শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে অনার্স আর প্রাণরসায়নে মাস্টার্স করেছি। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ পেয়েছিলাম। বিসিএসে এটিই আমার প্রথম ভাইভা। পুরো ভাইভার সময়টায় মুখে মাস্ক ছিল, খুলতে বলেননি।
‘আপনি কেন পুলিশে চাকরি করতে চান?’
অন্যান্য

চেয়ারম্যান : মিস্টার মানস, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রি থেকে মাস্টার্স...
আমি : স্যার, আমি কৃষিতে অনার্স আর প্রাণরসায়নে মাস্টার্স করেছি।
চেয়ারম্যান : আপনার প্রথম পছন্দ?
আমি : স্যার, বিসিএস পুলিশ।
চেয়ারম্যান : দ্বিতীয় পছন্দ?
আমি : স্যার, বিসিএস প্রশাসন। (এ রকম করে পঞ্চম চয়েস পর্যন্ত গেলেন।
চেয়ারম্যান : বর্তমান প্রশাসনের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
আমি : ভিশন ২০২১/২০৪১ বাস্তবায়ন, মিডল ইনকাম কান্ট্রি হিসেবে লক্ষ্য অর্জন, জনগণের ভরসার জায়গা সমুন্নত রাখা, মাঠ পর্যায়ে সরকারের উদ্যোগের সুবিধাগুলো পৌঁছে দেওয়া।
চেয়ারম্যান : ভ্যাট সম্পর্কে বলুন।
আমি : মূল্য সংযোজন করকে সংক্ষেপে বলা হয় মূসক বা ভ্যাট।
চেয়ারম্যান : তাহলে ট্যাক্স কী?
আমি : কর হলো একটি আজ্ঞাধীন আর্থিক মূল্য কিংবা অন্য কোনো ধরনের আরোপ, যা করদাতার ওপর সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আরোপিত হয়েছে সর্বসাধারণের বিভিন্ন ব্যয়ের তহবিল গঠনের জন্য। কর পরিশোধে ব্যর্থ হলে, ছলচাতুরী করলে কিংবা বিরোধিতা করলে তা আইনের দ্বারা শাস্তিযোগ্য হবে।
চেয়ারম্যান : মূসক কী?
আমি : সরবরাহকৃত পণ্য বা সেবার ওপর প্রদেয় কর।
চেয়ারম্যান : আবগারি শুল্ক কী?
আমি : দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত দ্রব্যের ওপর আরোপিত কর।
(এখানে আবগারি শুল্ক, এক্সপোর্ট ট্যাক্স—এগুলো নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। এরপর স্যার দুটি টার্মিনোলজি বললেন। আমি স্যরি স্যার বললে স্যার দুবার রিপিট করলেন। স্যার রিপিট করার পরও মনে হলো আমি এটা কখনো শুনিনি। আমি আবার ‘স্যরি স্যার’ বললাম)।
এক্সটার্নাল-১ : বাংলাদেশ পুলিশে অনেক কষ্ট জানেন তো?
আমি : স্যার কাউকে না কাউকে তো এ দায়িত্বটা নিতেই হবে।
এক্সটার্নাল-১ : বাংলাদেশ পুলিশের মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
(আমি উত্তরে খুব সাধারণ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বললাম। স্যার আমার নার্ভাসনেস দেখে হেসে ফেললেন)।
এক্সটার্নাল-১ : আপনি কৃষিতে পড়ে আপনি কেন পুলিশে চাকরি করতে চান?
