নিয়োগ পরীক্ষা যেভাবে
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষার মতোই প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। প্রতিষ্ঠানভেদে ৮০ থেকে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়ে থাকে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হন তাঁদের কম্পিউটারের ব্যাবহারিক দক্ষতা প্রমাণের জন্য ব্যাবহারিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। কম্পিউটারের ব্যাবহারিক দক্ষতায় উত্তীর্ণ হলেই মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হলো তৃতীয় অথবা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ। এই পদে আবেদনের জন্য সাধারণত ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমানের পাস হতে হয়। তবে উচ্চমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রিও চেয়ে থাকে। এ ছাড়া কম্পিউটারের মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট, ডাটা এন্ট্রি, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইলিং ও টাইপিংয়ে প্রতি মিনিটে ২০-৩০ শব্দ লেখার যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, যা ব্যাবহারিক পরীক্ষার সময় যাচাই করা হয়ে থাকে।
পরীক্ষার প্রস্তুতি
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের পরীক্ষার প্রস্তুতি দুই ধরনের নেওয়ার দরকার হয়। প্রথমত, প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটারের তাত্ত্বিক বিষয়, যা অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির মতোই। দ্বিতীয়ত, ব্যাবহারিক পরীক্ষার জন্য কম্পিউটারের ব্যাবহারিক দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এ দুই ধরনের প্রস্তুতির কোনোটিতে ঘাটতি থাকলে চাকরি পাওয়া সম্ভব হয় না।
প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি
►অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অথবা কম্পিউটার অপারেটর পদের বিগত বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে। মুখস্থ করার বিষয়গুলো মুখস্থ করে ফেলতে হবে। তারপর প্রশ্নগুলো দেখে বিশ্লেষণ করতে হবে পরীক্ষায় কোন ধরনের প্রশ্ন বেশি আসে, কোন টপিক থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন এসে থাকে। এগুলো বিশ্লেষণ করে খাতায় টপিকভিত্তিক গুরুত্ব অনুসারে সাজানো যেতে পারে। এভাবে নিজের সাজেশন নিজেই করে নিতে পারেন।
►প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির সহায়ক বইগুলো সংগ্রহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্য বাজার থেকে আলাদা কোনো গাইড বই কেনার প্রয়োজন নেই। বিসিএস বা অন্যান্য চাকরির বইগুলো থেকেই বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।
►ইংরেজিতে প্রথমে বেসিক গ্রামার শিখতে হবে। তারপর গ্রামারের পাশাপাশি মেমোরাইজিং আইটেম তথা মুখস্থ বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে। যেমন :
Synonyms and Antonyms, Idioms and Pharses, One word substitution, Spelling mistake, Appropriate Prepositions, Group Verbs, Proverbইত্যাদি।
►সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা সবাই জানেন, চাকরি পেতে ইংরেজি ও গণিতের গুরুত্ব অপরিসীম। ছোটবেলায় অনেকেই গণিতে ফাঁকি দিয়ে এসেছি; কিন্তু এখন তো আর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই গণিতের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বইগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করতে পারলে গণিতের ভিত্তি মজবুত হবে। তারপর বাজারের যেকোনো গাইড বই থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।
►বাংলায় ব্যাকরণ ও সাহিত্য থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড ব্যাকরণ বই ও ড. হায়াৎ মামুদের লেখা ভাষা শিক্ষা বই পড়া যেতে পারে। আর সাহিত্য অংশের প্রস্তুতির জন্য বাজারের প্রচলিত ভালো মানের একটি গাইড বই যথেষ্ট।
