ঢাকা, বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫
২২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১১ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫
২২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১১ সফর ১৪৪৭

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ

  • একই সঙ্গে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ

জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা খুব ভালো নয়। গণমাধ্যমেও তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রায়ই নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠার অভাব হলে মানুষের কল্যাণ যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও সরকারের জনপ্রিয়তাও হ্রাস পায়।

তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জাতির পিতার নীতি ও আদর্শ মেনে আরো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার ফেনী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথগ্রহণের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সেই সংগঠন, যেটি জাতির পিতা তাঁর নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন এবং যে সংগঠনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল।

ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো শক্তিশালী স্থানীয় সরকার কাঠামো এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়টি শুধু অবহেলিত নয়, প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েছিল। তাঁকে হত্যার পর সব উদ্যোগ বাতিল করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি এরশাদের সময় উপজেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ প্রথা বিলুপ্ত করে।
জেলা পরিষদকে অকার্যকর করে দেয়। আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়। তাঁর সরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কারণে আমরা আইন করে এই জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ প্রতিটি স্তর সুবিন্যস্ত করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করছি, যাতে উন্নয়নের গতি গ্রামের সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল যেন একদম তৃণমূলের মানুষ পেতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
’ প্রধানমন্ত্রী যে ইচ্ছা, যে ঐকান্তিকতা নিয়ে এই কথাগুলো বলেছেন, সেটি তখনই সত্য হবে, যখন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন।

অতীতে অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সময়ে রাজনীতি দূষিত হয়ে পড়েছিল। সেই রাজনৈতিক দূষণের সূত্র ধরে স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেসব কাঠামোতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বাসা বেঁধেছিল। রাজনীতিকদের মতো জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও জনসেবার বদলে নিজের আখের গোছানোর প্রবণতা বড় হয়ে উঠেছিল। গণতান্ত্রিক সরকারের সময় সেই ধারায় পরিবর্তন আসছে। তবে তাকে আরো দ্রুততর করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অত্যন্ত জরুরি একটি পদক্ষেপ। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

    শিল্প-বিনিয়োগের দুঃসময়
শেয়ার
কার্যকর পদক্ষেপ নিন

কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ হারাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে এক বিপর্যয়কর অবস্থা নেমে আসছে। করোনা মহামারি ও যুদ্ধের কারণে কয়েক বছর ধরেই শিল্প-কারখানা দুঃসময় পার করছিল।

গত এক বছরে তা আরো তীব্র হয়েছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে শুধু গাজীপুরে থাকা শিল্পাঞ্চলেই ৭২টি কলকারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে নিজ নিজ কারখানা কর্তৃপক্ষ। কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শিল্প পুলিশ সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সময় বেকার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার শ্রমিক।

শুধু গাজীপুর নয়, কমবেশি প্রায় একই রকম চিত্র দেশের অন্যান্য শিল্পাঞ্চলেও। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুরো বন্ধ না হলেও ধুঁকে ধুঁকে চলছে বহু কারখানা। তারাও শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।

ফলে বেকার হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা শুধুই বাড়ছে। এরা অন্য কোথাও কাজ পাচ্ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক কারখানা শ্রমিকদের সময়মতো বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। ফলে বাড়ছে শ্রম অসন্তোষ।
প্রায়ই সড়ক-মহাসড়কে চলে আসছে সেসব বিক্ষোভ। বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের এমন সংকটজনক অবস্থায় চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁরা কোনো আশার আলোই দেখতে পাচ্ছেন না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামলাবেন এমন পরিস্থিতিও নেই। ঋণের সুদের হার ১৫-১৬ শতাংশ হয়ে গেছে। এমন উচ্চ সুদে ঋণ নিলে তা নতুন করে গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেবে। তার ওপর রয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কোনো কোনো শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে বলেও গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। সেই সঙ্গে আছে টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার সংকট। আছে এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিও দুর্ভাবনার কারণ হচ্ছে। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতেও ধস নেমেছে। এই অবস্থায় নিজস্ব শিল্প-কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগে আছেন বেশির ভাগ শিল্পোদ্যোক্তা।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে শ্রমিকদের অনেক দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা উঠে এসেছে। একটি কারখানার অপারেটর ছিলেন রংপুরের পীরগাছার শেফালী বেগম (৪৮)। তিনি বলেন, ‘ঘরে স্বামী অসুস্থ। তিন সন্তানের সবাই লেখাপড়া করে। আমার আয়েই আগে সংসার চলত। এখন ঘরভাড়াসহ সংসার খরচ কোথা থেকে জোগাড় করব?’ তিনি জানান, কাজের জন্য অনেক কারখানায় গিয়েছেন, কোথাও লোক নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাসাবাড়ির ঝিয়ের কাজ খুঁজছেন। স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ফোরম্যান আসকর হোসেন বলেন, ‘ছয় মাস ঘুরে চাকরি খুঁজে পাইনি। বাধ্য হয়ে এখন ইজি বাইক চালাচ্ছি। ইজি বাইকের জমার টাকা বাদ দিয়ে যা আয় হয় তাতে সংসার চলছে না।

কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে যেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন সেখানে হচ্ছে উল্টোটা। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। শিল্প বিনিয়োগের এই দুরবস্থা দ্রুত কাটাতে হবে। তা না হলে শুধু অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, দেশের স্থিতিশীলতাও হুমকিতে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

মন্তব্য

ন্যায়বিচারের নতুন অধ্যায়

    বিচারের কাঠগড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী
শেয়ার
ন্যায়বিচারের নতুন অধ্যায়

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। গণ-আন্দোলনে সহিংস দমন-পীড়ন এবং হাজারো নাগরিকের প্রাণহানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির প্রাক্কালে এই বিচার শুরু হওয়ায় এটি শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণের হৃদয়বিদারক জবানবন্দি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে দমন-পীড়ন নৃশংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। একজন সাধারণ ড্রাইভার হিসেবে তাঁর ওপর চালানো নির্মম নির্যাতন, এক চোখ হারানো এবং মুখমণ্ডলের বিকৃত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে তৎকালীন সরকার প্রতিবাদ দমনে কতটা মরিয়া ছিল। তাঁর সাক্ষ্য শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির বিবরণ নয়, বরং হাজার হাজার পঙ্গু নিহতদের হয়ে রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার চাওয়ার এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যেও তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক নিপীড়ন, খুন ও গুমের সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

এই বিচার শুধু শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নয়। এই বিচার একটি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে এই বিচার প্রক্রিয়া কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়। এটি একটি জাতির আকাঙ্ক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি যত উঁচু পদেই আসীন হোক কিংবা তার ছায়া যতই দীর্ঘ হোক না কেন, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়।এই বাক্যটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তনের দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে ক্ষমতাধরদেরও আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়।

খোকনের মতো অসংখ্য মানুষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গুলিতে নিহত বা পঙ্গু হয়েছেন। তাঁর মুখের ক্ষতবিক্ষত অবয়ব আজ রাষ্ট্রের ব্যর্থতার সাক্ষ্য বহন করছে। ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপিত ভিডিও ফুটেজ, চিকিৎসার বিবরণ এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় উন্মোচন করছে।

দেশের জনগণ আশা করে যে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন এবং যাঁরা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁরা সবাই ন্যায়বিচার পাবেন। এই বিচার যেন অতীত রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। ট্রাইব্যুনালের উচিত হবে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকারই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের ওপর এমন নির্মম দমন-পীড়ন চালানোর সাহস না করে। এই বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করেছে। যেখানে আইনের শাসন, জবাবদিহি এবং মানবাধিকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

মন্তব্য

উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে

    প্রকট রূপ নিয়েছে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য
শেয়ার
উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে

বাংলাদেশে প্রথমবার প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আমাদের। আয়ভিত্তিক পরিসংখ্যানের আড়ালে থাকা দারিদ্র্যের জটিল ও বহুমুখী চিত্র এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে চার কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের বৃত্তে আটকে আছে। আয়ভিত্তিক দারিদ্র্য যতটা না দেখায়, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য তার চেয়েও গভীর ও জটিল : শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না, নিরাপদ পানি ও শৌচাগার নেই, বাসস্থানের যোগ্যতা অনুপস্থিত।

