<p>দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হই, আবার সেসব আঘাত ভালোও হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো এমন আঘাত পাই, যাতে আহত অঙ্গ আর কোনো সময়ই সম্পূর্ণভাবে আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। তেমন একটি হলো নার্ভ ইনজুরি।</p> <p> </p> <p><strong>নার্ভ ইনজুরি কী? </strong></p> <p>নিউরন হলো স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকর কলার মৌলিক একক। এটি উদ্দীপনা, সংবেদন এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সংকেত প্রেরণ ও সমন্বয়ের কাজ করে থাকে। এই নিউরন যদি বাহ্যিক আঘাত বা অভ্যন্তরীণ কোনো রোগের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়, তবে সেটিকে নার্ভ ইনজুরি বলে।</p> <p> </p> <p><strong>কিভাবে নার্ভ আঘাতপ্রাপ্ত হয়? </strong></p> <p>নার্ভ বা স্নায়ুকলা বিভিন্নভাবে আঘাতের সম্মুখীন হতে পারে; যেমন—গাড়ি দুর্ঘটনা, হাত-পা ভেঙে গিয়ে, ভারী বস্তু তুলতে গিয়ে বা ভারী বস্তু গায়ে পড়লে, ধারালো কোনো বস্তুর মাধ্যমে সরাসরিও নার্ভ আঘাত পেতে পারে, এমনকি কেটেও যেতে পারে।</p> <p>নার্ভ বা স্নায়ুকলার ওপর চাপ পড়লেও তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়; যেমন—হাতের মিডিয়ান নার্ভ, রেডিয়াল নার্ভ, ব্রাকিয়াল প্লেক্সাস আঘাতপ্রাপ্ত হলে যথাক্রমে কারপাল টানেল সিনড্রোম, রিস্ট ড্রপ, অ্যাব’স পালসি হয়ে থাকে। আবার পায়ের পেরোনিয়াল নার্ভের জন্য হয় ফুট ড্রপ।</p> <p>এ ছাড়া ফিমোরাল, সায়াটিক, টিবিয়াল নার্ভও দুর্ঘটনাজনিতভাবে আঘাত পেতে পারে।</p> <p>তা ছাড়া কিছু রোগ বা জীবাণু দিয়েও</p> <p>নার্ভ বা স্নায়ুকলা আক্রান্ত হতে পারে; যেমন—গুলেনবারি সিনড্রোম, টিউমার, রক্তনালির রোগ ইত্যাদি।</p> <p> </p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>জ্ঞানের পরিধি হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, কথাবার্তায় পরিবর্তন, কোনো অঙ্গে উদ্দীপনা হ্রাস, কোনো অঙ্গে দুর্বলতা অনুভব করা, এমনকি অবশও হতে পারে।</p> <p>আঘাতপ্রাপ্ত নার্ভ কি আগের অবস্থায় ফিরে আসে?</p> <p>ফিরে আসে, তবে সেটি নিয়ন্ত্রিত এবং পরিমিত। যেমন ধরুন, আমাদের যে নার্ভাস সিস্টেম, তা দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, যা ব্রেইন আর স্কাইনাল কর্ডের সমন্বয়ে তৈরি। এটির নিউরনের (নার্ভ টিস্যুর একককে নিউরন বলে) আবরণ নার্ভ রিজেনারেশনকে বাধা দেয়। তাই এসব ক্ষেত্রে আর আগের মতো অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হয় না।</p> <p>অন্যদিকে পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম রিকভারি হয়ে থাকে। তবে তা নির্ভর করে আঘাতের মাত্রা এবং নিউরনের কোথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, সেসবের ওপর।</p> <p> </p> <p><strong>কী কী রকমের নার্ভ ইনজুরি পুনরুদ্ধার হয়ে থাকে?</strong></p> <p>পেরিফেরাল নার্ভ ইনজুরিকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি—নিউরোপ্রাকশিয়া, এক্সোনোটমেসিস ও নিউরোটমেসিস।</p> <p>নিউরোপ্রাকশিয়া : এই নার্ভ ইনজুরিতে সাময়িক অবশ বা দুর্বলতা থাকলেও নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়।</p> <p>এক্সোনোটমেসিস : এই নার্ভ ইনজুরিতে এক্সোন এবং মায়োলিন আঘাত পেলেও অ্যান্ডোনিউরিয়াম ভালো থাকে। এটিও নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়।</p> <p>নিউরোটমেসিস : খুব বেশি আঘাতে এই নার্ভ ইনজুরি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্ডোনিউরিয়াম, এক্সোন, মায়োলিন শিথ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমনকি পেরিনিউরিয়াম, ফেসিকল, এপিনিউরেনিয়ামও আঘাত পেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য অপারেশন করে পেরিনিউরেনিয়াম লাগিয়ে দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে রিকভারি আগের নার্ভ ইনজুরিগুলোর মতো ভালো হয় না।</p> <p> </p> <p><strong>নার্ভ কিভাবে রিকভারি হয়?</strong></p> <p>এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। যদি এক্সোনের কোষদেহ বা কোষদেহের কাছে আক্রান্ত না হয়ে দূরে আক্রান্ত হয়, তবে সেসব ক্ষেত্রে কিছু পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নার্ভ তার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এই পরিবর্তন যে কোষদেহে হয়, এটিকে বলে ক্রোমাটোলিসিস। আর কিছু পরিবর্তন হয় এক্সোনে, যাকে বলা হয় ওয়ালেরিয়ান রিজেনারেশন।</p> <p> </p> <p><strong>করণীয়</strong></p> <p>♦ আঘাতের স্থানে কোনো কিছু মালিশ না করা।</p> <p>♦ প্রথম অবস্থায় ঠাণ্ডা বা বরফ দেওয়া।</p> <p>♦ আঘাতের অংশকে বিশ্রামে রাখা।</p> <p>♦ প্রচুর পানি পান করা।</p> <p>♦ স্বল্পমাত্রায় ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করা।</p> <p>♦ কিছু পরীক্ষা করে আঘাতের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।</p> <p>♦ বুকে বা মাথায় অথবা পেটে আঘাত পেলে বা কোনো অঙ্গ অবশ মনে করলে অনতিবিলম্বে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা দ্রুত আঘাত শনাক্ত এবং অপারেশন করা গেলে স্নায়ুকলার ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়।</p> <p>লেখক : বিভাগীয় প্রধান</p> <p>নিউরোসার্জারি বিভাগ</p> <p>ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল</p> <p> </p>