নাটোরের সিংড়ায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আব্দুল হান্নান (৪০) নামের এক আওয়ামী লীগকর্মী নিহত এবং কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৩০টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার তিরোইল গ্রামে এই সংঘর্ষে আহতদের সিংড়া ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সিংড়ায় আ. লীগের সংঘর্ষ, নিহত ১
- আহত ৫, আটক ১৭
নাটোর প্রতিনিধি

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আগামী ১০ নভেম্বর সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন। এ পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিকের পোস্টার সাঁটানো হয় উপজেলার তিরোইল বাজারে। গত সোমবার সন্ধ্যায় পোস্টারগুলো ইটালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফের সমর্থকরা ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিন্নাহর সমর্থকরা বাধা দিলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ১৭ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হলো সোলেমান, মামুন, জিয়া, হযরত, রানা, তারেক, জাহেদুল, হান্নান, আমজাদ, মিঠুন, হাসেম, তহিদুল, কাওসার, আরিফুল, আকরাম, শরিফুল ও শামসুল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সী সাহাবুদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওহিদুর রহমান জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে আরিফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। দীর্ঘদিন থেকে তিরোইল গ্রামে জমিজমা নিয়ে চলে আসা বিরোধের জের ধরে এলাকায় প্রভাব সৃষ্টির জন্য জিন্নাহ ও তার সমর্থকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।' আওয়ামী লীগ নেতা জিন্নাহর সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোনসেটটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, 'আমি নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত। আর আমার সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ নেই। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমার নিশ্চিত বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে।'
সম্পর্কিত খবর

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত


সুজনের সংলাপে রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতারা
জাতীয় সনদ প্রণয়নে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বদল নিশ্চিত করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সনদ প্রণয়নে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বদলের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, শেখ হাসিনা যে পথে চলে স্বৈরাচার হয়েছিলেন, সেই পথে চললে স্বৈরাচার হবেন, এটা নিশ্চিত। প্রয়োজন ওই পথ বন্ধ করা, অর্থাৎ স্বৈরাচারীব্যবস্থার পরিবর্তন। তাই নির্বাচনীব্যবস্থা পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) আয়োজিত ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ সম্পর্কে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তাঁরা। সুজন সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিনের সভাপতিত্বে ও সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তৃতা করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার কমিশনের সভাপতি ড. তোফায়েল আহমেদ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনুভা জাবিন, বাংলাদেশ জাসদের ডা. মুশতাক হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার, প্রফেসর গাজী জাহিদ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সুজনের কেন্দ্রীয় সদস্য একরাম হোসেন প্রমুখ।
সংলাপে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য সুজনের দেওয়া ২১ দফা প্রস্তাব হালনাগাদ করা হয়েছে। সেখানে দ্বিকক্ষ সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ ‘শাসিত’ সরকার, ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদ সদস্য প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৃণমূলে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জনগণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে সংস্কারবিরোধী বলে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ সর্বপ্রথম আমরাই সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সে অনুযায়ী চলমান সংস্কারকাজে আমরা সহযোগিতা করেছি।
বিচার ও সংস্কারের পাশাপাশি আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারেনি। ফলে বৈষম্য, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘মেরুদণ্ডহীন ও সবচেয়ে দুর্বল’ আখ্যা দিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, স্বাধীনতার পর কোনো সরকার এত বড় সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলো এ সরকারকে সহযোগিতা করছে। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও সমর্থন রয়েছে। তবু সরকার নিজে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
বিদ্যমান সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনগণ শেখ হাসিনার সরকারকে ফেলে দিয়েছে উল্লেখ করে ডা. তাসনুভা জাবিন বলেন, এনসিপি নির্বাচন ভয় পায় না। তবে নির্বাচনব্যবস্থায় গলদ আগে পরিবর্তন করতে চায়। এ জন্য মৌলিক সংস্কার হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তন না এলেও যেগুলোতে ঐকমত্য এসেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সত্যিকার অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। চলতি মাসেই জাতীয় সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জামায়াত আমির
শহীদ পরিবার ভিক্ষা নয়, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চায়
নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা কারো করুণা বা ভিক্ষা চান না, তাঁরা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান। গতকাল শনিবার জুলাই শহীদদের স্মরণে ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য চাকরি বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়াকে অনেকে কোটা বলছেন। কিন্তু এটাকে কোটা বলা যায় না।
শফিকুর রহমান জানান, শহীদদের অন্তত ৭০ শতাংশ ছিলেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
জামায়াত আমির বলেন, “শহীদ পরিবারগুলো এখন ‘জুলাই সনদ’-এর দাবি তুলেছে। এটি কেবল তাদের দাবি নয়, এটি ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির সনদ।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের উদ্দেশে বলেন, জুলাইয়ের শহীদরা জীবন না দিলে আজ আপনাদের কেরানীগঞ্জ বা কাশিমপুর কারাগারে থাকতে হতো। তাই আগে জুলাই সনদ প্রণয়ন করুন, অন্য সব কাজ পরে হবে।
অনুষ্ঠানটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতায় যৌথভাবে আয়োজন করে জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি এবং ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নির্বাচনের আগে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হবে
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অস্ত্রসহ সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নির্বাচনের আগে এসব অবৈধ অস্ত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এখনো সব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি, তবে নির্বাচনের আগে এগুলো উদ্ধার করা হবে।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা যদি সত্য তুলে ধরেন, বিভ্রান্তি দূর হবে। আমরা চাই নিরপেক্ষভাবে সব তথ্য আসুক। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের জন্য মাঠে থাকবে, আর আমাদের দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক মামলার তদন্ত এগিয়েছে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেককে আসামি করায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হচ্ছে।
এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকায় র্যাব-১১-এর সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে থাকলে তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করা হবে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলোচিত ছিনতাইয়ের ঘটনায় চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিনজনকে গ্রেপ্তার ও ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তদল কাজ করছে। ওই সময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তাসমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ইসরাত জাহানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।