করোনায় বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতিও আজ মন্দার কবলে। অনেক দেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ তার উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে পেরেছে।
করোনায়ও অদম্য বাংলাদেশ
- এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক
অন্যান্য

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে সাধারণ ছুটিসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। অনেক দেশ এখনো করোনার টিকা পায়নি, অথচ বাংলাদেশে এরই মধ্যে এক কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়ে গেছে।
সঠিক নেতৃত্বই শুধু একটি দেশকে তার সঠিক গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশই তার প্রমাণ। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
সম্পর্কিত খবর

আলোচনা জোরদার করুন
- মার্কিন শুল্কারোপে রপ্তানি বিপর্যয়ের শঙ্কা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চশুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চশুল্কই আরোপ করা হবে।’ এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে বাড়তি শুল্কের প্রভাব হবে ভয়াবহ। পণ্য রপ্তানি কমে যাবে। যেসব কারখানার মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রে যায়, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিকল্প বাজার খোঁজার দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে কেবল তৈরি পোশাকে নির্ভরশীল না থেকে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। পণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ওপরও জোর দিতে হবে। প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা দ্রুততর করতে হবে এবং বেশি করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা আরো জোরদার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান রপ্তানি খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর সহযোগী শিল্পগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে রপ্তানি কমার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রয়োজন
- গণমাধ্যমকে হুমকি কেন

আজকের দিনে রাষ্ট্র গঠন ও গণতন্ত্রচর্চায় গণমাধ্যম এবং বাকস্বাধীনতার অপরিসীম গুরুত্ব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। ক্লাসিক ধারণা অনুসারে এককথায় বলা যায়, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, আর গণতন্ত্রের প্রধান ভিত্তিগুলোর একটি হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আর এই মত প্রকাশের স্বাধীনতাই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গণমাধ্যম প্রকাশ্য হুমকির মধ্যে পড়ছে, যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চেতনাগতভাবে আহত করছে।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এক জটিল ও উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই আন্দোলনেরই কিছু নেতা, বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন বলে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো ভিন্নমত।
এ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ কামনা করে দেওয়া স্মারকলিপি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি, যা থেকে মিডিয়াও রক্ষা পাচ্ছে না।’ এমনকি মার্কিন সিনেটর শেখ রহমানের অভিজ্ঞতাও প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যেখানে স্বাধীনভাবে খবর প্রকাশ করা কঠিন।
আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ধরে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করেছে, যার পরিণতি সবাই জানে। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে যে মিডিয়াগুলো পতিত সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছিল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও তারা লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না গেলে সত্যের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের বীর যোদ্ধাদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা একটি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য লড়াই করেছিলেন, যেখানে গণমাধ্যম নির্ভয়ে সত্য কথা বলতে পারবে।

ব্যাংক খাতে গতিশীলতা প্রয়োজন
- সংকটে ব্যবসা-শিল্প-বিনিয়োগ

দেশের অর্থনীতিতে এক সংকটময় পরিস্থিতি বিদ্যমান। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ডলার সংকট, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা কারণে উদ্যোক্তারা এক ধরনের আস্থাহীনতায় রয়েছেন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনতে প্রচেষ্টা চালালেও বাস্তবায়ন দুর্বলতায় এর সুফল মিলছে না।
ব্যাংকিং খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কমার বদলে উল্টো বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, মহামারি-পরবর্তী আর্থিক চাপে অনেকেই অনিচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছেন, এখন আইনি জটিলতায় তাঁদের আরো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এদিকে বড় ঋণের সহায়তায় কমিটি গঠনের সাড়ে পাঁচ মাসেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। সময় চলে যাচ্ছে যাচাই-বাছাইয়ে। দীর্ঘসূত্রতার ফলে বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত সহায়তা না পেয়ে আরো রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীরা ছয় মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের আইন শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করছে, তা ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য কতটা সহায়ক তার একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা প্রয়োজন এবং দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা দরকার।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ক্রমেই গতি হারাচ্ছে তা দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিবেদনে উঠে আসছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ। অথচ গত জানুয়ারিতেও বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪.১ শতাংশ। দেশের স্বার্থে অর্থনীতির এই পশ্চাদগতি ঠেকাতে হবে। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হোক
- গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। অথচ বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ধারাবাহিকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কঠোর কতৃত্ববাদী দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটলেও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে, যা শুধু দুঃখজনক নয়, চরম উদ্বেগজনকও।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদন দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং এর ওপর অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে।
সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বিভিন্ন পেশাজীবী ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিরা এই হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার। সাংবাদিকরা সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যে একটি স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর গণমাধ্যম তার স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুজিবুর রহমান এবং লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহর মতো বিশিষ্টজনরা জোর দিয়ে বলেছেন যে গণমাধ্যমকে নির্দিষ্ট করে হুমকি দেওয়া অগ্রহণযোগ্য এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এটি একটি বড় বাধা। যখন বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ বা আমলারা ব্যর্থ হন, তখন সমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাজনীতিবিদদের পরিণত ও পরিমিত ভাষা চর্চার অভ্যাস থাকা জরুরি। তাঁদের মনে রাখা উচিত, গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে যাবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পথ হারাবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।