ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭
যা যা জানার আছে

কারিগরিতে ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ

  • ৪৩তম বিসিএস থেকে কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারে ইনস্ট্রাক্টর (টেক ও নন-টেক) এবং ৩৮তম বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্তদের (নন-ক্যাডার) তালিকা থেকে ইনস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক ও নন-টেক) পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান আছে। কারিগরি শিক্ষার পদগুলোর দায়িত্ব ও কার্যাবলি, পদসোপান ও দরকারি অনেক তথ্যই চাকরিপ্রার্থীদের অজানা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন রবিউল আলম লুইপা
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
কারিগরিতে ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ

পদায়ন : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোতে মূলত ইনস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শুধু নন-ক্যাডার পদে ইনস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ হয়। এর বাইরে মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনে টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরেও পদায়ন হতে পারে। 

 

দায়িত্ব, কার্যাবলি ও সুযোগ-সুবিধা : ‘জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫’ অনুযায়ী একজন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও ইনস্ট্রাক্টর যথাক্রমে গ্রেড-১০-এ ১৬০০০ টাকা এবং গ্রেড-৯-এ ২২০০০ টাকা মূল বেতনে যোগদান করেন।

বেতনের বাইরে অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও ইনস্ট্রাক্টররা নিজ নিজ বিষয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শ্রেণি পাঠদান করেন। বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথম শিফটের পাশাপাশি দ্বিতীয় শিফট চালু করলে শিক্ষকের অপ্রতুলতায় প্রথম শিফটের শিক্ষকদের দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস নিতে হচ্ছে এবং এর জন্য তাঁরা মূল বেতনের অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ হারে ভাতা পান। এ ছাড়া একজন ইনস্ট্রাক্টর বা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরকে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষার কক্ষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ও বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন।
পাশাপাশি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলমান আছে। এই অতিরিক্ত দায়িত্বের জন্য সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাতা প্রযোজ্য হয়।

 

পদসোপান

►   সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পদসোপান হলো—

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-১০)> ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-৯)> চিফ ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-৬)> ভাইস প্রিন্সিপাল (গ্রেড-৫)>প্রিন্সিপাল (গ্রেড-৪)।

►   সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পদসোপান হলো—

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-১০)> ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-৯)> চিফ ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-৬)>প্রিন্সিপাল (গ্রেড-৫)।

উল্লেখ্য, উভয় প্রতিষ্ঠানে একজন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-১০) চাকরির ফিডার পূর্তিতে ৫০ শতাংশ ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-৯) পদে পদোন্নতি পেয়ে পরবর্তী ধাপ অনুসরণ করেন, বাকি ৫০ শতাংশ ইনস্ট্রাক্টর (গ্রেড-৯) সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে চিফ ইনস্ট্রাক্টরের ৯০ শতাংশ পদে পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ১০ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পদায়ন করা হয়।

►   টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পদসোপান হলো—

লেকচারার>অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর> অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর> প্রফেসর (প্রফেসর থেকে একজন প্রিন্সিপাল পদে দায়িত্ব পালন করেন) এবং

►   কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পদসোপান হলো—

সংযুক্ত কর্মকর্তা>সহকারী পরিচালক>উপপরিচালক>পরিচালক>

মহাপরিচালক।

 

প্রশিক্ষণ : একজন নবনিযুক্ত জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বা ইনস্ট্রাক্টরকে চাকরিতে যোগদানের পর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)/ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য যেকোনো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে দুই মাস বা অধিদপ্তর নির্ধারিত মেয়াদি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এ ছাড়া দেশে ও দেশের বাইরে এই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অন্য যেকোনো প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হতে পারে।

 

একনজরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পদসমূহ

বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে এর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। সব জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৪টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ চলমান আছে; আরো ৩৫টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি কার্যক্রম অপেক্ষমাণ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আরো সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ সরকার সব উপজেলায় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারিগরি শিক্ষায় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার ক্যাটাগরিতে ১২ হাজার ৬০৭টি নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এসব পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সারা দেশে ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে এক হাজার ৬১টি ক্যাডার পদ এবং ১১ হাজার ৫৪৬টি নন-ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পদগুলো রাজস্ব খাতে সৃজনের মঞ্জুরি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশ-বিদেশে চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় সরকার যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার অংশ হিসেবে এসব পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

