ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ফার্মগেটে প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড

  • আসাদুজ্জামান খান এমপি
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
ফার্মগেটে প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালিদের যে ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছিল; তার একটাই উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃতে ’৫২-এর অধিকারের আন্দোলন থেকে ’৬৬-এর স্বাধিকারের আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা ধাপে ধাপে আন্দোলন করে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও যখন পাকিস্তানিরা জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে, তখনই বাঙালিদের আন্দোলন স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেন যে স্বাধীনতার বিকল্প আর কিছু নেই। তখনই চূড়ান্ত হয়ে যায় বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিপথ।

দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে পরিচালিত করেন স্বাধীনতাযুদ্ধের পথে।

নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ইয়াহিয়া সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে টালবাহানা শুরু করে।

বঙ্গবন্ধু আলোচনা চালিয়ে গেলেও জানতেন যে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তিনি বিশ্বাস করতেন যে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে হবে এবং সে জন্য তিনি আমাদের প্রস্তুত হওয়ার জন্য বলতেন।

তৎকালীন সময়ে ফার্মগেট ছিল প্রতিবাদের মোক্ষম জায়গা। ফার্মগেটে ছাত্রদের নেতৃত্বে ছিলাম আমি। আমরা ফার্মগেট এলাকায় প্রতিদিন মিটিং-মিছিল করতাম। ছাত্রলীগের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং আপামর জনতা আন্দোলনে যোগদান করত।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর আমরা নিজেদের প্রস্তুত রাখতে শুরু করি। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশ গেটের এক কিলোমিটারের মধ্যে ফার্মগেট এলাকায় তখন প্রতিদিনই ব্যারিকেড দেওয়া হতো। মিছিলে মিছিলে উত্তাল থাকত রাজপথ।

আমাদের জমায়েত হওয়ার স্থান ছিল তৎকালীন ইউনাইটেড ব্যাংক ও হাবিব ব্যাংকের সামনে (এখনকার জনতা ব্যাংক ও কনকর্ড টাওয়ার)। স্বাধীনতার জন্য আবাল-বদ্ধৃ-বনিতা সবার মধ্যেই দেখতাম উন্মাদনা।

সবার দাবি তখন ছিল একটাই; স্বাধীনতা। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে আমাদের কাছে খবর ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বের হতে পারে। কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতারা ২৫শে মার্চ ফার্মগেটে একটি পরিখা খননের জন্য পরামর্শ দেন। পরিখা খনন অসম্ভব ছিল; কারণ ফার্মগেটের পাশে আর্মিদের অবস্থান ছিল। পরিখার বদলে আমরা ফার্মগেটে বড় করাত দিয়ে বড় দুটি কড়ইগাছ কেটে গাছের গুঁড়ি ও লোহালক্কড় দিয়ে ব্যারিকেড দিই। আমাদের সহযোগিতা করেন তৎকালীন তেজগাঁও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়াসহ আওয়ামী লীগের নেতারা ও আপামর জনসাধারণ। তেজগাঁও এলাকার শ্রমিকরাও এতে যোগ দেন।

২৫শে মার্চ দিনভর মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিল ফার্মগেট এলাকা। পরিখা খননের বদলে আমরা কড়ইগাছের গুঁড়ি, পুরনো গাড়ি, লোহার স্তূপ জমিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করি। রাত ১০টার দিকে আস্তে আস্তে কমতে থাকে ফার্মগেটের জনসমাগম। কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি কতটা ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। ভয়াল সেই কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতেই অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সাঁজোয়া যান প্রস্তুত থাকে; যাদের গন্তব্য ছিল রাজারবাগ, ধানমণ্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পিলখানা। আমরাও রাতে ফার্মগেটের কৃষি বিভাগের বাগানের ভেতরে প্রস্তুত ছিলাম। আর অপেক্ষা করছিলাম কখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে সাঁজোয়া যান বের হবে। এই দিন দুপুরে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন তেজগাঁও থানার দুই পুলিশ সদস্য। তাঁরা আমাদের কথামতো রাতে তৎকালীন হাবিব ব্যাংকের ছাদে থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে পজিশন নেন। সারা দিন মিছিল-মিটিংয়ের পর সন্ধ্যায় ফার্মগেট এলাকায় জনসমাগম কমে আসে।

রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে থাকে ঘাতক সেনাদের কনভয়। আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর কনভয় এগিয়ে আসতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফার্মগেটের সামনে এসে আমাদের বাধার মুখে এবং ব্যারিকেডের সম্মুখে এসে কনভয়ের গতি থেমে যায়। আমাদের কাছে যা ছিল তাই আমরা কনভয়ের ওপর ছুড়ে ফেলতে থাকি এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত করি ফার্মগেট এলাকা। তখন হাবিব ব্যংকের ওপর অবস্থান নেওয়া দুই পুলিশ সদস্যও ফায়ার ওপেন করেন। কনভয় এসে রাস্তা পরিষ্কার করতে থাকে এবং আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে; প্রথমে গুলি, পরে ব্রাশফায়ার করে। গুলির ফলে আমরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে বাধ্য হই। আমরা যতক্ষণ ওখানে ছিলাম ততক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছিলাম এবং তারা মেশিনগানের গুলি দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। ফার্মগেট এলাকায় প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড গুঁড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যায় আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাতকরা।

