অনেক সময় পার্শ্ববর্তী জেলা সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাও পার্শ্ববর্তী জেলা সম্পর্কেও টুকটাক জানার চেষ্টা করুন।
২। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান :
প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে, দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে জানা অবশ্যকর্তব্য। এগুলো সম্পর্কে প্রায়ই প্রশ্ন করা হয় এবং উত্তর করতে না পারলে সেটাকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পরিবার, রাজনৈতিক জীবন, জেলজীবন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান, শাসনামল, ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর লিখিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইগুলো অবশ্যই পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা রাখতে হবে। অনেক সময় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কী রেফারেন্স বই পড়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। তাই কয়েকটি রেফারেন্স বই পড়ে রাখা ভালো।
সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো মনে রাখতে হবে। নিম্নের অনুচ্ছেদগুলো দেখে যেতে পারেন—২, ২ক, ৪, ৪ক, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ক, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৩ক, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৮০, ৮১, ৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯১, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৮, ১১০, ১১৭, ১১৮, ১১৯, ১২২, ১২৭, ১২৮, ১৩৭, ১৪০, ১৪১ক, ১৪১খ, ১৪১গ, ১৪২, ১৪৩, ১৪৫, ১৪৫ক, ১৪৬, ১৪৮। এ ছাড়া সংবিধানের সংশোধনী, প্রস্তাবনা, তফসিল, সংবিধান রচনার ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সম্পর্কেও জানতে হবে।
৩। ক্যাডার চয়েস : প্রার্থী যে ক্যাডারকে প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় চয়েসে রেখেছে তার সম্পর্কে বেসিক ধারণা আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। কেন ওই ক্যাডারকে প্রথম বা দ্বিতীয় চয়েসে রাখা হয়েছে, ওই ক্যাডারের সঙ্গে নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ও যৌক্তিক উত্তর আগে থেকেই রেডি করে রাখা উচিত। কৃত্রিমতা পরিহার করে সহজ ও সুন্দরভাবে নিজের মতো করে উত্তর করাই শ্রেয়। পুরো ক্যাডার চয়েস লিস্টটাই জেনে রাখতে হবে। অনেক সময় লাস্ট চয়েস কী ও কেন দেওয়া হয়েছে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। উল্লিখিত ক্যাডারগুলোর পদসোপান, সাংগঠনিক কার্যক্রম, কাজের কাঠামো, প্রধান প্রধান কাজ, চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি জানতে হবে।
৪। সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক সময়ের আলোচ্য বিষয় :
ভাইভা প্রস্তুতির সময় নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। দেশে ও বিদেশে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। ভাইভায় এ সম্পর্কিত বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য জানতে চাওয়া হতে পারে। ম্যাপ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো, স্থানীয় সরকার, মেগাপ্রজেক্ট, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে হবে। ভাইভার দিনে বয়স, দিনটি কেন বিখ্যাত, ওই তারিখে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ইত্যাদি সম্পর্কেও জানতে হবে।
মক ভাইভা
ভাইভায় অংশগ্রহণ করার আগে কয়েকটি মক বা নমুনা ভাইভা দিতে পারেন। আয়নার সামনে কিংবা কয়েকজন বন্ধু মিলে ভাইভা অনুশীলন করলেও নার্ভাসনেস নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়। ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাসটাও বৃদ্ধি করতে পারেন।
সহায়িকা
বিগত বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের ভাইভা অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন। কালের কণ্ঠের চাকরি আছে পাতায় ও ফেসবুকে প্রার্থীরা নিজ নিজ ভাইভা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। ক্যাডার চয়েস ও ভাইভা প্রস্তুতি সম্পর্কে গাইড বইগুলোও সংগ্রহ করুন। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে রেফারেন্স বই, বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বইগুলো পড়তে পারেন। জেলা সম্পর্কে জানার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইট কিংবা বাংলা একাডেমির বইটা দেখতে পারেন।
ভাইভায় আরো যাচাই করা হয়
১. প্রার্থীর ভদ্রতা, বিনয় ও পরিমিতিবোধ।
২. কতটা প্রেজেন্টেবল।
৩. ক্যাডার চয়েস সম্পর্কে জ্ঞান।
৪. আউটলুক।
৫. ভাষাগত দক্ষতা।
৬. সমসাময়িক বিষয়ে ধারণা, মানসিকতা ও উপস্থিত জ্ঞান।
উত্তর না পারলে
ভাইভায় উত্তর না পারলে ভণিতা না করে সরাসরি বলুন, ‘স্যরি স্যার। উত্তরটি আমার জানা নেই/উত্তরটি মনে করতে পারছি না।’ এমনও হতে পারে আপনি টানা ৪-৫টি উত্তর পারছেন না। এতে ভয় পাওয়ার বা ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। মনে রাখবেন, ভাইভা কেবল জ্ঞানের গভীরতা যাচাইয়ের পরীক্ষাই নয়; প্রার্থী কিভাবে কোন পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন, বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের মাধ্যমে সেটাও যাচাই করা হয়।
যা করা যাবে না
১. ভুল কিংবা অনুমাননির্ভর তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হোন।
২. কোনো ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত ভুল বা মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
৩. অধিক পাণ্ডিত্য জাহির করতে যাবেন না।
৪. কোনোভাবেই বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়ানো যাবে না।
৫. সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা যাবে না কিংবা প্রশ্নের উত্তর মনে করতে গিয়ে বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না।
৬. রাজনৈতিক দর্শন প্রকাশ করা যাবে না।
৭. অতি সৌজন্যবোধ ও মাত্রাতিরিক্ত কনফিডেন্স না দেখানোই ভালো।
৮. প্রশ্নের গভীরতা না বুঝে উত্তর দেওয়া যাবে না।
৯. উত্তর দিতে গিয়ে চতুরতা কিংবা তাড়াহুড়া এড়িয়ে চলুন।
১০. আঞ্চলিকতা পরিহার ও শব্দচয়নে সতর্ক থাকতে হবে।