এসব পদের মধ্যে রয়েছে জাতীয় বেতন কাঠামোর পঞ্চম গ্রেডের ২০টি উপাধ্যক্ষের পদ, ১৬৯টি চিফ ইনস্ট্রাক্টর (টেকনিক্যাল, গ্রেড-৬), ৫৭টি চিফ ইনস্ট্রাক্টর (নন-টেকনিক্যাল, গ্রেড-৬), ৫১০টি ইনস্ট্রাক্টর (টেকনিক্যাল, গ্রেড-৯) এবং ৩০৫টি ইনস্ট্রাক্টর (নন-টেকনিক্যাল, গ্রেড-৯) পদ। ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে এসব পদে নিয়োগ সম্পন্ন হবে।

 

কারিগরি শিক্ষায় ১২৬০৭টি নতুন পদ

প্রফেসর মো. মামুন উল হক, পরিচালক (আইটিসি),  বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

বর্তমানে প্রতি জেলায় সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও প্রতিটি উপজেলায় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) স্থাপন হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরাধীন প্রতিষ্ঠানে ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ প্রণয়ন, কারিগরি শিক্ষায় ১২৬০৭টি নতুন পদ সৃষ্টিসহ নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টিএসসিগুলোতে পড়াশোনার স্তরভিত্তিক ন্যাশনাল স্কিল লেভেল রেটিং প্রদান, কারিগরি শিক্ষার ওপর উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি

কারিগরি শিক্ষাকে আরো জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রাখবে।

 

সম্প্রতি ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত ইনস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর এই সেক্টরের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে একটা উন্নত কর্মপরিবেশ পাবে বলে আশা করছি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

অসামরিক পদে কর্মী নেবে বিজিবি

    ২৩ ধরনের পদে ১৬৬ জন বেসামরিক কর্মী নিয়োগ দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অনলাইনে আবেদন করতে হবে ১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে। বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাবেন। আবেদনের দরকারি তথ্য জানাচ্ছেন সাজিদ মাহমুদ
শেয়ার
অসামরিক পদে কর্মী নেবে বিজিবি
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

পরীক্ষা পদ্ধতি: প্রাথমিক ডাক্তারি পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, ব্যাবহারিক পরীক্ষা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হবে। নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র ও সময়সূচি বিজিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া প্রার্থীদের মোবাইলে এসএমএস করেও জানানো হবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের লিখিত, মৌখিক, ব্যাবহারিক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেওয়া হবে।

 

আবেদন যেভাবে: সব কটি পদের ক্ষেত্রেই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ ও জমা দিতে হবে ছয়টি ধাপে। প্রথম ধাপে যোগ্যতা পরীক্ষা, দ্বিতীয় ধাপে রেজিস্ট্রেশন, তৃতীয় ধাপে আবেদন ফি জমা, চতুর্থ ধাপে শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই, পঞ্চম ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান ও ছবি আপলোড এবং ষষ্ঠ ধাপে অ্যাডমিট কার্ড বা প্রবেশপত্র ডাউনলোড।

 

ভর্তির সময় যা রাখতে হবে: শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ, মূল প্রশংসাপত্র, অভিভাবকের সম্মতিপত্র, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার সনদের মূল কপি, নাগরিকত্ব সনদের মূল কপি, প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সনদের দুই কপি মূল সনদপত্র, বিবাহিতদের বেলায় বৈবাহিক সনদের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, অ্যাডমিট বা প্রবেশপত্রের প্রিন্ট কপি ও সদ্য তোলা নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে ল্যাব প্রিন্ট রঙিন ছবি (পাসপোর্ট) ১১ কপি।

এর মধ্যে এক কপি চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর কর্তৃক সত্যায়িত। সব কটি সনদের মূল কপির সঙ্গে এক কপি করে সত্যায়িত ফটোকপি রাখতে হবে।

 

