খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কমার বদলে উল্টো বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, মহামারি-পরবর্তী আর্থিক চাপে অনেকেই অনিচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছেন, এখন আইনি জটিলতায় তাঁদের আরো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এদিকে বড় ঋণের সহায়তায় কমিটি গঠনের সাড়ে পাঁচ মাসেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। সময় চলে যাচ্ছে যাচাই-বাছাইয়ে। দীর্ঘসূত্রতার ফলে বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত সহায়তা না পেয়ে আরো রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা ছয় মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের আইন শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করছে, তা ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য কতটা সহায়ক তার একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা প্রয়োজন এবং দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা দরকার।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ক্রমেই গতি হারাচ্ছে তা দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিবেদনে উঠে আসছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ। অথচ গত জানুয়ারিতেও বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪.১ শতাংশ। দেশের স্বার্থে অর্থনীতির এই পশ্চাদগতি ঠেকাতে হবে। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হোক

    গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
শেয়ার
ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হোক

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। অথচ বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ধারাবাহিকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কঠোর কতৃত্ববাদী দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটলেও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে, যা শুধু দুঃখজনক নয়, চরম উদ্বেগজনকও।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদন দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং এর ওপর অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের মূল চেতনার অন্যতম ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, অথচ আজ সেই অভ্যুত্থানের একজন ছাত্রনেতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর মতো ব্যক্তি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করছেন, হুমকি দিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্য একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার মুখে যেমন অগ্রহণযোগ্য, তেমনি তা রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরম অবমাননা।

সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বিভিন্ন পেশাজীবী ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিরা এই হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তাঁদের মতে, কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে গণমাধ্যমকে হুমকি দেওয়া শুধু অশোভন নয়, এটি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এতে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, যা মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে।

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার। সাংবাদিকরা সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যে একটি স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর গণমাধ্যম তার স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারবে।

কিন্তু এখন সেই চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী আচরণ দেখা যাচ্ছে। মিডিয়ার কোনো প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি থাকলে তার জন্য দেশের প্রচলিত আইন ও প্রতিষ্ঠান যেমন আদালত কিংবা প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। আইনের বাইরে গিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া শুধু নীতিহীনতা নয়, এটি সরাসরি ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুজিবুর রহমান এবং লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহর মতো বিশিষ্টজনরা জোর দিয়ে বলেছেন যে গণমাধ্যমকে নির্দিষ্ট করে হুমকি দেওয়া অগ্রহণযোগ্য এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এটি একটি বড় বাধা। যখন বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ বা আমলারা ব্যর্থ হন, তখন সমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম।

সেই গণমাধ্যমকে নিশানা বানানো কোনোভাবেই কাম্য নয়।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাজনীতিবিদদের পরিণত ও পরিমিত ভাষা চর্চার অভ্যাস থাকা জরুরি। তাঁদের মনে রাখা উচিত, গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে যাবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পথ হারাবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