পাকিস্তানি ঘাতকরা ফার্মগেট এলাকায় প্রতিরোধে মুখে পড়ে আরো সতর্ক হয়ে যায়। ফার্মগেটের প্রতিরোধের ইতিহাস জানা যায় পাকিস্তানি ঘাতক মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ঘনিষ্ঠ মেজর সিদ্দিক সালিকের লেখা ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে। বইটির ৭৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২৫শে মার্চ রাতে ফার্মগেটে মুক্তিকামী বাঙালির প্রতিরোধের কথা। যার বাংলা সারমর্ম হলো, “ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হওয়া প্রথম সেনাদলটি বাধার মুখে পড়ে ফার্মগেটে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে যার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। সদ্য কাটা বড় বড় গাছের গুঁড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে ফেলে প্রথম দলটিকে থামিয়ে দেওয়া হলো। পুরনো গাড়ির খোল এবং অকেজো স্টিমরোলার টেনে এনে রাস্তার পাশের ফাঁকা অংশও আটকে দেওয়া হয়।

ব্যারিকেডের ওপাশ থেকে আওয়ামী লীগের অন্তত কয়েক শ কর্মী দাঁড়িয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকে। জেনারেল টিক্কা খানের সদর দপ্তরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি তাদের তেজোদীপ্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছিলাম। মনে হলো, মুহূর্তেই সেনাদের রাইফেলের গুলির শব্দ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সঙ্গে মিশে যেন একাকার হয়ে গেল। একটু পরেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে বিস্ফোরণ বাতাসে তীক্ষ শব্দ তুলল। এরপর কিছুক্ষণ ধরে গগনবিদারী স্লোগান ও গুলির শব্দের সঙ্গে হালকা মেশিনগানের গুঞ্জন বাতাসে ভেসে আসতে থাকল। প্রায় ১৫ মিনিট পরে গোলমালের শব্দ কমে এলো এবং স্লোগানের আওয়াজ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে হতে একসময় থেমেই গেল। স্পষ্টতই অস্ত্রের জয় ঘটল। সেনাদল এগিয়ে গেল শহরের ভেতরের দিকে।”

ফার্মগেটে প্রতিরোধের ব্যারিকেড ভেঙে দিয়ে এগিয়ে যায় ঘাতকদল। বাংলামোটর এলাকায় একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে তারা। এরপর রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর পিলখানা এলাকায় ছুটে যায় সেনা কনভয়। পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রক্তাক্ত রাজারবাগে রচিত হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের বীরত্বের ইতিহাস।

ফার্মগেটে প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড গুঁড়িয়ে দিলেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারেনি। কারণ আমরা ট্রেনিং নিয়ে ছাত্র-জনতা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিজয় অর্জন করি। এই স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখক : ২৫শে মার্চ ফার্মগেটে প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেডের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতা এবং মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন নিশ্চিত হোক

    জব্বার আল নাঈম
শেয়ার
প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন নিশ্চিত হোক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের থলে থেকে একের পর এক বল ছোড়া হচ্ছে। সাংবিধানিক ব্যবস্থা, পিআর, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস, সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রসার, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংশোধনে গণভোটের বিধান, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদে নিরপেক্ষ নিয়োগ, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কারের মতো বিষয়গুলো।

গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আলোচিত-ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান রোধ এবং রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গনির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য। বিষয়গুলো জটিল সমীকরণে ঘুরপাক খাচ্ছে সত্য।

দুটি বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে বলাও যায়, প্রথমত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল হলো, সরকারের ভেতরে আরেক সরকার। এই কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, আইনসভার নিম্নকক্ষের ও উচ্চকক্ষের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার থাকবেন। এমনটা হলে নির্বাচিত সরকার এবং সাংবিধানিক কাউন্সিলের অবস্থান হবে সাংঘর্ষিক! রাষ্ট্রপতি চাইলেই জরুরি অবস্থা ডাকতে পারবেন না, আদতে যা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।

দ্বিতীয়ত, পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) বাংলায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

