এখন আর পার্টি আয়োজনে নির্দিষ্ট উপলক্ষ লাগে না। যারা উপলক্ষ খোঁজেন, তাদের জন্য বিয়েবার্ষিকী, জন্মদিন, নতুন চাকরি, চাকরিতে প্রমোশন, নববর্ষ উদ্যাপনসহ নানা কারণ তো আছেই। গেট টুগেদারে ইদানীং বারবিকিউ পার্টি বেশি পছন্দ সবার। রান্নার পাশাপাশি গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠা যায়।
বাড়িতেই বারবিকিউ
- ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই দিন দিন প্রিয় হয়ে উঠছে বারবিকিউ। বাড়িতেই করতে পারেন বারবিকিউ। আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন রন্ধনশিল্পী তাসনিয়া রহমান সৃষ্টি। লিখেছেন আতিফ আতাউর
অন্যান্য

চুলার জন্য যা লাগবে
কয়লা, কয়লার চুল্লি, ব্রাশ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ (১০ জনের পার্টির জন্য)
গরু বা খাসির মাংস ২ কেজি, মুরগি তিনটি অথবা বড় মাছ ২ কেজি। বারবিকিউ মসলা, সরিষার তেল পরিমাণমতো, টক দই আধা কাপ, আটা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ৩ চা চামচ, সরিষা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জায়ফল বাটা ১/৪ টেবিল চামচ।
বারবিকিউ করার উপায়
১. প্রতিটি মুরগি চার অথবা আট টুকরা করে নিন। মাংসটা ছুরি দিয়ে ফেরে নিতে হবে, যাতে মসলা ভেতরে ভালোমতো ঢোকে।
২. মাছ বড় টুকরা করে কেটে নিন।
২. সব মসলা দিয়ে মাংস বা মাছ মেখে কমপক্ষে এক ঘণ্টা রেখে দিন। এতে মাংসে মসলা ভালোমতো মিশবে।
৩. এরপর মাংস বা মাছ শিকে গেঁথে কয়লার চুল্লায় এপিঠ ও ওপিঠ দশ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ করার সময় ব্রাশে সরিষার তেল নিয়ে মাংসের গায়ে মেখে দিতে হবে।
পরিবেশন
গরম অবস্থায় শিক থেকে নামিয়ে সস, নানরুটি, পরোটা দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। ঠাণ্ডা হলে বারবিকিউ শক্ত হয়ে যায়। খেতে আর গরম অবস্থার মতো স্বাদ লাগে না। বারবিকিউয়ের সঙ্গে সাইড ডিশ হিসেবে গার্লিক ব্রেড, রোস্টেড পটেটো কিংবা সটেড ভেজিটেবল দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।
গার্লিক ব্রেড করার উপায়
রসুন মিহি কুচি করে কেটে ধনেপাতা সঙ্গে দিয়ে পাউরুটির গায়ে একটু অলিভ অয়েল ব্রাশ করে নিন। এরপর বারবিকিউ চুলায় একটু সেঁকে নিলেই হয়ে গেল গার্লিক ব্রেড।
রোস্টেড পটেটো
আলু সিদ্ধ করে নিন। এরপর খোসা ছাড়িয়ে একটু লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া, মাখন দিয়ে মেখে বারবিকিউ চুলার মধ্যে একটু পেস্ট করে নিলেই হয়ে গেল রোস্টেড পটেটো।
সটেড ভেজিটেবল
শীতে প্রচুর সবজি পাওয়া যায়। ব্রকলি, ফুলকপি, গাজর, ক্যাপসিকাম জাতীয় নানা রকম সবজি জুলিয়ান বা কিউব আকৃতি দিয়ে কেটে নিয়ে গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ভাপিয়ে নিন। এর বেশি সময় ভাপিয়ে নিলে রং নষ্ট হয়ে যাবে। এবার কড়াইয়ে মাখন, রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি, গোলমরিচের গুঁড়া, লবণ ও সবজি দিয়ে কড়া আঁঁচে নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে।
সাবধানতা
আগুনের কাছে যাওয়ার সময় অবশ্যই সঙ্গে একটি হাতপাখা নিন। কয়লায় অনেক সময় আগুন ধরে যায়। আগুন ধরলে পাখার বাতাস দিয়ে নিভিয়ে দিতে হবে। বারবিকিউ শেষে আগুন ভালোমতো নিভিয়ে কয়লা ঠাণ্ডা করে নিন।