কোন পদে কতজন: ইমাম/আরটি-৩ জন। সহকারী লাইব্রেরিয়ান-১ জন।

অফিস সহকারী-১৫ জন। ড্রাফটসম্যান-৪ জন। কার্পেন্টার-৩ জন। কমিউনিকেশন টেকনিশিয়ান (গ্রেড-৪)-১৮ জন। সহকারী স্টোর কিপার-১ জন।
সহকারী ভিএম-১ জন। সহকারী ওবিএম ড্রাইভার-৫ জন। সহকারী ডব্লিউসি টেকনিশিয়ান-১ জন। ইলেকট্রিশিয়ান-২ জন। মিডওয়াইফ (মহিলা)-২ জন। বয়লার অপারেটর-১ জন। টেইলর-২ জন। বুটমেকার-১ জন। লস্কর-৬ জন। আয়া-২ জন। ফাউলকিপার-১ জন। বাবুর্চি-৫৫ জন। সহকারী বাবুর্চি-২ জন। অফিস সহায়ক-৭ জন। মালি-৭ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী-২৬ জন।

পদভেদে ন্যূনতম যোগ্যতা জেএসসি থেকে ডিপ্লোমা/ফাজিল। পদভেদে অভিজ্ঞতাও চাওয়া হয়েছে। পদভিত্তিক বিস্তারিত যোগ্যতা পাওয়া যাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে।

১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩২ বছর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুসারে কোটাসহ অন্যান্য বিধি অনুসরণ করা হবে।

 

বেতন-ভাতা: নিয়োগপ্রাপ্তরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে বেতন-ভাতা, রেশন, চিকিৎসা ও বিজিবির নির্ধারিত সব সুবিধা পাবেন।

 

আবেদনের লিংক ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি:

http://joinborderguard.bgb.gov.bd

 

মন্তব্য

প্রশিক্ষণ নিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক হওয়ার সুযোগ

    নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অধীনে ‘প্রি-সি নাবিক (রেটিং)’ ৫২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকারি-বেসরকারি সাতটি মেরিটাইম প্রতিষ্ঠান। ছয় মাসের কোর্স শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা সমুদ্রগামী জাহাজে সাধারণ নাবিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন। গ্রীষ্মকালীন (২০২৫) কোর্সে ভর্তির আবেদন করা যাবে ২৩ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত। বাছাই পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ, চাকরির সুযোগসহ দরকারি তথ্য জানাচ্ছেন সাজিদ মাহমুদ
শেয়ার
প্রশিক্ষণ নিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক হওয়ার সুযোগ
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

বাছাই যেভাবে

বাছাইপ্রক্রিয়ায় মোট ২০০ নম্বর বরাদ্দ। একাডেমিক ফলাফল ও ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হবে। প্রার্থী তাঁর এসএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-এর ২০ গুণ (সর্বোচ্চ) নম্বর পাবেন। অর্থাৎ কারো জিপিএ ৫ থাকলে তিনি এই অংশে ১০০ নম্বর পাবেন।

বাকি ১০০ নম্বর বরাদ্দ ভর্তি পরীক্ষায়। ৯০ মিনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতির ১০০টি প্রশ্ন থাকবে। বাংলায় ৩০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে ৩৫ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। পাস নম্বর থাকবে ৪০ শতাংশ।

 

আবাসন ও কোর্স ফি

ছয় মাস মেয়াদের প্রশিক্ষণের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে মেরিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি ইনস্টিটিউট বা একাডেমিতে পুরো কোর্সে সব মিলিয়ে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণে খরচ হবে পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা।

 

কাজের সুযোগ

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কন্ট্রোলার অব মেরিটাইম এডুকেশন (সিসি) ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ জানান, ডেক ও ইঞ্জিন নাবিক, স্টুয়ার্ট ও কুক নাবিক, ইলেকট্রিশিয়ান নাবিক ও ফিটার কাম ওয়েল্ডার নাবিক—এই চারটি গ্রুপে ভর্তি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের প্রি-সি রেটিং (নাবিক) সনদ দেওয়া হবে। সনদ পাওয়ার পর নৌপরিবহন অধিদপ্তরের শর্ত মেনে বেসরকারি মেরিটাইম প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বা একাডেমিগুলো তাদের সমুদ্রগ্রামী পণ্য পরিবহন বা বাণিজ্যিক জাহাজে চাকরির সুযোগ করে দেয়। তবে সরকারি ইনস্টিটিউট বা একাডেমিগুলোর ক্ষেত্রে চাকরি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তারা দেশি-বিদেশি জাহাজ কম্পানিতে চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে প্রার্থীদের সহযোগিতা করে।

 

পদোন্নতি ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা

প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেইনি রেটিং (নাবিক) বা সিম্যান জাহাজে চাকরির সুযোগ পান।