যখন নির্বাচনের তারিখ প্রায় নির্ধারিত, ঠিক তখনই দেশের মানুষের সামনে নতুন সমীকরণ দাঁড় করানো হলো! অর্থাৎ প্রথম দল ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় দল ১২ আর তৃতীয় দল যদি ৩০ শতাংশ ভোট পায়, প্রচলিত পদ্ধতিতে তৃতীয় দল সরকার গঠন করবে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে কেউ শূন্য হবে না৩০০ আসনের মধ্যে তৃতীয় দল পাবে ৯০ আসন, দ্বিতীয় দল ৩৬ এবং প্রথম দল ৩০ আসন পাবে। এই পদ্ধতিতে বড় দলগুলোর সামনে জটিল সমীকরণ হলেও ছোট দলগুলোর সামনে সীমাহীন সুযোগ। ফলে সহজেই সহমত প্রকাশ করে এনসিপি, জামায়াত ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মতো দলগুলোও।
এনসিপি ছয় মাস বয়সী হলেও রাজনীতির মাঠে ঝানু খেলোয়াড় জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে সামনে যেতে চায়। বিএনপি যখন পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে, জামায়াত তখন যেন এক কদম এগিয়ে। নিশ্চয়ই জামায়াতেরও এজেন্ডা আছে, তাদের প্রত্যাশা এটা জাতীয় সরকারের রূপরেখা অথবা বিএনপির সঙ্গে এর মধ্য দিয়ে আসনবণ্টনের সমঝোতা। দলটি তা বাস্তবায়নে কতটুকু সক্ষম ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওল্টালে অনুমান করা সহজ।

নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচার পতনের পর ঠিক বর্তমান সময়ের মতোই জামায়াত রাজনীতির ময়দানে চৌকস ভূমিকায় ছিল।

একানব্বই নির্বাচনে ১৮ আসন অর্জন করে। ভোট ছিল ১২.১৩ শতাংশ। পরবর্তী দুই নির্বাচনে (তিন আসন) ৮.৬১ শতাংশ, (দুই আসন) ৪.২৮ শতাংশের বেশি ভোট লাভ করতে ব্যর্থ হয় দলটি। শতাংশ হিসাবে বলা চলে ১৯৯১-এর পর জামায়াতের পতন হয়েছে। কারণ ১৯৯৬-এর পর থেকে দলটি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বরাবরই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

২০২৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো স্বৈরাচার পতন হলে জামায়াত আবারও উজ্জীবিত, কর্মীরা প্রাণবন্ত, দলটির ধারণা সমর্থকও বেড়েছে ব্যাপক হারে। ধারণা আর ভাবনা মিলে আশা করছে, দলটি সরকার গঠন করবে, কোনো কারণে ব্যর্থ হলে পিআর পদ্ধতিতে অনেকগুলো আসন পাবে। এনসিপি, জামায়াতসহ ছোট অন্য দলগুলো এই ফর্মুলায় এগোতে চাইলেও বিএনপি পড়বে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। ৫০ শতাংশ ভোট পেলেও (সর্বোচ্চ অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৪০.৯৭ শতাংশ পেয়েছে) বিনিময়ে আসন পাবে ১৫০টি, যা প্রত্যাশার চেয়ে কম। ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।

২.

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অন্তত ১০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপি অসম্মতি প্রকাশ করেছে। এই অসম্মতিই গণতন্ত্র। গণতন্ত্র না থাকলে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রায় অসম্ভব। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল, ফলে সাধারণ মানুষের কথা প্রতিনিয়তই মাথায় রেখে যেকোনো সিদ্ধান্তে সম্মতি দিতে হয়। অথচ আলী রীয়াজ আবারও জোর গলায় বলেন, যেসব প্রস্তাবে একমত হওয়া যাচ্ছে না, আমাদের প্রথম লক্ষ্য হবে দলগুলোর অবস্থানগত দূরত্ব কমিয়ে মধ্যবর্তীভাবে জায়গায় এনে হলেও রাজি করানো।

পিআর বাস্তবায়িত হলে সত্যিকার জনপ্রিয় প্রার্থীদের সামনে আসাটা কঠিন। দলের মধ্যে তেলবাজদের প্রভাব বাড়বে, অবৈধ লেনদেন বাড়বে। এতে যোগ্যরা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সেবা প্রদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গ সামনে টানেন, এখন ঐকমত্য যেগুলোতে হয়েছে সেগুলো করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে দেন। আর যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না সেগুলো বাংলাদেশের জনগণের বাইরে আর কারো করার ক্ষমতা নেই, আমাদেরও ক্ষমতা নেই। অর্থাৎ কমিশন তার কথার গুরুত্ব হারাচ্ছে। সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হচ্ছে, অদৃশ্য শত্রু ও শক্তির প্রভাব বাংলাদেশে বাড়ছে, বাড়ছে আতঙ্কও। এরই মধ্য দিয়ে ২০২৬ সালের নির্বাচনেও কালক্ষেপণ শুরু হয়েছে।

পিআর অবশ্যই ভালো ও গ্রহণযোগ্য একটি সংযোজন হতো, যদি উন্নত দেশের মতো মানুষ শতভাগ শিক্ষিত ও সচেতন হতো। এই পদ্ধতিতে একজন ইউপি মেম্বারের সমান যোগ্য ব্যক্তিও সাংসদ হতে পারে। সাংসদ হতে পারবে বিত্তবান সিরিয়াস কিলার, ডাকাত, ভূমিদস্যু কিংবা কালো টাকার মালিকরা। প্রথম স্বৈরাচার পতনের পর তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে। তখন ভোটের আনুপাতিক হারের দিকে খেয়াল করলে সামনের পিআরে আওয়ামী লীগও ৬০ থেকে ৮০ আসন সন্দেহাতীতভাবে পাবে। অতএব নির্বাচনের ফলাফল ও ভোটের অনুপাত হিসাব করলে অনুমেয় যে এনসিপি, জামায়াত ও সঙ্গীরা রাজনীতির হাতি, ঘোড়া, কিস্তি বুঝতে পারছে না।