এক ঘরে সহোদর-সহোদরা
- একই ঘর, একই জানালা, বাসিন্দা দুই শিশু। তাদের খুনসুটি, অকারণ কান্না, আবার কখনো হাত ধরে ঘুমিয়ে পড়া—দুই শিশুর এক ঘরে মিলেমিশে থাকে ভালোবাসা আর টানাপড়েন। এক ঘরে দুই শিশুর বসবাসের নানা দিক তুলে ধরেছেন অলকানন্দা রায়

শহুরে ফ্ল্যাটজীবনে একই পরিবারের দুই শিশুর জন্য আলাদা ঘর দেওয়া অনেক পরিবারের পক্ষেই সম্ভব হয় না। জায়গার সংকট, খরচের হিসাব আর পারিবারিক বাস্তবতায় প্রায়ই দুই সন্তানকে থাকতে হয় একই ঘরে। তবে এই বাস্তবতা শুধু আপসের নয়, এর ভেতরেই লুকিয়ে আছে শেখার, বেড়ে ওঠার আর সম্পর্ক গভীর হওয়ার নানা দিক।
ধানমণ্ডির বাসিন্দা সোহেল-শারমিন দম্পতির দুই মেয়ে থাকে একই ঘরে। বড় মেয়ে নীরার বয়স ১২ বছর আর ছোট মেয়ে দিশার আট বছর। শারমিন বললেন, ‘প্রথম প্রথম মেয়েরা একই ঘরে থাকতে গিয়ে প্রায়ই খুনসুটি করত।

যুক্তরাজ্যের সাইক্রেগের প্রতিষ্ঠাতা ও মনস্তত্ত্ববিদ ড্যানিয়েল রেলো-হাওয়েল এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ভাই-বোন একই ঘরে থাকলে উপকারই বেশি। যারা একা বিছানায় ঘুমাতে ভয় পায়, তারা ভাই বা বোনের উপস্থিতিতে নিরাপদ বোধ করে। একই ঘর ভাগাভাগি করার মাধ্যমে সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই সমঝোতা, সংযম এবং কী করে একটি স্পেস শেয়ার করতে হয়, তা শিখে নেয়। ভবিষ্যতে স্কুল, অফিস বা হোস্টেলজীবনে যা বেশ কাজে লাগে।’
একই ঘরে দুটি শিশুর বসবাস করার রয়েছে নানা রকম সুবিধা। যেমন—
* একই ঘরে থাকার অভ্যাস শিশুদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করে। খেলনা, বই, জামা—সবকিছুতেই তারা পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল হয়। ছোট থেকেই যে সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, তা পরবর্তী সময়ে সমাজে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করে।
* দুই ভাই-বোনের একই বিছানায় গল্প শোনা, অন্ধকারে ভয় পেলে একে অপরের হাত ধরা কিংবা হোমওয়ার্ক শেষ করতে একে অপরকে সাহায্য করা—এসব অভিজ্ঞতা তাদের সম্পর্ককে গভীর করে। পরিণত বয়সে এ বন্ধন হয়ে ওঠে আত্মিক ও ভরসার।
* শিশুরা যখন একই ঘরে থাকে, তখন মতের অমিল বা ছোটখাটো ঝগড়া সামলানো শিখে যায়। কে আগে পড়বে, কে কোন আলো জ্বালাবে—এসব সিদ্ধান্তে আপসের মধ্য দিয়েই তারা সামাজিক দক্ষতার চর্চা করে।
আছে কিছু অসুবিধাও
* একই ঘরে থাকার কারণে শিশুর ব্যক্তিগত জায়গা বা গোপনীয়তা বজায় থাকে না। বিশেষ করে বড় হয়ে উঠতে উঠতে তারা স্বাধীনভাবে থাকতে পছন্দ করে। সুযোগ না পেলে তাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়।
* মা-বাবার মনোযোগ, ভালো খেলনা বা পরীক্ষায় সাফল্য—এসব নিয়ে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। কখনো সেটি রূপ নেয় হিংসায়, যা সম্পর্কের ক্ষতি করে।
* ভিন্ন বয়সের শিশুর ঘুম ও পড়াশোনার সময় আলাদা হয়। ছোটজন খেলতে চাইলে বড়জনের পড়াশোনায় সমস্যা হতে পারে। আবার একজন রাত জেগে পড়লে আরেকজনের ঘুম ব্যাহত হয়।
* শিশুরা অনেক সময় মনে করে, তার ব্যক্তিগত চাহিদাকে মা-বাবা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বড়জন মনে করতে পারে, ছোট ভাই-বোন সব সুবিধা পাচ্ছে। আবার ছোটজন ভাবতে পারে, বড় ভাই-বোনের মতো স্বাধীনতা তাকে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে জন্ম নেয় নিরাপত্তাহীনতা, অবহেলার বোধ বা হিংসা। এ ধরনের টানাপড়েন সময়মতো সামলাতে না পারলে তাদের আত্মবিশ্বাস ও আবেগিক স্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মা-বাবার করণীয়
* প্রতিটি শিশুই আলাদা। তাদের পছন্দ-অপছন্দ ও অভ্যাসকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
* একই ঘরে হলেও আলাদা টেবিল, বুকশেলফ বা ছোট পার্টিশন দিয়ে প্রত্যেককে কিছুটা হলেও ব্যক্তিগত জায়গা দেওয়া সম্ভব।
* মা-বাবাকে সমানভাবে দুই শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। একজনকে বেশি সময় দিলে অন্যজনের মনে অভিমান জমতে পারে।
* শিশুদের ঝগড়া হলে পক্ষ নেওয়া নয়, বরং তাদের দুজনকেই বোঝানো উচিত। এতে তারা সমস্যা সমাধানের পথ শিখে নেয়।
* ঘরের দেয়ালের রং, পোস্টার বা পর্দা বাছাইয়ে দুই শিশুকেই সিদ্ধান্তে অংশ নিতে দেওয়া যেতে পারে। এতে তাদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব বাড়ে।
টিপস
* ডবল ডেকার খাট বা ভাঁজ করা ফার্নিচার ব্যবহার করলে জায়গা বাঁচে।
* বুকশেলফ বা আলমারির আলাদা তাক শিশুর ব্যক্তিত্বকে সম্মান দেয়।
* রং বাছাইয়ে শিশুদের মতামত নিলে তারা ঘরটিকে নিজেদের মনে করে।
* নির্দিষ্ট সময়ে আলো নেভানো, পড়াশোনার সময় শান্ত পরিবেশ রাখা—এসব ছোট নিয়ম মেনে চললে ঘরে শৃঙ্খলা আসে।