ডেক ও ইঞ্জিন বিভাগে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে সর্বোচ্চ ‘বুসান’ হতে পারেন একজন নাবিক। স্টুয়ার্ট ও কুক বিভাগের নাবিকরা সর্বোচ্চ হেড স্টুয়ার্ট ও হেড কুক হতে পারেন। ইলেকট্রিশিয়ান নাবিক ও ফিটার কাম ওয়েল্ডার বিভাগে সর্বোচ্চ চিফ ইলেকট্রিশিয়ান ও চিফ ফিটার কাম ওয়েল্ডার হওয়া যায়। জাহাজে যোগ দেওয়ার পর শুরুতেই মাসিক বেতন হতে পারে ৪০-৫০ হাজার টাকা। পদোন্নতি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ মাসিক বেতন হতে পারে দুই-তিন লাখ টাকা বা তারও বেশি।

 

ভর্তির যোগ্যতা ও আবেদন পদ্ধতি

১ জুলাই ২০২৫ তারিখ অনুযায়ী সাধারণ প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৬ থেকে ২৫ বছর। ডিপ্লোমাধারী প্রার্থীদের বয়সসীমা ২০ থেকে ৩৫ বছর। নৌবাহিনীর প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছর। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত চারটি গ্রুপের মধ্যে যেকোনো একটি গ্রুপে আবেদন করা যাবে। ডেক ও ইঞ্জিন নাবিক (গ্রুপ-১) এবং স্টুয়ার্ট ও কুক নাবিক (গ্রুপ-২) হিসেবে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানে কমপক্ষে জিপিএ ২.৫০ বা সমমান। ইলেকট্রিশিয়ান নাবিক (গ্রুপ-৩) হিসেবে ভর্তির যোগ্যতা—কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা অথবা এসএসসি বা সমমান। এর পাশাপাশি দুই বছরের ট্রেড কোর্স অথবা উক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কশপে ছয় মাসের প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুই বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা। ফিটার কাম ওয়েল্ডার নাবিক (গ্রুপ-৪) হিসেবে আবেদনের যোগ্যতা—কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেরিন/মেকানিক্যাল/পাওয়ার/অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা শিপ বিল্ডিংয়ে ডিপ্লোমা অথবা এসএসসি বা সমমান। এর পাশাপাশি দুই বছরের ট্রেড কোর্স পাস অথবা ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানসহ বিটাক বা সমমানের প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েল্ডিং অথবা মেশিন শপে তিন মাসের প্রশিক্ষণ। উচ্চতা ন্যূনতম ৫ ফুট ২ ইঞ্চি এবং ওজন ৪২-৬৭ কেজি। দৃষ্টিশক্তি ডেক রেটিংদের জন্য দুই চোখ ৬/৬ এবং অন্যান্য রেটিংদের জন্য দুই চোখে ৬/১২। বর্ণান্ধরা (কালার ব্লাইন্ড) আবেদন করতে পারবেন না।

 

বিজ্ঞপ্তি ও আবেদন

www.dos.gov.bd

 

মন্তব্য
ভাইভা অভিজ্ঞতা

ইউএনও হলে নারী বৈষম্য রোধে কী কী পদক্ষেপ নেবেন?

    রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন রুবাইয়া সিদ্দিকা। তিনি ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
শেয়ার
ইউএনও হলে নারী বৈষম্য রোধে কী কী পদক্ষেপ নেবেন?
রুবাইয়া সিদ্দিকা

ভাইভা হয়েছিল ৫ মে ২০২৫। প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল ১৫ মিনিটের মতো। অনুমতি নিয়ে রুমে ঢুকে চেয়ারম্যান স্যারসহ সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিই। স্যার বসার অনুমতি দিয়ে ভাইভা শুরু করেন।

 

চেয়ারম্যান: আপনি খুবই হাসিখুশি! সকালবেলায় প্রথমেই আপনার হাসি মুখটি দেখে খুব ভালো লাগছে।

—অনেক ধন্যবাদ স্যার।

(সার্টিফিকেট দেখে) আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড তো বেশই ভালো। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন, বলুন—ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জ্ঞান প্রশাসনে কিভাবে কাজে লাগাবেন?

