ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

বসবাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে

  • ঢাকার যানজট ও পরিবেশদূষণ
শেয়ার
বসবাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে

বসবাসযোগ্যতার বিচারে প্রতিবছর বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর যে তালিকা করা হয় তাতে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকার অবস্থান থাকে একেবারে শেষ দিকে। তার নানা রকম কারণ রয়েছে। প্রধান দুটি কারণ হলো যানজট ও পরিবেশদূষণ। যানজট কমাতে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত যানজট পরিস্থিতির যে খুব একটা উন্নতি হয়নি বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় তেমনটাই দেখা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি জরিপের ফলাফলে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় কাজের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে প্রতিদিন গড়ে দুই ঘণ্টা ৪৬ মিনিট যানজটে বসে থাকতে হয়। এতে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। কমছে উৎপাদনশীলতা।
অন্যদিকে পোড়াতে হচ্ছে বাড়তি জ্বালানি। তাতেও বাড়ছে পরিবেশদূষণ। আর দূষণের কারণে সৃষ্ট রোগব্যাধির চিকিৎসায় বছরে মাথাপিছু খরচ হচ্ছে প্রায় চার হাজার টাকা। গত বুধবার বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত রিডিউসিং পলিউশন ফর গ্রিন সিটি শীর্ষক জরিপের যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়, তাতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সিপিডির তথ্য মতে, মূলত চার কারণে ঢাকা মহানগরীতে দূষণ বাড়ছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ পরিবার মনে করে, যানবাহনের কালো ধোঁয়া বেশি বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। ১০ শতাংশ পরিবার মনে করছে, নির্মীয়মাণ রাস্তা বা ভবনের ধুলা বায়ুদূষণ বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া ৯ শতাংশ পরিবার মনে করে, ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণ বাড়ছে। ৪ শতাংশ পরিবার মনে করছে, ইটভাটার কালো ধোঁয়া পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে।

তারা আরো মনে করে, শুধু ঘরের বাইরে গিয়ে নয়, ঘরের ভেতরে থেকেও মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। ৭৩ শতাংশ পরিবার মনে করে, গত দুই থেকে তিন বছর আগের তুলনায় বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ আরো বেড়েছে।

ঢাকার পরিবেশ নিয়ে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে। প্রতিবাদ হয়েছে। দাবিদাওয়া জানানো হয়েছে। গবেষণায় জনস্বাস্থ্যে দূষণের প্রভাব নিয়ে অত্যন্ত উদ্বেগজনক তথ্যও উঠে এসেছে। শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ প্রাণঘাতী সব অসুখ দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু দূষণের প্রতিকার হচ্ছে না বললেই চলে। অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, খোঁড়াখুঁড়ি সমানতালেই চলছে। পুরনো লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে নগরের রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নগরীর সবুজায়ন দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ হলেও প্রতিনিয়ত এই নিষিদ্ধ দ্রব্যটির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। নগরীতে খেলার মাঠ, হাঁটার স্থান ক্রমাগতভাবে কমছে।

পরিবেশদূষণ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় মোটাদাগে ১১টি সুপারিশ দিয়েছে সিপিডি। এগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা যেতে পারে। ইটভাটার অত্যধিক দূষণের বিষয়টি আগেও বহুবার আলোচিত হয়েছে। জানা যায়, দেশে বহু অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোতে এখনো ক্ষতিকর ড্রাম চিমনি ব্যবহৃত হয়। এই অবৈধ ইটভাটাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে হলেও পরিবেশসম্মত ইট ও ব্লক তৈরির আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে হবে। জনস্বাস্থ্যকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

অনিয়ম রোধ করতে হবে

    হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ
শেয়ার
অনিয়ম রোধ করতে হবে

দেশে উৎপাদিত বোরো ধানের এক-চতুর্থাংশই আসে হাওরাঞ্চল থেকে। যে বছর আগাম বন্যায় হাওরের বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে বছর নিশ্চিতভাবেই দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এই হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার নিয়ে দুর্নীতি, অবহেলা ও অনিয়মের অন্ত নেই। প্রতিবছরই এসব কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির সদ্যস্যদের সিন্ডিকেট বাঁধের কাজ না করেই অর্থ লুটের অপচেষ্টা করে।

এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত রবিবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের ২৯৭টি বাঁধে এখনো মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া বাঁধ টেকসই করার জন্য সব বাঁধে দূর্বাঘাস লাগানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬৬টি বাঁধে দূর্বাঘাস লাগানোর কাজ দায়সারাভাবে চলছে। বাকিগুলোতে কবে ঘাস লাগানো হবে তার নিশ্চয়তা নেই।
ঝুঁকিপূর্ণ ৫৯টি ক্লোজারের (বড় গর্ত) মধ্যে মাত্র ১০টি ক্লোজারের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, আগাম বন্যা হলে তাঁরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হবেন।

হাওরের বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের মধ্যে এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাঁধের কাজ ইচ্ছাকৃতভাবেই বিলম্বিত করেন।

দেরিতে কাজ শুরু করা হলে কাজের মধ্যখানে বৃষ্টি বা উজান থেকে পানি নেমে আসে। তখন নামমাত্র কাজ করে বা না করেই পুরো টাকা লুটপাট করা যায়। লুটপাট কমাতে সরকার কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করে এবং কৃষকদের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বা পিআইসি গঠন করে তার মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশনা দেয়। সেই পিআইসি গঠন নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পাউবো এবং উপজেলা প্রশাসনের পছন্দের লোকদের নিয়েই পিআইসি গঠন করা হয়।
ফলে বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়ম করা সহজ হয়ে যায়। কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাক্কলন শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু কোনো বছরই ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয় না। ফলে প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণে সরকার শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও তা হাওরবাসীর খুব একটা উপকারে আসে না। একটা বড় অংশই লুটপাট হয়ে যায়। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও হাওরের বাঁধ নির্মাণ নিয়ে করা লুটপাটের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

আমরা মনে করি, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে মানসম্মতভাবে সম্পন্ন করার বিষয়টি যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

মন্তব্য

কঠোর ব্যবস্থা নিন

    বাড়ছে কিশোর অপরাধ
শেয়ার
কঠোর ব্যবস্থা নিন

এ সময়ের অন্যতম আলোচনার বিষয় কিশোর গ্যাং কালচার। দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মাঠে খেলার কথা, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথাসেই বয়সের কিশোররা এখন ছুরি-চাকু, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে।

রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে। রক্তারক্তি, খুুনাখুনি করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরা গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বলেছেন, রাজধানীর মানুষের অশান্তির বড় কারণ এখন কিশোর গ্যাং।

কয়েক দিন আগে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ২০২৩ সালে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কিশোর গ্যাংয়ের ৩৪৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশেই এরা বেপরোয়া। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অভিযান চালালেও কিশোর অপরাধ কমছে না। 

গত এক বছরে শুধু ঢাকায়ই কিশোর অপরাধীদের হাতে অন্তত ২৭ জন খুন হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ বছরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং কালচার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ৮৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একাধিক আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাও রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে র‌্যাব বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের এক হাজার ১২৬ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে মোট ৪০ জনকে (৩০ জনকে অর্থদণ্ড এবং ১০ জনকে মুচলেকা) পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তালিকা অনুযায়ী, দেশে অন্তত পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে।
ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগের অধীন ৩৫টি থানা এলাকায় এসব চক্রের সদস্যসংখ্যা প্রায় ৭০০। র‌্যাবের পক্ষ থেকে রাজধানীতে সক্রিয় এলাকাভিত্তিক ৮০টি কিশোর গ্যাংয়ের সুনির্দিষ্ট তালিকা করা হয়েছে। এই ৮০টি গ্যাংয়ের ৮০ জন গডফাদার রয়েছেন।

কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধী গোষ্ঠীগুলো তৈরি হলো কেন? কেনই বা তারা এত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে।

কিশোর গ্যাং সামাজিক অবক্ষয়ের ফল। কিশোর অপরাধের লাগাম টানতে এখন করণীয় কী, তা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে ভাবতে হবে। এই কিশোরদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পরিবার ও সমাজকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