তাই সরকারের উচিত প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন নিশ্চিত করা। সাংবিধানিক কাউন্সিল বিষয়ে আরো ভাবনা সংযোজনের পাশাপাশি রাষ্ট্রের ওপর দিন ও দিবসবিষয়ক ছুরি চালানো বন্ধ করা।

 

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক

jabbaralnayeem@gmail.com

মন্তব্য

মব কালচার উচ্ছেদে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন

    মেজর জিল্লুর রহমান অব.
শেয়ার
মব কালচার উচ্ছেদে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন

কিছুদিন ধরে খবরের শিরোনামে মব সন্ত্রাস থাকছেই। আজ ঢাকায় করছে তো কাল অন্য কোনো জেলায় বা প্রত্যন্ত এলাকায়। উঠতি বয়সের ছেলেরা থানা পর্যন্ত আক্রমণের দুঃসাহস দেখাচ্ছে। যারা আইন প্রয়োগ করবে তাদের যদি দুষ্কৃতকারীরা সমীহ না করে ভীত না হয় সে সমাজে আইনের শাসন থাকে না।

মব সন্ত্রাসে আক্রান্ত ব্যক্তিটি আদৌ অপরাধী কি না সেটা তদন্ত করে না দেখে, আদালতে বিচার হওয়ার আগেই তাকে মারধর, অপমান, অপদস্থ তো বটেই, খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বদরবারে। মব সন্ত্রাসের সময় উত্সুক লোকের ভিড় থেকে ভিডিও করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে নিজের প্রোফাইল বা পেজের প্রসার ঘটাচ্ছে; অথচ অপরাধ প্রতিহতের চেষ্টা কেউ করছে না। এ ধরনের ঘটনায় নাগরিকদের আওয়াজ তোলা উচিত।

ছোটবেলায় দেখেছি পাড়া-প্রতিবেশী, মহল্লার সবাই মিলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেত, আর অপরাধী সামাজিক ঐক্য দেখে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেত। সেই সামাজিক ঐক্য এখন বড় বেশি সংকুচিত হয়ে গেছে! আমরা কি অল্প সময়ের ব্যবধানেই ভীরু হয়ে গেলাম! আমরা কেন অন্যায়ের কাছে হেরে যাব? অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, খানিকটা মানসিক অসুস্থ লোকদেরও ছাড় দেওয়া হয় না। নানা ধরনের অপরাধ, চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি অভিযোগে তাদেরও মারধর করা হয়। এসব কি একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে উঠেছে।

 ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে ,ব্যক্তিগত শত্রুতার নামে এ ধরনের অভিযোগ তৈরি করে মানুষের ওপরে অত্যাচার এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পরপরও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে । কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে আজকের দিনের এই মব সন্ত্রাসের ঘটনা। আগের দিনে এসব ঘটনা ঠেকাতে মানুষ ছুটে আসত। শঙ্কার বিষয় এখন কেউ ঢাল হয়ে দাঁড়ায় না।

এটাই সমাজ পচনের লক্ষণ। একজন মানুষের বিরুদ্ধে যদি একদল মানুষের কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সেখানে কেন আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া হবে? কেন পুলিশ প্রশাসনের হাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তুলে দেওয়া হবে না? আর আইন যখন মানুষ নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তখন কিছু নাগরিক তা থেকে মজা  লোটার উদ্দেশ্যে, এটাও কম নিন্দনীয় নয়। চোখের সামনে খুন হচ্ছে একজন মানুষ। আর একদল মানুষ তাতে বাধা না দিয়ে সেটা উপভোগ করবে?

আমরা তো এই সমাজমাধ্যমেই নানা ধরনের সমাজমনস্কতার ভিডিও দেখি, সেখানে কেউ বিপদে পড়লে বিপদগ্রস্তকে বাঁচাতে মানুষ নিজের জীবনেরও ঝুঁকি নেয়। নিজে না পারলে পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নেয়। সেই দেখাটা কি দেখাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে? সব দোষ পুলিশের ওপর চাপিয়ে, প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পাওয়ার মানসিকতা অনেকের মধ্যে দেখা যায়, যা কাম্য নয়।

প্রশ্ন হলো নাগরিক সমাজের কি কোনো দায় নেই? নাগরিক সমাজ কেন প্রতিরোধে এগিয়ে আসে না? কোনো ক্ষেত্রে নিজের ওপর ঝুঁকি আসতে পারে। কিন্তু পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষ বাহিনীকে খবরটা পৌঁছে দেওয়া যায় না কি? পুলিশ বিচার করুক অভিযোগের দিকগুলো। তারপর পুলিশ নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করে অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে অভিযুক্তকে  বিচারে সোপর্দ  করুক।