আমি : বর্তমান সময় কৃষিক্ষেত্রবান্ধব। সরকারের সঠিক দিকনির্দেশনায় আমরা খাদ্যে স্বাবলম্বী দেশ। আমাদের ফসলের ক্ষেত্র পর্যাপ্ত; কিন্তু সাপ্লাই চেইনের ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট কোনো কাঠামো নেই। এই খাতে আরো কাজ করতে হবে। এই বিপণনব্যবস্থাকে সহজ ও কৃষকবান্ধব করে তুলতে কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করা একজন ব্যক্তির পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে অনেক কিছু করার আছে। কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং তাঁদের পণ্যের ন্যায্য দাম পেতে লড়াই করছেন স্থানীয় বাজারে। যে পণ্য তিনি ১০ টাকা করে বিক্রি করছেন, সেই পণ্য রাজধানীতে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানে বড় ধরনের গড়বড় আছে। এটি সরবরাহ চেইন পরিচালনার সমস্যা। বিভিন্ন গোষ্ঠী কৃষকদের পণ্যমূল্যের ন্যায্য দাম পেতে বাধা এবং গ্রাহকদের জন্য উচ্চমূল্যের কারণ হয়ে উঠেছে। আমি পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এই সমস্যার উৎস উদঘাটন ও সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিভাগের পুলিশ রয়েছে, যারা শুধু কৃষিক্ষেত্র নিয়েই কাজ করে। আমাদের দেশে যেমন ট্যুরিস্ট পুলিশ, রিভার পুলিশ, শিল্প পুলিশ আছে, ঠিক এ রকম। আমাদের বিপণনব্যবস্থার জন্য কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি পুলিশ অফিসার হই, তাহলে আমি এ কাজে অগ্রগামী হব। এটি আমাদের খাদ্য সুরক্ষা এবং এসডিজির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এক্সটার্নাল-২ : The woods are lovely, dark and deep,
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep... এই কবিতা সম্পর্কে জানেন? কে লিখেছেন?
আমি : ম্যাডাম, এটা ফ্রস্টের কবিতা।
এক্সটার্নাল-২ : পুরো নাম বলুন।
(নামের শুরুতে রবার্ট নাকি ডেভিড, এটা নিয়ে কনফিউশন ছিল। আমি রিস্ক নিতে চাইনি, তাই স্যরি বলেছি। সঠিক উত্তর হবে ‘রবার্ট ফ্রস্ট’)
এক্সটার্নাল-২ : আপনার এলাকা নিয়ে পল্লীকবির একটি বিখ্যাত কবিতা আছে। বলতে পারবেন?
আমি : আসমানী কবিতা...
এক্সটার্নাল-২ : কবিতাটা আবৃত্তি করেন তো। (অনেকটা আবেগ নিয়েই আবৃত্তি করলাম। মনে হলো—ম্যাডাম শুনে সন্তুষ্ট হয়েছেন)।
এক্সটার্নাল-২ : এই কবিতার প্রেক্ষাপট জানেন তো?
(পুরো প্রেক্ষাপট ভালোভাবে বলেছি)
এক্সটার্নাল-২ : আমাদের জাতীয় সনদ (National charter) কী? কে, কোথায় কিভাবে এটি করেছিলেন? বিস্তারিত বলুন।
(উত্তরে পুরো ৬ দফার ৬ পয়েন্ট, ইতিহাস, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে এর প্রভাব কী ছিল, সবই বলেছি)।
এক্সটার্নাল-২ : ঠিক আছে, ধন্যবাদ।
গ্রন্থনা : এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
সম্পর্কিত খবর

অসামরিক পদে কর্মী নেবে বিজিবি
- ২৩ ধরনের পদে ১৬৬ জন বেসামরিক কর্মী নিয়োগ দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অনলাইনে আবেদন করতে হবে ১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে। বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাবেন। আবেদনের দরকারি তথ্য জানাচ্ছেন সাজিদ মাহমুদ

পরীক্ষা পদ্ধতি: প্রাথমিক ডাক্তারি পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, ব্যাবহারিক পরীক্ষা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হবে। নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র ও সময়সূচি বিজিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া প্রার্থীদের মোবাইলে এসএমএস করেও জানানো হবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের লিখিত, মৌখিক, ব্যাবহারিক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেওয়া হবে।
আবেদন যেভাবে: সব কটি পদের ক্ষেত্রেই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ ও জমা দিতে হবে ছয়টি ধাপে। প্রথম ধাপে যোগ্যতা পরীক্ষা, দ্বিতীয় ধাপে রেজিস্ট্রেশন, তৃতীয় ধাপে আবেদন ফি জমা, চতুর্থ ধাপে শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই, পঞ্চম ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান ও ছবি আপলোড এবং ষষ্ঠ ধাপে অ্যাডমিট কার্ড বা প্রবেশপত্র ডাউনলোড।
ভর্তির সময় যা রাখতে হবে: শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ, মূল প্রশংসাপত্র, অভিভাবকের সম্মতিপত্র, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার সনদের মূল কপি, নাগরিকত্ব সনদের মূল কপি, প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সনদের দুই কপি মূল সনদপত্র, বিবাহিতদের বেলায় বৈবাহিক সনদের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, অ্যাডমিট বা প্রবেশপত্রের প্রিন্ট কপি ও সদ্য তোলা নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে ল্যাব প্রিন্ট রঙিন ছবি (পাসপোর্ট) ১১ কপি।