আসবাব ভালো রাখার টিপস
- সুন্দর সোফা, কাঠের টেবিল কিংবা বুকশেলফ ঘরের শোভা বাড়ায়। যত্ন না নিলে দ্রুত পুরনো বা নষ্ট হয়। আসবাব দীর্ঘস্থায়ী ও ঝকঝকে রাখার সহজ পদ্ধতি জানাচ্ছেন প্রিয়াঞ্জলি রুহি

কাঠের আসবাব
আভিজাত্যের প্রতীক কাঠের আসবাব। যত্ন না নিলে কাঠে ফাটল, দাগ বা উইপোকার আক্রমণ হতে পারে। কাঠ সরাসরি রোদে রাখলে শুকিয়ে যায়, রং ফিকে হয়ে যায়। কাঠের টেবিল-চেয়ার সব সময় জানালার পাশে বা রোদে রাখবেন না।
সোফা ও কাপড়ের আসবাব
আসবাবগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ব্যবহূত হয় সোফা। তাই এগুলো নোংরাও হয় দ্রুত।
মেটাল ও স্টিল
শহুরে আধুনিক ফ্ল্যাটে মেটাল ও স্টিল আসবাব জনপ্রিয়। এগুলোর যত্ন সহজ হলেও কিছু নিয়ম মানতে হয়। কখনোই পানির সংস্পর্শে রাখবেন না। ভিজে গেলে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। বছরে একবার রং বা ল্যাকার কোট করলে ঝকঝকে থাকবে এবং জং ধরবে না।
নিয়মিত চেক করুন, ঢিলে হলে শক্ত করে লাগান। মাঝেমধ্যে তেল দিলে শব্দ করবে না।
বাঁশ ও বেতের আসবাব
গ্রাম্য আবহে বা কটেজ স্টাইলে বাঁশ ও বেতের আসবাব বেশ মানায়। তবে আর্দ্রতায় এগুলো নষ্ট হয়। ভেজা জায়গায় রাখবেন না। আর্দ্রতা থেকে বাঁচাতে মাঝেমধ্যে রোদে শুকিয়ে নিন। পরিষ্কারের পর ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। বছরে একবার ল্যাকার বা ভার্নিশ কোট করলে ফার্নিচার অনেক দিন টিকবে।
বেড ও ম্যাট্রেস
বিছানার সঠিক যত্ন না নিলে ঘুমের মান নষ্ট হয়। কয়েক মাস পর পর উল্টে দিলে সমান থাকে, বসে যায় না। বছরে অন্তত দু-একবার রোদে দিলে দুর্গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া ও আর্দ্রতা কমে যায়। ম্যাট্রেস প্রটেক্টর ব্যবহার করলে দাগ বা ধুলা লাগবে না। বিছানায় বসে খাবেন না। এতে খাবারের দাগ লেগে যেতে পারে।
মনে রাখুন
ভারী আসবাব টেনে সরালে মেঝে ও আসবাব দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেবিল ক্লথ, সোফা কাভার বা বেডশিট ব্যবহার করলে আসবাব বেশিদিন নতুন থাকে। বাসায় আর্দ্রতা বেশি হলে আসবাব দ্রুত নষ্ট হয়। জানালা খুলে রোদ ঢুকতে দিন বা ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
কাঠে উইপোকা বা ফাঙ্গাস এড়াতে ন্যাফথালিন ও বিশেষ স্প্রে ব্যবহার করুন। দু-তিন বছর পর পর কারিগর দিয়ে আসবাব রিফিনিশিং বা সার্ভিসিং করালে আবার নতুনের মতো হয়ে যায়।