একজন নাগরিক, হলোই বা সে পতিত দলের সমর্থক বা কর্মী । তবু তার প্রতি কি এতটুকু ভালোবাসা, সহানুভূতি আরেকজন নাগরিকের থাকতে পারে না? দায় কি সবটাই শুধু প্রশাসনের? দায়িত্ব সবটাই শুধু পুলিশের? আমাদের সমাজের অংশ হিসেবে, সমাজের কল্যাণে, শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থেও তো চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবাদী হয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে। নিজের বিবেক জাগ্রত রাখতে হবে।

আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি, আর একজন মানুষকেও আমরা এভাবে এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হতে দেব না, খুন হতে দেব না। সেই মানুষটি যে দলের বা যে মতেরই হোক না কেন? দেশকে মবের মুল্লুক বানাতে দিতে পারি না। আমাদের পুলিশ প্রশাসনের পাশে দাঁড়াতে হবে। গড়তে হবে সভ্য দেশ ।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

zillu65@hotmail.com

মন্তব্য

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কি আদৌ সম্ভব

    ড. ফরিদুল আলম
শেয়ার
গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কি আদৌ সম্ভব

ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ধরনের মেকি শান্তি প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সারা বিশ্বকে তিনি বোঝাতে চাইছেন যে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি কতটা আন্তরিক। একদিকে মানুষের লাশের সারি, বাদ নেই কেউ, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, এমনকি ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর মানুষগুলো যখন ত্রাণের জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে, ইসরায়েলের বর্বরতার নির্মম বলি হচ্ছে তারাও। আর এখানেই যেন থমকে গেছে বিশ্বমানবতা আর আন্তর্জাতিক আইন! মানুষের মৃত্যু নিয়ে এত তামাশা কি কেউ দেখেছে এর আগে! গত দুই সপ্তাহে আট শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে শুধু ত্রাণ আনতে গিয়ে।

ক্ষুধায় প্রতিদিন মরছে মানুষ। নেই চিকিৎসা, এমনকি পর্যাপ্ত খাবার পানিও। অথচ এসব বুভুক্ষু মানুষের প্রাণনাশের জন্য অস্ত্র কিনতে অর্থের অভাব হয় না! হায়রে নির্মমতা!

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে গেলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সবার ধারণা ছিল, কিছুদিন ধরে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে, তার সফল বাস্তবায়ন হবে, গণহত্যা থেমে যাবে।

কিন্তু গণহত্যা এক দিনের জন্যও থামায়নি ইসরায়েল। এর পরও মনে হচ্ছিল যে আলোচনা হয়তো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রূপ নেবে। সবার দৃষ্টি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে, যিনি কিছুদিন ধরে যেন শুধু যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন। প্রথমে ভারত-পাকিস্তান, পরে ইরান-ইসরায়েল।
এখন তিনি মুখিয়ে আছেন হামাস-ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য! আর এর মধ্য দিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কারের খুব কাছাকছি পৌঁছে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর তিনি।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/07.july/18-07-2025/kalerkantho-ed-1a.jpgএখানে ট্রাম্পের ভূমিকা অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হবে। তিনি যতই নিজেকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক বলে প্রমাণ করতে চান না কেন, এটা কারো বুঝতে বাকি নেই যে মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে ইসরায়েলের কথাই শেষ কথা। তিনি কি এ কথা বুঝতে পারছেন না যে ইসরায়েল কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করে যাচ্ছে? এইতো কদিন আগে নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউসে এসেছিলেন। ট্রাম্প ভেবেছিলেন যে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে সম্মত এবং এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তিনি নেতানিয়াহুর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে শুধু একটি ঘোষণা দেবেন।

তা হলো না, বরং আরেকটিবারের মতো নেতানিয়াহু বোকা বানালেন তাঁকে। এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতিতে কেন যাওয়া উচিত নয়, নিজের যুক্তি দিয়ে যেমন বোঝাতে সক্ষম হলেন, সঙ্গে তার সরকারের পক্ষ থেকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশের চিঠি তুলে দিয়ে যেন ট্রাম্পকে মহাখুশি করলেন! এত দিন ধরে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ট্রাম্প বুঝলেন, ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের মৃত্যুর চেয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বেশি জরুরি। এত দিনে যেহেতু ৫৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি হওয়া সত্ত্বেও শুধু অস্ত্র আর অর্থের শক্তি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া গেছে, আগামী দিনগুলোতেও সেটা তেমন কোনো সমস্যা হবে না, অন্তত ইসরায়েলের জন্য না। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যেক কোনদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা ভিন্ন বিশ্লেষণাত্মক আলোচনার দাবি রাখে।

