<p>দেহাভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের বর্জ্য পদার্থ তৈরি হচ্ছে। দেহের বেশির ভাগ বর্জ্য পদার্থ মলত্যাগের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিছু বর্জ্য পদার্থ ইউরিন বা প্রস্রাব আকারে বের হয়। এর ফলে শরীর সতেজ থাকে।</p> <p>কিডনি দ্বারা রক্তকে পরিশোধন করার মাধ্যমে তৈরি হওয়া বর্জ্যই ইউরিন বা মূত্র। কিন্তু কিডনিতে ইনফেকশন হলে বা কোনো ধরনের কিডনি রোগ হলে রক্তে উপস্থিত ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক এসিড ইত্যাদি কিডনি ছাঁকনি দিয়ে ধরে রাখতে পারে না। রক্তে এসব কেমিক্যালের পরিমাণ বেড়ে যায়।</p> <p>মূত্রতন্ত্রের চারটি অংশের যেকোনো অংশ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই হয়। অনেকে একে প্রস্রাবের ইনফেকশনও বলে থাকেন। এটা নারী-পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। তবে নারীদের মূত্রনালি পায়ুপথের খুব কাছাকাছি থাকায় সেখানে মল ত্যাগের সময় জীবাণু প্রবেশ করে বেশি মাত্রায় ইনফেকশন তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।</p> <p> </p> <p><strong>উপসর্গ</strong></p> <p>♦ প্রস্রাবের সময় মূত্রনালিতে জ্বালাপোড়া, ব্যথা</p> <p>♦ জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর</p> <p>♦ প্রস্রাবের রঙের পরিবর্তন</p> <p>♦ ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, প্রস্রাবে অতৃপ্তি</p> <p>♦ বমি বমি ভাব বা বমি</p> <p>♦ রুচি কমে যাওয়া</p> <p>♦ শরীর দুর্বল লাগা</p> <p>♦ প্রস্রাবে দুর্গন্ধ ইত্যাদি।</p> <p> </p> <p><strong>কারণ</strong></p> <p>প্রস্রাবের সংক্রমণের অনেক কারণ রয়েছে, তবে মূল কারণ হচ্ছে মূত্রপথে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এটা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—</p> <p>♦ মলত্যাগের সময় পায়ুপথ থেকে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে ঢুকে যাওয়া।</p> <p>♦ মলত্যাগের পর পায়ুপথের পেছন থেকে সামনের দিকে টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করলে টিস্যু মূত্রপথের সংস্পর্শে এসে ব্যাকটেরিয়ার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে।</p> <p>♦ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে না চললে যৌনমিলনের সময় ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।</p> <p>♦ নয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য হলে, বিশেষ করে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে।</p> <p>♦ যাঁরা হাই কমোড ব্যবহার করেন। কারণ কমোডে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া যেকোনো উপায়ে মূত্রনালিতে এসে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।</p> <p>♦ যাঁরা দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখেন তাঁদের ব্যাকটেরিয়া ওভার গ্রোথ হয়ে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।</p> <p>♦ যারা পানি কম পান করে</p> <p>♦ ক্যাথেটার ব্যবহার করে</p> <p>♦ সঠিকভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে না পারলে ইত্যাদি।</p> <p> </p> <p><strong>প্রতিরোধে করণীয়</strong></p> <p>♦ মলত্যাগের পর টিস্যু ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। অবশ্যই টিস্যু দিয়ে মোছার সময় সামনে থেকে পেছনের দিকে মুছতে হবে। পানি ব্যবহারের সময়ও একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।</p> <p>♦ দৈনিক আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা</p> <p>♦ কুসুম গরম পানিতে গোসল করা</p> <p>♦ পুকুরের পানিতে গোসল নয়</p> <p>♦ বেশিক্ষণ প্রস্রাব আটকে না রাখা</p> <p>♦ সহবাসের আগে ও পরে প্রস্রাব করে নেওয়া</p> <p>♦ যোনিপথের আশপাশ ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া</p> <p>♦ পাতলা ঢিলাঢালা সুতির কাপড় পরা</p> <p>♦ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, নিয়মিত গোসল করা ও মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা।</p> <p>♦ বারবার ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা।</p> <p>♦ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা</p> <p>♦ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, ই, সি-সমৃদ্ধ খাবার (টক ফল, আমড়া, পেয়ারা, শসা, শাক-সবজি ইত্যাদি) খাওয়া।</p> <p> </p> <p><strong>চিকিৎসা </strong></p> <p>এই রোগ হলে ইউরিন মাইক্রোস্কোপিক ও ইউরিন কালচার সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত। বিলম্বে চিকিৎসা নিলে বা একান্তই চিকিৎসা না নিলে ইনফেকশন হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে। এই রোগকে অবহেলা করা ঠিক নয়।</p>
