<p>করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট উত্থাপিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এতে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি রয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘জীবন ও জীবিকার’ এই বাজেটে বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি আমলে নিয়ে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি খাত ও দেশীয় শিল্পের ক্ষেত্রে কর অবকাশ, কর অব্যাহতিসহ নানা সুবিধা থাকছে। বাংলাদেশে তৈরি পণ্যে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। দেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিদেশি পণ্যে কর বাড়ানো হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরো বলেছেন, দেশে মেগাশিল্পের বিকাশ ও আমদানি বিকল্প শিল্প উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণার পরপরই বাজেট নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেছেন, প্রয়োজনের নিরিখেই বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে, তার পরও এটি জনপ্রত্যাশা পূরণে অনেক পিছিয়ে থাকবে।</p> <p>এবারের বাজেট যেমন আকারে সবচেয়ে বড়, তেমনি বাজেটের ঘাটতিও সবচেয়ে বড়। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, করোনা মহামারির এই সময়ে এমন ঘাটতি অস্বাভাবিক নয়। ঘাটতি বেশি হলেও তুলনামূলকভাবে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমেছে। এটি ভালো দিক। এতে দেশীয় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে; যদিও করোনার কারণে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংক খাতে তারল্য অনেক বেড়ে গেছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারি চলছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে। অনেকের বেতন কমে গেছে। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ-গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রায় আড়াই কোটি মানুষের আয় এতটাই কমেছে যে তারা নতুন করে দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছে। এই নতুন গরিবদের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে, যা প্রকারান্তরে দরিদ্র শ্রেণির ওপরই বর্তাবে। করোনা মহামারিতে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি করে ফুটে উঠেছে। কিন্তু বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের মধ্যেই রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের ভালো দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষা ও বিকাশকে উৎসাহিত করার জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং কৃষি উপকরণের খরচ কমাতে নেওয়া নানা উদ্যোগ। বেশ কয়েকটি কৃষি উপকরণের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।</p> <p>বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে। এ সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুধু বড় বাজেট প্রণয়ন নয়, বাজেট বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেট বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নিশ্চিত করতে হবে।</p>