গাজা নিয়ে ইসরায়েল আসলে কি ভাবছে, একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগে এই বিষয়টা জেনে নেওয়া খুব জরুরি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এই যুদ্ধের শুরু থেকেই যে কথাগুলো বলে যাচ্ছেন, সেগুলো যদি তিনি সত্যিই মন থেকে বলে থাকেন, তাহলে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না। তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করাকেই সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন। গত জানুয়ারিতে যখন ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তখনো অনেকেই ভেবেছিলেন এর মধ্য দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জন করা সম্ভব। হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে, এমন কোনো অভিযোগ কোনো পর্যায় থেকে না উঠলেও ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। গাজায় হামলা করে বসে। বিষয়টা এমন যে আন্তর্জাতিক প্রবল চাপের কাছে সাময়িক নতি স্বীকার করে যুদ্ধবিরতিতে গিয়ে পরবর্তীতে আবারও নিজেদের নিরাপত্তার ইস্যুকে সামনে এনে যুদ্ধ শুরু করে গাজা খালি করার বিষয়ে তার পরিকল্পনা পেশ করেন। আর এটা পেশ করতে না করতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন একধাপ এগিয়ে তাঁর ব্যাবসায়িক চরিত্রের প্রকাশ ঘটালেন গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা (বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্র) বানাতে তাঁর পরিকল্পনার কথা বলে। সুতরাং যদি একটি যুদ্ধবিরতি হয়ও, তা হবে সাময়িক, অন্তত নিকট অতীতের ঘটনাগুলো এবং ইসরেয়েলের উদ্দেশ্যগুলো সেটাই বলছে।

এখানে আরেকটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে, আর তা হচ্ছে ইসরায়েল যে যুক্তিতে এই যুদ্ধকে চালিয়ে নিচ্ছে তা কি আসলেই ইসরায়েলের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে এই যুদ্ধে নেতানিয়াহুর যতটা ব্যক্তিগত ইচ্ছা, সেটা কিন্তু ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটায় না। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই আমরা দেশটির অভ্যন্তরে যুদ্ধবিরোধী যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখছি, এসব দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায় ডানপন্থী একটি জোট সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নেতানিয়াহুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আর নেতানিয়াহুও নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর সখ্যকে কাজে লাগাচ্ছেন। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় হামাসের পক্ষ থেকে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের দাবির বিপরীতে যুক্ত হয়েছে ইসরায়েলের নতুন মানচিত্র, যেখানে গাজার অধিকাংশ এলাকাকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে দেখিয়ে নিরাপত্তার অজুহাতে সেখানে আরো অধিকসংখ্যক সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতিকে কার্যকরের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে নতুন একটি বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ মাসের ২৭ জুলাই থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের অধিবেশন রয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সরকারের জোট সঙ্গীদের দিক থেকে প্রবল বাধার মুখে ফেলবে। এ ধরনের চুক্তি যদি নেতানিয়াহু করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে স্পষ্টতই সরকারের ওপর থেকে শরিকদের সমর্থন প্রত্যাহারের সম্ভাবনা রয়েছে, যা নেতানিয়াহুর পতন ডেকে আনবে। সুতরাং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই অধিবেশন চলাকালে অন্তত এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কোনো ইচ্ছা ইসরায়েল সরকারের দিক থেকে দেখানোর সম্ভাবনা নেই। আর এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের ভেতর থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের গাজা গণহত্যার চলমান বিষয়টি আরো গ্রহণযোগ্যতা পেতে থাকবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কি সম্ভব? সেটি সম্ভব, তবে এর জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে ইসরায়েলের ভেতর সরকার পরিবর্তন। যদি আন্তর্জাতিক চাপ, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রবল হয়, তাহলে নেতানিয়াহু একটি চুক্তি করতে বাধ্য হবেন, সে ক্ষেত্রেও শরিকদের সমর্থন প্রত্যাহারজনিত কারণে তাঁর সরকারের পতন ঘটবে এবং পরবর্তীতে সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যদি নতুন কোনো সরকার দায়িত্ব নেয়, তবে এটির ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকতে পারে। তবে যে যুক্তিতে নেতানিয়াহু এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন এবং এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রও কোনো চাপ দেবে বলে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে একটা সম্ভাবনার জন্যই অপেক্ষা করতে হবে, আর তা হচ্ছে ইসরায়েলের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন, যেখানে নেতানিয়াহুবিরোধী ব্যাপক একটা জনমত দেখা দিতে পারে। তবে পরিস্থিতিকে তিনি এতটাই জটিল করে তুলেছেন যে ভবিষ্যতে যুদ্ধবিরতি হলেও থেমে থেমে সংঘাত চলতেই থাকবে।

 

লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

mfulka@yahoo.com 

মন্তব্য

ক্রীড়াঙ্গনে কতটুকু প্রাপ্তি চেতনে ও অবচেতনে

    ইকরামউজ্জমান
শেয়ার
ক্রীড়াঙ্গনে কতটুকু প্রাপ্তি চেতনে ও অবচেতনে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে কতটুকু প্রাপ্তি চেতনে ও অবচেতনে? গত এক বছরের সংস্কার একটি বহুল শ্রুত শব্দে পরিণত হয়েছে। মানুষ এই রাজনৈতিক পরিবর্তনকে কিভাবে দেখতে চেয়েছে। চব্বিশের মূল দর্শন ক্রীড়াঙ্গনের ক্ষেত্রে হলো নারী-পুরুষে বৈষম্যের অবসান, গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে সংগঠকদের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার। আর এটি অগ্রাধিকার নির্ণয় করে; কেননা সংস্কার তো একটি চলমান বিষয়, এটি ছাড়া তো ক্রীড়াঙ্গন অচল ও অকার্যকর হতে বাধ্য।

ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থান সুযোগ করে দিয়েছে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও স্বেচ্ছাচারিতা ও দমনমূলক ঐতিহ্য ভাঙার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্রেফ একটি রেজিম চেঞ্জ নয়; এর দর্শন অন্য রকম। এর চেতনার পরিধি অনেক বড়। আমরা বারবার বলেছি, ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিবেকের সংস্কার।

মানুষ তো কেবল তার স্বপ্নের সমান। সে আশা করে, অপেক্ষা করে। বাস্তবতার জমিনে দাঁড়িয়ে যদি আমরা সঠিকভাবে ক্রীড়াঙ্গনকে আত্মস্থ করতে পারতাম, তাহলে আগামী দিনে আমরা অনেক বেশি স্বপ্ন দেখতে পারতাম। তবে ক্রীড়াঙ্গনে একটি ঝাঁকুনি দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

ট্র্যাডিশনের বিপক্ষে দাঁড়ানো হয়েছে, এটি কম বিষয় নয়। ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাডহক বডি গঠন করা হয়েছে। ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যা আগের তুলনায় কমানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছেযাঁদের নিয়ে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাডহক বডি গঠন করা হয়েছে, তাঁরা আসলে কারা? কী তাঁদের ব্যাকগ্রাউন্ড? তাঁরা কি নিজ থেকে প্রো-অ্যাকটিভ হওয়ার মতো মানসিকতাসম্পন্ন?

ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠকরা যদি খেলাকে ভালোবেসে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে সবাই মিলে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে বিভিন্ন খেলা দারুণভাবে সাফার করবে। ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তো নেই।

সবাই তো প্রবল উৎসাহ নিয়ে, সবকিছু বুঝেশুনেই দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। অ্যাডহক কমিটি হয়েছে। এবার ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্রে সংস্কার সাধনের জন্য নতুন কমিটি করা হয়েছে। কাগজে দেখেছি, এই কমিটিতে স্থান হয়েছে এমন একজন অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে চলে গেছেন। সেখানে বৈধভাবে তাঁর থাকার ব্যবস্থা আছে। আমরা চাচ্ছি ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের নামে খেলাধুলা যাতে স্থবির না হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত না হয়।

বর্তমানে পুরো দেশে সার্বিক ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা মোটেই ক্রীড়াবান্ধব নয়। অপ্রিয় শোনালেও এটাই বাস্তবতা। ব্যক্তিস্বার্থ থেকে ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থকে বড় করে দেখতে না পারলে ক্রীড়াঙ্গনে পরিবর্তনের সুফল পাওয়া যাবে না। জোড়াতালি আর ধামাচাপা দিয়ে ক্রীড়াঙ্গন চলবে না। এ ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয়গুলো আমলে রাখতেই হবে। ক্রীড়াচেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্রীড়াঙ্গনে আস্থা ও বিশ্বাসের বিকল্প নেই। মানুষ এখন ক্রীড়াঙ্গনকে অন্যভাবে দেখতে শুরু করেছে। তারা ক্রীড়াঙ্গনের মধ্যে দেশকে দেখতে চায়। দেখতে চায় জাতিচরিত্রের প্রতিফলন। ক্রীড়াঙ্গনের সবকিছু স্পষ্ট হওয়া উচিত। আমরা অনেক বেশি আশা করেছিভাবা হয়েছে, আমরা একবারে সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলব। এটি কিন্তু সম্ভব নয়। সমস্যার পরিধি তো ব্যাপক। সবাই লক্ষণ নিয়ে ভাবছেন, মূলের দিকে তাকাচ্ছেন না। ক্রীড়াঙ্গন বোঝাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ক্রীড়াঙ্গনে যেমন অতীতকে আঁকড়ে ধরে রাখার সুযোগ নেই, তেমনি সুযোগ নেই অতীতকে অস্বীকার করার। খেলার চর্চা একটি লম্বা সফর। এই সফরে আছে টিমের নিরলস চেষ্টা। আছে সফলতা, ব্যর্থতা আর সীমাবদ্ধতা। খেলার চর্চাকে কোন দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে, এটি দরকারি বিষয়। প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন এবং সাফল্যের স্বাদ পেতে পারেন, যদি তিনি যা করছেন তার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ও সত্যিকারের আন্তরিক হন।