—স্যার, বর্তমানে ফোরআইআর এবং এআই-এর যুগ।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে এর প্রভাব থেকে প্রশাসনকে দূরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। আমি আমার অর্জিত জ্ঞান দিয়ে প্রশাসনকে আরো আধুনিক ও গতিশীল করতে পারব বলে আশা রাখি। দ্বিতীয়ত, আমি যেহেতু একজন ইঞ্জিনিয়ার, সেহেতু চাপ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার দক্ষতা আমি আমার ডিগ্রি অর্জনের সময় পেয়েছি। এই গুণটি মাঠ প্রশাসনে খুব কাজে লাগবে।

প্রশাসনে গেলে ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান দিয়ে কার্যক্রমকে কিভাবে গতিশীল করবেন?

—স্যার, অলরেডি ভূমি অফিস, উপজেলা অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের কাজগুলো অনলাইনে করা হয়েছে। কিন্তু ডেটাবেইসের বিশালত্ব ও আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো ততটা গতিশীল নয়। চেষ্টা করব সরকারি দপ্তরের অনলাইন কাজগুলো আরো ব্যবহারবান্ধব করে উপস্থাপনের।

নারীর ক্ষমতায়ন বলতে কী বোঝেন?

—পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়—সব ক্ষেত্রে যদি বাধা-বিপত্তি ছাড়াই নারী তার মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো অর্জন করতে পারে, তাহলে এটাকে আমি নারীর ক্ষমতায়ন মনে করি।

প্রশাসনে কাজ করার সময় নারীদের কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হয়?

—দেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্ঠী এখনো নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে সার্বিকভাবে পরিচিত নয়।

তাই তারা বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

ইউএনও হলে আপনি নারী বৈষম্য রোধে উপজেলায় কী কী পদক্ষেপ নেবেন?

—স্যার, আমি প্রথমেই উপজেলার আইন-কানুনে নজর দেব। কিশোরী বা নারীরা যাতে ইভ টিজিং ও অন্যান্য অপরাধের শিকার না হয়, এর জন্য আইনের প্রয়োগ করব। দ্বিতীয়ত, নারী, শিশু-কিশোরীরা যাতে শিক্ষার অধিকার পায়, তা নিশ্চিত করব। প্রয়োজনে উপজেলার স্কুলগুলোয় নারীশিক্ষা বিষয়ক আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করব। তৃতীয়ত, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহ রোধে দেশের প্রচলিত আইনগুলোর যথাযথ ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করব।

 

এক্সটার্নাল-১: দেশের কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের নাম বলতে পারবেন?

—কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট।

সনেট বলতে কী বোঝেন?

—চৌদ্দটি চরণের মাধ্যমে যখন কবির মনের একটি সুনির্দিষ্ট মূলভাবকে প্রকাশ করা হয় তাকে সনেট বলে।

একজন সনেটকারের নাম বলুন।

—মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

তাঁর বিখ্যাত সনেটের নাম জানেন?

—কপোতাক্ষ নদ ও বঙ্গভাষা।

 

এক্সটার্নাল-২: দেশের পর্যটনশিল্পের সমস্যাগুলো কী কী?

—স্যার, আমাদের দেশে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন পর্যটন স্পট থাকার পরও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের টানতে পারছে না। এ ছাড়া দর্শনীয় স্থানগুলোতে স্থানীয় নিরাপত্তার অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, নিরাপদ আবাসনের সংকট—এগুলোও অন্যতম কারণ।

বান্দরবানের ইউএনও করা হলে পর্যটনের বিকাশে কী পদক্ষেপ নেবেন?

—স্যার, প্রথমেই আমি বান্দরবনের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করব। পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা বাড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। পাহাড়ি সড়কগুলো সংস্কারের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করব। দুর্গম পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার অবকাঠামো তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

 

এক্সটার্নাল-১: প্রশাসন ক্যাডারে সর্বোচ্চ পদমর্যাদা কোনটি?

