বসবাসযোগ্যতার বিচারে প্রতিবছর বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর যে তালিকা করা হয় তাতে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকার অবস্থান থাকে একেবারে শেষ দিকে। তার নানা রকম কারণ রয়েছে। প্রধান দুটি কারণ হলো যানজট ও পরিবেশদূষণ। যানজট কমাতে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বসবাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে
- ঢাকার যানজট ও পরিবেশদূষণ

সিপিডির তথ্য মতে, মূলত চার কারণে ঢাকা মহানগরীতে দূষণ বাড়ছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ পরিবার মনে করে, যানবাহনের কালো ধোঁয়া বেশি বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। ১০ শতাংশ পরিবার মনে করছে, নির্মীয়মাণ রাস্তা বা ভবনের ধুলা বায়ুদূষণ বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া ৯ শতাংশ পরিবার মনে করে, ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণ বাড়ছে। ৪ শতাংশ পরিবার মনে করছে, ইটভাটার কালো ধোঁয়া পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে।
ঢাকার পরিবেশ নিয়ে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে। প্রতিবাদ হয়েছে। দাবিদাওয়া জানানো হয়েছে। গবেষণায় জনস্বাস্থ্যে দূষণের প্রভাব নিয়ে অত্যন্ত উদ্বেগজনক তথ্যও উঠে এসেছে। শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ প্রাণঘাতী সব অসুখ দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু দূষণের প্রতিকার হচ্ছে না বললেই চলে। অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, খোঁড়াখুঁড়ি সমানতালেই চলছে। পুরনো লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে নগরের রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নগরীর সবুজায়ন দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ হলেও প্রতিনিয়ত এই নিষিদ্ধ দ্রব্যটির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। নগরীতে খেলার মাঠ, হাঁটার স্থান ক্রমাগতভাবে কমছে।
পরিবেশদূষণ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় মোটাদাগে ১১টি সুপারিশ দিয়েছে সিপিডি। এগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা যেতে পারে। ইটভাটার অত্যধিক দূষণের বিষয়টি আগেও বহুবার আলোচিত হয়েছে। জানা যায়, দেশে বহু অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোতে এখনো ক্ষতিকর ড্রাম চিমনি ব্যবহৃত হয়। এই অবৈধ ইটভাটাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে হলেও পরিবেশসম্মত ইট ও ব্লক তৈরির আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে হবে। জনস্বাস্থ্যকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

অনিয়ম রোধ করতে হবে
- হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ

দেশে উৎপাদিত বোরো ধানের এক-চতুর্থাংশই আসে হাওরাঞ্চল থেকে। যে বছর আগাম বন্যায় হাওরের বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে বছর নিশ্চিতভাবেই দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এই হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার নিয়ে দুর্নীতি, অবহেলা ও অনিয়মের অন্ত নেই। প্রতিবছরই এসব কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির সদ্যস্যদের ‘সিন্ডিকেট’ বাঁধের কাজ না করেই অর্থ লুটের অপচেষ্টা করে।
হাওরের বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের মধ্যে এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাঁধের কাজ ইচ্ছাকৃতভাবেই বিলম্বিত করেন।
আমরা মনে করি, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে মানসম্মতভাবে সম্পন্ন করার বিষয়টি যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কঠোর ব্যবস্থা নিন
- বাড়ছে কিশোর অপরাধ

এ সময়ের অন্যতম আলোচনার বিষয় ‘কিশোর গ্যাং’ কালচার। দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মাঠে খেলার কথা, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা—সেই বয়সের কিশোররা এখন ছুরি-চাকু, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বলেছেন, রাজধানীর মানুষের অশান্তির বড় কারণ এখন কিশোর গ্যাং।
গত এক বছরে শুধু ঢাকায়ই কিশোর অপরাধীদের হাতে অন্তত ২৭ জন খুন হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধী গোষ্ঠীগুলো তৈরি হলো কেন? কেনই বা তারা এত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে।
কিশোর গ্যাং সামাজিক অবক্ষয়ের ফল। কিশোর অপরাধের লাগাম টানতে এখন করণীয় কী, তা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে ভাবতে হবে। এই কিশোরদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পরিবার ও সমাজকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী—সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।