ঢাকা, শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫
২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫
২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ সফর ১৪৪৭

প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নিন

  • শাক-সবজির উৎপাদন ভালো
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নিন

কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন তৃতীয়। গত এক যুগে দেশে রীতিমতো সবজি বিপ্লব ঘটে গেছে। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে।

শীতের আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, শসাসহ রকমারি শীতকালীন সবজিতে মাঠ ভরে গেছে। শীতের সবজি আসতে শুরু করার পর থেকে দেশের কাঁচাবাজারে স্বস্তি ফিরেছে। বাজারে সরবরাহ প্রচুর। ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী কম দামে শাক-সবজি কিনতে পারলেও দাম কমায় উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকের।
তাঁরা এখন লোকসানের হিসাব কষছেন। মাঠ পর্যায়ে খরচের তুলনায় সবজির দাম পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন খরচ তুলে আনা নিয়ে শঙ্কিত কৃষক।

দেশের কৃষিতে এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেলেও উৎপাদিত পণ্য নিয়ে কৃষক দুশ্চিন্তায় আছেন।

যে দামে শহরে কৃষিপণ্য বিক্রি হয় তার অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারেন না কৃষক। একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী আবার নিজেদের লাভটা ঠিকই বুঝে নেয়। এমনটিও দেখা যায় যে অনেক ফসল নষ্ট হয় সংরক্ষণের অভাবে। বিপণনব্যবস্থায়ও রয়েছে দুর্বলতা। অতিসম্প্রতি শুরু হয়েছে কৃষকের বাজার।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এমবাসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস, সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ১৬টি জায়গায় নিয়মিত বসছে এই বাজার।

কৃষকদের বাজার ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় তাঁরা পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি থেকে বরাবরই বঞ্চিত হন। কৃষকের বাজারের মতো উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। একই সঙ্গে উৎপাদিত শাক-সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ কিংবা রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। বছর ছয়েক আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফল এবং সবজি নষ্ট হয়ে যায় সঠিক প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে। সঠিক সংরক্ষণ সুবিধা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানির সুযোগ থাকলে কৃষককে অল্প দামে বা লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে হবে না। সরকার দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা নিয়েছিল ২০১৬ সালে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের তদারকিতে দেশের প্রথম কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে ওঠার কথা। আম, কলা, আনারস, লিচুসহ শীতকালীন সবজি টমেটো, ফুলকপি, শিমসহ অন্যান্য পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকবে এখানে।

শীতকালীন শাক-সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে। এই ধারণাটি ধরে রাখতে হবে। লোকসানের কারণে কৃষির ওপর আস্থা হারিয়ে কৃষকরা যেন অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে না পড়েন, তা দেখতে হবে। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন

    জুলাই ঘোষণাপত্র
শেয়ার
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। একই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণটিও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পাঠ করা ঘোষণাপত্রে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, একদলীয় দুঃশাসনের পতন এবং নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের রূপরেখা উপস্থাপিত হয়েছে। ২৫ ধারায় প্রস্তাব করা হয়েছে যে এটি ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার কর্তৃক সংবিধানের তফসিলে সংযুক্ত হবে।

ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন ঐক্যের আবহ স্পষ্ট হয়েছে, তেমনি উত্থাপিত হয়েছে প্রশ্ন ও হতাশাও।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ আর ২০২৪ সালে ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। এই বক্তব্য গণ-অভ্যুত্থানকে একটি ঐতিহাসিক মাত্রা দিয়েছে এবং বিএনপি ও তার সহযোগী দলগুলোর কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

তারেক রহমানের ভাষণ ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার, গুম, খুন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তিনি সাবেক সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা পর্যন্ত সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

তবে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থাপিত জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের মতে, ঘোষণাপত্রে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।

অন্যদিকে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ঘোষণাপত্রকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কারণ এটি অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা সব দলকে এক মঞ্চে আনতে পেরেছে।

সামগ্রিকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং তারেক রহমানের ভাষণ একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, যেখানে ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ থাকবে। তবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ মসৃণ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার ভিন্নমত ও প্রত্যাশার পার্থক্য একটি সুসংহত এবং কার্যকর সরকার গঠনে বাধা দিতে পারে।

শহীদদের ঋণ পরিশোধ এবং তাঁদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বিভেদ ভুলে একটি সাধারণ লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা, যা কেবল ঘোষণাপত্র ও ভাষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে রূপ নেবে।

মন্তব্য

জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন

    রোজার আগেই নির্বাচন
শেয়ার
জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ছিল। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করে আসছিল। কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করে আসছিল। মৌলিক সংস্কার ও বিচারের পরই হবে নির্বাচনএমন কথাও বলা হচ্ছিল।

নির্বাচনপদ্ধতি নিয়েও ভিন্নমত ছিল। এসব কারণে রাজনীতি বিশ্লেষকদের কণ্ঠেও ছিল অবিশ্বাস, অনিশ্চয়তা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন, তাতে সেই অনিশ্চয়তার অনেকটাই অবসান হয়েছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো। মঙ্গলবার রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এখন আর কোনো রকমের অনিশ্চিত পরিবেশ থাকবে না। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা এক ধাপ অগ্রগতি।