পুরনো ফার্নিচারের নতুন রূপ
- ভালোবাসা-বাসি থেকেই বাসা বাঁধেন অনেকে। সে বাসায় বসবাস করতে নানা রকম জিনিসপত্রের সঙ্গে থাকে আসবাবও। সময়ের নিয়মে সেসব আসবাবও একদিন পুরনো হয়, হারিয়ে ফেলে জৌলুস। তাই বলে ফেলে দেবেন না যেন, বরং তাকে দিন নতুন রূপ। কিভাবে? লিখেছেন তুলি রহমান

ঘরের পুরনো আসবাবগুলোর কোনটার রং চটে গেছে, আবার কোনটার গায়ে লেগেছে দাগ। কোনোটা হয়তো ফেটে গেছে বা ভেঙেছে। এদিকে নতুন ফার্নিচার কেনা বেশ খরচসাপেক্ষ। এই আসবাবের কোনোটা হয়তো দাদার আমলের।

মিরপুরের রুমানা খান পুরনো ডাইনিং টেবিল নতুন করে সাজিয়েছেন। কাঠে সাদা পলিশ, কাচের টপ আর নতুন চেয়ার কাভার যোগ করে তৈরি করেছেন আধুনিক সেট। তিনি বলেন, ‘নতুন কিনতে গেলে লাখ টাকা লাগত। কিন্তু পুরনোটা সাজাতে খরচ হলো এক-তৃতীয়াংশ। এখন অতিথিরা এটার দিকেই প্রথম তাকান।
মোহাম্মদপুর টাউন হলের পুরনো আসবাব কেনাকাটার দোকানে রাশেদা আক্তার খুঁজছিলেন পুরনো আলমারি। তিনি বলেন, ‘একটা পুরনো আলমারি কিনলেও এটাকে আমি কেটে, রং করে নিজের মনমতো আধুনিক রূপ দেব। এখান থেকে কেনার একটাই কারণ দাম কম, আর পুরনো দিনের কাঠ হয় টেকসই।’