—স্যার, মন্ত্রীপরিষদসচিব।   

চেয়ারম্যান: কাগজপত্র নিয়ে যান।

(সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।)

 

মন্তব্য
বিসিএস

প্রশাসন ক্যাডারে যেভাবে প্রথম ফরহাদ

    ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর প্রস্তুতি ও প্রথম হওয়ার পেছনের গল্প শুনেছেন আব্দুন নুর নাহিদ
শেয়ার
প্রশাসন ক্যাডারে যেভাবে প্রথম ফরহাদ
ফরহাদ হোসেন ছবি : সংগৃহীত

বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির শুরুতে বিগত বিসিএসের প্রশ্নপত্র সমাধান করেছি। এর ফলে সহজেই বুঝতে পেরেছি, কোন বিষয়ে দখল ভালো আর কোনগুলোতে আমি দুর্বল। এসএসসি-এইচএসসির শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কারণে গণিত-বিজ্ঞান নিয়মিত চর্চা হতো। সিলেবাস ধরে ধরে এগিয়েছি

আপনার ক্যাডার পছন্দক্রম কী ছিল? এটা কততম বিসিএস? মেধাতালিকায় প্রথম হবেন, ভেবেছিলেন?

আমার ক্যাডার পছন্দক্রমে ছিল—প্রশাসন, পুলিশ, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস, ট্যাক্স, আনসার ও তথ্য।

এটা আমার তৃতীয় বিসিএস। এর আগে ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে অংশ নিয়েছিলাম, কিন্তু ক্যাডার পদ পাইনি। ৪৪তম বিসিএস লিখিত ও ভাইভা অনেক ভালো দিয়েছি। কিন্তু মেধাতালিকায় প্রথম হব, ভাবিনি।

 

কিভাবে প্রথম হলেন? অর্থাৎ কোন বিষয়গুলো আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করছেন?

৪১ ও ৪৩তম বিসিএসের ভুল থেকে অর্জিত শিক্ষাই আমাকে ৪৪তম বিসিএসে ভালো করতে সহায়ক হয়েছে। যেমন—

ক. লিখিত পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে সেটি এড়িয়ে গেছি। যেমন—৪৪তম বিসিএসে বিজ্ঞানের একটা প্রশ্ন ছিল ‘পুরো বায়ুমণ্ডলের ভর কত?’। এখানে ভর না জেনে কিছু লিখলে ভুল হবে।

সময়ও নষ্ট হবে।

খ. সংবিধান থেকে আসা প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ জানা না থাকলে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। যেমন—৪৪তম বিসিএসে একটা প্রশ্ন এসেছিল ‘হাইকোর্টের বিচারক অপসারণের প্রক্রিয়া’ সম্পর্কে। আমি অনুচ্ছেদটি মনে করতে পারিনি বলে উত্তর দিইনি।

গ. অতিরিক্ত ভূমিকা না টেনে সরাসরি প্রশ্নের মূল অংশ নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি।

যেমন—সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিভাবে অবদান রাখবে? এই প্রশ্নের উত্তরে ২-৩ লাইনের ভূমিকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট খাত উল্লেখ করে সরাসরি অবদান লিখেছি। যথাযথ উত্তর দিয়েছি, পৃষ্ঠা ভরাট উদ্দেশ্য ছিল না।

ঘ. শুদ্ধ বানান ও ভাষার সঠিক ব্যবহারের চেষ্টা করেছি।

ঙ. কাটাকাটি না করে খাতা পরিচ্ছন্ন রেখেছি। কালো ছাড়া অন্য রঙের কলম ব্যবহার (হাইলাইটের  জন্য) প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমি শুধু কালো কালির কলম ব্যবহার করেছি। চিত্র এঁকেছি পেন্সিল দিয়ে। চিত্রের নিচে শিরোনাম দিয়েছি।

চ. সময়ের দিকে খেয়াল রেখেছি। উত্তর করার সময় যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা উচিত বলে মনে করি। যাতে শেষের দিকের প্রশ্নগুলো পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভালোভাবে উত্তর করা যায়।

ছ. উক্তি ব্যবহারে সতর্ক ছিলাম। প্রস্তুতির সময় অনেক উক্তি পড়ার সময় লিখে রাখতাম। কিন্তু পরীক্ষায় উত্তর করার সময় সেগুলো মাথায় আসত না! কারণ পড়ার সময় আমি প্রশ্নের উত্তরে বেশি ফোকাস করেছিলাম। উক্তির বক্তা, সূত্র—এসব ভুল হতে পারে ভেবে আমি ৪৪তম বিসিএসে খুব বেশি উক্তি ব্যবহার করিনি। তবে উক্তি ঠিকঠাক উল্লেখ করে লিখতে পারলে সেটা প্রার্থীদের এগিয়ে রাখবে।

 

পড়াশোনা কোথায় করেছেন, ফল কেমন ছিল?

