ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে রক্তক্ষয়ী সহিংসতার জন্য সব নাগরিকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং। গতকাল মঙ্গলবার ইম্ফলে এক সংবাদ সম্মেলনে সর্বসাধারণের উদ্দেশে বীরেন সিং বলেন, ‘ক্ষমা করুন এবং অতীত ভুলে যান। মণিপুরে শান্তি ফিরবে।’
এদিন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গোটা বছর দুর্ভাগ্যজনক কেটেছে আমাদের।
গত বছরের ৩ মে থেকে যা ঘটে চলেছে রাজ্যে তার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি আমি। অনেকেই প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেকে ঘরছাড়া হয়েছেন। আমি অনুতপ্ত। ক্ষমা চাইছি। কিন্তু গত তিন-চার মাসের শান্তি পরিস্থিতি দেখে আমি আশাবাদী যে ২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে।’ একই সঙ্গে রাজ্যের ৩৫টি উপজাতি গোষ্ঠীকে মিলেমিশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বীরেন সিং আরো বলেন, ‘সমস্যার সমাধান একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকার এরই মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।’
যদিও বিরোধীদের দাবি, মণিপুরে সহিংসা দীর্ঘ সময় চলার কারণ বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে রাজ্যের বিজেপি সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অকর্মণ্যতা। সহিংসতা থামাতে কার্যকরী পদক্ষেপ করা হয়নি সময়মতো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার পর নীরবতা ভাঙেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্যোগী হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।
তাই বছর শেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই বোধোদয় নিয়ে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা।
সেনাবাহিনীর অভিযানে দুর্বৃত্তদের চার বাংকার ধ্বংস
মণিপুরে দুর্বৃত্তদের চারটি অবৈধ বাংকার ধ্বংস করেছে এবং ইম্ফল পূর্ব ও কাংপোকপি জেলায় অন্য তিনটি বাংকার দখল করে নিয়েছে সেনাবাহিনী। এসব বাংকার থেকেই দুষ্কৃতকারীরা নিচে নেমে এসে লোকালয়ে হামলা চালাত। মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, সেনাবাহিনী, বিএসএফ, সিআরপিএফ ও পুলিশের সম্মিলিত বাহিনী গত শনিবার থেকে সাবুংখোক খুনউ, শান্তিখোংবাল, থামনাপোকপি, সানসাবি, উয়োক চিং ও নাটুম চিং এলাকায় এবং থামনাপোকপি ও সানসাবি গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালায়। গত শুক্রবার থামনাপোকপি ও সানসাবি গ্রামে বন্দুক হামলায় পুলিশ ও নারীসহ চারজন আহত হওয়ার পর এই অভিযান শুরু করা হয়। কাংপোকপি জেলার পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে সশস্ত্র বন্দুকধারীরা নিম্নাঞ্চলের থামনাপোকপি এবং সানসাবি গ্রামে বন্দুক হামলা শুরু করে। পাল্টা জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী এবং গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকরা গুলি চালায়।
পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অপারেশন চলাকালে (শনিবার থেকে) এই এলাকাগুলো থেকে সব সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মে মাস থেকে মেইতেই ও কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। এতে এ পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
মণিপুরে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল পরিমাণে সেনা মোতায়েন করেছে। তার পরও মাঝেমধ্যে দুর্বৃত্তদের আক্রমণ চলছেই। এই পরিস্থিতির লাগাম টানতে কয়েক মাস ধরে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে সেনা, পুলিশ ও অন্যান্য আধাসেনার যৌথ বাহিনী।
নতুন বছরের প্রাক্কালে নিরাপত্তা বাহিনী মণিপুরের পার্বত্য ও উপত্যকার উভয় অঞ্চলেরই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র।
সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া