ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

চালচোর পল্টু এখনো আ. লীগের সভাপতি!

  • ২৭ টন চাল চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার
বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
চালচোর পল্টু এখনো আ. লীগের সভাপতি!

জেলেদের জন্য বরাদ্দ ২৭ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু। এ অভিযোগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনো দলীয় ব্যবস্থাও।

বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকলেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেই নিজেকে দাবি করে আসছেন। চাল আত্মসাতের এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।   

গত ৪ এপ্রিল জেলেদের জন্য বরাদ্দ ২৭ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে নৌবাহিনীর সহায়তায় পল্টুকে গ্রেপ্তার করে পাথরঘাটা থানার পুলিশ। এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা গোলাম কবির জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা এ অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন।

তিনি আরো জানান, চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু তাঁর ইউনিয়নে জেলেদের জন্য বরাদ্দ ৪৪ টন চালের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৬ টন চাল বিতরণের সঠিক প্রমাণ দিতে পেরেছেন। বাকি সাড়ে ২৭ টন চাল বিতরণের সঠিক প্রমাণ দিতে পারেননি। 

এ বিষয়ে কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলম পহলান বলেন, ‘শুধু চাল চুরি নয়, চেয়ারম্যান পল্টু ৯ বছর ধরে কাকচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ ঘর দেওয়ার বিনিময়েও সবার কাছ থেকে উেকাচ নিয়েছেন।

অন্যায়ভাবে স্থানীয় অনেক নিরীহ পরিবারের জমি জবরদখল করেছেন। এ ছাড়া কাকচিড়া বাজারের সরকারি ভাড়ানিখালের একটি বড় অংশ ভরাট করে প্রতি প্লট চার-পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’ এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে সেসব ঘর উচ্ছেদের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম সাহা বলেন, ‘কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার পরে ওই কাউন্সিলেই আলাউদ্দিন পল্টু একক সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আটজন প্রার্থী থাকায় সাংগঠনিকভাবে কোনো ঘোষণা দেওয়া না হলেও একক প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দিন পল্টু নিজেকে সভাপতি হিসেবেই দাবি করে আসছেন।

তবে তিনি যে কাজ করেছেন, তাতে আওয়ামী লীগের কোনো পদ তো দূরের কথা, তাঁর প্রাথমিক সদস্য পদও থাকা উচিত নয় বলে আমি মনে করি।’

আওয়ামী লীগ থেকে এখনো কেন তাঁকে বহিষ্কার করা হয়নি—এমন এক প্রশ্নের উত্তরে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবিরকে আমি বলে দিয়েছি তাঁকে বহিষ্কার করার জন্য।’ এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির বলেন, ‘অতি সম্প্রতি কাউন্সিলের পর কাকচিড়া ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি কার্যত এখন আর কোনো পদে নেই। তার পরও আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য রয়েছেন।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব মৃধা বলেন, ‘এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আমি একাধিকবার বলেছি, কিন্তু তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি।’ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত হোক। তারপর তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