কৈডোলা জাফরশাহী উচ্চ বিদ্যালয় (জামালপুর) থেকে এসএসসিতে (২০১২) জিপিএ ৪.৭৫, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (ময়মনসিংহ) থেকে এইচএসসিতে (২০১৪) জিপিএ ৫.০০, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (টাঙ্গাইল) থেকে (২০১৪-১৫) স্নাতকে (টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং) সিজিপিএ ৩.২৫। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ বৃত্তি পেয়েছিলাম।

 

বিসিএস নিয়ে স্বপ্নের শুরুটা কিভাবে?

বোর্ড পরীক্ষার ম্যাজিস্ট্রেট এলে দেখতাম সবাই খুব সাবধান হয়ে যেত! তখন বুঝতাম, এটা খুব সম্মানজনক পদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার শেষ দিকে ভাবলাম, এমন একটা পেশায় যাব যেখানে কাজের বৈচিত্র‍্য থাকবে। পাশাপাশি সরাসরি জনগণের সেবা করার সুযোগ থাকবে, সম্মানও থাকবে। সব দিক বিবেচনা করে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করি।

 

প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল ও রুটিন কেমন ছিল? কোন বিষয়গুলোতে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন?

বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির শুরতেই বিগত বিসিএসের প্রশ্নপত্র (প্রশ্ন ব্যাংক) সমাধান করেছি। এর ফলে সহজেই বুঝতে পেরেছি, কোন বিষয়বস্তুর ওপর আমার দখল ভালো আর কোনগুলোতে দুর্বল। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর (টিউশন) কারণে গণিত, বিজ্ঞান নিয়মিত চর্চা হতো। গণিত, মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান, ভূগোল, কম্পিউটার, ইংরেজি ব্যাকরণ, বাংলা ব্যাকরণ—এই বিষয়গুলোর ওপর আমার ভালোই দখল ছিল। আমি শুরুতে এই বিষয়গুলোতেই বেশি জোর দিয়েছি। এরপর অন্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিই। সিলেবাস ধরে ধরে এগিয়েছি। আমার মতে, প্রার্থী যে বিষয়গুলোতে ভালো, সেগুলোতে প্রস্তুতির শুরুতে বেশি সময় দিলে সেখান থেকে সর্বোচ্চ নম্বর তোলা সহজ হয়। প্রস্তুতির এক পর্যায়ে মনে হলো, সময় দিলে ইংরেজি সাহিত্যে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রিলিমিনারি নমুনা পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি। এভাবে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি। যেসব জায়গায় ভুল হতো, সেগুলো আবার পড়তাম। একটা টপিক একটা বই থেকেই পড়তাম। নতুন বা অতিরিক্ত তথ্য বইয়ের পৃষ্ঠায় লিখে রাখতাম। কঠিন টপিক বারবার পড়তাম। কোনো নতুন প্রশ্ন মাথায় এলে বা কিছু জানার দরকার হলে গুগলে সার্চ দিতাম। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার ফলে সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতেও আপডেট ছিলাম।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম অনুবাদচর্চার মাধ্যমে। দৈনিক পত্রিকার সংবাদ দেখে বাংলা থেকে ইংরেজি, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ অনুশীলন করতাম। বিজ্ঞানের জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়েছি। সিলেবাসের বেশির ভাগ টপিক এখানে আছে। বাংলা ও ইংরেজি সমসাময়িক বিভিন্ন টপিকের ওপর ফ্রি হ্যান্ডরাইটিং অনুশীলন করতাম। বাংলা সাহিত্যে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছি। বানানেও সতর্ক ছিলাম। বিশ্বের আলোচিত ঘটনাগুলো পত্রিকা থেকে নোট করেছি। পেপার কাটিংও সংগ্রহ করে রাখতাম। তথ্য বা উক্তি ব্যবহার করলে এর সূত্র উল্লেখ করার চেষ্টা করতাম। যে ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই, সে ব্যাপারে উত্তর না করাই ভালো। বিসিএস লিখিত সিলেবাসে উল্লিখিত সব টপিকের বেসিক ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এমনভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, যাতে প্রশ্ন যেখান থেকেই আসুক ঠিকঠাক যেন উত্তর করতে পারি।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