একই সঙ্গে তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে নিজেদের বিতর্কিত করে ফেলেছে। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, অনির্বাচিত সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, সংকট ততই বাড়বে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আশা করি, দ্রুতই নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করবে। অন্যদিকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটি বলেছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে বলেন, এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা। নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব। উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। জুলাই সনদ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে এসেছে। এদিকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছে ঢাকায় অন্তত ছয়টি পশ্চিমা দূতাবাস।

গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান প্রত্যাশা পূরণের পথে যে অগ্রগতি সূচিত হয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা ও নির্বাচনের ইতিহাসে আগামী নির্বাচন হবে একটি অনন্য মাইলফলক।

মন্তব্য

রাষ্ট্রকে পাশে দাঁড়াতে হবে

    গভীর সংকটে আহত জুলাইযোদ্ধাদের জীবন
শেয়ার
রাষ্ট্রকে পাশে দাঁড়াতে হবে

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালিত হলো। ঠিক এক বছর আগে এই দিনটিতে জাতির ওপর গভীরভাবে গেড়ে বসা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে এই অভ্যুত্থান হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে। অনন্য ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা বছর পার করলাম। অথচ গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আহত সহস্রাধিক মানুষের জীবনে নেমে এসেছে স্থায়ী দুর্দশা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।

অসংখ্য মানুষ আজ পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কারো চোখ, কারো হাত, কারো পা চলে গেছে চিরতরে। একদিকে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার সহিংসতার পরিণতি যেমন এই মানুষগুলো বহন করছেন, তেমনি নতুন বাস্তবতায় তাঁদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতার পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছি আমরা।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের বর্তমান জীবন এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষ স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। ৪৯৩ জন এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, ৩৯ জন দুই চোখ হারিয়েছেন এবং অনেকের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলো শুধু সংখ্যা নয়, প্রতিটি সংখ্যা একজন মানুষের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ এবং পরিবারের আশ্রয়। শামীমের মতো অনেকেই এখন নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছেন না এবং তাঁদের পরিবারগুলোও অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার আহতদের চিকিৎসায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৭৫ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১২ হাজার ৪২ জন গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধার মধ্যে সাত হাজার ৩৬৩ জনকে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক আহত ব্যক্তি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং আর্থিক সহায়তা তহবিলে অর্থসংকট দেখা দিয়েছে।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল আকবর জানিয়েছেন যে তহবিলে অর্থ কম থাকায় নতুন যুক্ত হওয়া শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্পূর্ণ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে জুলাইযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা দেড় দশকের স্বৈরশাসনমুক্ত হলাম, তাঁদের জীবন ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কি রাষ্ট্রের দায়িত্ব না? আমরা মনে করি, তাঁদের পুনর্বাসন ও আজীবন দেখভাল করা রাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব।

একই সঙ্গে আহতদের পুনর্বাসন এবং তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এই আহত জুলাইযোদ্ধাদের যেন ভুলে না যাওয়া হয়, বরং তাঁদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক, যা তাঁদের জীবনকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। একটি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া জনগণের রক্ত ও ত্যাগ কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করা চলবে না।

মন্তব্য

দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক

    আসন্ন জাতীয় নির্বাচন
শেয়ার
দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুধু নয়, সাধারণ মানুষের আড্ডায়-আলোচনায়ও মুখ্য বিষয় এখন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনের টক শো, গোলটেবিল, সভা-সেমিনারসর্বত্রই নির্বাচনের নানা দিক আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়েও কথা হচ্ছে। বিশেষ করে এই আলোচনা গতি পায় গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর।

সেই বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার বরাতে বলা হয়েছিল, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। পবিত্র রমজান শুরু হতে পারে ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখে। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে এটাই মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দল এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।

অবশ্য নির্বাচন নিয়ে কিছু অস্পষ্টতাও যে ছিল না, তা নয়। অভিযোগ উঠছে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী সংস্কার ও বিচারকে অজুহাত করে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারা বলছে, এসব দাবি পূরণ ছাড়া নির্বাচন নয়। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন? কী নির্বাচন হবে? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

অন্যদিকে কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করছে। সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বক্তব্যও সন্দেহের কারণ হচ্ছে। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়। অনেক রাজনীতিবিদও এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সমপ্রতি তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় দেশে কেউ উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না সেই প্রশ্ন তোলেন।
একই সঙ্গে প্রতিশ্রুত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কেউ সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে কি না সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে এনেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে আসার পর গত ৮ জুলাই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনের জন্য ফুলগিয়ারে প্রস্তুতি চলছে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তাঁর প্রদত্ত সময় অনুযায়ীও ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।

গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রত্যাশা ছিল মানুষের ভোটাধিকার বা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেই প্রত্যাশা পূরণের পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা ও নির্বাচনের ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকুক।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