হজরত ফাতেমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর কনিষ্ঠ কন্যা ছিলেন। তাঁর জন্ম সনের ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। এক বর্ণনা মতে তিনি রাসুল (সা.)-এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে ভূমিষ্ট হন। এটি ছিল কোরাইশদের বায়তুল্লাহ শরিফ পুনর্নির্মাণের বছর, যাতে হাজরে আসওয়াদ স্বস্থানে রাখা নিয়ে বিরোধের মীমাংসা করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)- (আযযুররিয়্যাতু তাহেরা, পৃ. ১১১)।
নবীনন্দিনী হজরত ফাতেমা (রা.)
মুফতি নূর মোহাম্মদ

হজরত ইবনে আবদুল বার ও হাকেম (রহ.)-এর বর্ণনানুযায়ী রাসুল (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির এক বছর পর তিনি ভূমিষ্ট হন। তখন রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল ৪০ বছর- (আল ইসতিয়াব, ৪/৩৭৮, আল মুসতাদরাক, ৩/১৭৬)।
যেভাবে বেড়ে ওঠেন : হজরত ফাতেমা (রা.) শিশু বয়স থেকেই রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে দ্বীনের কাজের সহযোগিতায় সব সময় অগ্রগামী থাকতেন। আবু লাহাব ও তাঁর স্ত্রী উম্মে জামিল যখন রাসুল (সা.)-এর পথে কাঁটা বিছিয়ে ও বিভিন্নভাবে কষ্ট দিত, ফাতেমা (রা.) সে সময় রাসুলের পথ থেকে কাঁটা সরিয়ে দিতেন এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে দিতেন।
বিয়ে ও সন্তানাদি : দ্বিতীয় হিজরিতে বদর যুদ্ধের পর জিলকদ মাসে হজরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
হজরত ফাতেমা (রা.) সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর বাণী : একদিন রাসুল (সা.) বললেন, 'হে ফাতেমা, তুমি কি এতে খুশি নও যে, তুমি জান্নাতবাসী সব মহিলার সর্দার হবে?'- (বোখারি : ৩৬২৪)।
অন্যত্র রাসুল (সা.) বলেন, 'ফাতেমা আমার শরীরের অংশ, যে তাকে অসন্তুষ্ট করল, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করল'- (সহিহ বোখারি : ৩৭৬৭)।
তিনি আরো বলেন, 'জগতের সব মহিলা থেকে চারজন মহিলা অনুকরণের জন্য যথেষ্ট- মরিয়ম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া'- (তিরমিজি : ৩৮৭৮)। হজরত বুরাইদা (রা.) বলেন, 'মহিলাদের মধ্যে রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে প্রিয় হলেন ফাতেমা (রা.) আর পুরুষগণের মধ্যে হজরত আলী (রা.)'- (তিরমিজি : ৩৮৬৮)।
সাংসারিক কাজকর্ম : হজরত ফাতেমা (রা.) সাংসারিক সব কাজ সেবিকার সহযোগিতা ছাড়াই নিজে সম্পাদন করতেন। একদিন হজরত আলী (রা.) ঘরে এসে দেখেন যে, আটা পিষতে গিয়ে ফাতেমা (রা.)-এর হাতে ফোসকা উঠেছে। তখন আলী (রা.) বললেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত কিছু বাঁদি এসেছে। তুমি গিয়ে আমাদের জন্য একজন সেবিকা নিয়ে আসো। ফাতেমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর দরবারে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেবিকার আরজি পেশ করলে রাসুল (সা.) বললেন, ফাতেমা! তোমাকে কি আমি এর চেয়েও উত্তম কিছু দেব? ফাতেমা (রা.) বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বলেন, যখন তোমরা ঘুমোতে যাবে তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে। তা তোমাদের জন্য সেবিকার চেয়েও উত্তম হবে- (বুখারি : ৩১১৩)।
অভ্যাস ও চালচলন : হজরত ফাতেমা (রা.) অভ্যাস ও চাল চলনে রাসুল (সা.)-এর অনুসারী ছিলেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, 'আমি চলাফেরা, চালচলন ও অভ্যাস-আদতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ফাতেমার চেয়ে বেশি মিল আর কাউকেও পাইনি। যখন ফাতেমা রাসুল (সা.)-এর কাছে আসত, রাসুল (সা.) তাঁর দিকে এগিয়ে যেতেন, তাঁর হাত ধরে চুমু খেতেন এবং তাঁর জায়গায় বসাতেন। অনুরূপ রাসুল (সা.)ও ফাতেমার কাছে তাশরিফ নিলে ফাতেমাও এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে চুমু খেতেন এবং নিজের জায়গায় রাসুল (সা.)-কে বসাতেন- (সুনানে আবি দাউদ)।
সৎ মায়ের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার : সাধারণত স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্রয়োজনে পুরুষরা বিবাহ করতে চাইলে সন্তানরা অসন্তুষ্ট থাকে। হজরত ফাতেমা (রা.) ছিলেন ব্যতিক্রম, হজরত খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকালের পর ফাতেমা (রা.) ও তাঁর বোনরা নিজ পিতার জরুরতের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিবাহের প্রতি সম্মত হন। পরবর্তী সময়ে রাসুল (সা.)-এর সব স্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তিনি তাঁদের সবাইকে (পিতার স্ত্রী হিসেবে) মায়ের মর্যাদাই দিতেন।
মৃত্যু : রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের ছয় মাস পর তিনি ইহজগত ত্যাগ করেন। তাঁর অসিয়ত মুতাবেক রাতেই তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়।
লেখক : ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ
সম্পর্কিত খবর