ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, তাঁর দেশ চার বছর আগে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির আরো কয়েকটি প্রতিশ্রুতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র গত বছর একতরফাভাবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলেও যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের ওই চুক্তিটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ চুক্তিটি ইরান পরমাণু চুক্তি নামেই বেশি পরিচিত।
তেহরান চলতি বছরের মে মাসে চুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করে; স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো ইরানের অর্থনীতিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে একে একে সব প্রতিশ্রুতি থেকেই বেরিয়ে আসা হবে বলে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি আগে থেকেই বলে আসছিল।
গতকাল শনিবার জারিফ চুক্তির আরো প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার কথা জানালেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
দেশটি এর আগে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে চুক্তির শর্ত ভেঙে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বৃদ্ধি এবং ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণও বাড়িয়েছিল। জারিফকে উদ্ধৃত করে ইরানের আধাসামরিক বার্তা সংস্থা আইসিএএনএ জানিয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে চুক্তির প্রতিশ্রুতি কমানোর তৃতীয় পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে। আমরা আগেই বলেছি, অন্যরা যদি চুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না করে, তাহলে আমরাও তাদের মতোই করব।
সবই করা হবে চুক্তির কাঠামোর মধ্যেই।’
শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, তেহরান এখন পর্যন্ত চুক্তির যেসব প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে, তা বদলে সহজেই আগের অবস্থানে ফেরা যাবে, তবে সে ক্ষেত্রে অন্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকেও তাদের সব প্রতিশ্রুতি কার্যকর করতে হবে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টানার শর্তে ২০১৫ সালে ইরান ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ওই জেসিপিওএতে স্বাক্ষর করে।
গত বছর ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিটি থেকে সরিয়ে নেন; ওয়াশিংটন পরে ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল এবং দেশটির তেল বিক্রি আটকাতে একের পর এক পদক্ষেপ নিলে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্র গত বুধবার জাভেদ জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। এর ফলে পশ্চিমে পড়াশোনা করা ইরানি এ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সব সম্পদ জব্দ করা যাবে; জারিফ অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর কোনো সম্পদ নেই বলে জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার রাতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ইরানি জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করায় যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ‘এ নিষেধাজ্ঞায় আমি গর্বিত’—জারিফ এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে ইরানি বার্তা সংস্থা আইআরআইবি। সূত্র : রয়টার্স।