ইন্টেরিয়র ডিজাইনার তানিয়া আহমেদ বললেন, ‘পুরনো ফার্নিচার নতুনভাবে সাজানো মানে শুধু সাশ্রয় নয়, বরং এটি সাধ ও সাধ্যের সঙ্গে সৃজনশীলতার সমন্বয়। পুরনো আসবাবকেই করা যায় ঘরের সবচেয়ে আধুনিক ও আকর্ষণীয়। পুরনোকে নতুন রূপে সাজানোই টেকসই, পরিবেশবান্ধব এক শিল্প।’
কিভাবে নতুন করবেন
রং ও পলিশ : কাঠের আসবাব স্যান্ডপেপার দিয়ে ঘষে নতুন রং বা পলিশ করলে একেবারে নতুন চেহারা পায়। মেটাল ফার্নিচার হলে অ্যান্টিরাস্ট পেইন্ট ব্যবহার করতে পারেন। রং করার সময় রঙের ধরন এবং টেক্সচার ঠিকভাবে নির্বাচন করুন, যা ঘরের ইন্টেরিয়রের সঙ্গে মানানসই হবে। অফ হোয়াইট, প্যাস্টেল বা ডার্ক ব্রাউন শেড এখন জনপ্রিয়।
হাতল ও কাপড় বদলানো : আলমারি বা ড্রয়ারের হাতল ও নব বদলালেই পুরো আসবাবের চেহারা বদলে যায়। সোফা, চেয়ার, খাটে নতুন কাভার বা কুশন ব্যবহার করলেও ঘরে ফেরে নতুন চেহারা।
ডিজাইন ও আর্টওয়ার্ক : টেবিলের ওপর ফুল-পাতার নকশা, ওয়ালপেপার লাগানো বা হাতে আঁকা সৃজনশীল ছবি—এসব কাজ ফার্নিচারকে শিল্পকর্মে রূপ দেয়। আসে নতুনত্ব।
পুনর্বিন্যাস : পুরনো আসবাবকে নতুন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভাঙা চেয়ারকে টব রাখার স্ট্যান্ড বা টুল, পুরনো বাক্সকে কফি টেবিল কিংবা কাঠের বাক্সকে বুকশেলফে রূপান্তর করা যায়। এতে ঘরে আলাদা আমেজ আসে।
মডার্ন ও ভিনটেজের মিশ্রণ : পুরনো কাঠের আলমারির সঙ্গে আধুনিক মিনিমালিস্ট চেয়ার মিশিয়ে ব্যবহার করলে তৈরি হয় দারুণ কনট্রাস্ট।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা : পুরনো ফার্নিচার ঠিকভাবে মেরামত না করলে ভাঙা অংশ থেকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তাই রং করার আগে বা নতুন কাপড় লাগানোর আগে কাঠামোগত স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা জরুরি। শিশুদের ঘরে এসব ব্যবহার করতে হলে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
সংস্কৃতি ও নান্দনিকতা : বাংলার ঘরে পুরনো আসবাবের আলাদা ঐতিহ্য আছে। ভারী কাঠের খাট বা পালঙ্ক একসময় পরিবারের মর্যাদার প্রতীক ছিল। এখনকার তরুণ প্রজন্মও ভিনটেজ লুক পছন্দ করছে। পুরনো আসবাব নতুন সাজে ব্যবহার করলে ঐতিহ্য আর আধুনিকতা একসঙ্গে ধরা দেয়।
এ ছাড়া পুরনো আসবাব বিক্রি করার কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। সেসব জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজেই পুরনো ফার্নিচার বিক্রি করা ও কেনা যায়। সেগুনবাগিচা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, উত্তরার হাউস বিল্ডিং রোড, গুলিস্তানসহ নানা জায়গায় গিয়ে সরাসরিও কেনা যাবে।

বৈদ্যুতিক পণ্যের যত্ন

বৃষ্টির সময় পানির সংস্পর্শে বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো বিগড়ে যেতে পারে। কিছু নিয়ম মেনে চললে এই বিপত্তি এড়াতে পারেন।
টেলিভিশন
টেলিভিশনের সবচেয়ে ক্ষতি হয় বজ্রপাত ও বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। মেঘ ডাকলে বা বিদ্যুত্ চমকালে টেলিভিশন বন্ধ করে দিন।
রেফ্রিজারেটর
ঘরের স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে রেফ্রিজারেটর রাখা উচিত নয়। এতে রেফ্রিজারেটরের নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শক্ত কাগজ অথবা কাঠ বা প্লাস্টিকের তৈরি তাকের ওপর ফ্রিজ রাখতে হবে। ফ্রিজের বাইরের অংশ বৃষ্টির সময় ঘেমে যায়। এমনটা হলে পরিষ্কার শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে দিন।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র
বৃষ্টির দিনে গরম কম থাকে। এ জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারও কম হয়। বন্ধ থাকলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে ধুলা জমে। যে স্থান দিয়ে ধুলা প্রবেশ করে, সেখানে কাপড়ের ঢাকনা ব্যবহার করতে পারেন। দেয়াল ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে থাকলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পাওয়ার লাইন থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য মিস্ত্রি দিয়ে পাওয়ার লাইন পরীক্ষা করিয়ে নিন।
সতর্কতা
বৃষ্টি বা বিদ্যুত্ চমকালে বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। সম্ভব হলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।
বিদ্যুত্ খুব ঘন ঘন গেলে বৈদ্যুতিক পণ্যের লাইন খুলে রাখুন।
বৈদ্যুতিক পণ্য কখনোই আলোহীন ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে রেখে ব্যবহার করবেন না।
বৈদ্যুতিক পণ্যের কাছে পানি বা পানীয় রাখা উচিত নয়। পানির সংস্পর্শে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বর্ষা মৌসুমে সব সার্কিট পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। যন্ত্রপাতিতে কোনো সমস্যা আছে কি না আগেই পরখ করে নিন।
সমস্যাযুক্ত ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এগুলো থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
যত দ্রুত সম্ভব ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্র ঠিক করিয়ে নিন।
শিশুদের সব সময় বৈদ্যুতিক পণ্যের কাছ থেকে দূরে রাখুন।