কোন পদে কতজন: ইমাম/আরটি-৩ জন। সহকারী লাইব্রেরিয়ান-১ জন।
পদভেদে ন্যূনতম যোগ্যতা জেএসসি থেকে ডিপ্লোমা/ফাজিল। পদভেদে অভিজ্ঞতাও চাওয়া হয়েছে। পদভিত্তিক বিস্তারিত যোগ্যতা পাওয়া যাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে।
১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩২ বছর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুসারে কোটাসহ অন্যান্য বিধি অনুসরণ করা হবে।
বেতন-ভাতা: নিয়োগপ্রাপ্তরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে বেতন-ভাতা, রেশন, চিকিৎসা ও বিজিবির নির্ধারিত সব সুবিধা পাবেন।
আবেদনের লিংক ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:
http://joinborderguard.bgb.gov.bd

প্রশিক্ষণ নিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক হওয়ার সুযোগ
- নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অধীনে ‘প্রি-সি নাবিক (রেটিং)’ ৫২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকারি-বেসরকারি সাতটি মেরিটাইম প্রতিষ্ঠান। ছয় মাসের কোর্স শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা সমুদ্রগামী জাহাজে সাধারণ নাবিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন। গ্রীষ্মকালীন (২০২৫) কোর্সে ভর্তির আবেদন করা যাবে ২৩ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত। বাছাই পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ, চাকরির সুযোগসহ দরকারি তথ্য জানাচ্ছেন সাজিদ মাহমুদ

বাছাই যেভাবে
বাছাইপ্রক্রিয়ায় মোট ২০০ নম্বর বরাদ্দ। একাডেমিক ফলাফল ও ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হবে। প্রার্থী তাঁর এসএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-এর ২০ গুণ (সর্বোচ্চ) নম্বর পাবেন। অর্থাৎ কারো জিপিএ ৫ থাকলে তিনি এই অংশে ১০০ নম্বর পাবেন।
আবাসন ও কোর্স ফি
ছয় মাস মেয়াদের প্রশিক্ষণের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে মেরিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি ইনস্টিটিউট বা একাডেমিতে পুরো কোর্সে সব মিলিয়ে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণে খরচ হবে পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা।
কাজের সুযোগ
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কন্ট্রোলার অব মেরিটাইম এডুকেশন (সিসি) ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ জানান, ডেক ও ইঞ্জিন নাবিক, স্টুয়ার্ট ও কুক নাবিক, ইলেকট্রিশিয়ান নাবিক ও ফিটার কাম ওয়েল্ডার নাবিক—এই চারটি গ্রুপে ভর্তি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
পদোন্নতি ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা
প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেইনি রেটিং (নাবিক) বা সিম্যান জাহাজে চাকরির সুযোগ পান।
ভর্তির যোগ্যতা ও আবেদন পদ্ধতি
১ জুলাই ২০২৫ তারিখ অনুযায়ী সাধারণ প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৬ থেকে ২৫ বছর। ডিপ্লোমাধারী প্রার্থীদের বয়সসীমা ২০ থেকে ৩৫ বছর। নৌবাহিনীর প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছর। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত চারটি গ্রুপের মধ্যে যেকোনো একটি গ্রুপে আবেদন করা যাবে। ডেক ও ইঞ্জিন নাবিক (গ্রুপ-১) এবং স্টুয়ার্ট ও কুক নাবিক (গ্রুপ-২) হিসেবে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানে কমপক্ষে জিপিএ ২.৫০ বা সমমান। ইলেকট্রিশিয়ান নাবিক (গ্রুপ-৩) হিসেবে ভর্তির যোগ্যতা—কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা অথবা এসএসসি বা সমমান। এর পাশাপাশি দুই বছরের ট্রেড কোর্স অথবা উক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কশপে ছয় মাসের প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা। ফিটার কাম ওয়েল্ডার নাবিক (গ্রুপ-৪) হিসেবে আবেদনের যোগ্যতা—কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেরিন/মেকানিক্যাল/পাওয়ার/অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা শিপ বিল্ডিংয়ে ডিপ্লোমা অথবা এসএসসি বা সমমান। এর পাশাপাশি দুই বছরের ট্রেড কোর্স পাস অথবা ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানসহ বিটাক বা সমমানের প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েল্ডিং অথবা মেশিন শপে তিন মাসের প্রশিক্ষণ। উচ্চতা ন্যূনতম ৫ ফুট ২ ইঞ্চি এবং ওজন ৪২-৬৭ কেজি। দৃষ্টিশক্তি ডেক রেটিংদের জন্য দুই চোখ ৬/৬ এবং অন্যান্য রেটিংদের জন্য দুই চোখে ৬/১২। বর্ণান্ধরা (কালার ব্লাইন্ড) আবেদন করতে পারবেন না।
বিজ্ঞপ্তি ও আবেদন

ভাইভা অভিজ্ঞতা
ইউএনও হলে নারী বৈষম্য রোধে কী কী পদক্ষেপ নেবেন?
- রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন রুবাইয়া সিদ্দিকা। তিনি ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

ভাইভা হয়েছিল ৫ মে ২০২৫। প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল ১৫ মিনিটের মতো। অনুমতি নিয়ে রুমে ঢুকে চেয়ারম্যান স্যারসহ সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিই। স্যার বসার অনুমতি দিয়ে ভাইভা শুরু করেন।
চেয়ারম্যান: আপনি খুবই হাসিখুশি! সকালবেলায় প্রথমেই আপনার হাসি মুখটি দেখে খুব ভালো লাগছে।
—অনেক ধন্যবাদ স্যার।
(সার্টিফিকেট দেখে) আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড তো বেশই ভালো। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন, বলুন—ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জ্ঞান প্রশাসনে কিভাবে কাজে লাগাবেন?
—স্যার, বর্তমানে ফোরআইআর এবং এআই-এর যুগ।
প্রশাসনে গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান দিয়ে কার্যক্রমকে কিভাবে গতিশীল করবেন?
—স্যার, অলরেডি ভূমি অফিস, উপজেলা অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের কাজগুলো অনলাইনে করা হয়েছে। কিন্তু ডেটাবেইসের বিশালত্ব ও আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো ততটা গতিশীল নয়। চেষ্টা করব সরকারি দপ্তরের অনলাইন কাজগুলো আরো ব্যবহারবান্ধব করে উপস্থাপনের।
নারীর ক্ষমতায়ন বলতে কী বোঝেন?
—পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়—সব ক্ষেত্রে যদি বাধা-বিপত্তি ছাড়াই নারী তার মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো অর্জন করতে পারে, তাহলে এটাকে আমি নারীর ক্ষমতায়ন মনে করি।
প্রশাসনে কাজ করার সময় নারীদের কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হয়?
—দেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্ঠী এখনো নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে সার্বিকভাবে পরিচিত নয়।
ইউএনও হলে আপনি নারী বৈষম্য রোধে উপজেলায় কী কী পদক্ষেপ নেবেন?
—স্যার, আমি প্রথমেই উপজেলার আইন-কানুনে নজর দেব। কিশোরী বা নারীরা যাতে ইভ টিজিং ও অন্যান্য অপরাধের শিকার না হয়, এর জন্য আইনের প্রয়োগ করব। দ্বিতীয়ত, নারী, শিশু-কিশোরীরা যাতে শিক্ষার অধিকার পায়, তা নিশ্চিত করব। প্রয়োজনে উপজেলার স্কুলগুলোয় নারীশিক্ষা বিষয়ক আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করব। তৃতীয়ত, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহ রোধে দেশের প্রচলিত আইনগুলোর যথাযথ ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করব।
এক্সটার্নাল-১: দেশের কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের নাম বলতে পারবেন?
—কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট।
সনেট বলতে কী বোঝেন?
—চৌদ্দটি চরণের মাধ্যমে যখন কবির মনের একটি সুনির্দিষ্ট মূলভাবকে প্রকাশ করা হয় তাকে সনেট বলে।
একজন সনেটকারের নাম বলুন।
—মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
তাঁর বিখ্যাত সনেটের নাম জানেন?
—কপোতাক্ষ নদ ও বঙ্গভাষা।
এক্সটার্নাল-২: দেশের পর্যটনশিল্পের সমস্যাগুলো কী কী?
—স্যার, আমাদের দেশে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন পর্যটন স্পট থাকার পরও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের টানতে পারছে না। এ ছাড়া দর্শনীয় স্থানগুলোতে স্থানীয় নিরাপত্তার অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, নিরাপদ আবাসনের সংকট—এগুলোও অন্যতম কারণ।
বান্দরবানের ইউএনও করা হলে পর্যটনের বিকাশে কী পদক্ষেপ নেবেন?