একসময়ের ঢাকা স্টেডিয়াম-এর নাম বদল করে ১৯৯৬ সালে নতুন নামকরণ হয়েছে। এরপর আবার চলতি বছর (২০২৫) সেই স্টেডিয়ামের নামকরণ হয়েছে জাতীয় স্টেডিয়াম। এটি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে এই স্টেডিয়াম সুস্থভাবে ক্রীড়াচর্চার মাধ্যমে প্রাণচঞ্চল হচ্ছে কি না এটি গুরুত্বপূর্ণ। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো স্টেডিয়ামের সঠিক ব্যবহার, এর রক্ষণাবেক্ষণ। মেইন সাবজেক্ট থেকে ঐচ্ছিক সাবজেক্ট তো গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবেগের প্রয়োজন আছে, কিন্তু শুধু আবেগ দিয়ে ক্রীড়াঙ্গন চলে না।

ক্রীড়াঙ্গনকে ঘিরে শূন্যে বুলি আর আশ্বাসের বাণী শোনানোর দিন এখন আর নেই। সচেতনতা বেড়েছে। বেড়েছে সাদা-কালো বোঝার ক্ষমতা। এরই মধ্যে অনেক বেলা হয়ে গেছে। মানুষ এখন দেখতে চায় কল্যাণমুখী ক্রীড়াঙ্গন। দেখতে চায় ন্যায়ভিত্তিক সমতার ক্রীড়াঙ্গন। দেখতে চায় উপেক্ষা আর অবহেলার অবসান। ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। দরকার সুবিধাভোগীদের খপ্পর থেকে ক্রীড়াঙ্গনকে মুক্ত করা।

ক্রীড়াঙ্গনে সমস্যা হলো নীতিতে সমন্বয়হীনতা ও নেতৃত্বের অভাব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিন্তার জগৎ সেই পুরনো দিকেই থেকে গেছে। জীবন কিংবা খেলাধুলা তো রূপকথার গল্পের মতো নয়। অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেতে হবে। মেনে নিতে হবে। একে অপরকে দোষারোপ করে, একে অপরকে হিংসা করে বিরুদ্ধাচরণ ও অভিযোগ উত্থাপন করে তো সমস্যার সমাধান হয় না। প্রয়োজন যে খেলাই হোক না কেন, সেই খেলার স্বার্থে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ও ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করা।

আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে হওয়া উচিত একটি উদ্দেশ্য নিয়ে টেকসই মডেল, যা কাঠামোগত সমস্যার সমাধান করে এবং সবার জন্য ক্রীড়াঙ্গন নিশ্চিত করবে। পদে পদে ক্রীড়াঙ্গনে সব সময় বড় বেশি অজুহাত। ক্রীড়াঙ্গনের ভালো চাইলে, ক্রীড়াঙ্গনকে যুগোপযোগী করতে হলে প্রয়োজন জিরো অজুহাত নীতিতে কাজ করা। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে উদ্ভাবনী শক্তিটা সত্যি দুর্বল। একটি ধারণা আরেকটি ধারণার জন্ম দেয়। উদ্দেশ্য নিয়ে যখন উদ্ভাবন হয়, তখন তাতে আসে স্থায়ী পরিবর্তন। ক্রীড়াঙ্গনে সাময়িক আত্মতৃপ্তি বলতে কিছু নেই।

খেলাধুলায় নেতৃত্ব বিকাশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে। সার্চ কমিটি কাজ করতে গিয়ে সেটি লক্ষ করেছে। তবে সমস্যার সমাধানে তারা আশাব্যঞ্জক কাজ করতে পেরেছে, এটি বলার সুযোগ নেই। ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়নের সুফল পেতে হলে তৃণমূল থেকে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সেদিকে নজর কম। খেলোয়াড় তো জন্মায় না, সৃষ্টি করতে হয়; আর সেটি একেবারে এন্ট্রি লেভেল থেকে। এই যে আমাদের নারী ফুটবলাররা অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে দেশের মানুষকে গর্বিত করেছেন, পাশাপাশি ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার বড় দরজা খুলে দিতে সক্ষম হয়েছেন, এর পেছনে আছে একটি ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন মেয়েরা। কিভাবে ফুটবলে তৃণমূল থেকে ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন। দেশজুড়ে প্রাইমারি স্কুল পর্যায়ের ফুটবল মেয়েদের ক্রীড়াঙ্গনে এনেছে।

ক্রীড়াঙ্গনে দায় স্বীকার করে নেওয়ার সংস্কৃতির প্রয়োজন। ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিদিনের আলোচনা ও গল্পে স্বস্তি বিরাজ করুক। ক্রীড়াঙ্গনে বাস্তবতার পৃষ্ঠপোষকতা হোক। ক্রীড়াঙ্গন ঘিরে দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার জগৎ বড় হোক।

 

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার, ফুটবল এশিয়া।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