►মাধ্যমিকের কম্পিউটার বই ও বাজারের প্রচলিত ভালো মানের একটা বই থেকে প্রস্তুতি নিলে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রিলিমিনারির ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। ব্যাংক, বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা বিগত সালের প্রশ্নগুলো বেশি বেশি চর্চা করা যেতে পারে।
►সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইটি নোট করে পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়মিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়লে সাধারণ জ্ঞানের অনেক বিষয়ই সহজে আয়ত্তে চলে আসবে।
► পরীক্ষার আগে বেশি বেশি মডেল টেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করুন। মডেল টেস্ট দেওয়ার সুবিধা হলো পরীক্ষার হলের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যাবে। এ ছাড়া সময় ব্যবস্থাপনাও আয়ত্তে চলে আসবে।
কম্পিউটারের ব্যাবহারিক দক্ষতা প্রস্তুতি
প্রথমে আপনাকে মনে রাখতে হবে কম্পিউটারের ব্যাবহারিক দক্ষতা রাতারাতি অর্জন হয় না। এই দক্ষতা অর্জন করতে আপনাকে একাগ্রচিত্তে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আপনার বাসায় যদি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকে, আর যদি ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তাহলে খুব সহজেই আপনি এ দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারবেন। টাইপিংয়ে গতি বাড়ানোর জন্য আপনাকে প্রচুর নিয়মিত টাইপ করতে হবে। টাইপিং শিখতে গেলে প্রথমে যে সমস্যা হয়, তা হলো টাইপ করার মতো কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে আপনি কয়েকটি টেকনিক অনুসরণ করতে পারেন। তা হলো মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে আপনি চাকরির প্রস্তুতির বিভিন্ন বিষয় নোট করতে পারেন। এতে আপনার মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহারের খুঁটিনাটি জানা হয়ে যাবে। আবার এগুলো চাইলে ফেসবুকের বিভিন্ন চাকরির প্রস্তুতির গ্রুপগুলোতে পোস্টও করতে পারেন।
ফেসবুকে আমরা কমবেশি সবাই স্ট্যাটাস দিই। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মেসেঞ্জারে চ্যাট করে থাকি। কিন্তু এগুলো যদি আপনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে বসে লিখে থাকেন, তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে আপনি অবাক হয়ে লক্ষ করবেন, আপনার টাইপিং দক্ষতা চলে আসছে। অন্যদিকে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্রাউজিংও শিখে যাবেন। ফরমাল ই-মেইল কিভাবে পাঠাতে হয় এটা যদি আপনি না জেনে থাকেন তাহলে ইউটিউবে টিউটরিয়াল দেখে খুব সহজেই শিখে নিতে পারেন। আর মাঝে মাঝে বন্ধুদের ই-মেইল পাঠাতে পারেন। আপনার প্রতি মাসের আয়-ব্যয়ের হিসাবটা এক্সেলে রাখতে পারেন। এতে আয়-ব্যয়ের হিসাবটা রেকর্ড করা হয়ে যাবে, আর আপনার এক্সেলও শেখা হবে।
বর্তমানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ার সময় পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টশন দিতে হয়। কিন্তু আপনার ছাত্রজীবনে যদি এমনটা না হয়ে থাকে তাহলে আপনি চাকরির প্রস্তুতির যেকোনো বিষয়ের নির্দিষ্ট টপিকের ওপর পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টশনের স্লাইড তৈরি করতে পারেন। আর এগুলো শেখার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে। গুগলে সার্চ দিলেই পাবেন।
ইউটিউবেও ভালো মানের টিউটরিয়াল আছে, যা দেখে আপনি অনায়াসেই শিখে নিতে পারেন। করোনাভাইরাসের কারণে যেহেতু বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে, তাই এখন হাতে অনেক সময় আছে, চাইলে অনলাইনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে অনলাইনে এসব বিষয়ের ওপর কোর্সও করে নিতে পারেন। সফলভাবে কোর্স সম্পন্ন করলে সার্টিফিকেটও দিয়ে থাকে, যা পরবর্তী জীবনে কাজে লাগতে পারে। কম্পিউটারের এসব দক্ষতার জন্য বাজারে ভালো মানের বই পাওয়া যায়। গুগলে সার্চ দিলে অনেক বইয়ের পিডিএফ ভার্সনও পেয়ে যাবেন।