—স্যার, প্রথমেই আমি বান্দরবনের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করব। পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা বাড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। পাহাড়ি সড়কগুলো সংস্কারের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করব। দুর্গম পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার অবকাঠামো তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
এক্সটার্নাল-১: প্রশাসন ক্যাডারে সর্বোচ্চ পদমর্যাদা কোনটি?
—স্যার, মন্ত্রীপরিষদসচিব।
চেয়ারম্যান: কাগজপত্র নিয়ে যান।
(সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।)

বিসিএস
প্রশাসন ক্যাডারে যেভাবে প্রথম ফরহাদ
- ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর প্রস্তুতি ও প্রথম হওয়ার পেছনের গল্প শুনেছেন আব্দুন নুর নাহিদ

বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির শুরুতে বিগত বিসিএসের প্রশ্নপত্র সমাধান করেছি। এর ফলে সহজেই বুঝতে পেরেছি, কোন বিষয়ে দখল ভালো আর কোনগুলোতে আমি দুর্বল। এসএসসি-এইচএসসির শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কারণে গণিত-বিজ্ঞান নিয়মিত চর্চা হতো। সিলেবাস ধরে ধরে এগিয়েছি
আপনার ক্যাডার পছন্দক্রম কী ছিল? এটা কততম বিসিএস? মেধাতালিকায় প্রথম হবেন, ভেবেছিলেন?
আমার ক্যাডার পছন্দক্রমে ছিল—প্রশাসন, পুলিশ, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস, ট্যাক্স, আনসার ও তথ্য।
এটা আমার তৃতীয় বিসিএস। এর আগে ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে অংশ নিয়েছিলাম, কিন্তু ক্যাডার পদ পাইনি। ৪৪তম বিসিএস লিখিত ও ভাইভা অনেক ভালো দিয়েছি। কিন্তু মেধাতালিকায় প্রথম হব, ভাবিনি।
কিভাবে প্রথম হলেন? অর্থাৎ কোন বিষয়গুলো আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করছেন?
৪১ ও ৪৩তম বিসিএসের ভুল থেকে অর্জিত শিক্ষাই আমাকে ৪৪তম বিসিএসে ভালো করতে সহায়ক হয়েছে। যেমন—
ক. লিখিত পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে সেটি এড়িয়ে গেছি। যেমন—৪৪তম বিসিএসে বিজ্ঞানের একটা প্রশ্ন ছিল ‘পুরো বায়ুমণ্ডলের ভর কত?’। এখানে ভর না জেনে কিছু লিখলে ভুল হবে।
খ. সংবিধান থেকে আসা প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ জানা না থাকলে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। যেমন—৪৪তম বিসিএসে একটা প্রশ্ন এসেছিল ‘হাইকোর্টের বিচারক অপসারণের প্রক্রিয়া’ সম্পর্কে। আমি অনুচ্ছেদটি মনে করতে পারিনি বলে উত্তর দিইনি।
গ. অতিরিক্ত ভূমিকা না টেনে সরাসরি প্রশ্নের মূল অংশ নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি।
ঘ. শুদ্ধ বানান ও ভাষার সঠিক ব্যবহারের চেষ্টা করেছি।
ঙ. কাটাকাটি না করে খাতা পরিচ্ছন্ন রেখেছি। কালো ছাড়া অন্য রঙের কলম ব্যবহার (হাইলাইটের জন্য) প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমি শুধু কালো কালির কলম ব্যবহার করেছি। চিত্র এঁকেছি পেন্সিল দিয়ে। চিত্রের নিচে শিরোনাম দিয়েছি।
চ. সময়ের দিকে খেয়াল রেখেছি। উত্তর করার সময় যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা উচিত বলে মনে করি। যাতে শেষের দিকের প্রশ্নগুলো পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভালোভাবে উত্তর করা যায়।
ছ. উক্তি ব্যবহারে সতর্ক ছিলাম। প্রস্তুতির সময় অনেক উক্তি পড়ার সময় লিখে রাখতাম। কিন্তু পরীক্ষায় উত্তর করার সময় সেগুলো মাথায় আসত না! কারণ পড়ার সময় আমি প্রশ্নের উত্তরে বেশি ফোকাস করেছিলাম। উক্তির বক্তা, সূত্র—এসব ভুল হতে পারে ভেবে আমি ৪৪তম বিসিএসে খুব বেশি উক্তি ব্যবহার করিনি। তবে উক্তি ঠিকঠাক উল্লেখ করে লিখতে পারলে সেটা প্রার্থীদের এগিয়ে রাখবে।
পড়াশোনা কোথায় করেছেন, ফল কেমন ছিল?
