ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে দেশটির জাতীয় স্তরের দুই প্রধান দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেস মুখোমুখি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। আগামীকাল বুধবার ভোট শুরু হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের এই নির্বাচন দুই দলের জন্যই অগ্নিপরীক্ষা।
২২৪ আসনের কর্ণাটক বিধানসভায় ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপির প্রচারে নেমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০ দিনে ১৭টি সভা এবং পাঁচটি শোভাযাত্রা করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে বহুদূরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ প্রচারই প্রমাণ করে, এই নির্বাচনকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিজেপি।
অন্যদিকে কর্ণাটকের নির্বাচনকে বিজেপির মতোই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে কংগ্রেস। ‘মোদি’ পদবি নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের কারণে লোকসভার সদস্য (এমপি) পদ খোয়ানো রাহুল গান্ধী এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ধারাবাহিক প্রচারকাজ সেরেছেন। আসরে নামা বাদ রাখেননি কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধীও।
অথচ ২০১৯ সালের পর তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে দলের কোনো প্রকাশ্য সভায় আসেননি।
নির্বাচনী জনসভাগুলোতে প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব একে অন্যের দিকে তির্যক বাক্যবাণ ছুড়েছেন। একটি জনসভায় সোনিয়া বলেন, কর্ণাটকের খ্যাতি, সার্বভৌমত্ব ও স্বাতন্ত্র্যের প্রশ্নে কংগ্রেস কোনো ছাড় দেবে না। বিজেপি এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে অভিযোগ করছে, কর্ণাটককে ভারত থেকে আলাদা করে ফেলার চিন্তা করছে কংগ্রেস।
ভোট গ্রহণের আগ দিয়ে এই ইস্যুতে সোনিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছে বিজেপি।
দুই সর্বভারতীয় দলের লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাচ্ছে আঞ্চলিক দল হারাদানাহালি দেবগৌড়া (এইচ ডি) কুমারাস্বামীর নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ)-জেডিএস। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার গড়েছিল ১০৪ আসনে জয়লাভ করা জেডিএস। গত রবিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী জনসভায় এইচডি কুমারাস্বামী অভিযোগ করেন, কংগ্রেস মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করলেও তাদের উন্নয়নে কিছুই করেনি। নির্বাচনী মাঠে বিজেপিরও সমালোচনা করছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার এই ছেলে।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেস-জেডিএস সরকার ভেঙে যায়। দল ভাঙিয়ে সরকার ফেলে দিয়ে পরের বছর বিএস ইয়েদুরাপ্তার নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গঠন করে। পরে অবশ্য এই সরকারের নেতৃত্ব যায় বিজেপি নেতা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোমাইয়ের কাছে।
‘কিংমেকার’ হতে পারেন এইচ ডি কুমারাস্বামী
কর্ণাটক বিধানসভায় সরকার গঠন করতে হলে ১১৩ আসন জয়ের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে জোট সরকার গড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে এবারও সরকার গঠনের নিয়ন্ত্রক তথা কিংমেকার হয়ে উঠতে পারে জেডিএস।
রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ নায়ায়ণ বলেন, ‘বিজেপি হারলে এর অর্থ দাঁড়াবে, তারা দক্ষিণে কোনো উন্নতি করতে পারবে না। আর তারা জয়লাভ করলে প্রতিবেশী রাজ্য তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ ও তামিলনাডুতে দলীয় কর্মীদের মধ্যে সৃষ্ট উদ্দীপনা যথেষ্ট হবে।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য। কর্ণাটকের ইতিবাচক ফল রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে কর্মীদের উদ্দীপ্ত করবে। ভোট বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় কুমার মনে করেন, তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত নেতৃত্বের কারণে কংগ্রেস ভালো ফল করতে পারে।
জরিপে ফলের আভাস
নির্বাচনের পর আগামী শনিবার ভোটের সম্ভাব্য ফল নিয়ে জরিপে ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম ‘এবিপি নিউজ’ এবং নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ‘সিভোটার’ এর যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, কংগ্রেস ১০৭ থেকে ১১৯টি আসন পেতে পারে, বিজেপি ৭৪ থেকে ৮৬টি আসন দখল করতে পারে এবং জেডিএস ২৩ থেকে ৩৫টি আসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। ইন্ডিয়া টুডে কর্তৃক পরিচালিত জরিপেও বিজেপির হারের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে ‘জিনিউজ’ পরিচালিত সমীক্ষায় বিজেপিকে একক বৃহত্তম দল হিসেবে দেখানো হয়েছে। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, বিবিসি