এই সব সম্মিলিতভাবে মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (Multidimensional Poverty Index) অনুযায়ী, দেশের অন্তত চার কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার, যারা আসলে আয়ভিত্তিক দারিদ্র্যের প্রচলিত ধারণার বাইরে অবস্থান করছেন। এটি শুধু অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবনমানের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার এক বিস্তৃত চিত্র। শুধু অর্থনৈতিক মানদণ্ডে দারিদ্র্য পরিমাপ করা হলে প্রকৃত চিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

একজন মানুষের সামান্য আয় থাকতে পারে, কিন্তু তার সন্তান স্কুলে না গেলে, রোগ হলে চিকিৎসার সুযোগ না পেলে কিংবা বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগার না থাকলে তাকে দারিদ্র্যমুক্ত বলা যায় না।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশ, যা প্রাপ্তবয়স্কদের (২১ শতাংশ) চেয়ে অনেক বেশি। যদিও বিগত বছরগুলোতে শিশুদের দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, তবু এই উচ্চ হার শিশুদের ভবিষ্যৎ বিকাশের জন্য একটি বড় হুমকি। এ ছাড়া গ্রাম ও শহরের মধ্যে দারিদ্র্যের বৈষম্য চোখে পড়ার মতো।

গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার ২৭ শতাংশ, যা শহরের ১৩ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশি। আঞ্চলিক বৈষম্যও প্রকট; সিলেটে ৩৮ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৬৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার, যেখানে ঝিনাইদহে এই হার মাত্র ৯ শতাংশ। এই তথ্যগুলো সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

আমরা মনে করি, দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচলিত কৌশলগুলো থেকে বেরিয়ে এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এবং অন্যান্য মৌলিক সেবার অপ্রতুলতা দূর করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই সূচক প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এই সূচক শুধু অসাম্যই তুলে ধরছে না, বরং উদ্দেশ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপের পথ প্রদর্শন করছে। এটি সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টাগুলোকে আরো লক্ষ্যভিত্তিক ও ফলপ্রসূ করতে সাহায্য করবে।

বহুমাত্রিক দারিদ্র্য শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি সামাজিক বৈষম্য ও মানবিক বঞ্চনার এক জটিল রূপ। চার কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে একটি সমন্বিত এবং সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তবেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব হবে।

মন্তব্য

মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য জরুরি

    জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন আজ
শেয়ার
মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য জরুরি

জুলাই ঘোষণাপত্র এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গত ডিসেম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে। রাজনীতিতে কিছুটা উত্তাপও তৈরি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হয় এবং আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হচ্ছে বলে জানা যায়। জানা যায়, এতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সূচনা, বিকাশ, জন-আকাঙ্ক্ষা ও গণতান্ত্রিক শাসনের অন্তরায়, আন্দোলন অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ গত বছরের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, এর ফলে স্বৈরাচারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল ও প্রচেষ্টার স্বীকৃতি থাকবে।

শনিবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে বলেন, সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

আগামী ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় গণ-অভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে। আগের দিন শুক্রবার তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিভিন্ন দলের খসড়া প্রস্তুত হলেও ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ মীমাংসায় পৌঁছেনি।

জানা যায়, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু অভিযোগও রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিএনপি, জামায়াত ও নবগঠিত দল এনসিপির মতামত নেওয়া হলেও অনেক দল এ বিষয়ে কিছুই জানে না বা তাদের জানানো হয়নি। এ ছাড়া এই ঘোষণার আইনগত ভিত্তি কী হবে, সেটি এখনো অস্পষ্ট। অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে খসড়া ঘোষণাপত্র পাঠানো হয়েছিল তাতে বলা আছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।

নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের প্রস্তাবে এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়। সে বৈঠকে ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিমত প্রকাশ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংবিধান সংশোধন করতে হলে অবশ্যই তা সংসদে করতে হবে।

ঘোষণাপত্র সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদ দুটিরই আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়মুক্তি ও স্বীকৃতির দলিল হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি, এতে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হবে।...জুলাই ঘোষণায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও এই সরকারের কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশ থেকে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছিল। সেই অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও আইনগত স্বীকৃতি থাকতে হবে। আমরা আশা করি, ছোটখাটো বিষয়ে দ্বিমত থাকলে মৌলিক বিষয়ে সবার ঐকমত্য থাকবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