কৈডোলা জাফরশাহী উচ্চ বিদ্যালয় (জামালপুর) থেকে এসএসসিতে (২০১২) জিপিএ ৪.৭৫, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (ময়মনসিংহ) থেকে এইচএসসিতে (২০১৪) জিপিএ ৫.০০, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (টাঙ্গাইল) থেকে (২০১৪-১৫) স্নাতকে (টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং) সিজিপিএ ৩.২৫। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ বৃত্তি পেয়েছিলাম।
বিসিএস নিয়ে স্বপ্নের শুরুটা কিভাবে?
বোর্ড পরীক্ষার ম্যাজিস্ট্রেট এলে দেখতাম সবাই খুব সাবধান হয়ে যেত! তখন বুঝতাম, এটা খুব সম্মানজনক পদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার শেষ দিকে ভাবলাম, এমন একটা পেশায় যাব যেখানে কাজের বৈচিত্র্য থাকবে। পাশাপাশি সরাসরি জনগণের সেবা করার সুযোগ থাকবে, সম্মানও থাকবে। সব দিক বিবেচনা করে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করি।
প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল ও রুটিন কেমন ছিল? কোন বিষয়গুলোতে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন?
বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির শুরতেই বিগত বিসিএসের প্রশ্নপত্র (প্রশ্ন ব্যাংক) সমাধান করেছি। এর ফলে সহজেই বুঝতে পেরেছি, কোন বিষয়বস্তুর ওপর আমার দখল ভালো আর কোনগুলোতে দুর্বল। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর (টিউশন) কারণে গণিত, বিজ্ঞান নিয়মিত চর্চা হতো। গণিত, মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান, ভূগোল, কম্পিউটার, ইংরেজি ব্যাকরণ, বাংলা ব্যাকরণ—এই বিষয়গুলোর ওপর আমার ভালোই দখল ছিল। আমি শুরুতে এই বিষয়গুলোতেই বেশি জোর দিয়েছি। এরপর অন্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিই। সিলেবাস ধরে ধরে এগিয়েছি। আমার মতে, প্রার্থী যে বিষয়গুলোতে ভালো, সেগুলোতে প্রস্তুতির শুরুতে বেশি সময় দিলে সেখান থেকে সর্বোচ্চ নম্বর তোলা সহজ হয়। প্রস্তুতির এক পর্যায়ে মনে হলো, সময় দিলে ইংরেজি সাহিত্যে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রিলিমিনারি নমুনা পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি। এভাবে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি। যেসব জায়গায় ভুল হতো, সেগুলো আবার পড়তাম। একটা টপিক একটা বই থেকেই পড়তাম। নতুন বা অতিরিক্ত তথ্য বইয়ের পৃষ্ঠায় লিখে রাখতাম। কঠিন টপিক বারবার পড়তাম। কোনো নতুন প্রশ্ন মাথায় এলে বা কিছু জানার দরকার হলে গুগলে সার্চ দিতাম। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার ফলে সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতেও আপডেট ছিলাম।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম অনুবাদচর্চার মাধ্যমে। দৈনিক পত্রিকার সংবাদ দেখে বাংলা থেকে ইংরেজি, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ অনুশীলন করতাম। বিজ্ঞানের জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়েছি। সিলেবাসের বেশির ভাগ টপিক এখানে আছে। বাংলা ও ইংরেজি সমসাময়িক বিভিন্ন টপিকের ওপর ফ্রি হ্যান্ডরাইটিং অনুশীলন করতাম। বাংলা সাহিত্যে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছি। বানানেও সতর্ক ছিলাম। বিশ্বের আলোচিত ঘটনাগুলো পত্রিকা থেকে নোট করেছি। পেপার কাটিংও সংগ্রহ করে রাখতাম। তথ্য বা উক্তি ব্যবহার করলে এর সূত্র উল্লেখ করার চেষ্টা করতাম। যে ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই, সে ব্যাপারে উত্তর না করাই ভালো। বিসিএস লিখিত সিলেবাসে উল্লিখিত সব টপিকের বেসিক ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এমনভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, যাতে প্রশ্ন যেখান থেকেই আসুক ঠিকঠাক যেন উত্তর করতে পারি।